রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেছেন, “প্রশাসনের সঙ্গে যারা আছেন, তাদের কাছে আমার সুস্পষ্ট মেসেজ, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের তরফ থেকে যে সিদ্ধান্ত হবে, সেই সিদ্ধান্ত অক্ষর অক্ষরে পালন করতে হবে। এখানে কারো যদি দ্বিমত থাকে আগেই জানাবেন, আমরা সেখানে সেইভাবে ব্যবস্থা নেব।”

তিনি বলেন, “আপনারা যারা যতক্ষণ প্রশাসনে অংশ ততক্ষণ প্রশাসনের সকল কাজে আপনাদের সহযোগিতা করতে হবে। পর্দার আড়ালে অনেক মেকানিজম হচ্ছে, সেটার সময়ের ব্যবধানে কি হবে আমরা সবাই বুঝতে পারব।”

আরো পড়ুন:

রাকসু সম্পন্ন করতে সক্রিয় অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত শিক্ষক পরিষদের

নিখোঁজের ২ দিন পর নদীতে মিলল কলেজছাত্রের লাশ

সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেল সোয়া ৪টা দিকে সিনেট ভবনে রাকসু নিয়ে রিটার্নিক কর্মকর্তা ও পোলিং অফিসারদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রশাসনে যারা আছেন তাদের উদ্দেশ্যে তিনি এসব কথা বলেন।

উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব বলেন, “একটা খুব সুন্দর রাকসু করার ব্যাপারে আমরা বদ্ধপরিকর। ইনশাল্লাহ এই নির্বাচন হবে। সবার সাহায্য সহযোগিতা আন্তরিকতা এটা নিয়েই নির্বাচন হবে। একটা ভালো নির্বাচনে কতগুলো কন্ডিশন আছে, সেই কন্ডিশনগুলো কিভাবে মিট আপ করবে এই বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে স্বাধীন। অত্যন্ত ভালো একটা নির্বাচন কমিশন পেয়েছি আমরা।”

তিনি বলেন, “নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের একটা কমিটমেন্ট আছে এবং সেখান থেকে আমরা এক পাও পিছাইনি। সেই কন্ডিশনগুলা নিয়ে আমরা কতগুলো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছি। এই চ্যালেঞ্জগুলো আমরা কিভাবে উতরাব, এগুলো নিয়ে নির্বাচন কমিশন চিন্তাভাবনা করছে। সবকিছু তারা চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় এখন কি পরিস্থিতি বিরাজ করছে, সেটা আমরা সবাই জানি। এটা যে আদর্শ পরিবেশ, সেই কথা বলা যাবে না। বিভিন্ন হঠকারিতা বা যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, সেটা অবশ্যই পরিবেশের উপর প্রভাব ফেলেছে। তবে প্রশাসনের তরফ থেকে আমরা একটা জায়গায় আছি। নির্বাচন কমিশন যে সিদ্ধান্ত নেবে, তার পেছনে প্রশাসনের সমর্থন থাকবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে সাপোর্ট দেওয়ার কথা, সেই সাপোর্ট আমরা দেব।”

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রামে প্রকাশ্যে অস্ত্রবাজি–খুন, পুলিশ কী করছে

চট্টগ্রামে পরপর তিন দিন (গত বুধ থেকে শুক্রবার) প্রকাশ্যে অস্ত্রবাজি ও খুনের ঘটনার মূল আসামিদের কেউ এখনো ধরা পড়েননি। এ জন্য পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সন্ত্রাসীরা সক্রিয় থাকলেও পুলিশ ঘটনা রোধে আগাম কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। কাজে আসছে না গোয়েন্দা নজরদারি। তবে পুলিশ বলছে, ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের কিছু আসামিকে ধরেছে। বাকি ব্যক্তিদের ধরতে অভিযান চলছে।

পুলিশ জানায়, নগরের বায়োজিদ বোস্তামী থানার চালিতাতলীর খন্দকারপাড়া এলাকায় বুধবার সন্ধ্যায় জনসংযোগ চলছিল চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর। জনসংযোগের বহর এগোতে এগোতে চলছিল স্লোগান। হঠাৎ গুলির শব্দ। ছত্রভঙ্গ হয়ে যান নেতা-কর্মীরা। এ ঘটনায় এরশাদ উল্লাহসহ পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন। তাঁদের মধ্যে মারা যান জনসংযোগের বহরে থাকা ‘সন্ত্রাসী’ সরোয়ার হোসেন। বাকিরা নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুলিশ জানায়, সরোয়ারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, অস্ত্র, হত্যাসহ ১৫টি মামলা রয়েছে।

শুধু সরোয়ারের পরিবার নয়, এ ঘটনার পর চালিতাতলী এলাকায় সব বাসিন্দাই একরকম আতঙ্কে আছেন। গত বৃহস্পতিবার সেখানকার বাসিন্দারা প্রথম আলোকে জানান, তাঁরা গণমাধ্যমে বক্তব্য দিতেও ভয় পাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে চাননি কেউ। এলাকার লোকজন বলছেন, দীর্ঘদিন থেকে এলাকায় সন্ত্রাসী দলের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গোলাগুলি ও সংঘর্ষ চলে আসছে। এলাকাবাসীর প্রশ্ন, পুলিশেরও এটা জানার কথা। পুলিশের গোয়েন্দা নজরদারি কোথায় ছিল? থাকলেও তারা ঘটনার আগে ব্যবস্থা নিতে পারেনি কেন?

এই ঘটনায় নিহত ব্যক্তির বাবা আবদুল কাদের বাদী হয়ে বায়োজিদ বোস্তামী থানায় ২২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে পুলিশ চার আসামিকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু মূল আসামি মোহাম্মদ রায়হান, মোবারক হোসেনসহ বাকি ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা যায়নি। এমনকি ভিডিওতে বাঁ হাত দিয়ে সরোয়ারের ঘাড়ে গুলি করা যুবককেও শনাক্ত করা যায়নি। কে বা কারা, কার নির্দেশে গুলি করেছে, তা জানতে পারেনি পুলিশ।

নিহত ব্যক্তির বাবা আবদুল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত লোকের ভিড়ে আমার ছেলেকে একের পর এক সাতটি গুলি করে মেরেছে। তারা এত সাহস কীভাবে পায়। পুলিশ এখনো মূল আসামিদের কাউকে ধরতে পারেনি।’

শুধু সরোয়ারের পরিবার নয়, এ ঘটনার পর চালিতাতলী এলাকায় সব বাসিন্দাই একরকম আতঙ্কে আছেন। বৃহস্পতিবার সেখানকার বাসিন্দারা প্রথম আলোকে জানান, তাঁরা গণমাধ্যমে বক্তব্য দিতেও ভয় পাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে চাননি কেউ। এলাকার লোকজন বলছেন, দীর্ঘদিন থেকে এলাকায় সন্ত্রাসী দলের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গোলাগুলি, সংঘর্ষ চলে আসছে। এলাকাবাসীর প্রশ্ন, পুলিশেরও এটা জানার কথা। পুলিশের গোয়েন্দা নজরদারি কোথায় ছিল? থাকলেও তারা ঘটনার আগে ব্যবস্থা নিতে পারেনি কেন?

সরোয়ারকে গুলি করে মারার পরদিন বৃহস্পতিবার একই এলাকায় ইদ্রিস আলী নামের একজনকে গুলি করা হয়। তিনি ‘সন্ত্রাসী’ ইসমাইল হোসেনের ভাই। তাঁর বিরুদ্ধেও মামলা রয়েছে। তাদের প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী শহীদুল ইসলাম ওরফে বুইস্যার অনুসারীরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লে. কর্নেল হাফিজুর রহমান জানান। এই ঘটনায় র‌্যাব বুইস্যার দুই অনুসারীকেও গ্রেপ্তার করে।

ইদ্রিসকে দুপুরে যখন গুলি করা হয়, তখন ওই এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, গণমাধ্যমকর্মীসহ লোকজনের আনাগোনা ছিল। তারপরও সন্ত্রাসীরা কীভাবে প্রকাশ্যে গুলি করার সাহস পায়, সেই প্রশ্নের উত্তর পাচ্ছেন না বাসিন্দারা। চালিতাতলী এলাকার বাসিন্দা আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, এভাবে চলতে থাকলে বাপ–দাদার ভিটে ছেড়ে অন্যত্র ভাড়া বাসায় চলে যেতে হবে। অস্ত্রের ঝনঝনানি চললেও পুলিশ কিছুই করতে পারছে না।

ওই দুই ঘটনা নিয়ে যখন নগরজুড়ে মাতামাতি, তখন শুক্রবার নগরের হালিশহর মাইজপাড়া এলাকায় মো. আকবর নামের এক ব্যক্তিকে রাস্তায় প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে খুন করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে থানায় মাদকের মামলা রয়েছে। এই ঘটনায় পুলিশ মিনহাজুল ইসলামসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মীর কাসেমের ভাতিজা মিনহাজুল ইসলাম ওরফে সোহেলের সঙ্গে আকবরের দ্বন্দ্ব ছিল। মাদক বিক্রি ও আর্থিক লেনদেনের বিরোধ থেকে মিনহাজুলের হাতে খুন হন আকবর।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হালিশহর থানার এসআই মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নিহত আকবরের ছোট ভাই মারুফের কাছ থেকে মিনহাজুল ইসলাম টাকা নিয়ে তা ফেরত দেননি। ঘটনার দিন মারুফ পাওনা টাকা না পেয়ে মিনহাজুলের মোটরসাইকেল আটকে রাখেন। এ খবর মিনহাজুলের চাচা মীর কাসেমকে জানানোর পর তিনটি মোটরসাইকেলে সাত থেকে আটজন ঘটনাস্থলে আসেন। এ সময় আকবরের পরিবারও লোকজন ডেকে আনে। দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির এক পর্যায়ে মিনহাজুল আকবরের বুকের বাঁ পাশে ছুরি চালান। এক আঘাতেই ফুসফুস ছিদ্র হয়ে যায়।

পুলিশ জানায়, মিনহাজুলের বিরুদ্ধে অন্তত সাতটি মামলা রয়েছে। এলাকায় তিনি মার্ডার সোহেল নামে পরিচিত। মীর কাসেমের বিরুদ্ধে এর আগে আরও দুটি হত্যা মামলা রয়েছে। ২০১৪ সালের মান্না হত্যা ও ২০১৬ সালের ফয়সাল ইসলাম বাঘা হত্যা মামলার আসামি তিনি। নিহত আকবরের স্ত্রী নাহিদা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার তিনটি সন্তান রয়েছে। স্বামী সুদের ব্যবসা করেন, তাই তাঁরা আমাদের কাছ থেকে চাঁদা চেয়েছেন। স্বামী হত্যার বিচার চাই।’

ছাত্রদল কর্মীকে খুনের মামলার মূল আসামিরা অধরা

ব্যানার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে গত ২৭ অক্টোবর নগরের বাকলিয়া বগার বিলের মুখ এলাকায় ছাত্রদল কর্মী মো. সাজ্জাদকে (২২) গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন অন্তত ১০ জন। দলীয় সূত্র বলছে, নগর যুবদলের সাবেক সংগঠনিক সম্পাদক এমদাদুল হক বাদশা ও নগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি গাজী সিরাজ উল্লাহর অনুসারীদের মধ্যে এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এমদাদুল ও সিরাজ দুজনেই সিটি মেয়র ও নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি শাহাদাত হোসেনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। নিহত সাজ্জাদ এমদাদুলের অনুসারী ছিলেন বলে জানা গেছে।

এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হওয়া মামলায় ছাত্রদল নেতা সিরাজ উল্লাহর অনুসারী বোরহানউদ্দিন ও তাঁতি লীগের নেতা নজরুল ইসলামকে আসামি করা হলেও পুলিশ তাদের এখনো ধরতে পারেনি।

তবে বাকলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, অস্ত্রসহ পুলিশ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। জড়িত বাকি ব্যক্তিদের ধরার চেষ্টা রয়েছে। বর্তমানে মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে রয়েছে। পুলিশ ১১ জনকে ধরলেও মূল আসামি ধরা না পড়ায় আতঙ্কে রয়েছেন বাকলিয়া এক্সেস রোডের বাসিন্দারা। মো. রাকিব নামের এক চাকরিজীবী প্রথম আলোকে বলেন, এলাকায় প্রায়ই গোলাগুলির শব্দ শুনতে পান। এর আগেও জোড়া খুনের ঘটনা ঘটেছিল। সিনেমার দৃশ্যের মতো সন্ত্রাসীরা প্রাইভেট কারকে লক্ষ্য করে গুলি করেছিল। কিন্তু আশপাশে কোনো পুলিশ ছিল না। যার কারণে প্রতিনিয়ত আতঙ্কে থাকতে হয়।

জানতে চাইলে নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (গণমাধ্যম) আমিনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, সব কটি ঘটনায় পুলিশ আসামি গ্রেপ্তার করেছে। অস্ত্রও উদ্ধার হয়েছে। জড়িত বাকি ব্যক্তিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সম্প্রতি অস্ত্রবাজির ঘটনায় জামিনে বেরিয়ে আসা সন্ত্রাসীদের ওপর পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের সভাপতি মো. সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ রাখতে থানা-পুলিশের পাশাপাশি পুলিশের বিশেষ শাখা সন্ত্রাসীসহ অপরাধীদের নজরদারিতে রাখে। এ জন্য পুলিশের সোর্সকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের সোর্স মানি যথাসময়ে দিতে হবে। পুলিশের মনোবল ফিরিয়ে আনা ও তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। সন্ত্রাসীদের পেছনে কোনো রাজনৈতিক আশ্রয়–প্রশ্রয় থাকলে তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ