মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসকে তাঁর প্রস্তাব মেনে নেওয়ার সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে গাজার জন্য মার্কিন শান্তি পরিকল্পনা গ্রহণ না করলে ‘নরক যন্ত্রণা’ ভোগ করার হুমকিও দিয়েছেন।

গতকাল শুক্রবার ট্রাম্প তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, এই চুক্তি রোববার ওয়াশিংটন সময় সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সম্পন্ন হতে হবে। এর আগে গত মঙ্গলবার ট্রাম্প তাঁর প্রস্তাব সামনে আনার সময় তিন থেকে চার দিনের মধ্যে প্রস্তাবে সম্মত হতে হামাসকে সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। আরব ও তুরস্কের মধ্যস্থতাকারীরা হামাসকে চুক্তি মেনে নিতে চাপ দিচ্ছে। তবে হামাসের এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেছেন, ট্রাম্পের এ প্রস্তাব হামাসের পক্ষ থেকে প্রত্যাখ্যান করার সম্ভাবনা বেশি।

দ্য গার্ডিয়ান জানায়, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনের দাবি করবে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। একই সঙ্গে আলোচনা আবার শুরু করার ভিত্তি হিসেবে পরিকল্পনাটি গ্রহণের সম্ভাবনাও রয়েছে। বিশ্লেষক ও হামাসের ঘনিষ্ঠ কয়েকটি সূত্র এমন আভাস দিয়েছে।

হোয়াইট হাউস কর্তৃপক্ষ চলতি সপ্তাহের শুরুতে একটি ২০ দফাবিশিষ্ট পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। এতে গাজা উপত্যকায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর, হামাসের কাছে থাকা জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলের কাছে থাকা ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি, গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের ধাপে ধাপে সরে যাওয়া, হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ এবং আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে একটি অস্থায়ী সরকার গঠন।

ফিলিস্তিনিরা দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধ শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আছেন। তবে ফিলিস্তিনের অনেকে মনে করছেন, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা ইসরায়েলকেই বেশি সুবিধা দেবে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ৬৬ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস ত ব ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় ঢাবিতে মানবেন্দ্র লারমাকে স্মরণ

সাবেক আইনপ্রণেতা ও বিপ্লবী নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করা হয়েছে। সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় এক স্মরণসভায় তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।

স্মরণসভার শুরুতে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন এম এন লারমার ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা।

মানবেন্দ্র লারমা গরিব মেহনতি মানুষের নেতা উল্লেখ করে স্মরণসভায় সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, ‘তিনি কেবল পাহাড়ি মানুষের নেতা ছিলেন না। বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা সমগ্র নিপীড়িত মানুষের কথা বলেছেন। তিনি বাহাত্তরের সংবিধানে আদিবাসী, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের কথা তুলে ধরেছেন। তিনি সে সময় সংসদে দাড়িয়ে দৃঢ় কণ্ঠে প্রতিবাদ করেছিলেন যে তিনি একজন চাকমা, একজন চাকমা কোনো দিন বাঙালি হতে পারেন না।’

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, ‘জুলাই সনদে আজকে আদিবাসী মানুষের কথা বলা নেই। অথচ কেবল মুখে বহুত্ববাদী, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে। বিগত সময়ের দলীয় সরকার নাহয় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করেনি। কিন্তু গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময় পাহাড়ি আদিবাসীরা কমপক্ষে দুটি সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার হয়েছেন। অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে রাজনৈতিভাবে সমাধানের লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের কথা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো উচ্চারণ করেনি।’

ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ তারেক বলেন, ‘চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান যে চেতনা নিয়ে শুরু হয়েছিল, আজ সেই চেতনা মৌলবাদী শক্তির কাছে লুট হয়ে গেছে। সত্তরের দশকে নতুন বাংলাদেশে মহান নেতা মানবেন্দ্র লারমা সেই স্বপ্ন দেখছিলেন, যে স্বপ্ন একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার, গরিব মেহনতি তথা নিপীড়িত পাহাড়ি আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বুনেছিলেন।’

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সহসাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, বাহাত্তরের সংবিধানে নিপীড়িত মানুষের অধিকারের কথা বলা হয়নি, নারী-পুরুষের বৈষম্য বিলোপ এবং মেহনতি মানুষের মৌলিক অধিকারের কথা তুলে ধরা হয়নি। সে সময় শোষিত মানুষের বন্ধু মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা তাঁদের হয়ে কথা বলেছেন। তিনি সংবিধান প্রণয়নের সময় শ্রমিক, গরিব ও আদিবাসী নিপীড়িত মানুষের কথা বলেছিলেন।

সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে এ দেশের যত রাজনৈতিক দল আছে, তারা অন্য জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করার মতো মানসিকতা এখনো তৈরি করতে পারেনি। ভোটের আগে মুখে বললেও তা বাস্তবে বাস্তবায়ন করে না।’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল কাফি রতন বলেন, ‘মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা জুম্ম জাতির জন্য ছাত্রজীবন থেকে অধিকারের কথা বলেছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সংবিধান যখন বাঙালি বলে আদিবাসী মানুষের পরিচয় করে দিতে চেয়েছিল, সেই সময় গণপরিষদে এম এন লারমা প্রতিবাদ করেছিলেন।’

স্মরণসভায় আরও বক্তব্য দেন লেখক ও সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, সাংবাদিক সাইফুর রহমান, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা ও নারীনেত্রী শিরিন হক। স্মরণসভা শেষে গান, কবিতা পাঠ ও প্রদীপ প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ