প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ (শুক্রবার) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৮০তম অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। সূচি অনুযায়ী, নিউইয়র্ক স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় অধিবেশন শুরু হবে। প্রধান উপদেষ্টা দিনের দশম বক্তা হিসেবে ভাষণ দেবেন।

প্রধান উপদেষ্টা তাঁর ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া সংস্কার কার্যক্রম, ২০২৪ সালের জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের অঙ্গীকার, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং রোহিঙ্গা সংকটের বিষয় তুলে ধরবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গতকাল বৃহস্পতিবার এক ব্রিফিংয়ে জানান, অধ্যাপক ইউনূস গত ১৪ মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম এবং দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের অগ্রগতি সম্পর্কে বিশ্ব সম্প্রদায়কে জানাবেন। তিনি আরও বলেন, গণতান্ত্রিক উত্তরণ নিশ্চিত করতে সরকারের নেওয়া উদ্যোগও ভাষণে গুরুত্ব পাবে।

প্রেস সচিবের ভাষায়, ‘মূল বার্তাটি হবে—বিশ্ববাসীর কাছে প্রধান উপদেষ্টা তুলে ধরবেন আগামী বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনটি হবে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, বিশ্বাসযোগ্য এবং উৎসবমুখর।’

উচ্চপর্যায়ের নৈশভোজে অংশগ্রহণ

জাতিসংঘে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন আয়োজিত এক উচ্চপর্যায়ের নৈশভোজে শ্রম আইন, শ্রমিকের অধিকার ও চলমান সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন কূটনীতিক, জাতিসংঘ কর্মকর্তাসহ বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা।

নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা আলোচনায় অংশ নিয়ে শ্রম খাত সংস্কার অব্যাহত রাখার প্রতি ঐকমত্য প্রকাশ করেন।

অধ্যাপক ইউনূস তাঁর বক্তব্যে বলেন, বৃহৎ পরিসরে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য শ্রম সংস্কার অপরিহার্য। তিনি ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের আগে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কনভেনশনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আইএলও মহাপরিচালক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তাঁরা শ্রম খাত সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির উন্নতির সম্ভাবনা তুলে ধরেন।

প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের আগে রাজনৈতিক নেতাদের সংক্ষিপ্ত মতামত দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পোশাকশিল্পকে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান স্তম্ভ উল্লেখ করে বলেন, ভবিষ্যৎ সরকার যে–ই হোক, খাতটির প্রবৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতেই হবে।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের জানান, তাঁদের দলের অনেক নেতার সরাসরি অভিজ্ঞতা রয়েছে পোশাকশিল্পে কাজ করার। এ অভিজ্ঞতা খাতটিকে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় আরও শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে মূল্যবান দৃষ্টিভঙ্গি দেয়। তিনি সরকারের সংস্কার পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়ে ভবিষ্যতে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যাশা জানান।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবীর বলেন, বর্তমান সংস্কার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ভবিষ্যতে আরও সম্প্রসারিত করা প্রয়োজন।

তিন নেতার বক্তব্যেই অভিন্নভাবে উঠে আসে পোশাক রপ্তানিতে ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার দাবি। তাঁদের অভিমত, সব সময় ক্রেতাদের শর্তে নয়, বরং ন্যায্যতার ভিত্তিতে দাম নির্ধারিত হওয়া উচিত। এ বিষয়ে সর্বদলীয় সমর্থন দেখা যায়।

বাংলাদেশ থেকে দক্ষ ও অদক্ষ কর্মী নিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে আলবেনিয়া। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনের ফাঁকে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে এ প্রস্তাব দেন আলবেনিয়ার প্রেসিডেন্ট বাজরাম বেগাজ.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র অন ষ ঠ ইউন স

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নয় দিনের যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষ করে নিউইয়র্ক থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।

নিউইয়র্ক স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল) প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী এমিরেটস এয়ার লাইন্সের একটি ফ্লাইট জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে আসে।

সফরকালে গত ২৬ সেপ্টেম্বর অধ্যাপক ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে ভাষণ দেন। এরপর ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি’ নিয়ে উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্য দেন।

এর আগে ২৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। একই দিনে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি এবং জাতিসংঘের অনুন্নত, স্থলবেষ্টিত ও ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রসমূহের বিষয়ক উচ্চ প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমা ইউনূসের সঙ্গে আলাদা সাক্ষাত করেন।

নিউইয়র্ক অবস্থানকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়োজিত এক সংবর্ধনায় যোগ দেন অধ্যাপক ইউনূস। সেখানে তিনি ট্রাম্পকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।

এছাড়া, নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান, ভুটান ও কসোভোসহ কয়েকটি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা আগামীকাল (২ অক্টোবর) ঢাকায় পৌঁছাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

তথ্যসূত্র: বাসস

ঢাকা/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ, বিমানবন্দরে আখতার-জারার সংবাদ সম্মেলন বর্জন
  • নিউইয়র্ক সফর শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা
  • ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা