অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের মুনাফা কমেছে ৪ কোটি টাকার বেশি
Published: 28th, September 2025 GMT
দেশের জুতা প্রস্তুত ও বাজারজাতকারী দেশীয় প্রতিষ্ঠান অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের মুনাফা কমে গেছে। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে ৪ কোটি ৯ লাখ টাকা বা ২৩ শতাংশ। গত জুনে সমাপ্ত অর্থবছরে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের মুনাফা কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ কেটি ৫৫ লাখ টাকায়। তার আগের অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ১৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। গত বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় গত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়। আর্থিক প্রতিবেদনে কোম্পানিটির মুনাফা কমে যাওয়ার তথ্য তুলে ধরা হয়।
মুনাফা কমলেও লভ্যাংশের পরিমাণ বেড়েছে। গত অর্থবছরের জন্য কোম্পানিটি নগদ ও বোনাস মিলিয়ে শেয়ারধারীদের ৫০ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার মধ্যে ২৫ শতাংশ নগদ ও ২৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ। গত বৃহস্পতিবারের পর্ষদ সভায় আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা শেষে লভ্যাংশের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০১৮–১৯ অর্থবছরের পর এবারই কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের সর্বোচ্চ লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত তিন অর্থবছর শেষে কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের নগদ ও বোনাস মিলিয়ে ৪৫ শতাংশ হারে লভ্যাংশ দিয়েছিল।
কোম্পানির তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানিটি গত অর্থবছরের জন্য ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে কোম্পানিটির খরচ হবে ৩৯ লাখ টাকার বেশি। এ ছাড়া প্রতি ১০০ শেয়ারের বিপরীতে কোম্পানিটির শেয়ারধারীরা পাবেন ২৫টি করে শেয়ার। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের প্রতিটি শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ২২৯ টাকা ৫০ পয়সা। সেই হিসাবে প্রতি ২৫টি শেয়ারের বাজারমূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৫ হাজার ৭৩৭ টাকা।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৩ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত দেশের শীর্ষস্থানীয় জুতা প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক এই কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ১৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা, যা ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের ১ কোটি ৫৭ লাখ ২২ হাজার ৪৩৭ শেয়ারে বিভক্ত। এটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলোর একটি। মূলধন বাড়াতে কোম্পানিটি কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে শেয়ারধারীদের বোনাস লভ্যাংশ দিয়ে আসছে। ২০২২ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের ১০ শতাংশ হারে বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে। তাতে গত তিন বছরে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ১০ শতাংশ হারে বেড়েছে। এবারই সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ২০২১ সালের শেষে একটি নির্দেশনা জারি করেছিল। তাতে বলা হয়েছিল, শেয়ারবাজারের মূল বোর্ডে ৩০ কোটি টাকার কম মূলধনের কোনো কোম্পানি আর থাকতে পারবে না। ওই নির্দেশনার পর স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলো বোনাস শেয়ার দিয়ে বা নতুন করে রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে তাদের মূলধন বাড়াচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারও কয়েক বছর ধরে বোনাস শেয়ার ঘোষণার মাধ্যমে তাদের মূলধন বাড়াচ্ছে।
কোম্পানি–সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত অর্থবছর শেষে মুনাফা কমে যাওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণ ছিল। তার মধ্যে অন্যতম হলো—গত বছরের জুলাই–আগস্টে ছাত্র–জনতার আন্দোলনে দেশজুড়ে ব্যবসা–বাণিজ্য বন্ধ থাকা, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া ও ব্যাংকের সুদহার বৃদ্ধি। গত বছরের জুলাই–আগস্টের আন্দোলনে দেশজুড়ে উত্তাল সময়ে প্রায় এক মাস অন্যান্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মতো অ্যাপেক্সের বিক্রয়কেন্দ্রগুলোও বন্ধ ছিল। ওই সময়টাতে কোম্পানিটির বিক্রি শূন্যের কোটায় নেমে যায়। এ ছাড়া গত অর্থবছরের দীর্ঘ সময়জুড়ে ছিল উচ্চ মূল্যস্ফীতি। এ কারণে নিত্যপণ্যের দামে হিমশিম খাওয়া মানুষ জুতা কেনাও কমিয়ে দিয়েছিল। যার প্রভাব পড়েছে কোম্পানির ব্যবসায়। এ ছাড়া ব্যাংকঋণের সুদহার দুই অঙ্কের ওপরে চলে যাওয়ায় সুদ বাবদ খরচও বেড়েছে। সব মিলিয়ে তাই বছর শেষে কোম্পানির মুনাফা আগের বছরের চেয়ে কমে গেছে।
মুনাফা কমলেও কোম্পানির সম্পদমূল্য বেড়েছে। গত জুন শেষে কোম্পানির স্থাবর–অস্থাবর মিলিয়ে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য বা এনএভি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩৬ টাকা ৬৮ পয়সা। আগের অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ৪৩১ টাকা ২৪ পয়সা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য প্রায় সাড়ে ৫ টাকা বেড়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অ য প ক স ফ টওয় য র র শ য় রব জ র বছর র জ আর থ ক ম লধন ক বছর
এছাড়াও পড়ুন:
চলতি অর্থবছরে ৫% জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস এডিবির; ৪ কারণে চাপে প্রবৃদ্ধি
চলতি অর্থবছর মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) কিছুটা বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এডিবির পূর্বাভাস অনুসারে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ হতে পারে। গত অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন হলো ৪ শতাংশ।
এডিবি আরও বলেছে, তৈরি পোশাক রপ্তানি স্থিতিশীল থাকলেও রাজনৈতিক পরিবর্তন, ঘন ঘন বন্যা, শিল্প খাতে শ্রমিক অস্থিরতা এবং বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি কারণে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এই চার কারণে প্রভাব পড়ছে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিতে।
আজ মঙ্গলবার এডিবি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) সেপ্টেম্বর সংস্করণ প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে এমন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এডিবি আরও বলেছে, চলতি অর্থবছরে ভোগ্যব্যয় বাড়বে। কারণ, রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া আসন্ন নির্বাচনসংক্রান্ত নানা ধরনের খরচের কারণেও ভোগব্যয় বাড়াবে।
বাংলাদেশে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হো ইউন জিয়ং বলেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধিনির্ভর করবে ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা বাড়ানো, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার ওপর। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বাণিজ্যে মার্কিন শুল্কের প্রভাব এখনো স্পষ্ট নয়। দেশের ব্যাংক খাতের দুর্বলতা অব্যাহত রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য জরুরি।
এডিবির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৬ অর্থবছরের জন্য কিছু ঝুঁকি রয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যসংক্রান্ত অনিশ্চয়তা, ব্যাংক খাতের দুর্বলতা এবং নীতি বাস্তবায়নের অনাগ্রহ প্রবৃদ্ধির অগ্রগতিতে বাধা হতে পারে। এ জন্য সঠিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বজায় রাখা এবং কাঠামোগত সংস্কার দ্রুততর করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ শতাংশ। এর পেছনে রয়েছে পাইকারি বাজারে সীমিত প্রতিযোগিতা, বাজার তথ্যের ঘাটতি, সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধা এবং টাকার অবমূল্যায়ন।
এডিবি বলছে, চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হবে ভোগব্যয়, যা শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ ও নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট ব্যয়ের কারণে বাড়বে। তবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি এবং বিনিয়োগকারীদের সতর্ক মনোভাব বিনিয়োগকে মন্থর করতে পারে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রতিযোগিতা বাড়ায় রপ্তানি খাত এবং এর প্রবৃদ্ধি চাপ বাড়াবে। ফলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে রপ্তানিকারকদের মূল্য কমাতে হতে পারে।