সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের পূর্বপরিচিত আইনজীবী তৌফিকা করিম ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে পরিচালিত ১১৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ সাব্বির ফয়েজ সোমবার এ আদেশ দেন।

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আজিজুল হক প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ ও আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ১১৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আবেদন করেন সিআইডির উপপরিদর্শক (এসআই) মো.

মনিরুজ্জামান। সিআইডির পক্ষ থেকে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে সংঘবদ্ধভাবে অবৈধভাবে অর্থ গ্রহণ করেছেন তৌফিকা করিম।

তৌফিকা ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে পরিচালিত ১১৪টি ব্যাংক হিসাবে জমা হয় ৬৫৩ কোটি ৩৬ লাখ ৫৮ হাজার ১৩১ টাকা। উত্তোলন করা হয়েছে ৫৬৬ কোটি ৩৮ লাখ ১৭ হাজার ৫৭৫ টাকা। বর্তমানে ব্যাংক হিসাবে ৮৬ কোটি ৯৮ লাখ ৪০ হাজার ৫৫৬ টাকা জমা রয়েছে। শুনানি নিয়ে আদালত ব্যাংক হিসাবগুলো অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন।

এর আগে গত ২৩ এপ্রিল দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তৌফিকা করিমের ৩৮টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন আদালত।

দুদকের পক্ষ আদালতকে জানানো হয়েছে, তৌফিকা করিমের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। তিনি ব্যাংক হিসাব থেকে অর্থ উত্তোলন করে সেটি সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করছেন।

এর আগে গত ৬ ফেব্রুয়ারি তৌফিকা করিমের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।

দুদক তখন আদালতকে লিখিতভাবে জানিয়েছিল, তৌফিকা করিম সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের আস্থাভাজন ও বিশ্বস্ত। তিনি তদবির–বাণিজ্যসহ দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন।

আদালতে দুদকের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় তৌফিকা করিমের একটি বাড়ি পাওয়া গেছে। বাড়িটির মূল্য ৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। অন্যদিকে তাঁর বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ২৩ কোটি টাকা গচ্ছিত রাখার তথ্য পাওয়া গেছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর ম র

এছাড়াও পড়ুন:

শেখ হাসিনাকে কোনো অবস্থাতেই ফেরত পাঠাবে না ভারত: রাজনৈতিক বিশ্লেষ

২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ক্ষমতাচ্যুত পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। মামলার অপর আসামি সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে দেওয়া হয়েছে পাঁচ বছরের সাজা।

গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ২০২৪ সালের আগস্টে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা এবং এরপর থেকে তিনি ভারত সরকারের আশ্রয়েই রয়েছেন। ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ শেখ হাসিনার অনুপস্থিতি তার বিচার পরিচালনা করে। আজ সোমবার রায় ঘোষণার সময় আসামিদের মধ্যে কেবল সাবেক পুলিশ প্রধান আবদুল্লাহ আল-মামুন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় নিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন ভারতের জিন্দাল গ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়ান স্টাডিজের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত। তিনি বলেন, “হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আদালতের এই রায় প্রত্যাশিত ছিল, কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে না ভারত।” 

আলজাজিরাকে দেওয়া মন্তব্যে দত্ত আরো বলেন, “কোনো অবস্থাতেই ভারত তাকে প্রত্যর্পণ করবে না। গত দেড় বছরে আমরা দেখেছি যে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক সবচেয়ে ভালো অবস্থায় নেই এবং অনেক সময়ই ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে।”

দত্ত বলেন, “হাসিনার মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশিত ছিল।”

তিনি বলেন, “সবাই বাংলাদেশের পরিস্থিতি দেখেছেন। সবাই আশা করেছিলেন যে হাসিনার বিচার হবে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষকরা একমত যে, বাংলাদেশে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম দেশের আইনি ব্যবস্থা অনুসরণ করেছে।”

দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক এই রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, “নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ সম্পর্কে কারো সন্দেহ নেই। স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সরাসরি গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।”

দত্তের ভাষ্যমতে, “আওয়ামী লীগ এখন একটি পাল্টা ব্যাখ্যা তৈরির তৈরি করার চেষ্টা করবে। কিন্তু বাংলাদেশিরা মূলত বিশ্বাস করেন যে- হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন।”

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ