মাখন নামের বোকা চোখের ছেলেটা নাকি শামসুদ্দোহা সাহেবের তিন মেয়ের সাথেই প্রেম করেছে। কী তাজ্জব, কেউ সে খবর জানতে পারেনি। পাড়ার মানুষ তো দূরের কথা, রাফি, সাফি, নাফি নামের তিন বোনই তো একই প্রেমিকের সাথে তাদের প্রেমের কেচ্ছা আবিষ্কার করল সেদিন মাত্র। সাফির বিয়ের আগের রাতে দুই বোনের সাথে সুখ-দুঃখের কান্না কাঁদতে কাঁদতে সে বলল, ‘কোনো কতা ভি প্যাটে থুয়া তগো লগে চইন পাই নাইক্কা। মাগার একটা কতা কেল্লাইগা যে কইবার পারি নাই! মাখন আছে না, ওই যে ফাইভ স্টারের মালিকের পোলাটা, ওর লগে আমার থোরা পিরিত ওইছিল একবার। ভালা আছিল পোলাটা, মাগার ভ্যাবলা।’
খেপে উঠেছিল নাফি আর কুঁকড়ে উঠেছিল রাফি। ‘নেমকহারাম, আগে কছনাই কেলা?’ ‘কইলে কী ওই তো?’ ‘তুই ভি তো কছ নাইক্কা।’— ধরনের বাহাস শেষে তারা কী যেন ভাবছিল আর দুলছিল। ভাবতে ভাবতে যখন বিবাহিত বড় বোন রাফি বলল, ‘ইশ্ শরীলটা ঘিন ঘিন করতাছে’ সাফি আর নাফি বড় বোনের শরীরের দিকে তির্যকভাবে তাকিয়ে রইল। বড় বোনের রাগ গলে মাটি এখন, শরীরে ওড়না জড়াতে জড়াতে বলে, ‘তোগো দুলাভাইরে কইচ না।’
তিন বোন হিসাব করল, একই সময়ে প্রেম ছিল না তাদের, ভিন্ন সময়ে ভিন্ন পরিস্থিতিতে। রাফির সাথে প্রেম হয়েছিল ম্যাট্রিকে ফেল করার পর। রাফি যখন আত্মহত্যা করবে, ঠিক তখন সাফির সাথে কোনো এক চাঁদরাতে, সাফি পা পিছলে মোড়ের ড্রেনে উল্টে পড়েছিল আর চায়ের দোকানের লোকেরা বিচ্ছিরি করে হেসে উঠেছিল, সে সময় মাখন হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। সাফিকে ড্রেন থেকে ওঠাতে ওঠাতে চোখের পাপড়ির নাচনে প্রেম হয়েছিল তাদের।
নাফির দ্বিতীয় প্রেম ভাঙার পর সে যখন পৃথিবীর সব ছেলেদের ভাইয়ের নজরে দেখবে বলে ভাবছে, ঠিক তখন প্রেম হয়েছিল মাখনের সাথে। বিয়ে? নাহ, বিয়ের কথা তো কেউ ভাবেনি মাখনকে নিয়ে। মাখনকে কি বিয়ে করা যায়! বড্ড নির্ভেজাল, বিয়ে টাইপ না। কেন তারা মাখনের প্রেমের কথা প্রকাশ্যে আনেনি? কারণ ভাঙতে ভাঙতে দেখা যায়, মাখন প্রেমের সময়টুকুতে একটুও জ্বালায়নি। বাজে বকেনি, শাসায়নি, কিছু চায়নি, বদলে যায়নি। এমনকি তারা যখন বলেছে এমন ম্যান্দামারা প্রেম আর পোষাচ্ছে না, বিনা বাক্যব্যয়ে ছলছল চোখে আর হাসিমুখ করে বিদায় জানিয়েছে। এত নির্ভেজাল প্রেমের কথা কাকে বলে মানুষ! কোনো কোন্দল নেই, উত্থান–পতন নেই—সমান্তরাল চলছে তো চলছেই। মাখন সে প্রেমগুলোর কথা কাউকে বলেনি। মাখন কলার উঁচু করে গলা উঁচিয়ে সানগ্লাস তাক করে কিংবা টেরি কাটা চুল ওড়াতে ওড়াতে বলেনি যে ‘এই ছেরিরা সবতে আমার লাইগ্যা দেওয়ানা আছিলো। হগ্গলতেরে হোয়ায়া হালাইচ্ছিলাম।’
সাফির বিয়ের আগের সারা রাত তিন বোন মাখন নামের ছেলেটার সাথে সাদামাটা প্রেমের গল্প করে গেল। এমন প্রেম আর আসেনি, আফসোসে চোখ কেমন ভিজে ওঠে তাদের।
মহিউদ্দিন মাখন তার নাম। চেহারাটা মাখন রঙের ছিল কখনো, বোঝা যায়। রোদে পুড়তে পুড়তে মাখন রং একটু অনুজ্জ্বল, ঘিয়ে ভাজা ধরনের ত্বক এখন। ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি, ফ্যাঁসফেসে হাওয়ায় উড়ে উড়ে যাওয়া পিঙ্গল চুল, হালকা কালো ফ্রেমের চশমা, হলুদ, লাল কিংবা কালো টি–শার্ট আর জিনসের প্যান্ট, পায়ে কালো স্যান্ডেল—এই তো মাখন। যারা আরও কাছ থেকে দেখতে চায় বা সুযোগ পায়, তার প্রাণখোলা নীরব হাসিটাও দেখতে পায়। হাসলে চেহারায় আলোঝলমল করে। সেই আলোর প্রেমে পড়ে হয়তো কেউ। তবে তার প্রণয়সংক্রান্ত অধ্যায় উল্টেপাল্টে দেখলে মনে হয়, মাখনের ঝুটঝামেলাহীন যে প্রেমিক রূপটা, আদতে তার প্রেমেই পড়ে বেশির ভাগ মানুষ।
রাফি-সাফি-নাফির প্রেমকাহিনি সেই রাতের পর খানিকটা চাউর হয়েছিল এলাকার অলি–গলিতে। তিন বোনের কেউ হয়তো মুখ ফসকে বলেছে এবং সেই গল্পের সূত্র ধরে নতুন করে পুরোনো প্রেমের গল্পগুলো মাখনে ভাজা খইয়ের মতন ফুটছে। এই যেমন নূপুর নামের মেয়েটা, সূত্রাপুর, ধোলাইখাল ও পার্শ্ববর্তী এলাকার সবচেয়ে ঝকঝকে সুন্দর বলে খ্যাত, তার সঙ্গেও মাখনের প্রেম ছিল। সূত্রাপুরের বিখ্যাত রাহমানিয়া বিরিয়ানির দোকানের পাশে দুলু মিয়ার ফলের জুসের দোকান সেই কবে থেকে বিখ্যাত। তার সামনে ধরে পশ্চিম দিকে পাঁচ কদম হাঁটলেই ঝলমল করছে দোতলা হোটেল— ফাইভ স্টার সার্ভিস হোটেল। কাঁচা হলুদ রঙের দালানের শরীরে কমলা বর্ডার, এই ঘিঞ্জি এলাকায় ঝলমলে চাঁদের মতন ফুটে থাকে হোটেলটা। এই দোকানেই দুপুর আর রাতের কিছু সময় ক্যাশে বসে থাকতে দেখা যায় মাখনকে, মালিকের ছেলে। মাথা নিচু করে গুনে গুনে টাকা আর পয়সা আলাদা করে করে বাক্সবন্দী করে। এর বাইরে তাকে এলাকার ছেলেদের সাথে চা–বিড়ি ফুঁকতে দেখা যায় কখনো।
এক দুপুরবেলা ফাইভ স্টারে বসে টাকা গুনছিল আর চোখধাঁধানো নূপুর এসে মাখনকে বলেছিল, ‘এই, আমার লগে থোড়া পিরিত করবা? বেসিত্তে বেসি তিন মাস।’
মাখন অবাক চোখে বলেছিল, ‘এমতে কি পিরিত অহে?’
তার চেয়ে অবাক নূপুর, ‘তুমি আমার পিরিতে পড়ো নাইক্কা?’
মাখন চুপ।
‘মহল্লার সব পোলাপান আমার পিরিতে দেওয়ানা, জানো?’
কয়েকটা পয়সা গড়িয়ে টেবিলের পায়ের তলায় লুকিয়ে ছিল। মাখন মেঝেতে বসে খুঁটে খুঁটে সে পয়সা তুলছিল।
সে বেলা নাকি মাখন আর নূপুরের প্রেমটা হয়ে ওঠেনি। হয়েছিল আরও পরে। যখন নূপুর এসে বলেছিল, ‘আমি মনে কয় হাচাই তোমার পিরিতে পইড়া গেছি। আব্বায় জোর কইরা এক দুবাইওয়ালার লগে শাদি করায়া দিবার চায়। এই জিন্দেগিতে এত্ত রূপ রাইখ্যা ফায়দা কী? কহোনো পিরিতই করলাম না। যদি মাগার করিভি, তো তোমার লগে, নাইলে নাইক্কা।’
প্রেমটা তখন হয়েছিল। পাক্কা সাত মাসের প্রেম। দুবাইওয়ালার সাথে বিয়ে হয়ে নূপুর বিদায় নিয়েছিল, মাখন কষ্ট পেয়েছিল কি না কে জানে! কিন্তু ঘটনার হিসাব মিলিয়ে দেখলে, পরদিন থেকে তাকে দোকানে বসে ক্যাশবাক্সের হিসাব মেলাতে দেখা গিয়েছিল। নূপুরের বিরহ তাকে কাতর করেছে কি না, তা বাহ্যিকভাবে বোঝা সম্ভব হয়নি, তবে নূপুর তাকে চলে যাওয়ার আগে বলে গিয়েছিল, ‘তুমি ওইলা এই জাহানে সব থেইক্কা নিরাপদ প্রেমিক।’
সেই থেকে আড়ালে, প্রকাশ্যে, টিটকিরিতে মাখনকে সবাই নিরাপদ প্রেমিক বলে ডাকে। নিন্দুকেরা বলে, ‘ওই পিরিত তকই, এই ম্যান্দামারা পোলারে কেউ শাদি করব না, দেহিছ।’
মাখন প্রেমিকাদের নিয়ে কই যায়? তাকে কেন এলাকায় চ্যাংড়া প্রেমিকদের মতন শার্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে এঁকেবেঁকে ঘুরতে দেখা যায় না? এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিল ছন্দা মাসি। ছন্দা মাসি এক অলস দুপুরের গোপন কথার বাক্স–প্যাটরা খুলতে খুলতে বুলু চাচিকে বলেছিল,
‘মাখনের রুচি ভালা। যেই–সেই জায়গায় লিয়া যায় না মাইয়াগো। আহসান মঞ্জিল লিয়া যায়, বিউটিফুল ফটো খিচ্ছা দেয়। দুই হাত খুইল্লা নাশতা–পানি খিলায়।’
মাখনের এলাকার বন্ধুদের দিলে ঝাঁ করে এক খোঁচা লাগে। ‘কি রে মাখইন্ন্যা, তুই ছন্দা মাসির লাহান বুড়ির লগেও প্রেম করছত? জাত–কুল কিছু ভি থুইবি না নাকি?’
মাখন এসব তির্যক প্রশ্নের বিপরীতে সাধারণত একটুকরো হাসি দিয়ে কাজ সারে। সেদিন বলেছিল, ‘ছন্দার স্বামী মইরা যাওনের পর কেমতে উদাস ওয়্যা থাকত। বেচারা।’
চল্লিশ বছরের ছন্দা মাসিকে দেখলে বুকে ঝিলিক লাগে সত্যি। তার গমরঙা শরীর, ঠোঁটের ওপরের তিলটা মনোমুগ্ধকর। তাই বলে চব্বিশ বছরের মাখনের সাথে এই বয়স্ক মহিলার প্রেম!
বন্ধুদের মধ্যে জমসেদ মাখনের একান্ত অনুগত দোস্ত। বাকি বন্ধুদের ধারণা, মাখনের সকল প্রেমবিষয়ক কুকর্মের সহায়ক জমসেদ।
জমসেদ এসব কুৎসাকে উপেক্ষা করে, ‘আবে, তরা কি মাখনের চারির কাবিল? কেমতেভি একটা মাইয়া পটায়া পারলে তিন মাস টিকে না তগো। হে কি তগো কোনো লোসকান করছে?’
বন্ধুরা দল বেঁধে তেড়ে উঠেছিল, ‘হে যার–তার লগে পিরিত করে। সোসাইটির বদনাম।’
জমসেদ মুখ ভেংচি দিয়ে ফিরে আসে। শোনা যায়, জমসেদ নাকি মাখনের প্রাক্তন প্রেমিকাদের নিয়ে ‘নিরাপদ প্রেমিক কল্যাণ সংঘ’ খুলেছে। যেখানে ছন্দ মাসি, রাফি-সাফি-নাফি, নূপুরের মতন প্রাক্তন প্রেমিকারা জড়ো হয়ে সুখময় সে প্রেমের দিনগুলোর কথা স্মরণ করে। যদিও সংঘের অস্তিত্ব চোখে দেখেনি কেউ।
এর মাঝে মাখনকে বেশ কিছুদিন হলো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রথমে তার টাইফয়েড হলো। তিন দিন জ্বরের ঘোরে বেসামাল। মাখনের বাপের হাঁপানির টান আজকাল এত ঘন ঘন ওঠে, ছেলেকে একটু সেবাযত্ন করার মতন শক্তি নাই। মা মরেছে বছর সাতেক। বড় বোন দুই–তিন দিন এসে সেবাযত্ন করে গেল। তার পরের খবর কেউ জানে না।
টাইফয়েড সারার পর রোগা মুখে দু–একবার দোকানের ক্যাশে বসতে দেখা গেছে মাখনকে। জ্বরের পরে চুলগুলো ফেলে কদম ছাঁট করে ফেলায় তাকে এক্কেবারে ক্লাস টেনের বাচ্চা মনে হচ্ছে। বন্ধুরা আড়ালে হাসাহাসি করে, ‘নিরাপদ প্রেমিক না, উই অইলো নিরাপদ শিশু।’
তারপর অনেক দিন মাখনকে দোকানে রাস্তাঘাটে দেখা যায় না তেমন। জমসেদের কাছেও কোনো পাকা খবর নেই। সিকান্দার একদিন এসে খবর দিল যে মতিঝিলের ফিলিস্তিন বিরিয়ানির দোকানে মাখনকে দেখা গেছে। সাথে যে মেয়েটি, তার একমাথা কোঁকড়া চুল, একদম নূরা পাগলার চুলের মতন, লম্বায় ছোটখাটো, গায়ের রং ময়লা। এলাকার কেউ না। এলাকার বাইরেও মাখনের প্রেম করার এলেম আছে দেখে এলাকার চ্যাংড়ার দল মুষড়ে পড়ল। তবে বিচ্ছিরি জটাধারী নূরা পাগলার মতন চুলের মেয়ে শুনে তাদের সেই জ্বালা খানিকটা নিভে এল। যদিও তার দিন সাতেক পরই আজগর নিউমার্কেট থেকে ফিরে জানাল যে কিংস ফাস্টফুড শপে সেই কোঁকড়া চুলের মেয়ে এবং নিরাপদ প্রেমিক তিন প্লেট ফুচকা, দুটি বার্গার সামনে নিয়ে বসে ছিল এবং মেয়েটির চুল মোটেও নূরা পাগলার মতন না; বরং হিন্দি সিনেমার নায়িকাদের মতন ইকরিবিকরি কোঁকড়া। মেয়েটার গায়ের রং ময়লা গোছের সত্যি, কিন্তু চোখ হরিণের মতন। আজগর তাদের সামনে দিয়ে দুয়েকবার হাঁটাহাঁটি করেছে, কিন্তু মাখন, ‘দোস্ত, কেয়া হাল?’ বলে কথা সেরেছে, মেয়েটির সাথে পরিচয় করায়নি।
জমসেদকে চেপে ধরে ঘটনা জানা গেল, টাইফয়েডের সময়ে যে নার্স এসে স্যালাইন ফুটাত, এ–ই সেই মেয়ে। মাখনের দুর্দশা দেখে আগবাড়িয়ে জাউ–মুরগির স্যুপ রান্না করে এনে খাওয়াত। ডিউটি শেষের পর রাত জেগে পাশে বসে থাকত। যেদিন মাখন বাথরুমে মাথা ঘুরে পড়ে গেল, মেয়েটি হাত বাড়িয়ে তাকে টেনে তুলেছিল, তুলতে তুলতে তাদের প্রেম হয়েছিল। সত্যিকারের প্রেম। আগেরগুলো বুঝি মিথ্যা ছিল?
মাখন এর উত্তরে বলে, ‘না, সব পিরিতই হাচা। মাগার যেইটা বর্তমান, হেইটা সবতে বেশি হাচা।’
মাখনবিহীন সূত্রাপুরের চারপাশ নিবাত থমথমে। যারা মাখনের সাথে প্রেম করেছে তারা ভাবে, সুখের নির্বিঘ্ন প্রেমময় দিনগুলোর কথা। অন্য কোথাও তাদের মন বসে না। পাপিয়া, কুমকুমের মতন অন্তরে সদ্য প্রেমজাগা মানুষেরা ভাবছে, সত্যিই এমন নিরাপদ–ঝঞ্ঝাটহীন প্রেম খুঁজে পাওয়া যেত যদি। আর অনেক দিন পর কোঁকড়া চুলের সে মেয়েটির প্রেম হারিয়ে মাখন আবার এলাকায় ফিরে আসে। সে প্রেম নিয়ে প্রশ্ন করলে মাখন প্রতিবার এক লম্বা শ্বাসে উত্তর দেয়, ‘হোন, পিরিতে চোট তো তুই পাইবিই। লেকিন, চোট পাইবি, এইটা মাইনা লিলেই পিরিতিটা সহজ অয়া যায়।’
শোনা যাচ্ছে, সেই গোপন ‘নিরাপদ প্রেমিক কল্যাণ সংঘ’ নাকি আবার জমে উঠেছে। মাখনের প্রাক্তন প্রেমিকারা সেখানে এক হয়ে হারানো প্রেমের গল্প করে। পাপিয়া, কুমকুমদের মনে আবার নতুন প্রেমের আশা জেগে উঠছে। কেউ প্রেমের প্রস্তাব দিলে বলে, ‘মাখনের লাহান আশিক অয়া পারবা?’ এলাকার চ্যাংড়া ছেলেরা চাহিদা বুঝে নিরাপদ প্রেমিক হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। মাখনের পেছন পেছন তারা ঘুরে বেড়ায়, নিরাপদ প্রেমিক হওয়ার তালিম নিতে চায়।
মাখন সরমাখা দুধ চায়ে সুরুৎ সুরুৎ চুমুক দিতে দিতে তাদের গোপন মন্ত্র শোনায়, ‘হোন, পিরিত করলে হিসাবের খাতাটা পিছে হালায় দিয়া আবি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র পদ প র ম ক প র ম হয় ছ ল প র ম কর ছ ল আর বড় ব ন বল ছ ল এল ক র র মতন
এছাড়াও পড়ুন:
নিরাপদ প্রেমিক
মাখন নামের বোকা চোখের ছেলেটা নাকি শামসুদ্দোহা সাহেবের তিন মেয়ের সাথেই প্রেম করেছে। কী তাজ্জব, কেউ সে খবর জানতে পারেনি। পাড়ার মানুষ তো দূরের কথা, রাফি, সাফি, নাফি নামের তিন বোনই তো একই প্রেমিকের সাথে তাদের প্রেমের কেচ্ছা আবিষ্কার করল সেদিন মাত্র। সাফির বিয়ের আগের রাতে দুই বোনের সাথে সুখ-দুঃখের কান্না কাঁদতে কাঁদতে সে বলল, ‘কোনো কতা ভি প্যাটে থুয়া তগো লগে চইন পাই নাইক্কা। মাগার একটা কতা কেল্লাইগা যে কইবার পারি নাই! মাখন আছে না, ওই যে ফাইভ স্টারের মালিকের পোলাটা, ওর লগে আমার থোরা পিরিত ওইছিল একবার। ভালা আছিল পোলাটা, মাগার ভ্যাবলা।’
খেপে উঠেছিল নাফি আর কুঁকড়ে উঠেছিল রাফি। ‘নেমকহারাম, আগে কছনাই কেলা?’ ‘কইলে কী ওই তো?’ ‘তুই ভি তো কছ নাইক্কা।’— ধরনের বাহাস শেষে তারা কী যেন ভাবছিল আর দুলছিল। ভাবতে ভাবতে যখন বিবাহিত বড় বোন রাফি বলল, ‘ইশ্ শরীলটা ঘিন ঘিন করতাছে’ সাফি আর নাফি বড় বোনের শরীরের দিকে তির্যকভাবে তাকিয়ে রইল। বড় বোনের রাগ গলে মাটি এখন, শরীরে ওড়না জড়াতে জড়াতে বলে, ‘তোগো দুলাভাইরে কইচ না।’
তিন বোন হিসাব করল, একই সময়ে প্রেম ছিল না তাদের, ভিন্ন সময়ে ভিন্ন পরিস্থিতিতে। রাফির সাথে প্রেম হয়েছিল ম্যাট্রিকে ফেল করার পর। রাফি যখন আত্মহত্যা করবে, ঠিক তখন সাফির সাথে কোনো এক চাঁদরাতে, সাফি পা পিছলে মোড়ের ড্রেনে উল্টে পড়েছিল আর চায়ের দোকানের লোকেরা বিচ্ছিরি করে হেসে উঠেছিল, সে সময় মাখন হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। সাফিকে ড্রেন থেকে ওঠাতে ওঠাতে চোখের পাপড়ির নাচনে প্রেম হয়েছিল তাদের।
নাফির দ্বিতীয় প্রেম ভাঙার পর সে যখন পৃথিবীর সব ছেলেদের ভাইয়ের নজরে দেখবে বলে ভাবছে, ঠিক তখন প্রেম হয়েছিল মাখনের সাথে। বিয়ে? নাহ, বিয়ের কথা তো কেউ ভাবেনি মাখনকে নিয়ে। মাখনকে কি বিয়ে করা যায়! বড্ড নির্ভেজাল, বিয়ে টাইপ না। কেন তারা মাখনের প্রেমের কথা প্রকাশ্যে আনেনি? কারণ ভাঙতে ভাঙতে দেখা যায়, মাখন প্রেমের সময়টুকুতে একটুও জ্বালায়নি। বাজে বকেনি, শাসায়নি, কিছু চায়নি, বদলে যায়নি। এমনকি তারা যখন বলেছে এমন ম্যান্দামারা প্রেম আর পোষাচ্ছে না, বিনা বাক্যব্যয়ে ছলছল চোখে আর হাসিমুখ করে বিদায় জানিয়েছে। এত নির্ভেজাল প্রেমের কথা কাকে বলে মানুষ! কোনো কোন্দল নেই, উত্থান–পতন নেই—সমান্তরাল চলছে তো চলছেই। মাখন সে প্রেমগুলোর কথা কাউকে বলেনি। মাখন কলার উঁচু করে গলা উঁচিয়ে সানগ্লাস তাক করে কিংবা টেরি কাটা চুল ওড়াতে ওড়াতে বলেনি যে ‘এই ছেরিরা সবতে আমার লাইগ্যা দেওয়ানা আছিলো। হগ্গলতেরে হোয়ায়া হালাইচ্ছিলাম।’
সাফির বিয়ের আগের সারা রাত তিন বোন মাখন নামের ছেলেটার সাথে সাদামাটা প্রেমের গল্প করে গেল। এমন প্রেম আর আসেনি, আফসোসে চোখ কেমন ভিজে ওঠে তাদের।
মহিউদ্দিন মাখন তার নাম। চেহারাটা মাখন রঙের ছিল কখনো, বোঝা যায়। রোদে পুড়তে পুড়তে মাখন রং একটু অনুজ্জ্বল, ঘিয়ে ভাজা ধরনের ত্বক এখন। ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি, ফ্যাঁসফেসে হাওয়ায় উড়ে উড়ে যাওয়া পিঙ্গল চুল, হালকা কালো ফ্রেমের চশমা, হলুদ, লাল কিংবা কালো টি–শার্ট আর জিনসের প্যান্ট, পায়ে কালো স্যান্ডেল—এই তো মাখন। যারা আরও কাছ থেকে দেখতে চায় বা সুযোগ পায়, তার প্রাণখোলা নীরব হাসিটাও দেখতে পায়। হাসলে চেহারায় আলোঝলমল করে। সেই আলোর প্রেমে পড়ে হয়তো কেউ। তবে তার প্রণয়সংক্রান্ত অধ্যায় উল্টেপাল্টে দেখলে মনে হয়, মাখনের ঝুটঝামেলাহীন যে প্রেমিক রূপটা, আদতে তার প্রেমেই পড়ে বেশির ভাগ মানুষ।
রাফি-সাফি-নাফির প্রেমকাহিনি সেই রাতের পর খানিকটা চাউর হয়েছিল এলাকার অলি–গলিতে। তিন বোনের কেউ হয়তো মুখ ফসকে বলেছে এবং সেই গল্পের সূত্র ধরে নতুন করে পুরোনো প্রেমের গল্পগুলো মাখনে ভাজা খইয়ের মতন ফুটছে। এই যেমন নূপুর নামের মেয়েটা, সূত্রাপুর, ধোলাইখাল ও পার্শ্ববর্তী এলাকার সবচেয়ে ঝকঝকে সুন্দর বলে খ্যাত, তার সঙ্গেও মাখনের প্রেম ছিল। সূত্রাপুরের বিখ্যাত রাহমানিয়া বিরিয়ানির দোকানের পাশে দুলু মিয়ার ফলের জুসের দোকান সেই কবে থেকে বিখ্যাত। তার সামনে ধরে পশ্চিম দিকে পাঁচ কদম হাঁটলেই ঝলমল করছে দোতলা হোটেল— ফাইভ স্টার সার্ভিস হোটেল। কাঁচা হলুদ রঙের দালানের শরীরে কমলা বর্ডার, এই ঘিঞ্জি এলাকায় ঝলমলে চাঁদের মতন ফুটে থাকে হোটেলটা। এই দোকানেই দুপুর আর রাতের কিছু সময় ক্যাশে বসে থাকতে দেখা যায় মাখনকে, মালিকের ছেলে। মাথা নিচু করে গুনে গুনে টাকা আর পয়সা আলাদা করে করে বাক্সবন্দী করে। এর বাইরে তাকে এলাকার ছেলেদের সাথে চা–বিড়ি ফুঁকতে দেখা যায় কখনো।
এক দুপুরবেলা ফাইভ স্টারে বসে টাকা গুনছিল আর চোখধাঁধানো নূপুর এসে মাখনকে বলেছিল, ‘এই, আমার লগে থোড়া পিরিত করবা? বেসিত্তে বেসি তিন মাস।’
মাখন অবাক চোখে বলেছিল, ‘এমতে কি পিরিত অহে?’
তার চেয়ে অবাক নূপুর, ‘তুমি আমার পিরিতে পড়ো নাইক্কা?’
মাখন চুপ।
‘মহল্লার সব পোলাপান আমার পিরিতে দেওয়ানা, জানো?’
কয়েকটা পয়সা গড়িয়ে টেবিলের পায়ের তলায় লুকিয়ে ছিল। মাখন মেঝেতে বসে খুঁটে খুঁটে সে পয়সা তুলছিল।
সে বেলা নাকি মাখন আর নূপুরের প্রেমটা হয়ে ওঠেনি। হয়েছিল আরও পরে। যখন নূপুর এসে বলেছিল, ‘আমি মনে কয় হাচাই তোমার পিরিতে পইড়া গেছি। আব্বায় জোর কইরা এক দুবাইওয়ালার লগে শাদি করায়া দিবার চায়। এই জিন্দেগিতে এত্ত রূপ রাইখ্যা ফায়দা কী? কহোনো পিরিতই করলাম না। যদি মাগার করিভি, তো তোমার লগে, নাইলে নাইক্কা।’
প্রেমটা তখন হয়েছিল। পাক্কা সাত মাসের প্রেম। দুবাইওয়ালার সাথে বিয়ে হয়ে নূপুর বিদায় নিয়েছিল, মাখন কষ্ট পেয়েছিল কি না কে জানে! কিন্তু ঘটনার হিসাব মিলিয়ে দেখলে, পরদিন থেকে তাকে দোকানে বসে ক্যাশবাক্সের হিসাব মেলাতে দেখা গিয়েছিল। নূপুরের বিরহ তাকে কাতর করেছে কি না, তা বাহ্যিকভাবে বোঝা সম্ভব হয়নি, তবে নূপুর তাকে চলে যাওয়ার আগে বলে গিয়েছিল, ‘তুমি ওইলা এই জাহানে সব থেইক্কা নিরাপদ প্রেমিক।’
সেই থেকে আড়ালে, প্রকাশ্যে, টিটকিরিতে মাখনকে সবাই নিরাপদ প্রেমিক বলে ডাকে। নিন্দুকেরা বলে, ‘ওই পিরিত তকই, এই ম্যান্দামারা পোলারে কেউ শাদি করব না, দেহিছ।’
মাখন প্রেমিকাদের নিয়ে কই যায়? তাকে কেন এলাকায় চ্যাংড়া প্রেমিকদের মতন শার্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে এঁকেবেঁকে ঘুরতে দেখা যায় না? এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিল ছন্দা মাসি। ছন্দা মাসি এক অলস দুপুরের গোপন কথার বাক্স–প্যাটরা খুলতে খুলতে বুলু চাচিকে বলেছিল,
‘মাখনের রুচি ভালা। যেই–সেই জায়গায় লিয়া যায় না মাইয়াগো। আহসান মঞ্জিল লিয়া যায়, বিউটিফুল ফটো খিচ্ছা দেয়। দুই হাত খুইল্লা নাশতা–পানি খিলায়।’
মাখনের এলাকার বন্ধুদের দিলে ঝাঁ করে এক খোঁচা লাগে। ‘কি রে মাখইন্ন্যা, তুই ছন্দা মাসির লাহান বুড়ির লগেও প্রেম করছত? জাত–কুল কিছু ভি থুইবি না নাকি?’
মাখন এসব তির্যক প্রশ্নের বিপরীতে সাধারণত একটুকরো হাসি দিয়ে কাজ সারে। সেদিন বলেছিল, ‘ছন্দার স্বামী মইরা যাওনের পর কেমতে উদাস ওয়্যা থাকত। বেচারা।’
চল্লিশ বছরের ছন্দা মাসিকে দেখলে বুকে ঝিলিক লাগে সত্যি। তার গমরঙা শরীর, ঠোঁটের ওপরের তিলটা মনোমুগ্ধকর। তাই বলে চব্বিশ বছরের মাখনের সাথে এই বয়স্ক মহিলার প্রেম!
বন্ধুদের মধ্যে জমসেদ মাখনের একান্ত অনুগত দোস্ত। বাকি বন্ধুদের ধারণা, মাখনের সকল প্রেমবিষয়ক কুকর্মের সহায়ক জমসেদ।
জমসেদ এসব কুৎসাকে উপেক্ষা করে, ‘আবে, তরা কি মাখনের চারির কাবিল? কেমতেভি একটা মাইয়া পটায়া পারলে তিন মাস টিকে না তগো। হে কি তগো কোনো লোসকান করছে?’
বন্ধুরা দল বেঁধে তেড়ে উঠেছিল, ‘হে যার–তার লগে পিরিত করে। সোসাইটির বদনাম।’
জমসেদ মুখ ভেংচি দিয়ে ফিরে আসে। শোনা যায়, জমসেদ নাকি মাখনের প্রাক্তন প্রেমিকাদের নিয়ে ‘নিরাপদ প্রেমিক কল্যাণ সংঘ’ খুলেছে। যেখানে ছন্দ মাসি, রাফি-সাফি-নাফি, নূপুরের মতন প্রাক্তন প্রেমিকারা জড়ো হয়ে সুখময় সে প্রেমের দিনগুলোর কথা স্মরণ করে। যদিও সংঘের অস্তিত্ব চোখে দেখেনি কেউ।
এর মাঝে মাখনকে বেশ কিছুদিন হলো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রথমে তার টাইফয়েড হলো। তিন দিন জ্বরের ঘোরে বেসামাল। মাখনের বাপের হাঁপানির টান আজকাল এত ঘন ঘন ওঠে, ছেলেকে একটু সেবাযত্ন করার মতন শক্তি নাই। মা মরেছে বছর সাতেক। বড় বোন দুই–তিন দিন এসে সেবাযত্ন করে গেল। তার পরের খবর কেউ জানে না।
টাইফয়েড সারার পর রোগা মুখে দু–একবার দোকানের ক্যাশে বসতে দেখা গেছে মাখনকে। জ্বরের পরে চুলগুলো ফেলে কদম ছাঁট করে ফেলায় তাকে এক্কেবারে ক্লাস টেনের বাচ্চা মনে হচ্ছে। বন্ধুরা আড়ালে হাসাহাসি করে, ‘নিরাপদ প্রেমিক না, উই অইলো নিরাপদ শিশু।’
তারপর অনেক দিন মাখনকে দোকানে রাস্তাঘাটে দেখা যায় না তেমন। জমসেদের কাছেও কোনো পাকা খবর নেই। সিকান্দার একদিন এসে খবর দিল যে মতিঝিলের ফিলিস্তিন বিরিয়ানির দোকানে মাখনকে দেখা গেছে। সাথে যে মেয়েটি, তার একমাথা কোঁকড়া চুল, একদম নূরা পাগলার চুলের মতন, লম্বায় ছোটখাটো, গায়ের রং ময়লা। এলাকার কেউ না। এলাকার বাইরেও মাখনের প্রেম করার এলেম আছে দেখে এলাকার চ্যাংড়ার দল মুষড়ে পড়ল। তবে বিচ্ছিরি জটাধারী নূরা পাগলার মতন চুলের মেয়ে শুনে তাদের সেই জ্বালা খানিকটা নিভে এল। যদিও তার দিন সাতেক পরই আজগর নিউমার্কেট থেকে ফিরে জানাল যে কিংস ফাস্টফুড শপে সেই কোঁকড়া চুলের মেয়ে এবং নিরাপদ প্রেমিক তিন প্লেট ফুচকা, দুটি বার্গার সামনে নিয়ে বসে ছিল এবং মেয়েটির চুল মোটেও নূরা পাগলার মতন না; বরং হিন্দি সিনেমার নায়িকাদের মতন ইকরিবিকরি কোঁকড়া। মেয়েটার গায়ের রং ময়লা গোছের সত্যি, কিন্তু চোখ হরিণের মতন। আজগর তাদের সামনে দিয়ে দুয়েকবার হাঁটাহাঁটি করেছে, কিন্তু মাখন, ‘দোস্ত, কেয়া হাল?’ বলে কথা সেরেছে, মেয়েটির সাথে পরিচয় করায়নি।
জমসেদকে চেপে ধরে ঘটনা জানা গেল, টাইফয়েডের সময়ে যে নার্স এসে স্যালাইন ফুটাত, এ–ই সেই মেয়ে। মাখনের দুর্দশা দেখে আগবাড়িয়ে জাউ–মুরগির স্যুপ রান্না করে এনে খাওয়াত। ডিউটি শেষের পর রাত জেগে পাশে বসে থাকত। যেদিন মাখন বাথরুমে মাথা ঘুরে পড়ে গেল, মেয়েটি হাত বাড়িয়ে তাকে টেনে তুলেছিল, তুলতে তুলতে তাদের প্রেম হয়েছিল। সত্যিকারের প্রেম। আগেরগুলো বুঝি মিথ্যা ছিল?
মাখন এর উত্তরে বলে, ‘না, সব পিরিতই হাচা। মাগার যেইটা বর্তমান, হেইটা সবতে বেশি হাচা।’
মাখনবিহীন সূত্রাপুরের চারপাশ নিবাত থমথমে। যারা মাখনের সাথে প্রেম করেছে তারা ভাবে, সুখের নির্বিঘ্ন প্রেমময় দিনগুলোর কথা। অন্য কোথাও তাদের মন বসে না। পাপিয়া, কুমকুমের মতন অন্তরে সদ্য প্রেমজাগা মানুষেরা ভাবছে, সত্যিই এমন নিরাপদ–ঝঞ্ঝাটহীন প্রেম খুঁজে পাওয়া যেত যদি। আর অনেক দিন পর কোঁকড়া চুলের সে মেয়েটির প্রেম হারিয়ে মাখন আবার এলাকায় ফিরে আসে। সে প্রেম নিয়ে প্রশ্ন করলে মাখন প্রতিবার এক লম্বা শ্বাসে উত্তর দেয়, ‘হোন, পিরিতে চোট তো তুই পাইবিই। লেকিন, চোট পাইবি, এইটা মাইনা লিলেই পিরিতিটা সহজ অয়া যায়।’
শোনা যাচ্ছে, সেই গোপন ‘নিরাপদ প্রেমিক কল্যাণ সংঘ’ নাকি আবার জমে উঠেছে। মাখনের প্রাক্তন প্রেমিকারা সেখানে এক হয়ে হারানো প্রেমের গল্প করে। পাপিয়া, কুমকুমদের মনে আবার নতুন প্রেমের আশা জেগে উঠছে। কেউ প্রেমের প্রস্তাব দিলে বলে, ‘মাখনের লাহান আশিক অয়া পারবা?’ এলাকার চ্যাংড়া ছেলেরা চাহিদা বুঝে নিরাপদ প্রেমিক হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। মাখনের পেছন পেছন তারা ঘুরে বেড়ায়, নিরাপদ প্রেমিক হওয়ার তালিম নিতে চায়।
মাখন সরমাখা দুধ চায়ে সুরুৎ সুরুৎ চুমুক দিতে দিতে তাদের গোপন মন্ত্র শোনায়, ‘হোন, পিরিত করলে হিসাবের খাতাটা পিছে হালায় দিয়া আবি।’