ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে সৃষ্ট উত্তেজনাকর পরিস্থিতি এড়ানো যেত বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। তিনি মনে করেন, ছাত্রসংগঠনগুলোর একটি রূপরেখা প্রণয়ন করে নিজেদের মধ্যে চুক্তি বা বোঝাপড়ায় আসা উচিত ছিল।

আজ শনিবার বিকেলে রাজশাহীর তেরখাদিয়া এলাকায় বিভাগীয় স্টেডিয়ামে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এ মন্তব্য করেন।

প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ-২০২৫–এর সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো.

রেজাউল মাকছুদ জাহেদী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার, পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম প্রমুখ।

সম্প্রতি ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে গতকাল রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যাপক বিক্ষোভের পর প্রশাসন সব ধরনের ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমার মনে হয় যে এটা এই পর্যায়ে আসত না, যদি ছাত্রসংগঠনগুলো নিজেরা বসে একটা সোশ্যাল কন্ট্র্যাক্ট বা নিজেরা একটা বোঝাপড়ায় আসতে পারত। যেহেতু ৫ আগস্টের পর সব জায়গায় সংস্কার হচ্ছে, ছাত্ররাজনীতির বিষয়েও ছাত্রসংগঠনগুলোর একটা নতুন রূপরেখায় একমত হওয়া উচিত ছিল।’

উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘হল ও একাডেমিক এরিয়াতে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি কীভাবে চলবে বা চলবে কি না, এটা যদি আগেই ছাত্রসংগঠনগুলো বসে একটা চুক্তিতে আসত, এ ক্ষেত্রে আমার মনে হয়, ছাত্ররাজনীতির প্রতি যে বিদ্বেষমূলক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেটা হতো না। আমাদের ছাত্রসংগঠনগুলোর এখানে আরেকটু ম্যাচিউর (পরিপক্ব) হওয়ার সুযোগ ছিল।’

বিশ্ববিদ্যালয় হলে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের ব্যাপারে উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করা হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে উপদেষ্টা রাজি হননি।

রাজশাহীতে বিপিএল খেলার আয়োজনের ব্যাপারে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘তিনটি স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ম্যাচ ও বিপিএলের ম্যাচগুলো হয়ে থাকে। আমরা একটু ডিসেন্ট্রালাইজ করার জন্য উত্তরবঙ্গের দিকে রাজশাহী স্টেডিয়াম, দক্ষিণবঙ্গের দিকে খুলনা কিংবা বরিশাল স্টেডিয়াম নিয়েছি। আর সামনের বছর থেকেই বিপিএল আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করি, সংস্কার শেষে রাজশাহী স্টেডিয়ামে বিপিএলের কিছু ম্যাচ আয়োজন করতে পারব।’

এর আগে সকালে উপদেষ্টা রাজশাহী সার্কিট হাউসে ভার্চ্যুয়ালি স্থানীয় সরকার বিভাগের ১২টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। দিনব্যাপী সফরে তিনি নাটোরেও বিভিন্ন প্রকল্প উদ্বোধন করেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স থ ন য় সরক র উপদ ষ ট ব প এল

এছাড়াও পড়ুন:

রাজনৈতিক দলগুলোকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সংস্কারের প্রতি প্রতিশ্রুতি দেখাতে হবে

বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রের অবনতির পর্বে, গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। এ জন্য সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গণতন্ত্রের পথে উত্তরণে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কারের প্রতি শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রতিশ্রুতি দেখাতে হবে।

চলতি মাসে বাংলাদেশ ঘুরে যাওয়া ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক উপকমিটির প্রতিবেদনে এ মন্তব্য করা হয়েছে।

গতকাল বুধবার ফ্রান্সের স্ত্রাসবুর্গে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের দপ্তরে প্রতিবেদনটি পেশ করা হয়েছে। প্রতিবেদন উপস্থাপনের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সফরে আসা প্রতিনিধিদলের প্রধান মুনির সাতোরি।

মুনির সাতোরি বলেন, ‘আমাদের সফরের দুটি উদ্দেশ্য ছিল। একটি হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম পর্যালোচনা করা ও গণতান্ত্রিক উত্তরণে মানবাধিকারের গুরুত্ব তুলে ধরা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, প্রায় বিস্মৃত হতে যাওয়া রোহিঙ্গাদের পাশে থাকা। রোহিঙ্গা সংকট যাতে হারিয়ে না যায়, সে জন্য এটি ইইউর রাজনৈতিক এজেন্ডায় আবারও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারকাজ নিয়ে মুনির সাতোরি বলেন, ‘এখনো কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে আমরা সহযোগিতার প্রস্তাব করেছি।’

প্রতিনিধিদলের সদস্য ইজাবেল উইসেলার-লিমা বলেন, যখন বিশ্বে নাটকীয়ভাবে গণতন্ত্র অবনতির পথে, তখন বাংলাদেশ পথ পরিবর্তন করে দেখিয়েছে যে গণতন্ত্রের পথে যাওয়া যায়। তারা চেষ্টা করছে গণতন্ত্রের দিকে যাওয়ার। আর এ জন্য সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এটা আশা করা জরুরি যে সামনে নির্বাচন হবে এবং তা প্রতিযোগিতামূলক হবে, যা হওয়া উচিত। অন্তর্বর্তী সরকার এ জন্য চেষ্টা করছে।

রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গে ইজাবেল বলেন, ‘কক্সবাজার বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির। সম্প্রতি ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজা সংকটের কারণে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি মানুষ ভুলে যাচ্ছে। এ সংকট আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠেছে। কারণ, মিয়ানমার তাদের দায়িত্ব নিচ্ছে না। আর বাংলাদেশও দরিদ্র দেশ। বাংলাদেশের নিজেরই বিশাল জনসংখ্যা রয়েছে। ফলে রোহিঙ্গাদের জনগোষ্ঠীর মধ্যে নিয়ে নেওয়া তাদের জন্য সম্ভব নয়। রোহিঙ্গা সংকটের এখনকার চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বাংলাদেশ বর্তমানে গণতন্ত্রের পথে উত্তরণে অবস্থায় রয়েছে।’

প্রতিনিধিদলের আরেক সদস্য আরকাদিউজ মুলারজিক বলেন, ‘রোহিঙ্গা শিবিরে সবচেয়ে বেশি মানবিক অনুদান আসে ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো থেকে, যদিও আগে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা দিত। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের প্রতি প্রতিশ্রুতি খুবই নগণ্য, এটি আশ্চর্যজনক এবং গ্রহণযোগ্য নয়। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর বদলে অনেক দূরে থাকা ইউরোপের রাষ্ট্রগুলোকে এর দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে রোহিঙ্গা মুসলিমদের জন্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর বড় অংশগ্রহণকারী হওয়া উচিত ছিল। বিষয়টি নিয়ে ভারতের সঙ্গেও কথা বলা উচিত। কারণ, বর্তমানে আমরা ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি নিয়ে দর–কষাকষি করছি।’

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিনিধিদলের সদস্য ক্যাটারিনা ভিয়েরা বলেন, এটি পরিষ্কার যে বাংলাদেশ ইতিহাসে দেশটি বর্তমানে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এটি একটি সুযোগ সত্যিকারের অগ্রগতির। শিগগিরই হয়তো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের ভেতরে গ্রহণযোগ্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সবাই নির্বাচনটি স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দেখতে চায়। এ বিষয়গুলো শুধু রাজনৈতিক নেতৃত্বের থেকে আসেনি, এসেছে নাগরিক সমাজ, ছাত্র ও যুব আন্দোলনের পক্ষ থেকেও, যাদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। তারা নিজেদের মধ্যে সংলাপের মধ্যে রয়েছে। যদিও অনুতাপের বিষয় হচ্ছে ধর্মীয়, লিঙ্গ ও নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু এবং নারীদের এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ নেই। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের সমাজ গঠনে এখানে উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে।

আরকাদিউজ আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে সংস্কারে উৎসাহ, যারা সংস্কারে কাজ করছেন, তাঁদের প্রতি সংহতি প্রকাশ ও গণতান্ত্রিক কাঠামোয় গঠনমূলক সহযোগিতা করে ইইউ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশ্ব যখন গণতন্ত্রের উল্টো পথে যাত্রা করছে, তখন বাংলাদেশ নিয়ে আমাদের আশা করার অবকাশ রয়েছে। গণতন্ত্রের পথে আরও অনেক কাজ করতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় বাংলাদেশ সামনে দিকে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেবে বলে মনে করি। এটি এখন নির্ভর করছে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর, বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কারের প্রতি শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রতিশ্রুতি দেখাতে হবে।’

১৬ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার উপকমিটির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশ সফর করে। এ সময়ে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক দল, বেসরকারি সংস্থা, নাগরিক সমাজ সংগঠন, শ্রমিক প্রতিনিধি এবং মাঠপর্যায়ে কর্মরত বহুপক্ষীয় সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে।

এ ছাড়া প্রতিনিধিদলটি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরও পরিদর্শন করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ