ছায়ার চোখ
আমি ভেবেছিলাম ছায়ারা শুধু অনুসরণ করে,
একদিন লক্ষ করলাম—
আমার ছায়ার চোখ আছে, দেখতেও পায়।
সে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে
আমার পিঠ: মেরুদণ্ড,
অথচ যেটা আমার চোখও কখনো দেখেনি।
আমিও ধীরে ধীরে ঘুরে দেখলাম—
সেখানে ছায়া হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল
আমার আগামীকাল,
যে এখনো আমার নাম মুখস্থ করতে পারেনি।
অন্ধকারের দরজা
একবার অন্ধকারে নিজের ঘরে ঢুকতে গিয়ে
ঠেকে গিয়েছিলাম কাচের দরজায়।
দরজাটা স্বচ্ছ—
ভেতরে আলো, বাইরে আলো,
তবুও ঢুকতে পারিনি।
তখনই বুঝলাম, সব অন্ধকার আলোহীন নয়—
কিছু অন্ধকার কেবল স্বচ্ছ,
যেখানে নিজের প্রতিবিম্বে নিজে আটকে থাকে।
নদীর ডায়েরিতুমি চলে যাওয়ার পর আমার ঘরের দেয়ালগুলোও বেঁকে গেছে—যেন গ্রীষ্মের রোদতাপে পলিথিনের বোতলের মতো, যেখানে তাপের ভেতরে জমে আছে অসমাপ্ত আলাপের আঁকিবুঁকি, আর ভেতরের স্তরে অদৃশ্য এক কম্পন, যা কেবল নীরবতাকে ভেঙে দিতে পারে। জানালার কাচে যে বিকেলের আলো এসে পড়ে, সেটাও আর সোনালি নয়—এখন তা মৃত শামুকের খোলের মতো শুষ্ক যেন, যেমন ভালোবাসা একদিন তার নিজের শব্দ হারায়, আর দূরের স্তরে শামুকের ফাঁকা খোলস যার ভেতরে শোনা যায় সমুদ্রের সেই গোপন গান, যা তুমি ও আমি প্রেমের যৌথ খামারে কখনো শোনার সাহস করিনি। তবে আমি একদিন আঙুল দিয়ে কুয়াশা ছুঁতে চেয়েছিলাম—প্রথমে ভেবেছিলাম, সেটা শীতের সকাল; পরে বুঝলাম কুয়াশা আসলে মৃত নদীর নিশ্বাস, যা কেবল তখনই টের পাওয়া যায়, যখন আমরা নিজেরাই স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন; আরও আরও গভীরে, সেই নিশ্বাসে লুকানো থাকে বহু বছর আগের বৃষ্টির খবর, যা নদী ভুলতে পারেনি।
রাতে ঘুম ভাঙলে দেখি, কোথাও জল জমে আছে—এটা প্রথমে সাধারণ পানির মতো মনে হলেও পরে বোঝা যায়, ওটা আমার অব্যক্ত বাক্যের তরল রূপ; আর তৃতীয় স্তরে বুঝি, সেগুলো আসলে নদীরই অশ্রু, যে আমাদের গল্পের শেষটা সহ্য করতে পারেনি।
আয়নার ওপারের বাড়িআমার ভেতরে একটা বাড়ি আছে—প্রথমে মনে হয় এটি সাধারণ বাড়ি, যেখানে সব দরজা বাইরে থেকে খোলে; পরে বোঝা যায়, এখানে বাইরে যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই; আরও গভীরে বুঝি, এই বাইরে আসলে আমার শৈশবের শেষ প্রান্ত, যা কোনো দিন ফিরবে না। আয়নাগুলো সেখানে উল্টো নয়—প্রথমে তারা বাস্তব প্রতিফলন দেয়, পরে দেখা যায়, তারা অতীতের ছবিগুলো সোজা করে ফেরত দেয়, আর তৃতীয় স্তরে বোঝা যায়, সেসব ছবি আদৌ তোলা হয়নি—এগুলো শুধু আমার কল্পনার অবশিষ্টাংশ। একবার সেখানে বসে দেখলাম, মনের কোনায় একটুকরো মেঘ থমকে আছে—প্রথমে সেটি বৃষ্টির ইঙ্গিত দেয়, পরে বোঝা যায়, মেঘটার ভেতরে তোমার কণ্ঠস্বর গুটিসুটি মেরে ঘুমাচ্ছে; আরও আরও গভীরে বুঝি, এই কণ্ঠস্বর আদৌ তোমার নয়—এটি আমারই ভেতরের এক অচেনা মানুষ, যে সারা জীবন অপেক্ষা করছিল নিজেকে শোনার জন্য।
মৃত বাতাসের সংগীতআজ রাতে বাতাস নেই—শুধু থেমে থাকা একটি শ্বাস, যা আমরা একসময় একে অপরের ভেতরে রেখে গিয়েছিলাম। জানালার বাইরে চাঁদ বসে আছে, তার আলো ধোঁয়ার মতো উষ্ণ—যেন পোড়া ক্ষমাপ্রার্থনা এখনো আমার ত্বকের গন্ধে আটকে আছে। আমি কাগজে লিখতে যাই, কিন্তু কলমের ডগায় জমে থাকে ভাঙা বৃষ্টির গন্ধ, যেখানে তোমার না-ফেরা রাত ধীরে ধীরে রং হারাচ্ছে। দূরের শহরে বাতিগুলো নিভে যায়—আর আমি বুঝতে পারি, বাতাস হয়তো কাল ফিরবে, কিন্তু তার ভেতরে তোমার গন্ধের কোনো জন্ম আর হবে না।
ছায়ামানবএকদিন নিজের ছায়ার ভেতর ঢুকে দেখলাম—
সেখানে অন্য একজন বসে আছে
আমারই মতো চেহারার,
তবে তার চোখে নেই আলোর মাখন।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কে?
উত্তরে—তুমি যখন আলোয় হাঁটো,
আমি তখন তোমার হয়ে অন্ধকারে হাঁটি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মোহাম্মদপুরে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ২৯
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কয়েকটি অপরাধপ্রবণ এলাকায় বুধবার দিনভর বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত অভিযোগে ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে তিনটি ছুরি, দুটি ধারালো চাকু, দুটি লোহার রড, একটি সাইকেল ও ৩০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে নিয়মিত মামলা, মাদক মামলা, পরোয়ানাভুক্ত আসামি ও বিভিন্ন অপরাধে জড়িত অপরাধী রয়েছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন হীরা (১৯), রফিক (২১), আবদুর রহমান (৩৯), নাবিদ হাসান ওরফে চয়ন (২৬), খোকন (৩১), মনসুর (৩৫), জুয়েল (৩২), সানজু (২২), মিলন (৪২), শাওন (৩৬), নোয়াজ শরীফ (২৮), সেলিম (৩৪), আসাদুজ্জামান ওরফে ইমন (২৩), আনোয়ার হোসেন (৩৬), সজল (৩০), বরকত গাজী (২৮), জুয়েল (৩৮), আরমান (৩০), বাদল (৩৮), কোরবান (২৮), নয়ন (২৭), মাসরুফ (২৩), আল আমিন (২৭), রাকিব (১৮), মিলন (২৫), ওয়াজিদ (৩৬), এরশাদ (২৫), ছালাম ওরফে সামাদ (৩৭) ও দিলসার (৩০)।