পাবিপ্রবি নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ২৮ নেতাকর্মী বহিষ্কার
Published: 6th, August 2025 GMT
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবিপ্রবি) বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের ঘটনায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ২৮ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বুধবার (৬ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, গত ২৬ জুলাই অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩তম রিজেন্ট বোর্ডে এ সিদ্ধান্ত হয়। সেখানে ২১ নাম্বার আলোচ্যসূচিতে এটি অন্তর্ভুক্ত ছিল।
আরো পড়ুন:
জাবিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হামলাকারী ১৮৯ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর শাস্তি
টাঙ্গাইলে চাঁদাবাজির অভিযোগে বিএনপির ৩ নেতা বহিষ্কার
বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের জন্য চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ২৪ মে পর্যন্ত তদন্ত কমিটি শিক্ষার্থীদের থেকে অভিযোগগুলো সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে গঠিত কমিটি তদন্ত শেষ করে এর রিপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জমা দেয়।
শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটির কাছে অন্তত ৩৫ জনের বিরুদ্ধে নয়টি অভিযোগ জমা পড়ে। এর মধ্যে ছয়টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, দুইটি অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি এবং একটি অভিযোগ অভিযোগকারী ও অভিযুক্ত নিজেদের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়।
রিজেন্ট বোর্ডে চার ক্যাটাগরিতে শিক্ষার্থীদের শাস্তি দেওয়া হয়। এর মধ্যে, ১১ জনের আজীবনের জন্য সনদ বাতিল, সাতজনের ৩ বছরের জন্য সনদ স্থগিত, ছয়জনের আজীবন বহিষ্কার এবং চারজনের ৩ বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
আজীবনের জন্য সনদ বাতিল হয়েছে- লিংকন হোসেন (বাংলা বিভাগ, ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষ), মো.
৩ বছরের জন্য সনদ স্থগিত হয়েছে- শাহেদ জামিন হিরা (পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ), নাজমুল ইসলাম আবীর (গণিত বিভাগ, ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষ), সাব্বির হোসেন সবুজ (বাংলা বিভাগ, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ), শেখ রাসেল (লোক প্রশাসন বিভাগ, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ), সোহানুর রহমান সোহান (ইংরেজি বিভাগ, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ), জহরুল ইসলাম পিয়াস (অর্থনীতি বিভাগ, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ) ও জাহির রায়হানের (বাংলা বিভাগ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ)।
এছাড়া আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে- ফরিদুল ইসলাম বাবু (ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষ), নাইমুর নাহিদ ইমন (ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ), আশিক আরমান শোভন (স্থাপত্য বিভাগ, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ), তৌফিক হাসান হৃদয় (ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ), অয়ন আলমাস (বাংলা বিভাগ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) ও তানশু দাসের (ইতিহাস বিভাগ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ)।
৩ বছরের জন্য বহিষ্কার হয়েছে- আশরাফুল ইসলাম (গণিত বিভাগ, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ), আকাশ ভূঁইয়া (পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ), অনিক পোদ্দার (ইতিহাস বিভাগ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) ও শাহ আলমের (ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ)। শাস্তি পাওয়া সবাই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিজন কুমার ব্রহ্ম বলেন, “যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করেই বিচারকার্য সম্পন্ন হয়েছে। তদন্ত কমিটি অত্যন্ত পেশাদারিত্ব ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। যেসব ২৮ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাদের প্রত্যেককে আত্মপক্ষ সমর্থনের যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।”
তিনি বলেন, “এ বিষয়ে বারবার নোটিশ পাঠানো হয়েছে তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে। তবে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখানে কারো প্রতি অবিচার করা হয়নি।”
ঢাকা/আহসান/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ৩ বছর র জন য গণ ত ব ভ গ র র জন য ল ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
বহিরাগতদের মোটরসাইকেলের ধাক্কায় পা ভাঙল রাবি শিক্ষার্থীর, প্রতিবাদে মানববন্ধন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বহিরাগতদের মোটরসাইকেলের ধাক্কায় সংগীত বিভাগের এক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে ও ছয় দফা দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৬ আগস্ট) বেলা ১১টায় প্রশাসন ভবনের সামনে এ মানববন্ধন করেন তারা।
এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে ‘ক্যাম্পাসে ওভার স্পিডিং কেন?’, ‘আজ অনিক, কাল আমি! ’, ‘বেপরোয়া গতি বন্ধ করো’ ইত্যাদি স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
আরো পড়ুন:
আবু সাঈদ হত্যা মামলা: সাবেক উপাচার্যসহ ২৪ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবিতে মহাসড়কে রবি শিক্ষার্থীদের শেকল ভাঙার গান
শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবিগুলো হলো- আহত শিক্ষার্থীর চিকিৎসার জন্য তিন কর্মদিবসের মধ্যে বীমার অর্থ প্রদান; পারিবারিক অসচ্ছলতার ভিত্তিতে এককালীন আর্থিক সহায়তা; বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যানবাহনের সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্ধারণ ও স্পিড ব্রেকার স্থাপন; দ্বিতীয় বিজ্ঞান ভবনের পাশের রাস্তা এবং স্টেশনবাজার-বিনোদপুর সড়কসহ প্রয়োজনীয় রাস্তা সংস্কার; গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে রেডিয়াম রিফ্লেক্টর স্থাপন এবং প্রতিটি সড়কে ফুটপাত নির্মাণ।
এর আগে, সোমবার (৪ আগস্ট) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সামনে চার রাস্তার মোড়ে সংগীত বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী অনিক মল্লিক দুটি দ্রুতগতির বাইকের ধাক্কায় গুরুতর আহত হন। তার একটি পা ভেঙে যায়। বর্তমানে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
মানববন্ধনে সংগীত বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তর্পণা দে বলেন, “ক্যাম্পাসে চেকপোস্ট আর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও বহিরাগতরা এত বেপরোয়া গতিতে চলাফেরা করতে পারে— এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। গাড়িগুলোর গতিসীমা নির্ধারণ এখন সময়ের দাবি।”
নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী জয় রায় বলেন, “একজন শিক্ষার্থী হাঁটার সময় বাইকের চাপায় আহত হচ্ছে— এটা কি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য? প্রশাসনের মূল দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অথচ এখানে বারবার তারা ব্যর্থ হচ্ছে।”
পরে শিক্ষার্থীরা দাবিগুলো আদায়ের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, “শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো আমরা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছি। আহত শিক্ষার্থীর চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ক্যাম্পাসের মূল ফটকগুলোতে সার্বক্ষণিক চেকিং চলছে। তারপরও এ ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক।”
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী