ট্রাম্পের ৫০% শুল্ক, ভারতের যেসব খাত সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে
Published: 7th, August 2025 GMT
ভারতের চামড়া, রাসায়নিক, জুতা, রত্ন ও গয়না, বস্ত্র ও চিংড়ি রপ্তানি খাত যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ শতাংশ শুল্কে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খাবে বলে মনে করছেন দেশটির শিল্পবিশেষজ্ঞরা।
বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। ফলে এখন ভারত থেকে আমদানি হওয়া পণ্যে মোট শুল্ক দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশ। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রুশ তেল আমদানির ক্ষেত্রে নয়াদিল্লির অনড় অবস্থানের ‘শাস্তি’ হিসেবে গতকাল আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে চীন ও তুরস্কের মতো দেশগুলো রাশিয়ার তেল কিনলেও তাদের ওপর এ ধরনের শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপ করা হয়নি। এ ক্ষেত্রে ট্রাম্প ভারতকে এককভাবে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছেন।
ভারতের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান জিটিআরআই বলেছে, এই শুল্কের ফলে মার্কিন বাজারে ভারতীয় পণ্যের দাম আরও অনেকটা বেড়ে যাবে। এর প্রভাবে রপ্তানি ৪০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
নতুন শুল্কের ফলে জৈব রাসায়নিক খাতে অতিরিক্ত ৫৪ শতাংশ শুল্ক আরোপিত হবে। আরও যেসব খাতে উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ হবে, তার মধ্যে রয়েছে কার্পেট (৫২.
৩১ জুলাই ঘোষিত এই ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক কার্যকর হবে ৭ আগস্ট সকাল ৯টা ৩০ (ভারতীয় সময় অনুযায়ী) মিনিট থেকে। আরও একটি অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হবে ২৭ আগস্ট থেকে। এই শুল্ক আগের আমদানি শুল্কের ওপর আরোপিত হবে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হয়েছে ১৩১ দশমিক ৮ বিলিয়ন বা ১৩ হাজার ১৮০ কোটি মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ভারতের রপ্তানি ৮৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ৮৭ হাজার ৬৫০ কোটি ডলার এবং আমদানি ৪৫ দশশিক ৩ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৫৩০ কোটি ডলার।
এনডটিভির সংবাদে বলা হয়েছে, যেসব খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সেগুলো হলো বস্ত্র বা পোশাক (১০.৩ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৩০ কোটি ডলার), রত্ন ও গয়না (১২ বিলিয়ন বা ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার), চিংড়ি (২.২৪ বিলিয়ন বা ২২৪ কোটি ডলার), চামড়া ও জুতা (১.১৮ বিলিয়ন বা ১১৮ কোটি ডলার), রাসায়নিক (২.৩৪ বিলিয়ন বা ২৩৪ কোটি ডলার) ও বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক যন্ত্রপাতি (প্রায় ৯ বিলিয়ন বা ৯০০ কোটি ডলার)।
কলকাতাভিত্তিক সামুদ্রিক খাদ্য রপ্তানিকারক কোম্পানি মেগা মোডার ব্যবস্থাপনা পরিচালক যোগেশ গুপ্ত বলেন, এখন ভারতের চিংড়ি যুক্তরাষ্ট্রে অনেক বেশি দামে বিক্রি হবে। ইকুয়েডরের সঙ্গে ভারতের প্রতিযোগিতা এখনই তীব্র, তাদের শুল্ক মাত্র ১৫ শতাংশ। ভারতীয় চিংড়িতে ইতিমধ্যে ২ দশমিক ৪৯ শতাংশ অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক ও ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ কাউন্টারভেলিং ডিউটি আছে। এই নতুন ২৫ শতাংশ যুক্ত হওয়ায় শুল্ক হবে মোট ৩৩ দশমিক ২৬ শতাংশ। এটি ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে।
ভারতীয় বস্ত্রশিল্পের শীর্ষ সংগঠন সিআইটিআই এক বিবৃতিতে বলেছে, ভারতের জন্য কার্যত ৫০ শতাংশ শুল্ক হার গভীর উদ্বেগের বিষয়। যুক্তরাষ্ট্র ভারতের বস্ত্র ও পোশাক রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার।
সংগঠনটি বলেছে, ‘৬ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত শুল্ক ভারতের বস্ত্র ও পোশাক রপ্তানিকারকদের জন্য বিশাল ধাক্কা। আগেই আমরা প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখে ছিলাম। এই নতুন শুল্কের কারণে তা আরও জটিল হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের প্রতিযোগিতার শক্তি কমে যাবে।’ সরকারের প্রতি তারা আহ্বান জানিয়েছে, এ কঠিন সময়ে খাতটিকে দ্রুত সহায়তা দেওয়ার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।
কামা জুয়েলারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কলিন শাহ বলেছেন, এ পদক্ষেপ ভারতের রপ্তানিতে বড় ধরনের আঘাত। কেননা, যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের মোট রপ্তানির প্রায় ৫৫ শতাংশ এই শুল্কের আওতায় পড়বে।
কলিন শাহ আরও বলেন, ‘৫০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যত আমাদের রপ্তানিকারকদের ৩০-৩৫ শতাংশ প্রতিযোগিতামূলক বাধার মুখে ফেলেছে। অনেক কার্যাদেশ ইতিমধ্যেই স্থগিত হয়েছে। পণ্যের চূড়ান্ত খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে। সে কারণে ক্রেতারা নতুন করে উৎস যাচাই করছেন, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পনির্ভর খাতগুলোর জন্য এ খরচ বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। মুনাফার হার এমনিতেই কম। এ ধাক্কায় অনেক প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিনের ক্রেতা হারাবে।
রপ্তানিকারকদের অবশ্য আশা, ভারত-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যচুক্তি দ্রুত চূড়ান্ত হলে শুল্কসংক্রান্ত এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সহজ হবে। সূত্রমতে, দুই দেশের মধ্যে এখনো অন্তর্বর্তী বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে কৃষিপণ্য, দুগ্ধজাত দ্রব্য ও জিনতগতভাবে পরিবর্তিত (জিএম) পণ্যে শুল্কছাড়ে যুক্তরাষ্ট্রের যে দাবি, সে জায়গায় ভারত অনড় থাকবে, অর্থাৎ তারা ছাড় দেবে না।
দুই দেশ এখন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে। ২০২৫ সালের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে প্রাথমিক চুক্তি সইয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে কানপুরভিত্তিক গ্রোমোর ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক যদবেন্দ্র সিং সচান বলেন, এ পরিস্থিতিতে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে রপ্তানিকারকদের নতুন বাজার খুঁজতে হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র শ ল ক আর প র জন য বস ত র দশম ক আগস ট আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
হেলিও ৪৫: বাজেটের মধ্যে ফ্ল্যাগশিপের ছোঁয়া
এডিসন গ্রুপের প্রিমিয়াম হ্যান্ডসেট ব্র্যান্ড হেলিও তাদের স্মার্টফোন লাইনআপে যুক্ত করেছে ‘হেলিও ৪৫’ (Helio 45)। গতকাল মঙ্গলবার নতুন এই স্মার্টফোনটি উদ্বোধন করা হয়েছে।
বাজারে দুটি ভেরিয়েন্টে পাওয়া যাবে স্মার্টফোনটি—৬ ও ১২৮ জিবি এবং ৮ ও ১২৮ জিবির দাম যথাক্রমে ১১ হাজার ৯৯৯ টাকা এবং ১২ হাজার ৯৯৯ টাকা, সঙ্গে থাকছে গ্রামীণফোনের বান্ডেল অফার। স্মার্টফোনটিতে রয়েছে বর্তমান বাজারের দাম অনুযায়ী সবচেয়ে অত্যাধুনিক ফিচার।
এডিসন গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জাকারিয়া শাহিদ বলেন, ‘স্মার্টফোন শুধু একটি ডিভাইস নয়, এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। হেলিও ৪৫ সেই অভিজ্ঞতাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে, যেখানে পারফরম্যান্সের পাশাপাশি প্রিমিয়াম ডিজাইনের মিশ্রণ ঘটেছে।’
হেলিও ৪৫–এ আছে লেটেস্ট অ্যান্ড্রয়েড–১৫ অপারেটিং সিস্টেম, ফলে ব্যবহারকারীরা পাবেন গুগলের অত্যাধুনিক সব ফিচার এবং ইউজার–ফ্রেন্ডলি ইন্টারফেইস। এ ছাড়া অ্যান্ড্রয়েড–১৫–তে গ্রাহকেরা উপভোগ করতে পারবেন হাই পারফরম্যান্স, অ্যাপ ওপেনিং এবং অত্যাধুনিক কাস্টমাইজেশন অপশন।
হেলিও ৪৫ স্মার্টফোনটিতে আছে ২০: ৯ অ্যাসপেক্ট রেশিওর ৬.৬৭ ইঞ্চি ১২০ হার্জের ফুল এইচডি প্লাস পাঞ্চ হোল ডিসপ্লে। এ ছাড়া ডিসপ্লে প্রোটেকশন হিসেবে আছে আয়রন গার্ড গ্লাস, ফলে হাত থেকে পড়ে গিয়ে ডিসপ্লে ভেঙে যাওয়া বা ফাটল ধরা থেকে পাওয়া যাবে সুরক্ষা। কনটেন্ট স্ট্রিমিং, গেমিং বা দৈনন্দিন কাজে এই ডিসপ্লেটি দেবে অসাধারণ ভিজ্যুয়াল এক্সপেরিয়েন্স।
চিপসেট হিসেবে এই হ্যান্ডসেটটিতে আছে মিডিয়াটেকের ১২ ন্যানোমিটার প্রিমিয়াম চিপসেট হেলিও জি৮১ এবং প্রসেসরে আছে ২.০ গিগাহার্টজ অক্টাকোর প্রসেসর। এই ডায়নামিক ডুও আপনাকে দেবে মাল্টিটাস্কিং, স্মুথ অ্যাপ ট্রানজিশন এবং গেমস খেলার সুপার ফাস্ট ইউজার এক্সপেরিয়েন্স। তা ছাড়া মাল্টিটাস্কিং এবং হাই পারফরম্যান্স এনশিওর করার জন্য এই ফোনে আছে ৬ জিবি এবং ৮ জিবি র্যাম। এ ছাড়া মেমোরি ফিউশনের মাধ্যমেও র্যাম বাড়ানো যাবে যথাক্রমে ৬ জিবি এবং ৮ জিবি করে। ১২৮ জিবি রম দেবে অনেক বেশি অ্যাপ এবং ছবি বা ভিডিও স্টোর করার ব্যবস্থা।
ফটোগ্রাফিপ্রেমীদের জন্য হেলিও ৪৫ নিয়ে এসেছে ৫০ মেগাপিক্সেল সনি সেন্সরের ট্রিপল রিয়ার ক্যামেরা সেটআপ, যার অ্যাপারচার এফ/১.৮। ডিএসএলআর মানের ছবি তোলা যাবে হেলিও ৪৫–এর এই ক্যামেরা দিয়ে। ৩২ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ক্যামেরাসহ ফেস–ফোকাস ফিচারটি ব্যবহার করে তোলা যাবে নিখুঁত সব সেলফি এবং ভিডিও কলও হবে অত্যন্ত মসৃণ।
এই স্মার্টফোনটিতে রয়েছে ৫০০০এমএএইচ লি-পলিমার ব্যাটারি, যা সারা দিন ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে ব্যবহার করা যাবে। এই ব্যাটারি ব্যবহারকারীর দৈনন্দিন লাইফস্টাইলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সক্ষম। এ ছাড়া দ্রুত চার্জ করার জন্য হ্যান্ডসেটটির সঙ্গে থাকছে ১৮ ওয়াটের ফাস্ট চার্জিং সাপোর্টযুক্ত চার্জার, যার মাধ্যমে মাত্র দেড় ঘণ্টায় ফোনটি ফুল চার্জ হয়ে যাবে।
বৃষ্টি বা ধুলোবালি থেকে রক্ষা পেতে এই স্মার্টফোনটিতে আছে আইপি ৬৪–এর রেটিং। হেলিও ৪৫ ফোনটিতে রয়েছে ফোরজি/থ্রিজি/টুজি ওয়াই–ফাই, জিপিএস এবং ওটিজি ব্যবহার করার সুবিধা।
নিরাপত্তার দিকটিও যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই ফোনটিতে আছে সাইড মাউন্টেড ফিংগারপ্রিন্ট সেন্সর এবং ফেস আনলক ফিচার, যা দ্রুত এবং নিরাপদে ব্যবহারকারীর ডিভাইসে অ্যাক্সেস নিশ্চিত করে। এ ছাড়া জি সেন্সর, প্রক্সিমিটি সেন্সর, লাইট সেন্সরের পাশাপাশি ম্যাগনেটিক সেন্সরও আছে এই হ্যান্ডসেটটিতে।
স্পেশাল ফিচারের মধ্যে রয়েছে রিভার্স চার্জিং, অ্যাপ হাইড, অ্যাপ লক, ব্যাকগ্রাউন্ড স্ট্রিম এবং নয়েজ ক্যানসেলেশন ইত্যাদি।
অবিশ্বাস্য ফিচার এবং প্রিমিয়াম ডিজাইনের সঙ্গে তিনটি চমৎকার কালার অপশন—মিন্ট গ্রিন, স্পেস ব্ল্যাক এবং ক্ল্যাসিক নেভি ব্লুসহ হেলিও ৪৫ ব্যবহারকারীর দৈনন্দিন জীবনে এনে দেবে প্রিমিয়াম ফিল।