জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার; তিনি মনে করছেন, নানা মহলের স্বার্থ দেখায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও মতৈক্য হবে না।

আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক গোলটেবিল আলোচনায় ঐকমত্য কমিশন, সংস্কার প্রস্তাবসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন তিনি। বর্তমান সংবিধান মেনে শপথ নেওয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমালোচনা করেন তিনি আগের মতোই।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আয়োজিত এ আলোচনায় ফরহাদ মজহার বলেন, ‘সাংবিধানিকভাবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার অবৈধ। এই সরকারের কোনো এখতিয়ার নাই জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তৈরি করার। এই সরকারের কোনো এখতিয়ারই নাই কোনো কমিশন তৈরি করার। কারণ, এটা ইলিগ্যাল গভর্নমেন্ট।’

ছাত্র–জনতার যে অভ্যুত্থানে গত বছর শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে, তাতে নেতৃত্ব দেওয়া অনেক তরুণই ফরহাদ মজহারের চিন্তার অনুসারী বলে মনে করা হয়। অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন বঙ্গভবনে শপথ নিয়েছিল, তখনই তার সমালোচনা করেছিলেন তিনি।

‘নভেম্বর থেকে জুলাই: বিপ্লব থেকে বিপ্লবে’ শিরোনামের আজকের গোলটেবিলেও তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার সংবিধানে যদি আপনি শপথ করেন, আপনি রক্ষা করেন, তাহলে এটা রক্ষা করতে হবে। এটাকে আপনি পরিবর্তন করতে পারবেন না, সংস্কার করতে পারবেন না।’

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ‘সম্পূর্ণ গণবিরোধী’ প্রস্তাব ছিল মন্তব্য করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘এটাতে যারা পার্টিসিপেট করেছে, এরা গণবিরোধী। কারণ, আমাদের তো গণঐক্য ছিল। আমরা যে গণ–অভ্যুত্থান করেছি গণঐক্যের ভিত্তিতে, কোনো দল, দলের ভিত্তিতে করি নাই। এটাই ছিল এই আন্দোলনের বিউটি।’

অন্তর্বর্তী সরকার যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করেছে, সেই কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর যে সুপারিশ করেছে, তাতে নানা বিষয়ে বিভেদ দেখা দিয়েছে।

তা নিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘তাঁরা কখনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারবে না। কারণ, রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন করপোরেশনের বিভিন্ন স্বার্থকে রক্ষা করে।’

সংস্কারের বিষয়গুলো নিয়ে দেশের সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে আলোচনা না করার সমালোচনা করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘সংস্কার নিয়ে আলোচনা করেছেন লুটেরা মাফিয়া শ্রেণির সঙ্গে। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে। জনগণের সঙ্গে না। কোনো গণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও না। নারীদের সঙ্গে করেছে? করেনি। তো কার সঙ্গে করেছে?’
ফরহাদ মজহার মনে করেন, গণ–অভ্যুত্থানের পর উচিত ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য অথবা শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার শপথ নেওয়া। সেটা না করে তারা ‘মারাত্মক ভুল’ করেছে।

গোলটেবিল আলোচনায় ফরহাদ মজহারের পাশেই বসে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তৎকালীন সমন্বয়ক, বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। তখনকার ভুল স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালানোর এক ঘণ্টা, দুই ঘণ্টাও বোধ হয় হয়নি, আমাদের রাজনৈতিক নেতারা এস্টাবলিশমেন্টের কোলে উঠে গেছেন। তো তরুণ হিসেবে আমাদেরও ভুল আছে, আমরা ২৫-২৬ বছরের কয়েকজন তরুণ ছিলাম পলিসি মেকিংয়ের দায়িত্বে। কিন্তু যখন আমাদের অগ্রজেরা এস্টাবলিশমেন্টকে গিয়ে দায়িত্ব দিয়ে আসেন, যে আপনারা একটা অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেন, তখন আমাদের হাতে আসলে খুব বেশি কিছু থাকে না।’

ফরহাদ মজহার সেই ভুল শুধরে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘৫ আগস্ট আমরা ভুল করেছি। তো কী হয়েছে? আমরা আবার ঠিক করব।’ বিদ্যমান সংবিধানকে বাতিল করতে দ্রুত সময়ে গণপরিষদ গঠন করার কথা বলেন তিনি।

এই আলোচনায় এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় এমন অনেক দল ছিল, যারা অনুভব করতে পারছিল না, চব্বিশের জুলাইয়ে দেশে অনেক বড় একটা ঘটনা ঘটেছে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদের সঞ্চালনায় এই বৈঠকে অংশ নেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুম, কর্নেল (অব.

) হাসিনুর রহমান, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন, পুসাবের স্থায়ী কমিটির সদস্য ফাহমিদুর রহমান, অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট মোহাম্মদ সজল প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র আম দ র দলগ ল

এছাড়াও পড়ুন:

‘জাতীয় ইস্যুতে সর্বদলীয় ঐকমত্য জরুরি’

ভাষাবিদ ও সাহিত্যিক মাহমুদুল হাসান নিজামী বলছেন, “দেশের গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যুতে সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে ঐকমত্য গঠন করা অতীব জরুরি।”

শুক্রবার (৭ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ইসলামী সমন্বয় পরিষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে তিনি প্রধান অতিথির বক্তৃতায় একথা জানান।

নিজামী তার বক্তব্যে বলেন, “জাতীয় নিরাপত্তা ও নির্বাচন দুইটিই দেশের ভবিষ্যতের দিক নির্ধারণ করে। দেশের কল্যাণে জনগণের দাবি পূরণে সর্বস্তরের মানুষের মানবিক আচরণ প্রয়োজন। সরকারের কাজ হলো জাতিকে সঠিক পথ দেখানো, আর জনগণের কর্তব্য সেই পথ অনুসরণ করা। কিন্তু বর্তমানে সরকার ও জনগণের মধ্যে দূরত্ব বেড়ে গেছে- এটি কারো কাম্য নয়।”

তিনি বলেন, “এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে জাতীয় ইস্যুতে সর্বদলীয় ঐকমত্য প্রয়োজন। জাতীয় সংলাপই তার অন্যতম প্রেক্ষাপট।”

অনুষ্ঠানে সংগঠনের মহাসচিব বি এম এরশাদ বলেন, “নাগরিক নিরাপত্তা ও আসন্ন নির্বাচন দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এখন নির্বাচনকে গণদাবি হিসেবে দেখা হলেও নাগরিকের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বর্তমান অস্থায়ী সরকারের প্রধান দায়িত্ব হওয়া উচিত। তিনি যোগ করেছেন যে বৈষম্যরোধ, বাকস্বাধীনতা এবং স্বাধীন মত প্রকাশের নিশ্চয়তা প্রদান করাই সুষ্ঠু প্রক্রিয়ার ভিত্তি।”

সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এস এম সরওয়ার বলেন, “দেশের সংকটময় সময়ে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস ছাড়া উন্নয়ন ও কল্যাণমুখী ভবিষ্যত নির্মাণ সম্ভব নয়। তাই জাতীয় নিরাপত্তা ও আগামী নির্বাচনকে সফল করতে সংগঠনটি কাজ করে যাচ্ছে।”

ঢাকা/এএএম/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঐকমত্যের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই: আমীর খসরু
  • জুলাই সনদ ও নোট অব ডিসেন্টের রাজনীতি
  • ঐকমত্য কমিশনের মোট ব্যয় ১ কোটি ৭১ লাখ টাকা 
  • ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে
  • ‘জাতীয় ইস্যুতে সর্বদলীয় ঐকমত্য জরুরি’
  • ঐকমত্য কমিশনের আপ্যায়ন ব্যয় ৪৫ লাখ টাকা
  • ঐকমত্য কমিশন কী হলো না হলো কিছু আসে যায় না: আমীর খসরু
  • কমিশনে কী হলো না হলো কিছু আসে যায় না, ৩১ দফা বাস্তবায়ন হবে: আমীর খসরু
  • ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ রাজনীতিতে অনৈক্য ও বিভক্তি বাড়িয়েছে: রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর