গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে বাকি না দেওয়ায় হোটেল মালিকের ছেলে ও এক নারীকে গুলি করার ঘটনায় অভিযুক্ত গোলাপ প্রামাণিক (৩৬) ছিলেন গাইবান্ধা-৩ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ও কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট উম্মে কুলছুম স্মৃতির ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস)। তবে, তিনি সরকারিভাবে নিযুক্ত পিএস ছিলেন না।

বুধবার (১৩ আগস্ট) রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘‘গোলাপ আমার ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের দিনমজুর তয়েজ উদ্দিনের ছেলে। গোলাপের বয়স যখন ৭ থেকে ৮ বছর, তখন সাবেক এমপি উম্মে কুলছুম স্মৃতি গোলাপকে তার বাড়িতে নিয়ে যান। পরে এমপির বাড়িতেই বড় হন গোলাপ। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত গোলাপ এমপির বাড়িতেই বসবাস করতেন এবং তার ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ করতেন।’’

আরো পড়ুন:

প্রিজন সেল থেকে পালানোর ৬ দিন পর গ্রেপ্তার

গোপালগঞ্জে এনসিপির পথসভায় হামলা মামলায় জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা গ্রেপ্তার

আব্দুর রহমান বলেন, ‘‘গোলপকে সন্তানের মতো লালন-পালন করতেন উম্মে কুলছুম স্মৃতি। গোলাপকে আমাদের গ্রামে একটি বাড়িও করে দিয়েছেন তিনি।’’

আব্দুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘‘সম্প্রতি গোলাপ মাদক-চোরাকারবারিসহ বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। পুলিশের পাশাপাশি আমরাও তাকে ধরতে সব জায়গায় লোকজন প্রস্তুত রেখেছি। কোনোভাবে যেন তিনি পালিয়ে যেতে না পারেন।’’

এর আগে, বুধবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার খোর্দ্দকোমরপুর ইউনিয়নের নাপিত বাজারে গুলির ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় আহতরা হলেন- ওই বাজারের হোটেল ব্যবসায়ী ও পার্শ্ববর্তী ইদিলপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ চকদাড়িয়া গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিক আকন্দের ছেলে ওয়াসিম আকন্দ (২৮) এবং একই গ্রামের আব্দুল মজিদের স্ত্রী সেলিনা বেগম (৩০)। তারা গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসাধীন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে একই এলাকার গোলাপ প্রামাণিক দুইজনকে সঙ্গে নিয়ে আবু বক্করের হোটেলে যান। সেখানে চা-সিঙ্গারা খেয়ে দাম না দিয়ে চলে যেতে চাইলে তাদের বাধা দেন ওয়াসিম। এ সময় বাকি দেওয়া যাবে না বলে ওয়াসিম তাকে জানান। সেই সঙ্গে গোলাপের কাছে আগের বাকি টাকাও চান ওয়াসিম। এ নিয়ে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে গোলাপ তার কোমর থেকে পিস্তল বের করে ওয়াসিমের পায়ে গুলি করেন। তাকে উদ্ধার করতে সেলিনা এগিয়ে গেলে তাকেও গুলি করেন গোলাপ। তাৎক্ষণিক এলাকাবাসী এগিয়ে গেলে ফাঁকা গুলি ছুড়ে গোলাপ ও তার সঙ্গীরা পালিয়ে যান।

সাদুল্লাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তাজউদ্দিন খন্দকার বলেন, ‘‘গোলাপকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ঘটনার সময় তিনি পিস্তল, বন্দুক নাকি অন্য অস্ত্র ব্যবহার করেছেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া তার সঙ্গে রাজনৈতিক কোনো সম্পৃক্ততা আছে কি-না তা তদন্ত করা হচ্ছে।”

ঢাকা/রাজীব

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

শেখ হাসিনাকে কোনো অবস্থাতেই ফেরত পাঠাবে না ভারত: রাজনৈতিক বিশ্লেষ

২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ক্ষমতাচ্যুত পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। মামলার অপর আসামি সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে দেওয়া হয়েছে পাঁচ বছরের সাজা।

গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ২০২৪ সালের আগস্টে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা এবং এরপর থেকে তিনি ভারত সরকারের আশ্রয়েই রয়েছেন। ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ শেখ হাসিনার অনুপস্থিতি তার বিচার পরিচালনা করে। আজ সোমবার রায় ঘোষণার সময় আসামিদের মধ্যে কেবল সাবেক পুলিশ প্রধান আবদুল্লাহ আল-মামুন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় নিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন ভারতের জিন্দাল গ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়ান স্টাডিজের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত। তিনি বলেন, “হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আদালতের এই রায় প্রত্যাশিত ছিল, কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে না ভারত।” 

আলজাজিরাকে দেওয়া মন্তব্যে দত্ত আরো বলেন, “কোনো অবস্থাতেই ভারত তাকে প্রত্যর্পণ করবে না। গত দেড় বছরে আমরা দেখেছি যে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক সবচেয়ে ভালো অবস্থায় নেই এবং অনেক সময়ই ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে।”

দত্ত বলেন, “হাসিনার মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশিত ছিল।”

তিনি বলেন, “সবাই বাংলাদেশের পরিস্থিতি দেখেছেন। সবাই আশা করেছিলেন যে হাসিনার বিচার হবে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষকরা একমত যে, বাংলাদেশে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম দেশের আইনি ব্যবস্থা অনুসরণ করেছে।”

দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক এই রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, “নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ সম্পর্কে কারো সন্দেহ নেই। স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সরাসরি গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।”

দত্তের ভাষ্যমতে, “আওয়ামী লীগ এখন একটি পাল্টা ব্যাখ্যা তৈরির তৈরি করার চেষ্টা করবে। কিন্তু বাংলাদেশিরা মূলত বিশ্বাস করেন যে- হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন।”

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ