যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ ডেমোক্র্যাট ভোটার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাকে স্পষ্টভাবে সমর্থন করছেন। তাঁরা মনে করেন, গাজায় জাতিগত নিধন (জেনোসাইড) চলছে। গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত এক সমীক্ষার ফলাফলে এই মনোভাব ওঠে এসেছে।

ইনস্টিটিউট ফর মিডল ইস্ট আন্ডারস্ট্যান্ডিং পলিসি প্রজেক্ট ও জেন-জি ফর চেঞ্জ নামের দুটি প্রতিষ্ঠান সমীক্ষাটিতে অর্থায়ন করেছে। বাস্তবায়ন করেছে ইউগভ। এতে অংশ নিয়েছেন ১ হাজার ২২১ জন, যাঁরা ডেমোক্রেটিক পার্টিকে ভোট দেন বলে জানিয়েছেন।

সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৮০ শতাংশ ডেমোক্র্যাট ভোটার মনে করেন, ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন কমানো উচিত। ৭২ শতাংশ মনে করেন, ইসরায়েল গাজায় জাতিগত নিধন চালাচ্ছে। ৬৫ শতাংশ জানান, গাজায় জাতিগত নিধন চালানোর অপরাধে ইসরায়েলের ওপর তাঁরা কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ দেখতে চান।

১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী ভোটারদের মধ্যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষে সমর্থন বৃদ্ধি পেয়েছে। কখনো কখনো এই মনোভাব ১০ শতাংশ বা তার বেশি বেড়েছে।

সমীক্ষা পরিচালনাকারীরা এতে অংশ নেওয়া ১ হাজার ২২১ জনকে প্রায় সমান করে দুই ভাগে ভাগ করেন। এরপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তাঁদের আরও সুনির্দিষ্ট কিছু প্রশ্ন করা হয়।

একটি ভাগের কাছে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী (অ্যাপারথেইড) শাসকদের বিরুদ্ধে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, সেই প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়। অন্য ভাগের কাছে এমন কোনো পটভূমি তুলে ধরা হয়নি।

সমীক্ষা ফলে দেখা যায়, যাঁদের কাছে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়নি, তাঁরাই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপকে বেশি সমর্থন করেছেন।

অংশগ্রহণকারীদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয়, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের ইসরায়েলি বন্ড কেনাসহ দেশটির সরকারের কাছে ক্রেডিট বা ঋণ সম্প্রসারণ বন্ধ করা উচিত কি না? ৭৬ শতাংশ ‘হ্যাঁ’ সূচক উত্তর দিয়েছেন। প্রায় সমানসংখ্যক অংশগ্রহণকারী মনে করেন, ইসরায়েলের তৈরি অস্ত্র ও সাইবার নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট সফটওয়্যারের আমদানিতেও বিধিনিষেধ আরোপ করা উচিত।

আরও পড়ুনট্রাম্পের আহ্বানের পরও গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ২০ ফিলিস্তিনি নিহত৪ ঘণ্টা আগেযা একসময় চরমপন্থা বলে বাতিল করে দেওয়া হতো, তা এখন মূলধারায় পরিণত হয়েছেনির্বাহী পরিচালক, জেন-জি ফর চেঞ্জ

কোনো প্রেক্ষাপট ছাড়াই যাঁদের প্রশ্ন করা হয়েছিল, তাঁদের ৬২ শতাংশ ইসরায়েলের সরকারি কর্মকর্তাদের ও সেনাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা উচিত বলে মত দেন। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর মধ্যে সব সহযোগিতা ও গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় বন্ধ করা উচিত বলেও মনে করেন তাঁরা।

একটি ভাগের অংশগ্রহণকারীদের কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের করদাতাদের অর্থ ব্যবহার করে ইসরায়েলকে অস্ত্র পাঠানো উচিত কি না। ৭১ শতাংশ ‘না’ সূচক উত্তর দিয়েছেন।

অন্য ভাগের অংশগ্রহণকারীদের কাছেও একই প্রশ্ন করা হয়েছিল। তবে তাঁদের বলা হয়েছিল, অস্ত্র কেনার পুরো অর্থ যদি ইসরায়েল বহন করে, তাহলে তা উচিত হবে কি না? ৬৩ শতাংশ ‘না’ সূচক জবাব দিয়েছেন।

সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ১ হাজার ২২১ জনের মধ্যে অন্তত ৫৫ শতাংশই জানিয়েছেন, তাঁরা কেবল সেই কংগ্রেস প্রার্থীকে সমর্থন দেবেন, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের করদাতার অর্থ ব্যবহার করে ইসরায়েলকে অস্ত্র পাঠানোর বিরোধিতায় ভোট দিয়েছেন। ১৮-২৯ বছর বয়সী অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে এই সমর্থন প্রায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

সমীক্ষাটি ১১ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরিচালিত হয়েছে। এর মার্জিন অব এরর (ত্রুটি সীমা) প্রায় ৩ শতাংশ।

জেন-জি ফর চেঞ্জের নির্বাহী পরিচালক চেইয়েন হান্ট এক বিবৃতিতে বলেন, ‘যা একসময় চরমপন্থা বলে বাতিল করে দেওয়া হতো, তা এখন মূলধারায় পরিণত হয়েছে। ডেমোক্র্যাট ভোটাররা মনে করেন, তাঁদের করের অর্থ বর্ণবাদকে সমর্থন করার জন্য ব্যবহার করা উচিত নয়। এই পরিবর্তন হঠাৎ করে আসেনি। দশকের পর দশক ধরে চলা প্রতিরোধ ও মর্যাদার জন্য অদম্য দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এটি গড়ে উঠেছে।’

ইনস্টিটিউট ফর মিডল ইস্ট আন্ডারস্ট্যান্ডিং পলিসি প্রজেক্টের নির্বাহী পরিচালক মার্গারেট ডি’রেউস সতর্ক করে বলেন, ‘ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতৃত্বকে শেষ পর্যন্ত এই কঠিন বাস্তবতা স্বীকার করতে হবে এবং তাঁদের ভোটারদের কথা শুনতে হবে। অন্যথায় তাঁদের ২০২৪ সালে ভয়ংকর হারের পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি নিতে হবে।’

আরও পড়ুনহামাসের প্রতি ট্রাম্পের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ায় ‘বিস্মিত’ নেতানিয়াহু৮ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র ব র দ ধ য ক তর ষ ট র র পদক ষ প পর চ ল হয় ছ ল ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনে সামরিক বাহিনী ও পুলিশের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

আগামী ফেব্রুয়ারিতে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখরভাবে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে সামরিক বাহিনী, পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

আজ বুধবার মিরপুর সেনানিবাসে ডিএসসিএসসি কমপ্লেক্সে সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজ (ডিএসসিএসসি) কোর্স ২০২৫-এর সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এখন নির্বাচনের সময়। আমরা প্রস্তুত, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের সামরিক বাহিনী, পুলিশ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তা প্রয়োজন।’

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, ‘এটি একটি বড় প্রয়াস। অভ্যুত্থান থেকে নির্বাচনের পথে যাত্রা। এটি হবে শান্তিপূর্ণ, উৎসবমুখর, আনন্দ ও মিলনের সময়। মানুষ তাদের আশা ও আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করতে পারবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ