পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৮ শিক্ষার্থীর সনদ বাতিল, আজীবন বহিষ্কারসহ বিভিন্ন শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাঁরা সবাই নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। তাঁদের মধ্যে ১১ জনের সনদ আজীবনের জন্য বাতিল, ৭ জনের সনদ তিন বছরের জন্য স্থগিত, ৬ জনকে আজীবন বহিষ্কার ও ৪ জনকে তিন বছরের জন্য বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

আজ বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিজন কুমার ব্রহ্ম প্রথম আলোকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ড এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ধাপে ধাপে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের ঘটনায় চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এসব ঘটনায় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটির কাছে ৩৫ জন শিক্ষার্থীর ৯টি অভিযোগ জমা পড়ে। এর মধ্যে ছয়টি অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। দুটি অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি। অপর একটি অভিযোগ সমঝোতায় শেষ হয়। তদন্ত কমিটি পুরো বিষয়টি তদন্ত শেষে ২৪ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ড ২৮ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজীবন বহিষ্কার হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফরিদুল ইসলাম, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের নাইমুর নাহিদ, স্থাপত্য বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের আশিক আরমান, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের তৌফিক হাসান, বাংলা বিভাগের অয়ন আলমাস ও ইতিহাস বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের তানশু দাস।

বাংলা বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের লিংকন হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের মো.

নূর উল্লাহ, গণিত বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের মাসুদ রানা সরকর, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের হামিদুর রহমান, বাংলা বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ইকরামুল ইসলাম, সমাজকর্ম বিভাগের মিনহাজুল ইসলাম, বাংলা বিভাগের রাসেল হোসেন, অর্থনীতি বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের বিল্লাল হোসেন, গণিত বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের সুরুজ মিয়া, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শেহজাদ হাসান ও লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিবু দাসের সনদ আজীবনের জন্য বাতিল করা হয়েছে।

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শাহেদ জামিন, গণিত বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের নাজমুল ইসলাম, বাংলা বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের সাব্বির হোসেন, লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শেখ রাসেল, ইংরেজি বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের সোহানুর রহমান, অর্থনীতি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের জহুরুল ইসলাম ও বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের জহির রায়হানের সনদ তিন বছরের জন্য স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তিন বছরের জন্য বহিষ্কার হয়েছেন গণিত বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের আশরাফুল ইসলাম, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের আকাশ ভূঁইয়া, ইতিহাস বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের অনিক পোদ্দার ও ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শাহ আলম।

জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার বিজন কুমার ব্রহ্ম প্রথম আলোকে বলেন, নিয়মতান্ত্রিকভাবে ২৮ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে তাঁদের প্রত্যেকের আত্মপক্ষ সমর্থনের যথেষ্ট সুযোগ আছে। আইনানুগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুরো বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত ন বছর র জন য শ ক ষ বর ষ র শ গণ ত ব ভ গ র ২৮ শ ক ষ র থ র জন য ব ল ইসল ম র সনদ তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

নোবিপ্রবির আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তা স্থায়ী বহিষ্কার 

আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী পরিচালক জিয়াউর রহমান ভূঁইয়াকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অশ্লীল ও শিষ্টাচার বহির্ভূত মন্তব্য করায় স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

আরো পড়ুন:

জুলাই বিরোধিতা: ইবির ৩০ শিক্ষক-কর্মচারী ও ৩৩ ছাত্রলীগ নেতার ‘শাস্তি’

আ.লীগে যোগ দেওয়া মুবিনকে আইনজীবী ফোরাম থেকে বহিষ্কার 

সোমবার (৩ নভেম্বর) নোবিপ্রবির রেজিষ্টার (ভারপ্রাপ্ত) মো. তামজীদ হোসাইন চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক নোটিশে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের  রিজেন্ট বোর্ডের ৬৭তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।  

নোটিশে বলা হয়েছে, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী পরিচালক জিয়াউর রহমান ভূঁইয়া অননুমোদিতভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিত বিদেশে গমন করেন, যা সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপিল ) বিধিমালা ২০১৮ এর ধারা ২(চ) অনুযায়ী ‘পলায়ন’ ।

এছাড়া একজন সরকারি চাকরিজীবী হয়েও রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রকাশ করায় ‘নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ,২০০১’ এর ধারা ৪৭(৫) এর স্পষ্ট লঙ্ঘন। 

নোটিশে আরো বলা হয়েছে, গত ২৮ মে  আপনাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হলে সেটির জবাব যথাযথ হয়নি। পরবর্তীতে তদন্ত কমিটি আপনাকে পুনরায় ৭ জুলাই বিজ্ঞ আইনজীবীর মতামত এবং ৩১ জুলাই প্রেরিত নোটিশের জবাব না দেয়ায় গত ১৩ সেপ্টেম্বর নোবিপ্রবি রিজেন্ট বোর্ডের ৬৭ তম সভার আলোচ্যসূচি-১৮ এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০১ এর ৪৭(৮) ধারা অনুযায়ী এবং সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপিল ) বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি ৩ (খ) ও (গ) অনুযায়ী নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর সহকারী পরিচালক (সামরিক বরখাস্ত) পদ থেকে চূড়ান্ত বা স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কোনো লেনদেন থাকলে সেটি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও বিধি অনুযায়ী নিষ্পত্তি করা হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

নোয়াখালী-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে জিয়াউর রহমান ভূঁইয়া আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত। নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আওয়ামী রাজনীতির বিভিন্ন পোস্ট দিয়ে থাকেন এই কর্মকর্তা।

ঢাকা/শফিউল্লাহ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাবার ঐতিহ্য ধরে রাজনীতিতে এসে ফরিদপুরে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন দুই নারী
  • নোবিপ্রবির আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তা স্থায়ী বহিষ্কার 
  • স্তম্ভিত হারমানপ্রীত, আবেগ-রোমাঞ্চ-গর্ব-ভালোবাসায় মিলেমিশে একাকার