নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার ও মানবাধিকারকর্মীদের মুক্তির দাবি জামায়াতের
Published: 3rd, October 2025 GMT
জরুরি ত্রাণসহায়তা নিয়ে গাজা অভিমুখে যাওয়ার পথে ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র গ্রেপ্তার করা ক্রু এবং নৌবহরটিতে থাকা মানবাধিকারকর্মীদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান। একই সঙ্গে তিনি ফিলিস্তিনে জাতিগত হত্যার দায়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার করার দাবি জানান।
আজ শুক্রবার বাদ জুমা রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেটে এক বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রফিকুল ইসলাম খান এ দাবি জানান।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার জাহাজে ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণ ও মানবাধিকারকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এ বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করে জামায়াতের ঢাকা মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণ শাখা।
সমাবেশে রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘নিষ্ঠুর ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনের গাজায় একের পর এক গণহত্যা পরিচালনা করছে। নারী, শিশুসহ ফিলিস্তিনের সাধারণ জনগণ তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। জামায়াত এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।’
সারা দুনিয়া ইসরায়েলের জাতি হত্যার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে দাবি করে রফিকুল ইসলাম খান বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার ত্রাণবাহী জাহাজে নৃশংসভাবে হামলা করা হয়েছে। ৫০০–এর বেশি মানবাধিকারকর্মী ও ত্রাণবাহী নৌবহরটির ক্রুদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রফিকুল ইসলাম খান আরও বলেন, বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ দেশ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে মত দিয়েছে, ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু বিশ্বমোড়লখ্যাত একটি দেশ ইসরায়েলকে অস্ত্র দিয়ে, সহযোগিতা করে মুসলমানদের রক্ত নিয়ে খেলা শুরু করেছে। তিনি বলেন, ‘ইহুদিরা জানে না, মুসলিম জাতি শহীদ হতে জানে, পরাজয় মানতে জানে না। শহীদদের রক্তের বিনিময়েই ফিলিস্তিন স্বাধীন হবে।’
ফিলিস্তিন ইস্যুতে জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল
এছাড়াও পড়ুন:
গ্রেটা থুনবার্গসহ গাজামুখী নৌবহরের বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে ইসরায়েল
ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখে ত্রাণ নিয়ে যাত্রা করা নৌবহরে হস্তক্ষেপ করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নামের এই নৌবহরের অন্তত ছয়টি নৌকা থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে বেশ কয়েকজন অধিকারকর্মীকে আটক করেছে ইসরায়েলি সেনারা। তাদের মধ্যে সুইডিশ অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গও রয়েছেন।
বুধবার রাতে ভূমধ্যসাগরে গাজা থেকে প্রায় ২১৮ কিলোমিটার দূরে ওই নৌযানগুলোয় ঢুকে পড়ে ইসরায়েলি সেনারা। সেগুলো থেকে আটক অধিকারকর্মীদের এখন ইসরায়েলের আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। তবে ‘ইয়ম কিপুর’ উপলক্ষে ছুটি থাকায় ইসরায়েলের প্রায় সব ধরনের সরকারি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
গাজামুখী নৌযানে ইসরায়েলের হস্তক্ষেপের খবর প্রথমে জানানো হয় গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার পক্ষ থেকে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বহরের যে ছয়টি নৌযানে ইসরায়েলের হস্তক্ষেপের খবর পাওয়া গেছে সেগুলো হলো—দেইর ইয়াসিন, হিউগা, স্পেক্টার, আদারা, আলমা ও সিরিয়াস।
পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘হামাস–সুমুদ ফ্লোটিলার কয়েকটি নৌযান নিরাপদভাবে থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেগুলোর আরোহীদের ইসরায়েলের একটি বন্দরে নেওয়া হচ্ছে। গ্রেটা ও তাঁর বন্ধুরা নিরাপদ ও সুস্থ আছেন।’ মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত একটি ভিডিওতে থুনবার্গকে নৌযান থেকে সরিয়ে নিতে দেখা যায়।
এই নৌবহরের ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে বলে শুরু থেকেই দাবি করে আসছে ইসরায়েল। তবে এর পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি তারা। এরই মধ্যে বুধবার রাতে নৌবহরটি থামাতে তৎপরতা শুরু করে ইসরায়েলি নৌবাহিনী। নৌবহরটির দিক পরিবর্তন করতেও নির্দেশ দেয় তারা। এমন পরিস্থিতিতে বহরটিতে হস্তক্ষেপের আশঙ্কা করা হচ্ছিল।
নৌযানের আরোহীদের আটকের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা। আন্তর্জাতিক জলসীমায় তাদের ওপর ইসরায়েলের হস্তক্ষেপের বিষয়ে এক্সে এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘ন্যায়ের পক্ষে কথা বলা মানুষদের অপহরণ করা হয়েছে। ফ্লোটিলা কোনো আইন ভাঙেনি। যেটি অবৈধ, তা হলো ইসরায়েলের জাতিগত নিধন, অবৈধ গাজা অবরোধ এবং অনাহারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার।’
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এতে বিগত প্রায় দুই বছরে সেখানে ৬৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। হত্যাযজ্ঞের পাশাপাশি গাজা অবরোধ করে উপত্যকাটিতে তীব্র খাদ্য সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে। এতে অনাহার–অর্ধাহারে থাকতে হচ্ছে গাজার বাসিন্দাদের।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা সমুদ্রপথে গাজায় ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার একটি বৈশ্বিক প্রচেষ্টা। এই নৌবহরে রয়েছে ৪০টির বেশি বেসামরিক নৌযান। এই বহরে প্রায় ৪৪টি দেশের ৫০০ মানুষের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়ামসহ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা, আইনজীবী, অধিকারকর্মী, চিকিৎসক ও সাংবাদিক।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার প্রথম বহর ৩১ আগস্ট স্পেনের বার্সেলোনা থেকে যাত্রা শুরু করে। এরপর ১৩ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর তিউনিসিয়া ও ইতালির সিসিলি দ্বীপ থেকে আরও নৌযান এই বহরে যুক্ত হয়। এ ছাড়া গ্রিসের সাইরাস দ্বীপ থেকে পরবর্তী সময়ে আরও কিছু নৌযান ত্রাণ নিয়ে বহরে যুক্ত হয়। বর্তমানে বহরটিতে ৪০টি বেশি নৌযান রয়েছে।
এর আগে গত জুন মাসে গাজার দিকে ত্রাণ নিয়ে যাওয়া একটি নৌযান আটক করেন ইসরায়েলি সেনারা। গাজা থেকে প্রায় ১৮৫ কিলোমেটার দূরে আন্তর্জাতিক জলসীমায় ‘ম্যাডলিন’ নামে নৌযানটি আটক করা হয়। ওই নৌযানে গ্রেটা থুনবার্গসহ ১২ জন অধিকারকর্মী ছিলেন। পরে জুলাই মাসে নৌযান ‘হান্দালা’কে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়। ইসরায়েলের এসব পদক্ষেপ সে সময় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে।