ছেলে মাদকাসক্ত, অতিষ্ঠ হয়ে পুলিশে দিলেন মা
Published: 7th, August 2025 GMT
ঝালকাঠির নলছিটিতে অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মাদকাসক্ত ছেলেকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন এক মা। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার তালতলা বাজার এলাকা থেকে ফরিদা বেগম (৫২) নামের ওই নারী নিজের ছেলে সোহাগ জোমাদ্দারকে (৩২) পুলিশের হাতে তুলে দেন।
নলছিটি থানায় ৪ আগস্ট একটি লিখিত অভিযোগ করেন ফরিদা বেগম। অভিযোগে তিনি বলেন, তাঁর ছেলে দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত। কাজকর্ম না করে প্রায়ই টাকার জন্য তাঁকে চাপ দেন। টাকা না পেলে গালাগাল করেন, ঘরে অশান্তি সৃষ্টি করেন এবং হুমকি দেন। ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় এক লাখ টাকা দাবি করে তাঁর বসতঘরের আসবাব ভাঙচুর করেন ও কাপড়চোপড় পুড়িয়ে দেন। এতে তাঁর প্রায় ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়।
জানতে চাইলে ফরিদা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি বাধ্য হয়ে থানায় অভিযোগ দিয়ে নিজেই পুলিশকে দিয়ে ধরিয়ে দিয়েছি। আমার সন্তানের বিরুদ্ধে পুলিশ যেন আইনগত ব্যবস্থা নেয় আর সে যেন ভালো হয়ে যায়, সে আশা রাখি।’
নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুস সালাম বলেন, ‘অভিযুক্ত সোহাগকে আমরা হেফাজতে নিয়েছি। তাঁর বিরুদ্ধে মাদকসেবন, হুমকি, ভাঙচুরসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে। মা নিজেই উপস্থিত থেকে ছেলেকে ধরিয়ে দিয়েছেন। তাঁকে আদালতে পাঠানো হবে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অভিভাভকহীন ২ নবজাতক পেল নাম-ঠিকানা
খুলনায় উদ্ধারকৃত অভিভাবকহীন দুটি নবজাতক পেয়েছে নাম ও পরিবার। নাম দেয়া হয়েছে সাফিরা মুমতাহিনা ও ফাতিমা জাহরা নূর। শিশু দুটিকে পাওয়ার জন্য ৫৩টি পরিবারের আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে আজ বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বিকেলে খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কন্যা নবজাতক দুটিকে তাদের নতুন অভিভাবকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
নিঃসন্তান দুটি পরিবার নবজাতক কাছে পেয়ে কোলে তুলে নেন। এ সময় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তারা সকল নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে নিজেদের গর্ভজাত সন্তানের মতো করেই লালন-পালন করবেন এ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
গত ২৭ জুলাই খুলনার ফুলতলা উপজেলার একটি সড়কের পাশ থেকে উদ্ধার করা হয় একটি নবজাতককে। জন্মের পরপরই কে বা কারা তাকে ফেলে যায় সেখানে। পরবর্তীতে উপজেলা প্রশাসনের হাত ঘুরে পরে তার স্থান হয় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। অপর নবজাতকটি গত ২৯ জুলাই পাইকগাছা উপজেলায় এক মানসিক ভারসাম্যহীন নারী জন্ম দেয়। নবজাতকের বাবার পরিচয় মেলেনি।
আরো পড়ুন:
চুয়াডাঙ্গার ভৈরব নদীতে ডুবে ২ বন্ধুর মৃত্যু
রাজশাহীতে ২ মাথা নিয়ে শিশুর জন্ম
গণমাধ্যম ও ফেসবুকে ফুটফুটে নবজাতক দুটির ছবি ছড়িয়ে পড়লে দত্তক নিতে আগ্রহী নিঃসন্তান ও কন্যাবিহীন দম্পতিরা সমাজসেবা অধিদপ্তরে আবেদন করেন। মোট ৫৩টি আবেদন জমা পড়ে। ৩ আগস্ট পর্যন্ত এ আবেদন গ্রহণ করা হয়। এরপর খুলনা জেলা শিশুকল্যাণ বোর্ড আবেদনকারীদের তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে স্ট্যাম্পে লিখিত অঙ্গীকারের মাধ্যমে সকল নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে নবজাতক দুটিকে দুটি পরিবারের হাতে হস্তান্তর করে।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন কর্মকর্তা আবিদা আফরিন এ প্রতিবেদককে জানান, দুটি নবজাতককে দত্তক নিতে মোট ৫৩টি পরিবার আবেদন করে। আবেদনকারীদের অনেকগুলো শর্তের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১৫টি শর্ত যাচাই-বাছাই করা হয়। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, আর্থিক ও শারীরিক সক্ষমতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা ইত্যাদি। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট দম্পতিদের সম্পত্তির অংশীদারিত্ব এবং ভবিষ্যতে তাদের সন্তান ধারণের সক্ষমতা নেই, এ সব বিষয় দেখা হয়। যাতে করে নবজাতকরা শতভাগ অধিকার নিয়ে সংশ্লিষ্ট পরিবার দুটিতে বেড়ে উঠতে পারে এবং সন্তানের পরিচয় পরিপূর্ণভাবে পেতে পারে।
তিনি আরো জানান, প্রতিমাসে সংশ্লিষ্ট উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শিশু দুটির পরিবারে খোঁজ নিয়ে তাদের অবস্থান সম্পর্কে অবগত হবেন। এছাড়া প্রতি তিন মাসে একবার জেলা সমাজসেবা দপ্তর তাদের খোঁজখবর নেবে। এভাবে প্রথম ছয় মাস তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। এছাড়া যে কোনো সময় অসুস্থ হলে এ তথ্য অবশ্যই সমাজসেবা দপ্তরকে জানাতে হবে। তবে শর্ত লঙ্ঘন হলে বা নবজাতকদের লালন-পালনে ব্যাঘাত সৃষ্টি হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
দুই নবজাতক গ্রহণ করে আবেগ আপ্লুত দুই অভিভাবক এ প্রতিবেদককে জানান, তাদের ৮-৯ বছরের বিবাহিত জীবনে সন্তান হয়নি। হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এ কারণে তারা সন্তান পাওয়ার আশায় আবেদন করেছিলেন। এখন পাওয়ার পর তাদের অপূর্ণতা পূর্ণতা পেয়েছে। এ আনন্দের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না।
নবজাতক দুটিকে নতুন পরিবারের কাছে হস্তান্তরের পর অনুভূতি প্রকাশ করে খুলনার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘‘একটি মহৎ ও ভালো কাজের সাক্ষী হলাম। নবজতক দুটি তাদের পরিচয় পেল, অভিভাবক পেল, নতুন নাম পেল। আমরা সকলে তাদের কল্যাণ ও সুস্বাস্থ্য কামনা করি।’’
এ সময় সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক কানিজ মোস্তফা ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সুরাইয়া সিদ্দিকাসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/নুরুজ্জামান/বকুল