গত মাসে বিশ্বব্যাপী টানা তৃতীয় সর্বোচ্চ উষ্ণতম জুলাই মাসের রেকর্ডভাঙা তাপমাত্রার অবসান হয়েছে। তবে অনেক অঞ্চলে এখনো চরম আবহাওয়া বিরাজ করছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে তীব্রতর হয়েছে। এতে ওই সব এলাকা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় জলবায়ু পর্যবেক্ষণ পরিষেবা এ তথ্য জানিয়েছে।

পাকিস্তান ও চীনের উত্তরাঞ্চলে ভারী বৃষ্টিতে বন্যা হয়েছে। কানাডা, স্কটল্যান্ড ও গ্রিসে দীর্ঘ খরায় সৃষ্ট দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছে এবং এশিয়া ও স্ক্যান্ডিনেভিয়ার অনেক দেশে জুলাই মাসে গড় তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের পরিচালক কার্লো বুয়োনতেম্পো এক বিবৃতিতে বলেন, ‘রেকর্ডগড়া সবচেয়ে উষ্ণতম জুলাইয়ের দুই বছর পর বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রার এই ধারাবাহিকতা থেমেছে। তবে এর অর্থ এই নয় যে জলবায়ু পরিবর্তন থেমে গেছে। আমরা এখনো উষ্ণ পৃথিবীর প্রভাব লক্ষ করছি।’

বিভ্রান্তিকরভাবে কমছে

গত জুন মাসের মতো জুলাই মাসেও আগের দুই বছরের তুলনায় তাপমাত্রা সামান্য কমেছে। যা প্রাক্‌-শিল্প যুগের (১৮৫০-১৯০০) সময়ের তুলনায় গড়ে ১ দশমিক ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।

২০২৩ ও ২০২৪ সালে তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছিল, যা ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে নির্ধারিত ‘নিরাপদ মাত্রার’ সীমা অতিক্রম করেছে।

তবে তুলনামূলকভাবে সামান্য মনে হওয়া এই বৃদ্ধি বিশ্বে যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে। ঝড়, তাপপ্রবাহ ও অন্যান্য চরম আবহাওয়ার ঘটনা আরও প্রাণঘাতী ও ধ্বংসাত্মক হয়েছে।

কার্লো বুয়োনতেম্পো বলেন, ‘জুলাই মাসেও আমরা চরম তাপপ্রবাহ ও বিপর্যয়কর বন্যার মতো ঘটনায় উষ্ণায়নের প্রভাব দেখেছি।’

উষ্ণতম জুলাই মাসের রেকর্ডভাঙা তাপমাত্রার ধারাবাহিকতা শেষ হলেও অনেক অঞ্চলে এখনো চরম আবহাওয়া বিরাজ করছে। ৫ আগস্ট, টোকিও.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র কর ড

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলিম সভ্যতায় রসায়নের সোনালি যুগ

গোলাপজলের মিষ্টি সুবাস থেকে শুরু করে কেরোসিনের জ্বালানি শক্তি—মুসলিম সভ্যতার রসায়নবিদরা একটি সমৃদ্ধ রসায়নের জগত উপহার দিয়েছেন। নবম শতাব্দী থেকে তারা পাতন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জীবনকে আরও সুন্দর ও কার্যকর করেছেন। তাদের আবিষ্কার আধুনিক রসায়নের ভিত্তি স্থাপন করেছে, যা আজও আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হয়।

এই নিবন্ধে জাবির ইবন হাইয়ান, আল-রাজি ও আল-কিন্দির মতো পথপ্রদর্শকদের হাত ধরে মুসলিম সভ্যতার রসায়নের সোনালি যুগের সন্ধান করা হয়েছে।

পাতনের প্রথম ফল ছিল গোলাপজল, যা ছিল খাবার, পানীয়, সুগন্ধি ও প্রসাধনীতে অপরিহার্য। আল-কিন্দি সুগন্ধির রসায়ন বিষয়ে একটি গ্রন্থ লিখেছিলেন, যাতে ছিল ১০৭টি ভিন্ন সুগন্ধির রেসিপি।পাতন প্রক্রিয়া: রসায়নের হৃৎপিণ্ড

নবম শতকের মাঝামাঝি মুসলিম রসায়নবিদরা স্ফটিকায়ন, জারণ, বাষ্পীভবন, পরিশোধন ও ফিল্টারেশনের মতো প্রক্রিয়া সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। (১০০১ ইনভেনশনস: দি এন্ডিউরিং লিগ্যাসি অব মুসলিম সিভিলাইজেশন, ৪র্থ সংস্করণ, পৃ. ৯০)

তাদের পরীক্ষাকে নির্ভুল করতে তারা সূক্ষ্ম দাঁড়িপাল্লা আবিষ্কার করেন, যা রাসায়নিক নমুনা ওজনের জন্য ব্যবহৃত হতো। এই পরীক্ষাগুলোর পাশাপাশি তারা নতুন তাত্ত্বিক ধারণা ও রাসায়নিক ধারণা প্রবর্তন করেন, যার কিছু কিছু টিকে ছিল শতাব্দীর পর শতাব্দী। পাতন প্রক্রিয়া ছিল তাদের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান, যা তরল পদার্থকে ফুটিয়ে তার বিশুদ্ধ উপাদান আলাদা করার একটি শিল্প ছিল।

পাতনের প্রথম ফল ছিল গোলাপজল, যা ছিল খাবার, পানীয়, সুগন্ধি ও প্রসাধনীতে অপরিহার্য। আল-কিন্দি সুগন্ধির রসায়ন বিষয়ে একটি গ্রন্থ লিখেছিলেন, যাতে ছিল ১০৭টি ভিন্ন সুগন্ধির রেসিপি। (১০০১ ইনভেনশনস: দি এন্ডিউরিং লিগ্যাসি অব মুসলিম সিভিলাইজেশন, ৪র্থ সংস্করণ, পৃ. ৯১)

এই প্রক্রিয়া আধুনিক সুগন্ধি শিল্পের ভিত্তি স্থাপন করেছে।

আরও পড়ুনমুসলিম সমাজকে বিজ্ঞানমুখী করার উপায়০২ আগস্ট ২০২৫জাবির ইবন হাইয়ান: রসায়নের পথিকৃৎ

জাবির ইবন হাইয়ান (৭২২-৮১৫), পশ্চিমে গেবার নামে পরিচিত, ছিলেন রসায়নের জনক। কুফায় একজন ওষুধ ব্যবসায়ীর পুত্র হিসেবে তিনি পরিশোধন, স্ফটিকায়ন, পাতন, জারণ ও ফিল্টারেশনের মতো প্রক্রিয়াগুলো উন্নত করেন। (আর. আরনালদেজ-এল. ম্যাসিগনন, ইন অ্যানসিয়েন্ট অ্যান্ড মেডিয়েভাল সায়েন্স, লন্ডন: থেমস অ্যান্ড হাডসন: ১৯৬৩, পৃ. ৪১৩)

তিনি এমন কাগজ তৈরির চেষ্টা করেছিলেন যা পুড়ত না এবং এমন কালি যা অন্ধকারে পড়া যায়।

তিনি অ্যালেম্বিক স্টিল ব্যবহার করে পাতন প্রক্রিয়া পরিচালনা করতেন, যা তরলকে ফুটিয়ে বিশুদ্ধ উপাদান সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত হতো। তিনি এমন কাগজ তৈরির চেষ্টা করেছিলেন যা পুড়ত না এবং এমন কালি যা অন্ধকারে পড়া যায়।

জাবির পদার্থের শ্রেণিবিভাগ ও রাসায়নিক জ্ঞান সংগঠনের নতুন পদ্ধতি প্রবর্তন করেন। তাঁর রচিত গ্রন্থগুলো পরবর্তী শতাব্দীতে ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত হয় এবং ১৭শ শতাব্দী পর্যন্ত পুনঃপ্রকাশিত হয়। (১০০১ ইনভেনশনস: দি এন্ডিউরিং লিগ্যাসি অব মুসলিম সিভিলাইজেশন, ৪র্থ সংস্করণ, পৃ. ৯৩)

তাঁর কাজ আধুনিক রসায়নের ভিত্তি স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মদ পাতন করে বিশুদ্ধ অ্যালকোহল তৈরি

সম্পর্কিত নিবন্ধ