সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে দেশের মানুষের শঙ্কা এখনো কাটেনি বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেছেন, ‘দেশে এককভাবে নির্বাচন কন্ডাক্ট (পরিচালনা) করে জিতে যাওয়ার যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, মানুষের ভেতরে এখনো সে শঙ্কাটা কাটেনি যে নির্বাচন ফেয়ার (অবাধ ও সুষ্ঠু) হবে কি না। সে জন্য আমরা বলেছি, সরকারকে অনেকগুলো উদ্যোগ নিতে হবে। যাতে করে মানুষ কনফিডেন্স (আত্মবিশ্বাস) পায় যে এবার নির্বাচনটি সঠিক হবে। আমরা (ভোটার) ভোট দিতে যেতে পারব।’

তাঁর দল জামায়াতে ইসলামী সব সময় নির্বাচনের পক্ষে উল্লেখ করে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি মাসে যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে, সেই তারিখের ব্যাপারে জামাতের মৌলিক কোনো আপত্তি নেই।’

আজ রোববার রাজধানীর আঁগারগাওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন জামায়াতের নায়েবে আমির আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তাঁর নির্বাচনী এলাকা কুমিল্লা–১১ (চৌদ্দগ্রাম)–এর সীমানা নির্ধারণসংক্রান্ত বিষয়ে সিইসির সঙ্গে এ সাক্ষাৎ হয়েছে বলে জানান তিনি।

সিইসির সঙ্গে আলাপকালে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, নির্বাচনের আগে বিচার ও সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগেই আরও দুটো কাজ সারতে হবে আমাদের। একটা হচ্ছে বিচারকে দৃশ্যমান করতে হবে। সিম্বলিক করতে হবে। সকল বিচার এ সময়ে সম্ভব না, এটা আমরা জানি। কিন্তু এটা সিম্বলিক এবং দৃশ্যমান করতে হবে যে গভর্নমেন্ট বিচারে সিনসিয়ার (আন্তরিক) আছে। তারাও জুলাইয়ের চেতনাকে ধারণ করে।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে আলাপের প্রসঙ্গ তুলে জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘আমরা আজকে মাননীয় সিইসিকে বলেছি যে নির্বাচনের পূর্বশর্ত হচ্ছে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ (সবার জন্য সমান সুযোগ)। খেলার মাঠটা সমান হইতে হবে। কারওটা উঁচা–নিচা এটা হবে না। এবং উনি আমাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছেন। বলেছেন, যদিও এটা আজকে আমার জামাতের পক্ষ থেকে ও রকম পদ্ধতিমূলক নয়। তারপর উনি বলেছেন যে আমার দিক থেকে আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করব। এই ব্যাপারে আমি সিরিয়াস থাকব। আমি ইমানি দায়িত্ব মনে করেই দায়িত্ব নিয়েছি। কারও প্রতি কোনো রাগ–বিরাগ বা ফেভার আমি করব না। আমার জীবন থাকতে হলেও আমি এটাকে ফেয়ার ইলেকশনের জন্য যে ভূমিকা নেওয়ার, আমরা সেটা নেব। আমরা চিফ ইলেকশন কমিশনারের ওপরে এখনো আস্থা রাখতে চাই।’

কোনো দখলীয় নির্বাচনকে এ দেশের মানুষ গ্রহণ করবে না উল্লেখ করে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘পুলিশ, এসপি, ডিসি তাদের সঠিক নিরপেক্ষ লোকদের বসানো এবং বিভিন্ন জায়গায় সেট এবং ট্রান্সফার করা এগুলো খুবই জরুরি এবং আমরা সেটা দেখতে চাই। আমরা এ রকম একটি বাংলাদেশের মানুষ অথবা বাংলাদেশ আর কোনো রিগড মানে দখল বা আনফেয়ার ইলেকশন বাংলাদেশ সহ্য করার মতো ক্ষমতা বাংলাদেশের নেই। এ রকম কোনো কিছু হলে এ দেশের মানুষ আবার রাস্তায় নামবে এবং কোনো দখলীয় নির্বাচনকে এ দেশের মানুষ গ্রহণ করবে না।’

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো সুষ্ঠু নির্বাচনের লেভেলে (পর্যায়ে) পৌঁছায়নি, জামায়াতের পক্ষ থেকে এমন শঙ্কা প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে জানিয়েছেন সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করার কথা বলেছে বলে জানান তিনি।

কমিশন আসছে, ডিসেম্বর মাসে নির্বাচনের তারিখ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করবে, এমন তথ্য জানিয়ে সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘ইলেকশন কমিশন ফাইনাল ডেটটা ডিক্লেয়ার করবে। যেটা উনারা বলেছেন ডিসেম্বরে উনারা ডিক্লেয়ার করবেন। হাওএভার (অবশ্য) নির্বাচনের জন্য তো সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি সেটা হচ্ছে একটা ক্রেডিবল, ফেয়ার, ফ্রি, পার্টিসিপেটরি ইলেকশন। এটাই গণতন্ত্রের দাবি। এ দেশের মানুষের দাবি।’

নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার সবগুলো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করলে দলগুলোর নিজস্ব মতামতের বহিঃপ্রকাশের একটা সুযোগ ছিল বলে নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন জামায়াতের নায়েবে আমির। এ ছাড়া জুলাই সনদের বিষয়ে প্রয়োজনে গণভোট হতে পারে বলেও মত দেন সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।

সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে এই জামায়াত নেতা বলেন, ‘আমাদের কিছু বাড়তি পলিটিক্যাল দাবি আছে। যেটা সংসদে আমরা একটি অংশে একমত হয়েছি, সেটা হচ্ছে পিআর আপার হাউসে (উচ্চকক্ষ)। কিন্তু আমাদের দাবি হচ্ছে, পিআর টোটাল। আপার হাউস অ্যান্ড লোয়ার হাউস বোথ এবং সেই ইস্যুতে আমরা আন্দোলন করব।’

কুমিল্লা সদর ও দক্ষিণের একটি অংশ যুক্ত করে ভোটার সংখ্যা সাড়ে পাঁচ লাখে উন্নীত করার প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছেন সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। চৌদ্দগ্রাম উপজেলা আসন আগের মতোই রাখার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বল ছ ন আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

জঙ্গলে নবজাতকের মরদেহ, যুবকের বিরুদ্ধে মামলা

নেত্রকোনার পূর্বধলার সদর ইউনিয়নে জঙ্গল থেকে নবজাতকের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় এক যুবকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

শনিবার (৮ নভেম্বর) দুপুরে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পরে রবিবার (৯ নভেম্বর) সকালে ওই নবজাতকের মা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এ মামলা করেন।

আরো পড়ুন:

মোহনগঞ্জে নাশকতা মামলায় সাবেক কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

ডোমারে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ মামলায় ইউপি চেয়ারম্যানসহ কারাগারে ৩

মামলায় আসামি শাহ আলম (২৫) নবজাতকের মায়ের প্রতিবেশী বলে জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১ বছর আগে অভিযুক্ত শাহ আলমের সঙ্গে মামলার বাদীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। সম্পর্কের সুবাদে শাহ আলম বিয়ের আশ্বাস দিয়ে ওই নারীর সঙ্গে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক করেন। এতে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। গর্ভের কথা জানালে শাহ আলম বিয়ের আশ্বাস থেকে সরে এসে গর্ভপাতের জন্য চাপ দিতে থাকেন।

গত শুক্রবার (৭ নভেম্বর) দুপুরে শাহ আলম জোরপূর্বক গর্ভপাতের ওষুধ খাওয়ানোর পর ওই নারীর প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়। পরে স্থানীয় এক ধাত্রীর সহযোগিতায় তিনি মৃত সন্তান প্রসব করেন। এরপর নবজাতকের মরদেহ পাশের জঙ্গলে ফেলে দেওয়া হয়। পরদিন দুপুরে স্থানীয়রা মরদেহটি দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শাহ আলমের মোবাইলে একাধিকবার কল দেওয়া হলে নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

পূর্বধলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নূরুল আলম বলেন, “নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।  অভিযুক্ত শাহ আলমকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”

ঢাকা/ইবাদ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ