গাজীপুরে সক্রিয় অপরাধী চক্র, টার্গেট গর্মেন্টসকর্মীরা
Published: 28th, September 2025 GMT
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন গার্মেন্টস ও শিল্পকারখানার শ্রমিকরা কর্মস্থলে যাওয়া–আসার সময় ভয় ও আতঙ্ক নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। শ্রমিকদের অভিযোগ, কারখানার ফটক ও আশপাশে মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা নিয়মিত অবস্থান করেন। বেতন পাওয়ার সময় এদের উৎপাত বেড়ে যায়। হামলা, ছিনতাই, হেনস্তা থেকে শুরু করে নির্যাতনের মতো ঘটনা ঘটিয়ে টাকা ছিনিয়ে নেয় তারা। ফলে অনেকেই বাধ্য হয়ে চাকরি বদলাচ্ছেন।
পুলিশের দাবি, শ্রমিকদের নিরাপত্তায় তারা নিরলসভাবে কাজ করছে।
আরো পড়ুন:
নাটোরে ট্রাক চাপায় শ্রমিক নিহত
নাসা গ্রুপের শ্রমিকদের উস্কানির অভিযোগে যুবক গ্রেপ্তার
শ্রীপুর পৌরসভার ভাঙ্গাহাটি এলাকার রাতুল গার্মেন্টসের সাবেক শ্রমিক ফজলুর হক বলেন, “গত এপ্রিল মাসে রাতের ডিউটি শেষে বাড়ি ফিরছিলাম। পথে কয়েকজন যুবক এসে আমাকে আটকায়। তারা টাকা দাবি করে। না দিতে চাইলে রাস্তার পাশের জঙ্গলে নিয়ে আমাকে মারধর করে। শেষ পর্যন্ত ৩ হাজার টাকা দেওয়ার শর্তে ছেড়ে দেওয়া হয়।” তিনি জানান, ভয়ে তিনি থানায় অভিযোগ করেননি। পরে অন্য কারখানায় চাকরি নেন।
একই পৌরসভার কেওয়া পশ্চিমখন্ড এলাকায় অবস্থিত ফখরুদ্দিন গার্মেন্টসের শ্রমিক মিনারা খাতুনও একই ধরনের ঘটনার শিকার। গত ৯ আগস্ট রাতে সহকর্মীর সঙ্গে বাসায় ফেরার পথে কয়েকজন সন্ত্রাসী তাদের আটকে অশালীন ভাষায় কথা বলতে শুরু করে। একপর্যায়ে কাবিননামা চাওয়ার মতো অযৌক্তিক দাবি তোলে। শেষ পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। সম্মানের ভয়ে আইনের আশ্রয় নেননি বলে জানান মিনারা।
শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইত ইউনিয়নের যোগিয়াসেট এলাকার ক্রাফটসম্যান ফুটওয়্যার অ্যান্ড এক্সেসরিজ লিমিটেডের কর্মী সানোয়ার হোসেন জানান, গত ১২ সেপ্টেম্বর রাতে কারখানার ফটকের সামনে সহকর্মীদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন। এসময় সন্ত্রাসীরা এসে তাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়। টাকা পাওনা আছে দাবি করে নির্যাতন করে এবং তার স্ত্রীকে ফোন করে টাকা আনতে বলে। জঙ্গলে হাত-পা বেঁধে মারধরের সময় স্ত্রী পুলিশকে ফোন করলে তাকে উদ্ধার করা হয়। এখনো আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে পারেননি তিনি।
একই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন ডেকো গার্মেন্টস, রিদিশা গার্মেন্টস, ডিবিএল গার্মেন্টস, এক্স সিরামিক, নিট হরাইজন, আমান গার্মেন্টস, সিজি গার্মেন্টস, মেঘনা গার্মেন্টসসহ বেশির ভাগ কারখানার শ্রমিকরা ।
ক্রাফটসম্যান ফুটওয়্যারের মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা শংকর চন্দ্র রায় বলেন, “শ্রমিকদের নিরাপত্তা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি আমাদের এক শ্রমিককে দোকানের সামনে থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। পুলিশ তাকে উদ্ধার করলেও অপরাধীরা ধরা পড়েনি।’’
শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, “শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে। প্রতিটি ঘটনা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। তাদের নিরাপত্তায় নিশ্চিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’’
ঢাকা/রফিক/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অভ য গ গ র ম ন টস
এছাড়াও পড়ুন:
শেখ হাসিনাকে কোনো অবস্থাতেই ফেরত পাঠাবে না ভারত: রাজনৈতিক বিশ্লেষ
২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ক্ষমতাচ্যুত পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। মামলার অপর আসামি সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে দেওয়া হয়েছে পাঁচ বছরের সাজা।
গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ২০২৪ সালের আগস্টে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা এবং এরপর থেকে তিনি ভারত সরকারের আশ্রয়েই রয়েছেন। ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ শেখ হাসিনার অনুপস্থিতি তার বিচার পরিচালনা করে। আজ সোমবার রায় ঘোষণার সময় আসামিদের মধ্যে কেবল সাবেক পুলিশ প্রধান আবদুল্লাহ আল-মামুন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় নিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন ভারতের জিন্দাল গ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়ান স্টাডিজের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত। তিনি বলেন, “হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আদালতের এই রায় প্রত্যাশিত ছিল, কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে না ভারত।”
আলজাজিরাকে দেওয়া মন্তব্যে দত্ত আরো বলেন, “কোনো অবস্থাতেই ভারত তাকে প্রত্যর্পণ করবে না। গত দেড় বছরে আমরা দেখেছি যে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক সবচেয়ে ভালো অবস্থায় নেই এবং অনেক সময়ই ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে।”
দত্ত বলেন, “হাসিনার মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশিত ছিল।”
তিনি বলেন, “সবাই বাংলাদেশের পরিস্থিতি দেখেছেন। সবাই আশা করেছিলেন যে হাসিনার বিচার হবে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষকরা একমত যে, বাংলাদেশে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম দেশের আইনি ব্যবস্থা অনুসরণ করেছে।”
দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক এই রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, “নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ সম্পর্কে কারো সন্দেহ নেই। স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সরাসরি গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।”
দত্তের ভাষ্যমতে, “আওয়ামী লীগ এখন একটি পাল্টা ব্যাখ্যা তৈরির তৈরি করার চেষ্টা করবে। কিন্তু বাংলাদেশিরা মূলত বিশ্বাস করেন যে- হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন।”
ঢাকা/ফিরোজ