রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় ভ্যানচোর সন্দেহে পিটিয়ে দুই ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের বুড়িরহাট বটতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর এলাকার বাসিন্দা রুপলাল দাস (৪০) ও মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়াভাটা গ্রামের প্রদীপ দাস (৩৫)। প্রদীপ দাস সম্পর্কে রুপলাল দাসের ভাগনির স্বামী ছিলেন। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রুপলাল দাস জুতা সেলাইয়ের কাজ করতেন। আর প্রদীপ দাস ভ্যান চালাতেন।

নিহত ব্যক্তিদের পরিবার, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিঠাপুকুর উপজেলার শ্যামপুর এলাকার এক তরুণের সঙ্গে রুপলাল দাসের মেয়ে নুপুর দাসের বিয়ে কথাবার্তা চলছিল। আজ রোববার বিয়ের দিন–তারিখ ঠিক করার কথা ছিল। এ জন্য মিঠাপুকুর থেকে নিজের ভ্যান চালিয়ে আত্মীয় রুপলাল দাসের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন প্রদীপ দাস। কিন্তু গ্রামের ভেতর দিয়ে রাস্তা না চেনায় প্রদীপ দাস সয়ার ইউনিয়নের কাজীরহাট এলাকায় এসে রুপলালকে ফোন করেন। রুপলাল সেখানে যান। তাঁরা দুজনে ভ্যানে চড়ে রুপলালের বাড়ি ঘনিরামপুর গ্রামের দিকে রওনা হন। রাত ৯টার দিকে তারাগঞ্জ-কাজীরহাট সড়কের বটতলা এলাকায় পৌঁছালে ভ্যানচোর সন্দেহে তাঁদের দুজনকে থামান স্থানীয় কয়েকজন। এরপর সেখানে লোক জড়ো হতে থাকে।

পরিবার, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে আরও জানা গেছে, গত ২৮ জুলাই ওই এলাকায় এক শিশুকে হত্যা করে একটি ভ্যান চুরি করা হয়। এ ঘটনায় স্থানীয় লোকজন ক্ষুব্ধ ছিলেন। একপর্যায়ে স্থানীয় লোকজন প্রদীপ দাসের ভ্যানে থাকা বস্তা থেকে চারটি প্লাস্টিকের ছোট বোতল বের করেন। সেগুলোতে চোলাই মদ ছিল বলে পরিবারের ভাষ্য। একটি বোতল খুললে ভেতরে থাকা তরলের ঘ্রাণে সেখানকার দুই ব্যক্তি অসুস্থ বোধ করেন বলে জানান। এ ঘটনায় লোকজনের সন্দেহ আরও বাড়ে। অজ্ঞান করে ভ্যান চুরি সন্দেহে তাঁদের মারধর শুরু করেন। বটতলা থেকে মারতে মারতে বুড়িরহাট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে নিয়ে আসা হয় তাঁদের। মারধরের একপর্যায়ে অচেতন হলে সেখানে ফেলে রাখা হয়। পরে রাত ১১টার দিকে তাঁদের উদ্ধার করে পুলিশ তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।

হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক রুপলাল দাসকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রদীপ দাসকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে আজ ভোরে তিনিও মারা যান বলেন নিশ্চিত করেছেন নিহত রুপলাল দাসের ভাই খোকন দাস।

তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ ফারুক বলেন, গণপিটুনিতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা প্রস্তুতি চলছে।

নিহত রুপলাল দাসের মা বৃদ্ধ লালিচা দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাবা, মোর ব্যাটা তো চোর নোয়ায়, জুতা সেলাই করি সংসার চালায়। ওক তো তারাগঞ্জের সবাই চেনে। ওয় তো কারও ক্ষতি করে নাই। ওর মেয়ের বিয়া ঠিক করার জন্য ভাগিন জামাই রাস্তা না চিনাই আনবার গেছিল। এটাই মোর বাবার কাল হইল। ওমার জানটা কারি নেইল। মোর ছাওয়ার ঘরোক যায় মারছে তাঁর বিচার চাও।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র পল ল দ স র উপজ ল র পর ব র এল ক য় এ ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

জাবিতে ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য ঘোষিত ছাত্রদলের হল কমিটিতে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ এবং ত্যাগীদের অবমূল্যায়নের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন মূল্যায়ন না পাওয়া নেতাকর্মীরা।

শুক্রবার (৮ আগস্ট) রাত দশটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে কাজী নজরুল ইসলাম হল, রফিক-জব্বার হল অতিক্রম করে জেনারেটর বাজার হয়ে পুনরায় বটতলায় শেষ হয়।

এসময় তারা ‘বৈষম্যের কমিটি, মানি না মানবো না’, ‘অনিয়মের কমিটি, মানি না মানবো না’, ‘পকেট কমিটি, মানি না মানবো না’, ‘সুপার ফাইভের কমিটি, মানি না মানবো না’, ‘ছাত্রলীগের কমিটি, মানি না মানবো না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

জানা যায়, একই দিনে দুপুরের দিকে জাবির ১৭টি আবাসিক হল ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করা হয়।

এছাড়া জানা যায়, গত ৮ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষ (৩৯ ব্যাচ) থেকে আহ্বায়ক এবং ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষ (৪০ ব্যাচ) থেকে সদস্যসচিব নিয়ে ঘোষিত ১৭৭ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটিকে বর্ধিত করা হয়েছে। নতুন বর্ধিত আহ্বায়ক কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে ৭৫ জন এবং সদস্য হিসেবে ২৯৬ জন জায়গা পেয়েছেন।

এই হল কমিটি ও বর্ধিত কমিটিতে ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতা–কর্মীরা ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলে রাতে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেওয়া জাবি শাখা ছাত্রদলের একজন যুগ্ম-আহ্বায়ক জানান, কমিটিতে ত্যাগী ও যোগ্য কর্মীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। কমিটি গঠনে স্বজনপ্রীতি করে এমন অনেককে রাখা হয়েছে, যারা বিগত আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী কোনো আন্দোলন সংগ্রামে ছিল না। কমিটিতে ছাত্রলীগের এবং বিতর্কিত অনেককে স্থান দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ তাদের।

মিছিল শেষে বটতলা এলাকায় জমায়েত হয়ে স্লোগান দেওয়ার সময় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ বছরের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান মোটরসাইকেলে সেই স্থান অতিক্রম করছিলেন। সেসময় তাকে ধাওয়া দেন যথাযথ মূল্যায়ন না পাওয়া নেতাকর্মীরা।

ঢাকা/আহসান/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুজনকে পিটিয়ে হত্যা : ‘এ্যালা মুই কেমন করি বাঁচিম, কার কাছোত বিচার চাইম’
  • যাচ্ছিলেন বিয়ের দিন ঠিক করতে, পথে ২ জনকে পিটিয়ে হত্যা
  • জাবিতে ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ
  • বাঘাইছড়িতে বৃষ্টি থামায় কমছে পানি, এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ
  • জাবিতে বামপন্থিদের মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীদের দুয়োধ্বনি