ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে
Published: 7th, November 2025 GMT
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর পাল্টাপাল্টি অবস্থানের ফলে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এর সমাধানের জন্য দলীয় স্বার্থের বাইরে এসে জাতীয় স্বার্থের কথা বিবেচনা করে ঐকমত্যে আসতে হবে। একদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব রয়েছে ঐকমত্যে আসার, অন্যদিকে যেহেতু সরকার দায়িত্ব নিয়েছিল একটি গণতান্ত্রিক উপায়ে ঐকমত্য সৃষ্টির, তাই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার কাজটি সরকারকেই দায়িত্ব নিয়ে শেষ করতে হবে।
রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থ অনুযায়ী দাবিদাওয়া সামনে আনবে, সেটা অনুমেয়। কিন্তু ন্যূনতম প্রত্যাশা ছিল যে তারা কিছু সংস্কারের প্রশ্নে ঐকমত্যে আসবে। এখন তারা যদি দলীয় স্বার্থের জায়গাগুলো ছাড়তে রাজি না হয়, তাহলেও সরকারকেই দায়িত্ব নিয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, তা যত কঠিনই হোক না কেন। কতগুলো বিষয় নিয়ে বিভিন্ন দল নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে রেখেছে। এগুলো বাদ দিয়ে জোর করে চাপিয়ে দিয়ে সংস্কারকাজ সম্পন্ন হবে ভাবলে তা–ও আসলে টেকসই হবে না।
আরও পড়ুনঐকমত্য না হলে দেশে টালমাটাল অবস্থা তৈরি হবে৩ ঘণ্টা আগেআমরা মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যে আসা উচিত। আবার একই সঙ্গে মনে করি, গণভোটের মধ্য দিয়ে আরও বড় বিভাজনও তৈরি হতে পারে। সেই বিভাজন নিয়ে জাতি কীভাবে সামনে এগোবে, সেটা বলা কঠিন।
জুলাই সনদে অনেক ভালো ভালো বিষয় রয়েছে। আবার অনেক ভালো ও গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রস্তাব বাদ পড়েছে। একটা সফল গণভোট হতে হলে শুধু ভোট সম্পন্ন করলেই হবে না, প্রতিটি বিষয় নিয়ে জনসচেতনতা থাকতে হবে। এখানে মানুষ যে ‘হ্যাঁ’-‘না’ ভোট দেবে, অনেকেই জানবে না কে কী কারণে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দিচ্ছে।
গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে যে অস্থিরতা ও অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে, মানুষ এ থেকে মুক্ত হতে চায় একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনাটাও সরকারের দায়িত্ব।
অন্তর্দলীয় সংঘাত ও অন্য দলের সঙ্গে সংঘাত—এই ঘটনাগুলো সমাধান করতে হবে সংলাপের মাধ্যমে। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে হবে।
আরও পড়ুনযেটা ৮ মাসে হয়নি, সেটা ৮ দিনের কম সময়ে কীভাবে হবে৩ ঘণ্টা আগেনির্বাচনে সাধারণ মানুষকে যদি ভয় দেখানো হয়, তারা যদি ভোটকেন্দ্রে যেতে না চায়, এর দায় সরকারের ওপরই বর্তায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো এখন থেকেই এ বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে প্রাথমিকভাবে একটা ম্যাপিং করতে পারে যে কোথায় কোথায় সংঘাত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এর মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কৌশল ঠিক করা যেতে পারে।
আরও পড়ুনসবাই একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছি২ মিনিট আগেগণ-অভ্যুত্থানে মানুষ যে পরিমাণ আত্মত্যাগ করেছে, এখন তাদের প্রত্যাশা অনেক বেড়েছে। বিভিন্ন দলের মধ্যে কিছু অসহিষ্ণুতা দেখতে পাচ্ছি। নানা ধরনের মব আক্রমণ চলছে, কিন্তু শাস্তি হচ্ছে না। মেহনতি মানুষের দাবিদাওয়াকে সরকার গণ্য করছে না। এগুলো মানুষের মধ্যে অস্থিতিশীলতার অনুভূতি বাড়িয়ে দেয়। আবার এই মব আক্রমণকে জায়েজ করছেন অনেকে। শিশু-কিশোরদেরও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে জেলে রাখা হয়েছে। অনেক অমানবিক ঘটনা ঘটছে। এই পরিস্থিতি মোটেই কাম্য নয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর স থ ত ঐকমত য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সংবিধান ও আইন অনুযায়ী সনদ বাস্তবায়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ বিএনপি
জুলাই জাতীয় সনদের যে সব বিষয় ঐকমত্য হয়েছে, তার আইনানুগ বাস্তবায়নে এবং যথাসময়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে আন্তরিক ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।
দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি অংশ নেওয়া বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় এ আহ্বান জানানো হয়েছে।
আরো পড়ুন:
ঐকমত্য কমিশন কী হলো না হলো কিছু আসে যায় না: আমীর খসরু
উপদেষ্টারা পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে কাজ করছেন: ফখরুল
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) রাতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সভায় আলোচনাক্রমে নিম্ন লিখিত প্রস্তাব গৃহিত হয়-
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে দীর্ঘ ও বিস্তারিত আলোচনা শেষে কতিপয় বিষয়ে নোট অব ডিসেন্টসহ যে সকল বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং গত ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ঐতিহাসিক আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে স্বাক্ষরিত হয়েছে, আমরা তার অংশীদার হিসাবে সনদে বর্ণিত সকল বিষয়কে ধারণ করি এবং দেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী তা বাস্তবায়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ।
সর্বসম্মতভাবে গৃহিত জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে নতুন প্রশ্ন কিংবা সংকট সৃষ্টির সকল অপপ্রয়াসের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকামী জনগণের শক্তিকে ধারণ করে বিএনপি গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় দীর্ঘ ১৬ বছরের অবিরাম লড়াই ও ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের সীমাহীন ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে।
বিএনপি দৃঢ়ভাবে মনে করে যে, দীর্ঘ আলোচনায় উপনীত ঐকমত্যকে বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সকল রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ থাকবে এবং কোনো মতেই নিত্য নতুন প্রশ্ন উত্থাপন কিংবা সংকট সৃষ্ট করে গণতন্ত্র পুণঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আয়োজিতব্য নির্বচন অনুষ্ঠানে বাধা সৃষ্টি করবে না।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/মাসুদ