পটুয়াখালীর কলাপাড়ার টিয়াখালী ইউনিয়নের ছয়ানিপাড়াটি গড়ে ওঠে ১৭৬০ সালের দিকে। মোধুপ্রিমাই (পায়রা) এবং টিয়াখালী রাই (টিয়াখালী) নদীর অববাহিকায় গড়ে ওঠা প্রাচীন এই গ্রামকে পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মাণের সময় উচ্ছেদ করা হয়। গ্রামের খালের ধারে ছিল এক পবিত্র প্রত্নস্থল, রাখাইন ভাষায় বলে ‘চোয়ঁসাবা’। মানুষ এখানে পূজাকৃত্য করতেন। সাংগ্রেংপোওয়ে, ওয়াজআ ও ওয়াসো উৎসব আয়োজিত হতো। শতবর্ষী রাখাইন নারী প্রুমাইয়ের সাধ ছিল পূর্বজনের এই আদিভিটায় দেহ রাখার। কিন্তু রাষ্ট্রের এক উন্নয়ন প্রকল্প সেটি চুরমার করে দেয়। 

শেরপুরের ঝিনাইগাতী রাংটিয়া শালবনের ধারে সমশ্চূড়া আরেক প্রাচীন কোচ গ্রাম। বাণিজ্যিকভাবে সাদামাটি, চিনামাটি ও পাথর উত্তোলনের কারণে সমশ্চূড়ার মতো সীমান্ত গ্রামগুলো এখন লন্ডভন্ড। কোচ নারীরা ধারেকাছের পাহাড়টিলা থেকে আর বন আলু, ঔষধি গাছ কিংবা লাকড়ি সংগ্রহ করতে পারেন না। জমি, জংলা, জীবিকা হারিয়ে অনেকের মতো গ্রামের কৃষক অপিলা কোচ টঙ্গীতে এসে গার্মেন্টসে কাজ নিতে বাধ্য হন। 

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল দেশের বৃষ্টিপ্রবণ শীতলতম স্থান। আর এমন বাস্তুতন্ত্রেই খাসি জাতিগোষ্ঠী গড়ে তুলেছে পান ও ফল চাষনির্ভর বিশেষ পুঞ্জি আবাস। ১৯৯৭ সালের ১৪ জুন অক্সিডেন্টাল কোম্পানির আগুনে ঝলসে যায় লাউয়াছড়া বন। গ্যাস অনুসন্ধানের নামে পরপর এই বনকে রক্তাক্ত করে ইউনোকল ও শেভরন।

লাউয়াছড়া খাসিপুঞ্জির কবিরাজ ক্লুরেন মানারকে দেখেছি দগ্ধ বনে দিনরাত উদ্​ভ্রান্তের মতো চে রথুত, তেৎহাতি, তেৎরেথেম, তেৎখ্লং, ক্রালাহিড ও ক্রামুসুরি নামের জংলি মাশরুম ও ভেষজ লতাগুল্ম খুঁজতে। তেঙা হনরঅ নামের এক হলুদ কচ্ছপ, ডং চেলতিয়া নামের এক গাছশামুক, খ্র ছেরঙ্গান নামের এক সবুজ ব্যাঙ হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। 

রাজশাহীর তানোরের পাঁচন্দর মাহালিপাড়া গ্রামের কৃষক চিচিলিয়া হাসদার কোমর বেঁকে গেছে প্রতিদিন ভারী কলসি টানতে টানতে। ঝিনাখোড়ের মতো উচ্চ বরেন্দ্রর গ্রামগুলোতে পানি নেই। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ লাগাতার মেশিন দিয়ে পাতালপানি তুলে গ্রামের পর গ্রাম পানিশূন্য করেছে। খাঁড়ি, দিঘি, জলাগুলোও দখল ভরাট হয়েছে নানাভাবে। 

সাতক্ষীরার শ্যামনগরের সুন্দরবনলাগোয়া বুড়িগোয়ালিনী ব্যারাকে থাকেন দিনমজুর কৌশল্যা মুন্ডা। উপকূল বাঁধ, বাণিজ্যিক চিংড়িঘের আর প্রতিদিন বাড়তে থাকা লবণাক্ততার যন্ত্রণা সামাল দিতে হচ্ছে। এক কলসি পানির জন্য হাঁটতে হয় কয়েক ঘণ্টা কয়েক মাইল। নোনাপানি ঠেলে মাছের পোনা কিংবা কাঁকড়া ধরতে ধরতে শরীরে জমেছে দগদগে ঘা। জরায়ু কেটে বাদ দেওয়ার মতো নির্দয় ঘটনা ঘটছে।

সাদা পাথর তোলার পর সিলেটের এই অঞ্চল এ রকম বিরান হয়েছে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপির জন্ম হয়েছে সংস্কার করার জন্য: ডা. জাহিদ  

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট পৌরশহরের ৮নং ওয়ার্ডে আয়োজিত উঠান বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, বিএনপি জন্মলগ্ন থেকে সংস্কার, পরিবর্তন ও আধুনিক রাষ্ট্র গঠনের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। মিথ্যাচার করে বিএনপির ইতিহাস বিকৃত করা যাবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন। 

শনিবার (৮ নভেম্বর) বিকেলে পৌর বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘‘এই দেশ সাক্ষ্য দিবে, এ দেশের মানুষ বলবে, দেশের ইতিহাস বলবে, বিএনপির ইতিহাস হলো সংস্কারের ইতিহাস। মানুষের প্রত্যাশার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার ইতিহাস।’’ 

আরো পড়ুন:

বিএনপির ৩১ দফা: পাঠ ও বিবেচনা

‘জামায়াতের রাজনীতি শুরু হয় জিয়াউর রহমানের নীতির কারণে’

ডা. জাহিদ হোসেন আরো বলেন, ‘‘কেউ কেউ একটি পাতা ধরে বলছেন, বিএনপি নাকি সংস্কারকে বিশ্বাস করে না।’’ তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘যখন তোমরা জন্মাওনি, তখন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাকশালের কবরের ওপর বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরে বেগম খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতি শাসনব্যবস্থার পরিবর্তে আজকের সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। বিএনপির জন্মই হয়েছে দেশকে সংস্কারের মাধ্যমে এগিয়ে নেওয়ার জন্য।’’ 

তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি কথা নয়, কাজে বিশ্বাস করে। জনগণের আশা–আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ, লালন ও বাস্তবে রূপায়িত করাই দলের লক্ষ্য।’’ তাই ৩১ দফা জাতীয় ঘোষণা বাস্তবায়নে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে তিনি সকলকে আহ্বান জানান।

সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, পৌর বিএনপির সভাপতি আব্দুস সাত্তার মিলন, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মুক্তার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আল-মামুন, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম লেলিন, ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আমিরুল ইসলাম, উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব মোফাজ্জল হোসেন মোফা, পৌর যুবদলের সদস্য-সচিব সজীব কবির এবং পৌর জিয়া পরিষদের সদস্য সচিব আনোয়ার হোসেন ডাবলু। এ সময় সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/মোসলেম/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ