আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে
Published: 17th, August 2025 GMT
ঢাকার কেরানীগঞ্জে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালকদের ওপর একের পর এক হামলা, হত্যা ও ছিনতাইয়ের ঘটনা এক গভীর সংকটের জন্ম দিয়েছে। গত আড়াই মাসে অন্তত পাঁচজন চালককে খুন করে অটোরিকশা ছিনতাই করা হয়েছে, যা স্থানীয় চালকদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়েছে। জীবিকার তাগিদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় নামা এই মানুষগুলোর নিরাপত্তা এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই হত্যাকাণ্ডগুলো বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, বরং একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের কাজ বলেই ধারণা করা হচ্ছে। অটোরিকশার যাত্রী সেজে বা অনুসরণ করে নির্জন স্থানে চালককে হত্যা করে গাড়ি ছিনতাই করা হচ্ছে। সর্বশেষ ঘটনায় রুবেল হোসেনের মতো একজন চালক ছিনতাই ঠেকাতে গিয়ে নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, পাশ দিয়ে পথচারীরা হেঁটে গেলেও কেউ তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেননি। এটি আমাদের সমাজের নৈতিক অবক্ষয়কেও তুলে ধরে।
অটোরিকশাচালকদের এই ঝুঁকির পেছনে দুটি প্রধান কারণ রয়েছে। প্রথমত, বেশির ভাগ চালকই ভাড়া করা রিকশা চালান। রিকশা চুরি হলে মালিককে তাঁর দামের প্রায় পুরোটাই শোধ করতে হয়। এই বিপুল অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সামর্থ্য তাঁদের থাকে না, ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁরা ছিনতাইকারীদের মোকাবিলা করতে বাধ্য হন। দ্বিতীয়ত, অনেক চালক কিস্তিতে রিকশা কেনেন, যা ছিনতাই হলে তাঁদের ঋণের বোঝা আরও বেড়ে যায়। এই অর্থনৈতিক চাপই তাঁদের জীবন হাতে নিয়ে ছিনতাই ঠেকানোর মতো ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে।
এই অপরাধী চক্রের সঙ্গে কিছু গ্যারেজমালিকের জড়িত থাকার অভিযোগও পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এ ধরনের যোগসাজশ প্রমাণ করে যে অপরাধের শিকড় অনেক গভীরে চলে গেছে। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে টহল জোরদারের কথা বলা হলেও, তা পর্যাপ্ত নয়। শুধু টহল দিয়ে এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব নয়, পুলিশকে আরও সক্রিয় ও কৌশলী হতে হবে। ছিনতাইকারী চক্রগুলোকে দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে ছিনতাই হওয়া অটোরিকশা উদ্ধার এবং গ্যারেজমালিকদের ভূমিকা তদন্ত করে দেখতে হবে। সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবা উচিত, যাতে অটোরিকশাচালকেরা সহজ শর্তে ঋণ বা কিস্তিতে রিকশা কিনতে পারেন। যাতে রিকশা ছিনতাই হলে চালকের ওপর বিশাল ঋণের বোঝা না চাপে। তবে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে সবচেয়ে যেটি কার্যকর তা হচ্ছে, পুলিশকে আরও তৎপরতা বাড়াতে হবে এবং কোনো অপরাধী চক্রকে ছাড় দেওয়া যাবে না। গ্রেপ্তারের পর সহজে জামিন পেয়ে আবার অপরাধের সঙ্গে যাতে জড়িয়ে না পড়ে, সে বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকায় সতর্ক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
১৫ আগস্ট উপলক্ষে রাজধানীতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ঢাকায় সতর্ক অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। গুলিস্তানে আওয়ামী লীগ প্রধান কার্যালয় ও ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বাড়ানো হয়েছে পুলিশের অবস্থান।
ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী জানিয়েছেন, ১৫ আগস্টের কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে নাশকতা বা বিশৃঙ্খলার কোনো চেষ্টা সহ্য করা হবে না। যেকোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এই দিনে কেউ যেন কোনো ধরনের নাশকতা চালাতে না পারে, সেজন্য গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ানো বা উস্কানিমূলক পোস্ট দেওয়া ব্যক্তিদের ওপর কড়া নজর রাখছে ডিএমপির সাইবার ইউনিট।
আরো পড়ুন:
চিকিৎসক দেখিয়ে ফেরার পথে ট্রাকের ধাক্কায় বউ-শাশুড়ি আহত
এএসআই’র বিরুদ্ধে প্রবাসীর স্ত্রীকে নিয়ে পালানোর অভিযোগ
এদিকে, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সেখানে প্রবেশ ও বের হওয়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা তল্লাশি চালানো হচ্ছে। ইউনিফর্মধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশও (ডিবি) মাঠে কাজ করছে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে বসানো হয়েছে তল্লাশিচৌকি (চেকপোস্ট)। সন্দেহভাজন যেকোনো ব্যক্তি বা যানবাহনকে তল্লাশি করা হচ্ছে।
এছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। পুলিশ ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে, কোনো ধরনের জমায়েত বা মিছিল থেকে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয়। সার্বিকভাবে, ১৫ আগস্ট উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ