বাংলাদেশের ওপর ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে মার্কিন প্রশাসন। গত ২ এপ্রিল বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের জন্য শুল্কহার হবে ৩৭ শতাংশ। পরে ৮ জুলাই তা কিছুটা কমিয়ে করা হয় ৩৫ শতাংশ। আর ৩১ জুলাই চূড়ান্তভাবে ২০ শতাংশ শুল্কহার নির্ধারণ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে বাংলাদেশ আপাতত খুশি। স্বস্তি এসেছে অনেকটা। তারপরও প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশ কি জিতল না হারল?

তার আগে জেনে নেওয়া যাক কোন দেশের ওপর কত হারে শুল্কহার আরোপ করা হলো।

কোন দেশের ওপর কত শুল্ক

যুক্তরাষ্ট্র সরকার পাল্টা শুল্ক আরোপ–সংক্রান্ত যে নির্বাহী আদেশ জারি করেছে, সেখানে কোন দেশের ওপর কত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, তার একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী মোট ৬৯টি দেশ ও অঞ্চল যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কনীতির আওতায় পড়েছে। এর মধ্যে দেশের সংখ্যা ৬৬। তালিকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য দুটি পৃথক হারভিত্তিক শ্রেণি এবং সবচেয়ে ছোট অঞ্চল হিসেবে ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জকে অন্তর্ভুক্ত রাখা হয়েছে।

এখন দেখা যাক শুল্কহার অনুযায়ী কোন দেশ কোন শ্রেণিতে পড়ছে।

১০ শতাংশ শুল্ক: তিনটি দেশের ওপর ১০ শতাংশ হারে পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। যেমন ব্রাজিল, ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ ও যুক্তরাজ্য।

এর বাইরে তালিকায় যেসব দেশের নাম নেই, তাদের সবার ওপরেই ১০ শতাংশ হারে শুল্কহার ধার্য করা হয়েছে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে, এসব দেশ তাদের সঙ্গে ন্যায্য বাণিজ্য সম্পর্ক বজায় রেখে চলছে।

১৫ শতাংশ শুল্ক: সর্বোচ্চসংখ্যক দেশের ওপর বসানো হয়েছে ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক। এ রকম দেশের সংখ্যা ৩৯। যেমন আফগানিস্তান, অ্যাঙ্গোলা, বলিভিয়া, বতসোয়ানা, ক্যামেরুন, চাদ, কোস্টারিকা, আইভরি কোস্ট, কঙ্গো (ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক), ইকুয়েডর, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, ফিজি, ঘানা, গায়ানা, আইসল্যান্ড, ইসরায়েল, জাপান, জর্ডান, লেসোথো, লিচেনস্টাইন, মাদাগাস্কার, মালাউই, মরিশাস, মোজাম্বিক, নামিবিয়া, নাউরু, নিউজিল্যান্ড, নাইজেরিয়া, উত্তর মেসিডোনিয়া, নরওয়ে, পাপুয়া নিউগিনি, দক্ষিণ কোরিয়া, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, তুরস্ক, উগান্ডা, ভানুয়াতু, ভেনেজুয়েলা, জাম্বিয়া এবং জিম্বাবুয়ে।

এ ছাড়া ১৫ শতাংশ শুল্ক ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য প্রযোজ্য হবে। এর একটি ব্যাখ্যা আছে। যেমন যেসব ইউরোপীয় পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র আগে থেকেই কম শুল্ক (১৫ শতাংশের নিচে) নিচ্ছিল, তাদের ওপর এখন এমনভাবে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে, যাতে মোট শুল্কহার হয় ১৫ শতাংশ। অর্থাৎ ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য প্রযোজ্য শুল্কহার হচ্ছে ১৫ শতাংশ।

১৮ শতাংশ শুল্ক: কেবল একটি দেশের জন্য এই হার আরোপ করা হয়েছে। দেশটি হচ্ছে নিকারাগুয়া।

১৯ শতাংশ শুল্ক: ৬টি দেশ এই শ্রেণিতে রয়েছে। যেমন কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ড।

২০ শতাংশ শুল্ক: বাংলাদেশসহ আরও তিনটি দেশের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। অন্য তিন দেশ হলো, শ্রীলঙ্কা, তাইওয়ান ও ভিয়েতনাম।

২৫ শতাংশ শুল্ক: এই তালিকায় আছে ৫টি দেশ। যেমন ব্রুনেই, ভারত, কাজাখস্তান, মলদোভা ও তিউনিসিয়া।

৩০ শতাংশ শুল্ক: চারটি দেশের ওপর ৩০ শতাংশ হারে পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। যেমন আলজেরিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, লিবিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা।

৩৫ শতাংশ শুল্ক: তালিকায় আছে দুটি দেশ। যেমন ইরাক ও সার্বিয়া।

৩৯ শতাংশ শুল্ক: মাত্র একটি দেশ, সুইজারল্যান্ড।

৪০ শতাংশ: মিয়ানমার, লাওস।

৪১ শতাংশ শুল্ক: সিরিয়া।

তাহলে বাংলাদেশের প্রকৃত চিত্রটা কেমন হলো?

বাংলাদেশ কী পেল

যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে ৮৪৪ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে দেশটি। এসব পণ্যের ওপর দেশটি শুল্ক আদায় করেছে ১২৭ কোটি ডলার।

ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের ওপর ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। ৭ আগস্ট ২০২৫ থেকে এই শুল্ক কার্যকর হচ্ছে। আগের গড় শুল্কহার ছিল ১৫ শতাংশ, নতুন শুল্কসহ গড় হার হবে ৩৫ শতাংশ। তবে পণ্যভেদে শুল্কহার আলাদা হবে। কারণ, মোস্ট ফেডারড নেশন বা এমএফএন অনুযায়ী পণ্যভেদে যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব হার শূন্য থেকে ৩৫০ শতাংশ পর্যন্ত।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের গড় কার্যকর শুল্ক ২০২৫ সালের ১ জুন পর্যন্ত ছিল ১৫ দশমিক ৬০ শতাংশ, নতুন শুল্ক কার্যকর হলে তা ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।

পোশাক খাত: ২০২৪ সালে গড় শুল্কহার ছিল ১৬.

৭৭ শতাংশ, পাল্টা ২০ শতাংশ শুল্ক যুক্ত হলে নতুন গড় কার্যকর শুল্ক দাঁড়াবে ৩৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ। পোশা ভেদে উদাহরণ হচ্ছে:

ম্যানমেইড ফাইবার সোয়েটার: আগের শুল্ক ৩২ শতাংশ, নতুন মোট শুল্ক ৫২ শতাংশ।

তুলার সুতা দিয়ে তৈরি সোয়েটার: আগের শুল্ক ১৬ দশমিক ৫০ শতাংশ, নতুন মোট শুল্ক ৩৬ দশমিক ৫০ শতাংশ।

সুতার কাপড়ে তৈরি ছেলেদের আন্ডারপ্যান্ট: আগের শুল্ক ৬ শতাংশ, নতুন মোট শুল্ক ২৬ শতাংশ।

নিম্নশুল্কবিশিষ্ট পোশাক (যেমন ১ শতাংশ): নতুন মোট শুল্ক হবে ২১ শতাংশ।

জুতা: ২০২৪ সালে গড় শুল্কহার ছিল ৮ দশমিক ৫ শতাংশ, পাল্টা শুল্কসহ গড় মোট শুল্ক ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ, পণ্যভেদে শুল্কহার শূন্য থেকে ৫৫ শতাংশ।

হ্যাটস ও হেডগিয়ার: আগের গড় শুল্কহার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ, পাল্টা শুল্কসহ নতুন গড় হার ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ, পণ্যভেদে শুল্ক শূন্য থেকে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ।

চামড়াজাত পণ্য আগের গড় শুল্কহার: ১২ দশমিক ২০ শতাংশ, নতুন গড় হার: ৩২ দশমিক ২০ শতাংশ, পণ্যভেদে হার শূন্য থেকে ২০ শতাংশ।

চামড়ার হাতব্যাগ: আগের শুল্ক ৯ শতাংশ, নতুন মোট শুল্ক ৩১ শতাংশ।

এখন প্রশ্ন হলো, মার্কিন প্রশাসন কিসের ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন দেশের ওপর ভিন্ন ভিন্ন শুল্ক আরোপ করল।

একটি নির্বাহী আদেশে সই করার পর সেটি দেখাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র নত ন ম ট শ ল ক ন দ শ র ওপর আগ র শ ল ক ইউর প য় ক র যকর র জন য অন য য়

এছাড়াও পড়ুন:

যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন

যশোরের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহের জন্য খেজুরগাছ প্রস্তুতের (রস সংগ্রহের উপযোগী করা) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে চৌগাছা উপজেলার হায়াতপুর গ্রামে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনুর আক্তার।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, রস-গুড় সংগ্রহের জন্য গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি খেজুরগাছ প্রস্তুত করা হবে। এ বছর জেলায় অন্তত তিন লাখের বেশি গাছ প্রস্তুত করা হবে। যশোরে খেজুরের রস ও গুড়ের ১০০ কোটির বেশি টাকার বাজার রয়েছে। অন্তত ছয় হাজার কৃষক এই পেশায় যুক্ত।

যশোরের খেজুর গুড় জিআই পণ্য হলো যেভাবে

২০২২ সালে চৌগাছার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (বর্তমানে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট) ইরুফা সুলতানা খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য সংরক্ষণে খেজুর গুড়ের মেলা, গাছিদের প্রশিক্ষণ, গাছি সমাবেশ, গাছিদের সমবায় সমিতি গঠন, খেজুরগাছ রোপণ ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন। একই বছর জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য যশোরের খেজুর গুড়ের আবেদন করেন তিনি। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সেটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায়।

শতকোটি টাকার বাজার ধরতে ব্যস্ত গাছিরা

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যশোরের প্রায় ছয় হাজার গাছি খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে খেজুরগাছ প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে। গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। খেজুরগাছ সংরক্ষণ, রোপণ, গাছিদের প্রশিক্ষণ, প্রণোদনাসহ নানাভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে গুড় উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজার সম্প্রসারণে কাজ করছে কৃষি বিভাগ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যশোর জেলায় খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫টি। এর মধ্যে রস আহরণের উপযোগী গাছের সংখ্যা ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি। গাছ থেকে ৩ কোটি ৭১ লাখ ৩ হাজার লিটার রস ও ২ হাজার ৭৪২ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজারদর অনুযায়ী প্রতি লিটার রসের দাম ৩৫ টাকা ও গুড়ের কেজি ৩৪০ টাকা। সেই হিসাবে রস ও গুড়ের বাজার দর ৯৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।

চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রামের গাছি আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমার দাদা খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দাদার সঙ্গে বাবাও যুক্ত ছিলেন। বাবার পেশায় আমিও যুক্ত হয়েছি। বাবা আর আমি এবার ৩০০টি খেজুরগাছ থেকে রস-গুড় তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছি। গতবছর ভালো দাম পেয়েছি। এবারও ভালো দাম পাব বলে আশা করি।’

গাছিরা জানান, কার্তিক মাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই খেজুরগাছ ছেঁটে রস ও গুড় তৈরির প্রস্তুতি শুরু করেন তাঁরা। শীত মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষকদের অন্যতম আয়ের উৎস এটি। এখানকার কারিগরদের দানা পাটালি তৈরির সুনাম রয়েছে। পাটালি ও ঝোলা গুড় তৈরি ছাড়াও চাষিরা শীতের ভোরে ফেরি করে কাঁচা রস বিক্রি করেন। কাঁচা রস প্রতি মাটির ভাঁড় ১৫০-২০০ টাকা, দানা গুড় ৩৫০-৪০০ টাকা আর পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকায় বিক্রি হয়।

অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কেনারহাটের উদ্যোক্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর আমাদের কাছে ভোক্তার চাহিদা ছিল সাড়ে ছয় হাজার কেজি পাটালি গুড়। সরবরাহ করতে পেরেছিলাম দুই হাজার কেজি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিবৃষ্টি, শীত কম হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী পাটালি গুড় সরবরাহ করতে পারিনি। এ বছর ইতিমধ্যে অর্ডার আসতে শুরু করেছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৮.১৭%
  • ধ্বংসস্তূপেই ঋত্বিকের জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপন, পৈতৃক ভিটায় চলচ্চিত্র কেন্দ্র নির্মাণের দাবি
  • নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ৪০৩ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ
  • জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে নাগরিক সেবার মানোন্নয়নের তাগিদ ডিএসসিসির প্রশাসকের
  • বহুরূপী শিক্ষাবৈষম্যের বহুমাত্রিক আঘাত
  • শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ দিলো পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স
  • লরা উলভার্ট: হিমালয়ের চূড়ায় এক নিঃসঙ্গ শেরপা
  • বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক অলিম্পিক চ্যাম্পিয়নের মৃত্যু
  • শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা
  • যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন