সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে টাঙ্গুয়ার হাওরের রূপনগর কান্দাবাড়ী এলাকা থেকে গতকাল মঙ্গলবার এক যুবকের ভাসমান লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। লাশটির বুকে ‘ক্ষতচিহ্ন’ রয়েছে।

নিহত মো. ওমর আলীর (৩০) বাড়ি উপজেলার বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের ক্ষিদিরপুর গ্রামে। তিনি নৌকা দিয়ে মালামাল পরিবহন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। গত রোববার রাতে নৌকা নিয়ে বের হওয়ার পর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁর ভাসমান লাশ দেখতে পান। খবর পেয়ে বেলা দেড়টার দিকে মধ্যনগর থানার পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে।

প্রসঙ্গত, রোববার রাত ১০টার দিকে বিজিবির মধ্যনগর উপজেলার বাঙ্গালভিটা সীমান্ত ফাঁড়ির টহলরত সদস্যদের ওপর চোরাকারবারিরা হামলা চালায়। এ সময় গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিজিবির নায়েক আখিরুজ্জামান আহত হয়ে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ নিয়ে সোমবার রাতে বিজিবির বাঙ্গালভিটা ক্যাম্প কমান্ডার সুবেদার মো.

ইসরাইল খান ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে মধ্যনগর থানায় একটি মামলা করেন।

বিষয়টি নিয়ে ২৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ কে জাকারিয়া কাদির মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। এতে উল্লেখ করা হয়, রোববার রাতে বাঙ্গালভিটা বিওপি থেকে একটি বিশেষ টহল দল সীমান্ত পিলার ১১৯০/১৫ এস থেকে আনুমানিক ৪০০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে রূপনগর নামক স্থানে টহলে যায়। রাত ১০টার দিকে ওই এলাকা দিয়ে একটি চোরাকারবারি দল ভারতীয় গরুভর্তি ট্রলার চোরাচালান করার সময় টহল দল চোরাকারবারিদের চ্যালেঞ্জ করে। পরে ১০০ থেকে ১২০ জন চোরাকারবারি সংঘবদ্ধ হয়ে বিজিবির টহল দলকে ঘেরাও করে ইট–পাথর ও বল্লম নিক্ষেপ করে এবং বন্দুক দিয়ে বিজিবির টহল দলকে লক্ষ্য করে ১৫ থেকে ২০টি গুলি ছোড়ে। পরে গরুসহ একটি ট্রলার রেখে পালিয়ে যায় দলটি। এ সময় নায়েক আখিরুজ্জামান গুলিবিদ্ধ হন। অভিযানে ৩৩টি গরু ও একটি ট্রলার আটক করা হয়। ট্রলারটিতে বল্লম, দা, কাঁচি, পাথর ও ঢাল রয়েছে।

ওই ঘটনার সঙ্গে ওমর আলীর মৃত্যুর যোগসূত্র রয়েছে বলে মনে করছেন তাঁর স্বজনেরা। উপজেলার সাউদপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও নিহত ব্যক্তির ভায়রা এরশাদ মিয়ার দাবি, ওমর আলীর বুকে গুলির চিহ্ন রয়েছে। বিজিবির সঙ্গে চোরাকারবারিদের গোলাগুলিতে এ ঘটনা ঘটেছে বলে তাঁর ধারণা। তাঁর দাবি, তাঁর ভায়রা চোরাকারবারি ছিলেন না।

মধ্যনগর থানার ওসি মনিবুর রহমান মঙ্গলবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ওমর আলীর বুকে ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্ত ছাড়া মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয় করা সম্ভব নয়। ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি সুনামগঞ্জ জেলা আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ র ক রব র

এছাড়াও পড়ুন:

শেখ হাসিনাকে কোনো অবস্থাতেই ফেরত পাঠাবে না ভারত: রাজনৈতিক বিশ্লেষ

২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ক্ষমতাচ্যুত পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। মামলার অপর আসামি সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে দেওয়া হয়েছে পাঁচ বছরের সাজা।

গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ২০২৪ সালের আগস্টে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা এবং এরপর থেকে তিনি ভারত সরকারের আশ্রয়েই রয়েছেন। ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ শেখ হাসিনার অনুপস্থিতি তার বিচার পরিচালনা করে। আজ সোমবার রায় ঘোষণার সময় আসামিদের মধ্যে কেবল সাবেক পুলিশ প্রধান আবদুল্লাহ আল-মামুন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় নিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন ভারতের জিন্দাল গ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়ান স্টাডিজের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত। তিনি বলেন, “হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আদালতের এই রায় প্রত্যাশিত ছিল, কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে না ভারত।” 

আলজাজিরাকে দেওয়া মন্তব্যে দত্ত আরো বলেন, “কোনো অবস্থাতেই ভারত তাকে প্রত্যর্পণ করবে না। গত দেড় বছরে আমরা দেখেছি যে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক সবচেয়ে ভালো অবস্থায় নেই এবং অনেক সময়ই ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে।”

দত্ত বলেন, “হাসিনার মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশিত ছিল।”

তিনি বলেন, “সবাই বাংলাদেশের পরিস্থিতি দেখেছেন। সবাই আশা করেছিলেন যে হাসিনার বিচার হবে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষকরা একমত যে, বাংলাদেশে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম দেশের আইনি ব্যবস্থা অনুসরণ করেছে।”

দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক এই রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, “নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ সম্পর্কে কারো সন্দেহ নেই। স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সরাসরি গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।”

দত্তের ভাষ্যমতে, “আওয়ামী লীগ এখন একটি পাল্টা ব্যাখ্যা তৈরির তৈরি করার চেষ্টা করবে। কিন্তু বাংলাদেশিরা মূলত বিশ্বাস করেন যে- হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন।”

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ