কচুয়ার মনসামুড়া বাঁশঝাড় যেন সাপের স্বর্গরাজ্য
Published: 3rd, October 2025 GMT
চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার পালাখাল ইউনিয়নের ভূইয়ারা গ্রামে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মনসামুড়া বাঁশঝাড়। খোলা মাঠে বিলের মাঝখানে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এই ঝাড়ে বাঁশ কাটতে গেলেই ঘটে বিপত্তি। স্থানটি সাপের স্বর্গরাজ্য বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
প্রিয়তোষ নামের এক ব্যক্তি বলেছেন, কয়েকশ’ বছর আগে খোলা বিলের মাঝখানে তৈরি হয় এই বাঁশঝাড়। এটা আমরা পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে শুনেছি। তবে, এখান থেকে বাঁশ কেটে ব্যবহার করতে গিয়ে অনেকেই বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় পড়েছেন।
রাজীব নামের একজন জানান, এখানে জমিদার লোধ পরিবারের সদস্যরা থাকতেন। প্রায়ই এখানে প্রকাশ্যে বিষধর সাপ চলাচল করত। তারা স্বপ্নে জানতে পারেন যে, মনসা দেবীর পূজা করলেই সব সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। এরপর থেকেই স্থানীয় জমিদার লোধ পরিবারের সদস্য বংশপরম্পরায় এই বাঁশঝাড় ঘিরে মনসা পূজা করেন এবং স্থানটির নাম হয় মনসামুড়া।
স্থানীয় বাসিন্দা রিপন জানান, বাঁশঝাড়ের ভেতর মনসা মন্দির নির্মাণ করেন স্থানীয়রা। এই মন্দির এতটাই জাগ্রত যে, কোনো মানত করলে তার ফল পাওয়া যায় বলে জনশ্রুতি আছে। এই ঝাড়ের বাঁশ ব্যবহারে মৃত্যুর কথা চারদিকে জানাজানি হওয়ায় এখন আর কেউ এখানে একটি বাঁশও কাটেন না এবং কোনো কাজে ব্যবহার করেন না।
এ বিষয়ে চাঁদপুরের কচুয়া যুব ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক অসীম পোদ্দার বলেছেন, জমিদার চাঁদ সওদাগর প্রথম মনসা পূজা আরম্ভ করেন। পূজা শেষে মনসা প্রতিমা নদীতে বিসর্জন দেন। স্বপ্নে জানা যায়, সেই মনসা প্রতিমায় ব্যবহার করা বাঁশ ভাসতে ভাসতে এখানে এসে আটকে যায়। সেখান থেকে উৎপত্তি হয় এই বাঁশঝাড়ের। এটি হয়ে ওঠে সাপের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। সাপের দেবী মনসার পূজা শুরু হওয়ার পর থেকেই এ স্থানটি মনসামুড়া নামে পরিচিত লাভ করে। প্রতি বছর পহেলা বৈশাখ ও ভাদ্র মাসের প্রথম দিন এখানে মনসা পূজায় হাজার হাজার ভক্তের সমাগম ঘটে।
ঢাকা/অমরেশ/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবহ র মনস ম ড়
এছাড়াও পড়ুন:
গুলতেকিন খানের লেখা: কোনো মেয়ে যেন আমার মতো ভুল না করে
গুলতেকিন খান ফেসবুকে একটা পাবলিক পোস্ট দিয়েছেন। ৩ অক্টোবর ২০২৫ বেলা তিনটার দিকে এটি প্রকাশিত হয়। চার ঘণ্টায় এটি শেয়ার হয়েছে সাড়ে চার হাজার। প্রতিক্রিয়া বা রিঅ্যাকশনে স্যাড বা দুঃখের ইমোজি সাড়ে ১৫ হাজার, লাইক ৬ হাজারের বেশি, লাভ আড়াই হাজার, কেয়ার ৯২৮ (সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে)।
লেখাটার গুরুত্ব বিবেচনা করে গুলতেকিন খানের সঙ্গে যোগাযোগ করে এটি প্রথম আলোয় প্রকাশের অনুমতি চাওয়া হলে তিনি প্রকাশের অনুমতি দেন।
ওই সময় তিনি বলেন, এটি হয়তো লিখতে ১০ মিনিট লাগত, কিন্তু দুই দিন ধরে এই লেখাটা তিনি লিখেছেন এবং লেখার সময় টপটপ করে অশ্রু ঝরছিল।
গুলতেকিন খান একজন স্বনামধন্য কবি। তাঁর বেশ কটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। ‘আজও’, ‘কেউ হাঁটে অবিরাম’, ‘আজ তবে উপনিবেশের কথা বলি’, ‘বালি-ঘড়ি উল্টে যেতে থাকে’ ও ‘দূর দ্রাঘিমায়’ তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ।
গুলতেকিন খানের পুরো ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো—
এই লেখাতে আমার সম্পর্কে একটিও খারাপ মন্তব্য দেখতে চাই না!
এই সত্যি কথাগুলো আমি লিখেছি শুধুমাত্র কিশোরী, তরুণী এবং তাদের অভিভাবকদের জন্যে।
এত ব্যক্তিগত ঘটনা লিখেছি, কারণ আর কোনো মেয়ে আমার (পুরো বিয়েটাতে আমার চেয়ে অভিভাবকদের বেশি ভুল ছিল) মতো ভুল যেন না করে।
জুন মাসের ৬ তারিখ ছিল রোববার। শীলাকে যেমন হাসতে হাসতে বলেছিলাম, প্রায় একইভাবে ইকবাল ভাইকেও জানালাম।
ড. ইয়াসমীন হক তাঁর পরিচিত কয়েকজন lawyer আমার বাসায় পাঠান। তাঁদের একজন আমাকে জিজ্ঞেস করেন, ব্যাংকে টাকাপয়সা কেমন আছে?
আমি বলি, কার ব্যাংকে?
আপনাদের জয়েন্ট account–এ?
আমাদের তো কোনো জয়েন্ট account নেই!
ব্যাংকে হুমায়ূন আহমেদের কত টাকা আছে?
সেটা তো আমি জানি না
তখন উনি upset হয়ে বলেন, কিছু একটা বলেন?
আমি বলি, একজন মেয়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক আছে!
কী ধরনের সম্পর্ক?
: যত দূর জানি সব ধরনের সম্পর্ক। উনি নিজেই আমাকে জানিয়েছেন! আমি বাকি কারও নাম বললাম না! তারা এখন বিয়ে করে শান্তিতে আছেন। কী দরকার তাদের নাম বলার!#
Lawyer–রা দখিন হাওয়ায় (আমার ফ্ল্যাটে যেখানে আমার মৌখিক agreement নিয়ে হুমায়ূন আহমেদ থাকছিলেন) সেখানে যান। এবং চলেও আসেন আমার কাছে। একজন বলেন, তিনি তো কয়েকটি বই দেখান, যেখানে আগে থেকেই আন্ডার লাইন করা ছিল।
: হোটেল গ্রেভারিন, মেফ্লাওয়ার আরও কিছু বই। আপনি নাকি অনেক আগে থেকেই ডিভোর্স চাচ্ছিলেন?
: ওগুলো সত্যি না। ডিভোর্সের নিয়ম আমি এখনো জানি না! আমেরিকাতে কী ভাবে জানব? ‘হোটেল গ্রেভারিনে’ ওসব বানিয়ে লেখা! তাঁর আত্মজীবনীমূলক বই এ অনেক কিছুই তাঁর কল্পনা থেকে লেখা। ওই সব বই লেখার সময় আমি তাঁকে বারবার বলেছিলাম ওসব না লিখতে! কিন্তু উনি আমাকে তখন বলেছিলেন, একদম সত্যি হচ্ছে জলের মতো, কোনো স্বাধহীন, তাই কিছু মিথ্যা থাকলে লোকজন পড়ে মজা পাবে!
আমি শুধু তাঁর পায়ে ধরে বাকি রেখেছিলাম। বারবার বলেছি, আমার সম্পর্কে কিছু না লিখতে। আমি বাসা থেকে বের হয়ে যাইনি! ওর তখন খারাপ একটি সময় যাচ্ছিল, নর্থ ডাকোটা ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডির জন্য একটি পরীক্ষা হয়, যার নাম কিউমিলিয়েটিভ, সেখানে দশ নম্বর থাকে। পরীক্ষার জন্য সম্ভবত দুই বছর সময় থাকে। সেখানে অনেকগুলো পরীক্ষা হয় এবং দশের মধ্যে তিনটি ২ নম্বর পেতে হয়, বাকিগুলো ১ নম্বর পেলেই হয়। কিন্তু সে অনেকগুলো পরীক্ষা দিয়েও একটিতেও ২ নম্বর পাননি তখনো। এটা নিয়ে তাঁর মধ্যে ফ্রাসটেশন কাজ করছিল। তা ছাড়া তিনি রেগে গেলেই বলতেন, বাসা থেকে বের হয়ে যাও। সেদিনও পরীক্ষায় ১ পেয়ে মেজাজ খুব খারাপ ছিল। বাসায় এসেই অকারণে রাগারাগি শুরু করেন এবং একপর্যায়ে কোনো কারণ ছাড়াই আমাকে বলেন, বাসা থেকে বের হয়ে যাও!
: আমি বলি কোথায় যাব?
: উনি বলেন, যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাও! আমাকে চুপচাপ কাঁদতে দেখে আরও রেগে যান এবং আমাকে ধাক্কা দিয়ে বাইরে পাঠিয়ে ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে দেন। আমার গায়ে তখন একটি শার্ট এবং প্যান্ট, পায়ে স্পন্জের স্যান্ডেল ছিল। আর বাইরে ডিসেম্বর মাসের প্রচণ্ড ঠান্ডা! আমি শীতে কাঁপতে কাঁপতে দরজা ধাক্কা দিই আর বলি, দরজা খোলো প্লিজ, কলিংবেল বাজাতে থাকি কিন্তু দরজা খুলে না। বেশ কিছুক্ষণ পরে আমার হাত–পা প্রায় জমে যায়! তখন দৌড়াতে থাকি। আমাদের বাসার কাছে একটি দোকান ছিল। একজন আমেরিকান বৃদ্ধা মহিলা তাঁর বিশাল ড্রয়িং রুমকে নানা রকম মসলা, আচার, হারবাল জিনিস দিয়ে দোকান বানিয়েছিলেন। নাম ছিল ‘টচি’। আমরাও ওখান থেকে মসলা কিনতাম এবং প্রায়ই যেতাম নতুন কোনো মসলার খোঁজে! এমনিতে কাছেই মনে হতো কিন্তু সে শীতের সন্ধ্যায় যেন দোকানটি বাসার কাছে ছিল, সেটি মনে হলো বহু দূরে চলে গেছে! শেষ পর্যন্ত টচি পৌঁছেই দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলাম। মনে হলো স্বর্গে ঢুকেছি! বয়স্ক ভদ্রমহিলাকে অনুরোধ করলাম, আমি একটি ফোন করতে পারি কি না! টাকা পরে দেব! উনি বললেন, টাকা লাগবে না, তুমি ফোন করো। তিনি আমার প্রাইভেসির জন্যে একটু দূরে সরে গেলেন। আমার একমাত্র মুখস্থ নম্বরে ফোন করলাম।
: এ্যান, আমি টিংকু বলছি।
: কী হয়েছে টিংকু, এমনভাবে কথা বলছ কেন?
: এ্যান, তুমি কি আমাকে একটু তুলে নিতে পারবে?
আমি (এ্যানের ছেলে, এ্যারোনকে আমি বেবিসিট করি। কিন্তু আমরা ভালো বন্ধুও)
ওকে ঠিকানা বলি।
এ্যান চলে আসে। আমি টচির বয়স্ক ভদ্রমহিলাকে ধন্যবাদ জানিয়ে গাড়িতে উঠি। ও আমাকে একটি জ্যাকেট দেয়। আমি ভাবি, ও কেমন করে জানলো যে আমার গায়ে জ্যাকেট নেই?
ওর বাড়িতে যেতে যেতে সবকিছু বলি ওকে।
বাসায় পৌঁছে এ্যান আমাকে একটি রুম দেখিয়ে বলে, এখন তুমি
ঘুমাওতো!
সারা দিন কাজ করার ক্লান্তি, বাসা পরিষ্কার, রান্না কত কী করেছি! কোনো কিছুতেই ঘুম আসে না! ভয়ে, উৎকণ্ঠায়
এতক্ষণ কাঁদতেও পারিনি! বালিশে মাথা রাখতেই ঝর্ণার মতো দুচোখের জলে বালিশ ভিজে গেল! নোভার কথা ভেবে কষ্ট গলার ভেতর আটকে গেল! এখানে আমার মা-বাবা, ভাইবোন, কোনো আত্মীয়স্বজন নেই! কী করে সে পারল এমন করতে? সারা রাত কাঁদতে কাঁদতে কাটল।
বাথরুমে গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে আমি বসে থাকি।
এ্যান আর স্টেইনলি নাশতার টেবিলে এসে বসে।
আমিও বসি ওদের সাথে।
টেবিলে এ্যান বলে, কী ঠিক করলে?
: কী বলছ, এ্যান?
: লয়্যারের সাথে কথা বলব না? একবারে ডিভোর্স পাঠাতে বলবে?
আমি ভয়ে আঁতকে উঠি!
না, না। হুমায়ূন আমাকে অনেক ভালোবাসে! রাগের মাথায় ওসব করেছে!
তুমি আমাকে একটু বাসায় দিয়ে আসতে পারবে? নোভার জন্য খুব মন খারাপ লাগছে!
ওরা দুজন অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে থাকে।
বাসায় ঢুকেই আমি নোভাকে কোলে নিয়ে দোতলায় যাই। বিছানায় বসে নোভাকে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কাঁদতে থাকি।
আর বলি, নোভাকে আমার বোকামি করতে দেব না। ওর হাজব্যান্ডের যেন সাহস না হয় ওকে ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দেবার!
আমার চোখের সামনে অসংখ্য ছবি দেখতে পাই, যেখানে একটি ১৮–১৯ বয়েসের তরুণী চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে এবং একজন হুমায়ূন আহমেদ তাকে যা ইচ্ছে তা বলে বকছে।
আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল ইয়াসমীনের পাঠানো ওই লয়ারকে জিজ্ঞেস করতে, ‘আসলে তখনই নোভাকে নিয়ে দেশে ফিরে ওই ভদ্রলোককে ডিভোর্স দেওয়া উচিত ছিল, তাই না?’ কিন্তু পারিনি!