প্রথম আলো এক্সপ্লেইনার: অ্যানথ্রাক্স কী, কীভাবে ছড়ায়
Published: 4th, October 2025 GMT
রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় অ্যানথ্রাক্সের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি মিঠাপুকুর ও কাউনিয়া উপজেলায় অ্যানথ্রাক্স সন্দেহে কয়েকজনের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এর আগে জুলাই ও সেপ্টেম্বর মাসে পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ নিয়ে দুজন মারা গেছেন।
প্রথম আলো পীরগাছা সদর ও পারুল ইউনিয়ন ঘুরে অন্তত অর্ধশত অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত রোগীর তথ্য পেয়েছে। গত দুই মাসে অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত হয়ে তিন শতাধিক গবাদিপশু মারা যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। অসুস্থ গরু জবাই করার পর মাংস নাড়াচাড়া করার কারণে একটি পরিবারের ৪ জনসহ ১০ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকাশ হয়েছে প্রথম আলোতে।
এসব ঘটনায় অ্যানথ্রাক্স নিয়ে আবার নতুন করে শুরু হয়েছে শঙ্কা। দেশে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্তের ঘটনা নতুন নয়। আগেও বিভিন্ন সময় অ্যানথ্রাক্স ছড়িয়েছে। প্রতিবারই লোকজনকে সতর্ক করা হয় করণীয় জানিয়ে।
এবারও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আতঙ্কিত না হয়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে। অসুস্থ গবাদিপশু জবাই, মাংস সংগ্রহ ও বিক্রি না করতে বলেছেন তাঁরা। অ্যানথ্রাক্স কী, কীভাবে ছড়ায় ও প্রতিরোধ করা যায়, সেসব বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতেও জোর দিয়েছেন তাঁরা।
দেশে অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্তের ঘটনা নতুন নয়। আগেও বিভিন্ন সময় অ্যানথ্রাক্স ছড়িয়েছে। প্রতিবারই লোকজনকে সতর্ক করা হয় করণীয় জানিয়ে।অ্যানথ্রাক্স কী, কীভাবে ছড়ায়বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ওয়েবসাইটে অ্যানথ্রাক্স নিয়ে ৯টি প্রশ্নের জবাব রয়েছে। প্রশ্নগুলো হলো অ্যানথ্রাক্স কী, রোগের উৎস কী, কোথা থেকে ছড়ায়, মানুষের মধ্যে অ্যানথ্রাক্সের লক্ষণ, মানুষ থেকে মানুষে কি অ্যানথ্রাক্স ছড়ায়, টিকা কি আছে, আক্রান্ত মানুষের চিকিৎসা কী, কীভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব, পশু অসুস্থ হলে বা মারা গেলে সেটার মাংস কি ব্যবহার করা যাবে?
এসব প্রশ্নের জবাবে বলা হয়েছে, অ্যানথ্রাক্স হলো, ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস নামের স্পোর গঠনকারী ব্যাকটেরিয়ার কারণে সৃষ্ট একটি সংক্রমণ। প্রাণি থেকে এ রোগ মানুষে ছড়ায়। যে প্রাণিরা জাবর কাটে, যেমন গরু, ছাগল, ভেড়া—এরা অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত পশু থেকে ও দূষিত পশুজাতপণ্য থেকে মানুষ আক্রান্ত হতে পারে।
অ্যানথ্রাক্স সাধারণত প্রাণি থেকে প্রাণিতে বা মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। তবে যখন অ্যানথ্রাক্স স্পোর খাবার গ্রহণ, শ্বাসপ্রশ্বাস বা ত্বকের কাঁটাছেড়ার মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে, তখন তা সক্রিয় হয়ে বংশবৃদ্ধি করে ও টক্সিন উৎপাদন করে। আক্রান্ত পশু জবাইয়ের পর মাংস, রক্ত ও পশম বা হাড়ের সংস্পর্শ থেকে মানুষের মধ্যে এ রোগ ছড়াতে পারে। সংক্রমিত পশুর হাড় দিয়ে তৈরি পশুখাদ্য থেকেও অ্যানথ্রাক্স ছড়াতে পারে।
মানুষের মধ্যে অ্যানথ্রাক্সের তিন ধরনের উপসর্গ দেখা যায়। এর মধ্যে কিউট্যানিয়াস অ্যানথ্রাক্স বা ত্বকজনিত ধরন সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। ত্বক কেটে গেলে সেই ক্ষত দিয়ে অ্যানথ্রাক্স স্পোর প্রবেশ করলে ত্বকে চুলকানি হয়, ফোস্কা পড়ে এবং ঘা দ্রুত কালো আকার ধারণ করে। কিছু ক্ষেত্রে মাথাব্যথা, শরীরব্যথা, জ্বর ও বমি হতে পারে।
গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল অ্যানথ্রাক্সও হতে পারে। এ ধরনটা দেখা যায় আক্রান্ত পশুর মাংস খেলে। শুরুতে মনে হতে পারে, খাবারে বিষক্রিয়া (ফুডপয়জনিং) হয়েছে। কিন্তু পরে তা গুরুতর পেটব্যথা, ডায়রিয়া ও রক্তবমিতে রূপ নেয়।
প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে। অসুস্থ গরু বিক্রি ও জবাইয়ের বিরুদ্ধে নজরদারি রাখা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন আমাদের আশ্বস্ত করেছে। এ নিয়ে লোকজনকে সচেতন করা হচ্ছেশাহীন সুলতানা, সিভিল সার্জন, রংপুরআরেকটি ধরন হচ্ছে পালমোনারি বা শ্বাসজনিত অ্যানথ্রাক্স। এ ধরনটি সবচেয়ে ভয়াবহ, তবে খুব একটা দেখা যায় না। বাতাসে ভেসে থাকা প্রচুর পরিমাণে স্পোর ফুসফুসে প্রবেশ করলে সর্দি-কাশি হতে পারে। মানুষ দ্রুত শ্বাসকষ্ট ও শকে চলে যেতে পারে।
মানুষ থেকে মানুষে অ্যানথ্রাক্স ছড়ায় কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, সাধারণত ছড়ায় না। তবে ত্বকজনিত অ্যানথ্যাক্সে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষত থেকে অ্যানথ্রাক্স ছড়ানোর সামান্য ঝুঁকি থাকতে পারে।
দেশে অ্যানথ্রাক্স নতুন কিছু নয়যুক্তরাষ্ট্রের পাবমেড সেন্ট্রাল মেডিকেল সাময়িকীতে বাংলাদেশে অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণ নিয়ে ২০১২ সালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ‘বাংলাদেশ অ্যানথ্রাক্স আউটব্রেকস আর প্রবাবলি কজড বাই কনটামিনেটড লাইভস্টক ফিড’ (বাংলাদেশে অ্যানথ্রাক্স প্রার্দুভাবের কারণ হতে পারে দূষিত পশুখাদ্য) শিরোনামের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরাজগঞ্জের ৮টি খামারে গবেষণা করে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পশু পাওয়া গিয়েছিল। ছয়টি খামারের মাটির নমুনা এবং টার্বিনেট (নাকের ভেতরের হাড়) থেকে ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস পাওয়া গিয়েছিল।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) ২০১০ সালের ১ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১২টি জেলায় অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত ১০৪টি গবাদিপশু ও ৬০৭ ব্যক্তিকে পেয়েছিল। জেলাগুলো হচ্ছে চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়া, লালমনিরহাট, লক্ষ্মীপুর, মেহেরপুর, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, পাবনা, রাজশাহী, সাতক্ষীরা, সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল। সব কটিই ছিল কিউট্যানিয়াস বা ত্বকজনিত অ্যানথ্রাক্স। কোনো মানুষের মৃত্যু হয়নি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ২০০৮ সালে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত ৪৩৭ ও ২০০৯ সালে ৪৪৯ পশু শনাক্ত করেছিল।
প্রথম আলোর পুরোনো সংবাদ থেকেও বিভিন্ন বছরে অ্যানথ্রাক্স ছড়ানোর তথ্য পাওয়া যায়। ২০১১ সালে বগুড়ার ধুনট উপজেলায় অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত হয়ে এক ব্যক্তি মারা যান। ওই সময় একই গ্রামের ১৬ জন এ রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, মানুষ থেকে মানুষে সাধারণত অ্যানথ্যাক্স ছড়ায় না। তবে ত্বকজনিত অ্যানথ্যাক্স আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষত থেকে অ্যানথ্রাক্স ছড়ানোর সামান্য ঝুঁকি থাকতে পারে।গত বছরের ১৫ অক্টোবর সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ফ্রন্টিয়ার্স সাময়িকীতে প্রকাশিত হয় গবেষণা প্রতিবেদন ‘রিস্ক ফ্যাক্টরস অ্যাসোসিয়েটড উইথ কিউট্যানিয়াস অ্যানথ্রাক্স আউটব্রেক্স ইন হিউম্যান ইন বাংলাদেশ’ (বাংলাদেশে মানুষের মধ্যে ত্বকজনিত অ্যানথ্রাক্স ছড়ানোর ঝুঁকির কারণগুলো’। প্রতিবেদনে ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দেশে অ্যানথ্রাক্সের ২৬টি প্রাদুর্ভাবের কথা তুলে ধরা হয়। এতে সাতটি জেলায় ১ হাজার ২১০ জনকে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত বলে শনাক্ত করা হয়। এর মধ্যে ৬১ শতাংশই ছিলেন মেহেরপুর জেলার বাসিন্দা।
রংপুরে জুলাই থেকে ত্বকের সমস্যা নিয়ে রোগী আসেঅ্যানথ্রাক্সে পীরগাছার চারটি ইউনিয়নে অর্ধশত ব্যক্তি আক্রান্ত হন। ওই সময় ঘটনাস্থল থেকে অসুস্থ গরুর মাংসের নমুনা পরীক্ষা করে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত করেছিল প্রাণিসম্পদ বিভাগ। পরে আইইডিসিআরের একটি প্রতিনিধিদল গত ১৩ ও ১৪ সেপ্টেম্বর পীরগাছা সদর ও পারুল ইউনিয়নের অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ থাকা ১২ নারী-পুরুষের নমুনা সংগ্রহ করেছিল।
আইইডিসিআরের পরিচালক তাহমিনা শিরীন প্রথম আলোকে বলেন, পীরগাছার ১২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৮ জনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্ত গরু ও ছাগলের মাংস খেলে অ্যানথ্রাক্সের সংক্রমণ ঘটবে। আক্রান্ত পশু কাটাকাটি করার সময় কারও হাত কেটে যেতে পারে। সেই ক্ষত থেকে সংক্রমিত হতে পারে।
তাহমিনা শিরীন এ মুহূর্তে অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণ প্রতিরোধে নজরদারি বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, অসুস্থ গরু বিক্রি বন্ধ করতে হবে। অসুস্থ গরু জবাই করা যাবে না, মাংস বিক্রি করা যাবে না।
কিছু অসাধু ব্যক্তি আক্রান্ত গরু বিক্রি করে দিতে পারেন—এমন শঙ্কার জবাবে আইইডিসিআরের পরিচালক বলেন, সেটা ঠেকাতে স্থানীয় পর্যায়ে প্রশাসনকে নজরদারি বাড়াতে হবে। অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গরুর মাংস কাটাকাটি ও নড়াচড়া করা থেকে কেউ সংক্রমিত হতে পারেন। ফলে এখানে অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে সর্তক থাকার একটাই উপায়—এ ধরনের গরু জবাই ও মাংস বিক্রি বন্ধ করা।
অ্যানথ্রাক্স একজন ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ হতে পারে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল স ক রমণ প রগ ছ
এছাড়াও পড়ুন:
রংপুরে আরও তিনজনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত, জনসচেতনতায় জোর নেই
রংপুরের কাউনিয়া ও মিঠাপুকুর উপজেলায় আরও তিনজনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে। কাউনিয়া ও মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এর মধ্যে দুজন কাউনিয়ার এবং একজন মিঠাপুকুরের বাসিন্দা। এ নিয়ে জেলায় অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ জনে। তবু আক্রান্ত এলাকাগুলোতে অ্যানথ্রাক্স নিয়ে তেমন সচেতনতামূলক কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র বলছে, চলতি বছরের জুলাই ও সেপ্টেম্বরে রংপুরের পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে দুজন মারা যান। একই সময়ে উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে অর্ধশত ব্যক্তির শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা যায়। ওই সময় ঘটনাস্থল থেকে অসুস্থ গরুর মাংসের নমুনা পরীক্ষা করে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত করেছিল প্রাণিসম্পদ বিভাগ। পরে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) একটি প্রতিনিধিদল ১৩ ও ১৪ সেপ্টেম্বর পীরগাছা সদর এবং পারুল ইউনিয়নের অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ থাকা ১২ জন নারী-পুরুষের নমুনা সংগ্রহ করেছিল। এর মধ্যে আটজনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়।
আরও পড়ুনপীরগাছায় ৮ জনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত, রংপুরের আরও দুই উপজেলায় উপসর্গের রোগী৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫আরও পড়ুনরংপুরের পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে দুজনের মৃত্যু, আক্রান্ত অর্ধশত১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫কাউনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুজন সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ২৩ সেপ্টেম্বর কাউনিয়ায় অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ আছে এমন ছয়জনের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছিল। এর মধ্যে দুজনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে। সুজন সাহা বলেন, আক্রান্ত রোগীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। হাসপাতালের কর্মী রোগীর বাসায় গিয়ে চিকিৎসা দেবেন।
মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, ১৫–২০ দিন আগে ইমাদপুর ইউনিয়নের আমাইপুর গ্রামে একটি গরু অসুস্থ হলে জবাই করা হয়। পরে ওই মাংস কাটাকাটি করার পর গ্রামের পাঁচ–ছয়জনের শরীরে ঘা হয় ও অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা দেয়। এরপর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাঁরা চিকিৎসা নিতে আসলে সেখানে থেকে নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। এই পাঁচজনের মধ্যে একজন পুরুষের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে।
মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা (রোগনিয়ন্ত্রণ) এম এ হালিম লাবলু প্রথম আলোকে বলেন, ইমাদপুরে যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁরা অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গবাদিপশুর শ্লেষ্মা, লালা, রক্ত, মাংস, হাড়, নাড়িভুঁড়ির সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হয়েছেন। তবু রোগী যাতে সামাজিকভাবে কোনো হেয় পরিস্থিতির মধ্যে না পড়েন, সে জন্য তাঁদের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না। তিনি জানান, এ রোগ গবাদিপশু থেকে মানুষে ছড়ায়, তবে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। তাই মানুষকে সচেতন হতে হবে। অসুস্থ গরু জবাই করা বা মাংস খাওয়া যাবে না।
বুধবার দুপুরে আমাইপুর গ্রামে গেলে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম ও সোহরাব আলীর সঙ্গে। তাঁদের দাবি, গরুর মালিক গরু অসুস্থের কথা বলেননি। বলেছিল, দড়ি দিয়ে গরুর ফাঁস লেগেছিল। এ কারণে প্রতিবেশীরা মাংস কাটাকাটিতে যুক্ত হন। এই দুই স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী রহমতপুর বাজারে কয়েকজন ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞেস করলে তাঁরা জানান, অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো সচেতনতামূলক কার্যক্রম তাঁরা দেখেননি।
মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরেকটি সূত্র বলছে, উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের জীবনপুর গ্রামের একজন নারীর অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ পাওয়া গেছে। তিনি অসুস্থ গরুর সংস্পর্শে আসেননি। তবে তাঁর বাড়িতে গরু-ছাগল আছে। ওই নারী নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে।
চিকিৎসকেরা বলছেন, মাটি বা ঘাসের সঙ্গে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু বছরের পর বছর ধরে থেকে যায়। বেশির ভাগ সময় পানি জমা ঘাস গবাদিপশু খাচ্ছে। সেখান থেকে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। এ জন্য অ্যানথ্রাক্স প্রতিষেধক টিকা কার্যক্রমে জোর দিতে হবে।
অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত ইমাদপুর এলাকার বাসিন্দারা প্রথম আলোকে জানান, ১০ থেকে ১২ দিন আগে তাঁদের এলাকায় গবাদিপশুকে অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধী ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। তবে পার্শ্ববর্তী পচার হাটের মমিনুল ইসলাম ও মহেন্দ্র দাস বলেন, তাঁদের এলাকায় টিকা দেওয়া হয়নি। তাঁরা গরু-ছাগল নিয়ে আতঙ্কে আছেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবু ছাইদ প্রথম আলোকে বলেন, গবাদিপশুর অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত করার পরেই গত আগস্ট থেকে তাঁরা টিকা কার্যক্রম শুরু করেছেন। তবে স্বাস্থ্য বিভাগ মানুষের নমুনা পরীক্ষা করতে দেরি করেছে। এ কারণে এখন আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার দাবি, পীরগাছা ছাড়াও কাউনিয়া, মিঠাপুকুর, রংপুর সদর, পার্শ্ববর্তী গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ, কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী, উলিপুর ও রাজাটহাটেও অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধী টিকা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিরাপদ মাংসের জন্য বিভিন্ন জবাইখানায় গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে।
অ্যানথ্রাক্স বিষয়ে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ দেরি করেনি দাবি করে ডেপুটি সিভিল সার্জন রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যখন জানতে পারছি, সঙ্গে সঙ্গে আইইডিসিআরকে জানানো হয়েছিল। প্রতিটি উপজেলাকে সতর্ক করা আছে এবং অ্যানথ্রাক্স চিকিৎসার গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে। এটার জন্য যে অ্যান্টিবায়োটিক বা চিকিৎসাব্যবস্থা, সেটাও পর্যাপ্ত আছে। এ মুহূর্তে যেটা বিষয়, জনগণকে সচেতন করা। অসুস্থ প্রাণী জবাই না করা, নিজেরা না খাওয়া, লুকিয়ে বিক্রি না করা। অসুস্থ প্রাণী মারা গেলে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।’