ক্ষমতাচ্যুত সরকার অর্থনীতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছিল। যত দিন যাচ্ছে, ততই কৃত্রিমভাবে তৈরি ‘অলৌকিক’ উন্নয়নের আখ্যানটি ভেঙে খানখান হয়ে পড়ছে। অবিশ্বাস্য নাজুক আর্থসামাজিক পরিস্থিতি উন্মোচিত হচ্ছে। সংস্কার নিয়ে চলমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার টানাটানি দীর্ঘায়িত হলে অর্থনীতির এই ক্ষত আরও গভীরতর হবে। ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষ নিদারুণ আঘাতে জর্জরিত। 

জাতি এখন এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। জাতীয় নির্বাচন প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময়েই হতে হবে। রাজনৈতিক অনড় অবস্থান দীর্ঘায়িত হলে অর্থনৈতিক ঝুঁকি সমাজকে হতাশার গহ্বরে নিপতিত করবে। নির্বাচিত সরকার ছাড়া দেশি-বিদেশি কোনো বিনিয়োগকারীই আস্থা পান না। এ অবস্থায় কেউ বিনিয়োগও করবেন না। কেবল বৈধ, স্থায়ী সরকারই বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা কমানোর জন্য ইতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। 

এখন রাজনৈতিকভাবে অনড় অবস্থানের বদলে প্রয়োজন হতাশা থেকে আশায় পৌঁছানোর জন্য জাতীয় ঐকমত্য। প্রয়োজন রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও মেরুকরণ কমানো এবং জাতীয় বিভাজন দূর করা। জনগণের সুখ-সমৃদ্ধিকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দেওয়া সম্মিলিত ঐকমত্য জরুরি। স্থায়ী স্থিতিশীলতার জন্য স্বল্পমেয়াদি রাজনৈতিক অন্ধ সমর্থন পরিহার দরকার। অর্থাৎ জুলাই সনদ দ্রুত স্বাক্ষর করে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে অনিশ্চয়তা দূর করা প্রয়োজন।

আরও পড়ুনব্যাংক কেলেঙ্কারি: ভিয়েতনামে বিচার হয়, বাংলাদেশে কেন ছাড় পায়১৬ এপ্রিল ২০২৪মানবিক সংকট, সমাজে ভাঙন

মানবিক সংকট বাড়ছে। পরিসংখ্যানই বলে দেয় পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ। পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) জরিপ অনুযায়ী, দারিদ্র্যের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ শতাংশে। আর চরম দারিদ্র্য বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ (৯.

৪%)। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, মহামারি-পরবর্তী ধাক্কা, প্রকৃত মজুরি হ্রাস ও রাজনৈতিক অস্থিরতা দারিদ্র্য বাড়াচ্ছে। 

মহামারি-পরবর্তী ধাক্কা পরিবারের বাজেটে চাপ সৃষ্টি করছে। যদিও মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা কমে এখন ৮ দশমিক ২৯ শতাংশে পৌঁছেছে, তবু ১২ মাসের গড় মুদ্রাস্ফীতি এখনো ১০ শতাংশের কাছাকাছি। মাসিক ব্যয়ের অর্ধেকের বেশি এখন শুধু খাদ্যেই চলে যাচ্ছে। ১০ শতাংশের বেশি দরিদ্র পরিবারের খরচ তাদের আয়ের চেয়ে বেশি। তাদের ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মজুরি বেড়েছে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ, যা মুদ্রাস্ফীতির তুলনায় কম। ফলে প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা কমছে। এগুলো কোনো বিমূর্ত পরিসংখ্যান নয়, বরং পরিবার পর্যায়ে এক দুর্বিষহ বাস্তবতা। 

আরও পড়ুনবাংলাদেশে ‘মাফিয়া অর্থনীতি’ দমন কতটা সম্ভব হচ্ছে০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২৪ সালের শ্রমশক্তি জরিপ গণ-অভ্যুত্থানের অগ্রদূত তরুণদের জন্য নতুন দুঃসংবাদ বয়ে এনেছে। যুব বেকারত্ব ভয়াবহ রকম উচ্চই রয়ে গেছে। ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী ১৩ লাখ তরুণ কাজ পাচ্ছেন না। এর পরের অবস্থানে ২৫ থেকে ৩৪ বছর বয়সী ৯ দশমিক ১৬ লাখ এবং ৩৫ বছরের বেশি বয়সী ৩ দশমিক ৭৯ লাখ মানুষ বেকার। বিশেষত স্নাতকদের জন্য পরিস্থিতি অত্যন্ত সংকটজনক। ২০২৪ সালে বেকার স্নাতকের সংখ্যা ৯ লাখ। সব শিক্ষাগত স্তরের মধ্যে সর্বাধিক। প্রতি তিনজন স্নাতকের একজন কাজ খুঁজে পাচ্ছেন না। 

শুধু শিক্ষিত তরুণদের জন্য নয়, নারীদের ক্ষেত্রেও অবস্থা হতাশাজনক। নারীরা এখনো শ্রমবাজারে এক-তৃতীয়াংশের কম। কর্মসংস্থানে নারীদের অংশ ৩৩ দশমিক ১০ শতাংশ। পুরুষদের অংশ ৬৬ দশমিক ৯০ শতাংশ। আঞ্চলিক চিত্রে বেকারত্বের হারে ঢাকা শীর্ষে। ৬ লাখ ৮৭ হাজার মানুষ এখানে কাজহীন। তবে মনে রাখতে হবে, বিবিএসের এই পরিসংখ্যান শর্তসাপেক্ষ। বেকারত্বের সংজ্ঞা যেমনভাবে জরিপে ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে বাস্তব সংকটের গভীরতা আড়ালেও থেকে যেতে পারে। 

তরুণদের এই বেকারত্ব আগুনের স্ফুলিঙ্গ। এই অপচয় হয়ে যাওয়া কর্মহীনতা, তারুণ্যের অসীম সম্ভাবনাকে দুমড়েমুচড়ে ফেলছে। বৈষম্য, অসাম্য ও অদক্ষতারই প্রতিচ্ছবি। ভুলে গেলে চলবে না, শ্রমজীবী মানুষ এবং ভবিষ্যতের শ্রমজীবী তথা তরুণেরাই গণ-অভ্যুত্থানে সবচেয়ে বেশি আত্মত্যাগ করেছেন ও জীবন দিয়েছেন। 

পতিত ক্ষমতাধরেরা প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহির তোয়াক্কা না করেই পুরো আর্থিক ব্যবস্থা হুমকির মুখে রেখে গেছে। বিনিয়োগ স্থবির হয়ে আছে। মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কমেছে। এর সরাসরি ফল—চাকরিবিহীন প্রবৃদ্ধি। সাধারণ নাগরিকদের সঞ্চয় ঝুঁকিতে পড়েছে এবং নতুন বিনিয়োগের জন্য সক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। দেশের তরুণ ও কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। 

অন্যদিকে সমাজে ভাঙন ধরেছে। দরিদ্র হতদরিদ্রে, নিম্নবিত্ত নতুন দারিদ্র্যের জাঁতাকলে আর নিম্নমধ্যবিত্ত নিম্নবিত্তে নেমে যাচ্ছে। অন্যদিকে অলিগার্কি এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। 

স্থিতিশীলতার অপরিহার্যতা

পরিসংখ্যানগুলো স্পষ্ট, মানুষের কষ্ট বাস্তব এবং রোগনির্ণয় সুনির্দিষ্ট। দুটি পথপরিকর্মার মধ্যে একটিকে নির্বাচন করতে হবে। চলমান ধারা বহাল রাখা অর্থাৎ কেবল বিশেষ গোষ্ঠীতন্ত্র সুযোগ-সুবিধা পাবে। অন্যদিকে ভবিষ্যৎ বিকল্প—আশা, মর্যাদা ও অধিকারের পথরেখা। এখন কাজ হলো দ্রুত সর্বসম্মত জাতীয় সনদ গড়ে তোলা। 

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার স্বভাবগতভাবেই অস্থায়ী। দীর্ঘমেয়াদি নীতিনির্ধারণের নিশ্চয়তা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রদান করতে পারে না। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বছরের হিস্যা ধরে কাজ করেন; মাসের হিসাব নয়। তাঁদের আস্থার প্রয়োজন। কেবল নির্বাচিত ও রাজনৈতিক সরকারই স্থিতিশীলতা প্রদানে সক্ষম। ব্যক্তিগত বিনিয়োগকে উদ্দীপিত ও অনুমানযোগ্য ব্যবসায়িক পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে। কেবল তখনই বিনিয়োগহীনতা, চাকরি সৃষ্টিহীনতা ও দারিদ্র্য বৃদ্ধির বর্তমান দুষ্টচক্রকে উল্টে দিয়ে আস্থা, মূলধনপ্রবাহ, কর্মসংস্থান ও সমানভাবে ভাগ করে নেওয়া সমৃদ্ধির ইতিবাচক চক্র তৈরি সম্ভব। 

আরও পড়ুনকেন এমন রেমিট্যান্স–উত্থান১১ আগস্ট ২০২৫রাজনৈতিক সমঝোতাই সমাধান

আসল সংকট রাজনীতিতে। বিভাজন জন্ম দেয় অনিশ্চয়তা, অনিশ্চয়তা থামিয়ে দেয় বিনিয়োগ, বিনিয়োগের স্থবিরতা বেকারত্ব ও দারিদ্র্য বাড়ায়, হতাশা রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে আরও গভীর করে। এভাবেই চলছে এক দুষ্টচক্র। এটি ভাঙতে হলে উল্টো দিকের যাত্রা দরকার—বিভাজন থেকে ঐক্যে, অনিশ্চয়তা থেকে স্থিতিশীলতায়, হতাশা থেকে আশায়। 

শুধু নির্বাচিত সরকারই পারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে। গণ–অংশগ্রহণ থেকে জন্ম নেয় বৈধতা। সেই বৈধতা থেকেই আসে বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য হ্রাস ও জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হয়। রাজনৈতিক সমঝোতা কোনো বিলাসিতা নয়, অর্থনীতির জন্য জীবন-মরণ প্রয়োজন। 

আশায় বুকও বাঁধা যায়। বাগ্‌বিতণ্ডায় ভুলে গেলে চলবে না, ঐকমত্য কমিশনের ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে ৭৫টিতেই সব রাজনৈতিক দলের পূর্ণ সমর্থন আছে। মাত্র ৯টি বিষয়ে আংশিক বা পূর্ণ আপত্তি আছে; ৩২টি দল বা জোটের ভেতর মাত্র ২ থেকে ৫টি দলের। সুতরাং রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে ঐকমত্যের খুবই কাছাকাছি পর্যায়ে আছে। 

ইতিহাস শেখায়, ১৯৭১ সালে ঐক্য এনে দিয়েছিল মুক্তি। ১৯৯০ সালের ঐকমত্য স্বৈরতন্ত্র গুঁড়িয়ে দিয়েছিল। আজও পথ একটাই—সংঘাত নয়, সমঝোতা। ভবিষ্যৎকে মর্টগেজ বা জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে ফেলে দেওয়ার মতো বিলাসিতার সুযোগ নেই। 

এই সন্ধিক্ষণে অচলাবস্থা, অনিশ্চয়তা ও অবক্ষয় অর্থনীতি ও সমাজকে খেয়ে ফেলতে পারে। সবারই জানা, নির্বাচিত নেতৃত্ব ছাড়া বিনিয়োগ নেই, স্থিতি নেই, ভবিষ্যৎ নেই। বাংলাদেশে হতাশার কোনো স্থান নেই। আশার ভিত্তিতেই গড়ে উঠুক এমন রাজনীতি, যেখানে অর্থনীতি আবার শ্বাস নিতে পারে। ঐক্য শক্তিতে রূপান্তর করুক।

ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক

* মতামত লেখকের নিজস্ব

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর স খ য ন র জন ত ক দ র জন ত ক স ন র জন ত পর স থ ত ন শ চয়ত ঐকমত য র জন য সমঝ ত দশম ক অবস থ ক ষমত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সম্ভাব্য উপায় নিয়ে আরও পর্যালোচনা হচ্ছে

জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে ‘সংবিধান আদেশ’ জারি ও পরবর্তী সময়ে গণভোটের যে সুপারিশ করা হয়েছিল, তা নিয়ে আরও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। গতকাল শনিবার বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানিয়েছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কমিশনকে আবার মতামত দেবে বিশেষজ্ঞ কমিটি। এরপর কমিশনের সঙ্গে বিশেষজ্ঞদের আবার বৈঠক হবে।

বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা আপাতত মুলতবি রয়েছে। আগামী অক্টোবর মাসের শুরুতে মুলতবি আলোচনা শুরু হতে পারে। সেখানে বিশেষজ্ঞদের মতামত আবার তুলে ধরা হবে বলে জানা গেছে।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতার মধ্যে গত বুধবার বিশেষজ্ঞদের নতুন পরামর্শ প্রস্তাব সামনে আনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। পরামর্শ প্রস্তাবে বলা হয়, মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার একটি ‘সংবিধান আদেশ’ জারি করতে পারে। এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। এরপর আদেশটি নিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট করা যেতে পারে।

তবে এই প্রস্তাব নিয়ে বিএনপিসহ বেশ কিছু দল দ্বিমত জানায়। সংবিধানের সংশোধন বা সংবিধান আদেশ অন্তর্বর্তী সরকার বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ করতে পারবে কি না বা অন্য কোনো উপায়ে এটা করা যায় কি না, এ বিষয়ে সংবিধানের ১০৬ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। আরও কয়েকটি দল সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়ার কথা বলেছে।

তবে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বিএনপির এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে। সনদ বাস্তবায়নে বিশেষজ্ঞরা যে পরামর্শ দিয়েছেন, সেটা জামায়াতের প্রস্তাবের কাছাকাছি। আর এনসিপি জানিয়েছিল, নিজেদের দলে আলোচনা করে পরে তাদের অবস্থান জানাবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিশেষজ্ঞরা যে পদ্ধতি সুপারিশ করেছেন, তা কার্যকর হলে কিছু ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হতে পারে। সংবিধান আদেশ জারি ও কার্যকর করার পর গণভোটে যদি জুলাই সনদ পাস না হয়, তাহলে কী হবে, সেটি একটি বড় প্রশ্ন। গতকাল বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। এর পাশাপাশি সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে রাজনৈতিক দলগুলো যে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনটি পদ্ধতির সমন্বয়ে কোনো উপায় বের করা যায় কি না, সেটাও ভাবা হবে। তবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

গতকাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়নের উপায় ও পদ্ধতি নিয়ে গতকাল বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আবারও সভা করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। জাতীয় সংসদের এলডি হলে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় বিশেষজ্ঞ হিসেবে অংশ নেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ইকরামুল হক, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট ড. শরিফ ভূইয়া, ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন ও ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক।

কমিশনের উপস্থাপন করা সনদের বাস্তবায়ন-সংক্রান্ত সম্ভাব্য সুপারিশমালা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনুষ্ঠিত আলোচনার সারসংক্ষেপ বিশেষজ্ঞদের অবহিত করা হয়। আলোচনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতামত, পরামর্শ এবং উদ্বেগের দিকগুলো বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়; যাতে বিশেষজ্ঞরা সামগ্রিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পেতে পারেন।

বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে গতকালের সভায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান ও মো. আইয়ুব মিয়া। এ ছাড়া জাতীয় ঐকমত্য গঠনপ্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার সভায় অংশ নেন।

জানতে চাইলে মনির হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, বুধবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনের মনে হয়েছে, বাস্তবায়ন পদ্ধতির যে সুপারিশ করা হয়েছে, তা নিয়ে কিছুটা অস্পষ্টতা আছে। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে। এটি আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এ বিষয়ে পরবর্তী সময়ে আরও বৈঠক হতে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দেশকে বিপর্যয়ে ঠেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে: ইসমাইল জবিউল্লাহ
  • কয়েকটি রাজনৈতিক দলের জেদ ও ভুলের কারণে নির্বাচন হুমকির মুখে পড়তে পারে: এবি পার্টি
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সম্ভাব্য উপায় নিয়ে আরও পর্যালোচনা হচ্ছে