ঢাকার কেরানীগঞ্জে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালকদের ওপর একের পর এক হামলা, হত্যা ও ছিনতাইয়ের ঘটনা এক গভীর সংকটের জন্ম দিয়েছে। গত আড়াই মাসে অন্তত পাঁচজন চালককে খুন করে অটোরিকশা ছিনতাই করা হয়েছে, যা স্থানীয় চালকদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়েছে। জীবিকার তাগিদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় নামা এই মানুষগুলোর নিরাপত্তা এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই হত্যাকাণ্ডগুলো বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, বরং একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের কাজ বলেই ধারণা করা হচ্ছে। অটোরিকশার যাত্রী সেজে বা অনুসরণ করে নির্জন স্থানে চালককে হত্যা করে গাড়ি ছিনতাই করা হচ্ছে। সর্বশেষ ঘটনায় রুবেল হোসেনের মতো একজন চালক ছিনতাই ঠেকাতে গিয়ে নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, পাশ দিয়ে পথচারীরা হেঁটে গেলেও কেউ তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেননি। এটি আমাদের সমাজের নৈতিক অবক্ষয়কেও তুলে ধরে।

অটোরিকশাচালকদের এই ঝুঁকির পেছনে দুটি প্রধান কারণ রয়েছে। প্রথমত, বেশির ভাগ চালকই ভাড়া করা রিকশা চালান। রিকশা চুরি হলে মালিককে তাঁর দামের প্রায় পুরোটাই শোধ করতে হয়। এই বিপুল অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সামর্থ্য তাঁদের থাকে না, ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁরা ছিনতাইকারীদের মোকাবিলা করতে বাধ্য হন। দ্বিতীয়ত, অনেক চালক কিস্তিতে রিকশা কেনেন, যা ছিনতাই হলে তাঁদের ঋণের বোঝা আরও বেড়ে যায়। এই অর্থনৈতিক চাপই তাঁদের জীবন হাতে নিয়ে ছিনতাই ঠেকানোর মতো ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে।

এই অপরাধী চক্রের সঙ্গে কিছু গ্যারেজমালিকের জড়িত থাকার অভিযোগও পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এ ধরনের যোগসাজশ প্রমাণ করে যে অপরাধের শিকড় অনেক গভীরে চলে গেছে। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে টহল জোরদারের কথা বলা হলেও, তা পর্যাপ্ত নয়। শুধু টহল দিয়ে এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব নয়, পুলিশকে আরও সক্রিয় ও কৌশলী হতে হবে। ছিনতাইকারী চক্রগুলোকে দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে ছিনতাই হওয়া অটোরিকশা উদ্ধার এবং গ্যারেজমালিকদের ভূমিকা তদন্ত করে দেখতে হবে। সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবা উচিত, যাতে অটোরিকশাচালকেরা সহজ শর্তে ঋণ বা কিস্তিতে রিকশা কিনতে পারেন। যাতে রিকশা ছিনতাই হলে চালকের ওপর বিশাল ঋণের বোঝা না চাপে। তবে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে সবচেয়ে যেটি কার্যকর তা হচ্ছে, পুলিশকে আরও তৎপরতা বাড়াতে হবে এবং কোনো অপরাধী চক্রকে ছাড় দেওয়া যাবে না। গ্রেপ্তারের পর সহজে জামিন পেয়ে আবার অপরাধের সঙ্গে যাতে জড়িয়ে না পড়ে, সে বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ নত ই অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকা-গোপালগঞ্জ-ফরিদপুর-মাদারীপুরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে বিজিবি

ঢাকা, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও মাদারীপুরের সার্বিক নিরাপত্তাসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মাঠে দায়িত্ব পালন করছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

আজ রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম।

বিজিবি সূত্র জানায়, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা একটি মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণার নির্ধারিত দিন ছিল ১৩ নভেম্বর। সেদিন ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ। ৭ নভেম্বর রাত থেকে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ ও বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা শুরু হয়। আগামীকাল সোমবার (১৭ নভেম্বর) এ মামলার রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এ রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ অনলাইনে আবার কর্মসূচির কথা বলছে। এর মধ্যে রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় ককটেল বিস্ফোরণ ও বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া
  • ৩২ নম্বরের দিকে যাওয়া ২টি বুলডোজার আটকে দিল সেনাবাহিনী
  • শেখ হাসিনার রায়কে ঘিরে সচিবালয়ে নিরাপত্তা জোরদার
  • পটুয়াখালীতে গ্রামীণ ব্যাংকে আগুন, প্রভাব পড়েনি শাটডাউনের
  • এক্সপ্রেসওয়ে ও পদ্মা সেতুতে নিরাপত্তা জোরদার, যানবাহনের সংখ্যা কম
  • ট্রাইব্যুনালে নিরাপত্তা জোরদার, আছে সেনাবাহিনী-র‍্যাব-পুলিশ
  • মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার রায় ঘিরে দেশজুড়ে ‘সতর্কতা’
  • শেখ হাসিনাসহ অন্যদের মামলার রায় যা-ই হোক না কেন, তা কার্যকর হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • ঢাকাসহ ৪ জেলায় বিজিবি মোতায়েন
  • ঢাকা-গোপালগঞ্জ-ফরিদপুর-মাদারীপুরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে বিজিবি