বরিশালে মা ইলিশ নিধন ঠেকাতে পাহারায় থাকবে ড্রোন
Published: 4th, October 2025 GMT
ইলিশের প্রজনন মৌসুম নির্বিঘ্ন রাখতে এবং মা ইলিশ সুরক্ষায় দেশের সবচেয়ে বড় ইলিশের অভয়াশ্রম বরিশালের মেঘনাসহ সন্নিহিত নদ-নদীতে ড্রোন দিয়ে নজরদারির উদ্যোগ নিয়েছে মৎস্য বিভাগ।
এর মধ্যে গতকাল শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ইলিশের প্রজনন মৌসুমকে ঘিরে দেশের সব নদ-নদী ও সাগরে শুরু হয়েছে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। তা বলবৎ থাকবে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত। এই সময়ে ইলিশ ধরা, বিপণন, পরিবহন ও মজুত দণ্ডনীয় অপরাধ।
বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, নিষেধাজ্ঞা চলাকালে বরিশালের হিজলা, মুলাদী, মেহেন্দীগঞ্জ, চাঁদপুরের হাইমচর থেকে শুরু করে ভোলার তেঁতুলিয়া পর্যন্ত নদ-নদী, মেঘনা অববাহিকা ও শাখানদীগুলোয় ছোট ছোট নৌকা নিয়ে প্রতিবছর ইলিশ শিকার করেন স্থানীয় কয়েক হাজার জেলে। তাঁদের সঙ্গে যোগ হয় মৌসুমি জেলেরাও।
মৎস বিভাগ সূত্র জানায়, এবার এই তৎপরতা রোধে মৎস্য বিভাগ প্রথম প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে মাঠে নামবে। মাছ ধরা ঠেকাতে বরিশালের মেঘনা নদীর ৮২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলাকালে আকাশে নজরদারির জন্য ড্রোন ব্যবহার করা হবে। এ ছাড়া জেলার নদ–নদীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে যৌথ বাহিনীর তৎপরতা থাকবে কঠোরভাবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এসব পয়েন্টে অবস্থান নেবেন। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকেও অভিযানে যুক্ত করা হবে। সঙ্গে থাকবেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক। নিষিদ্ধ সময়ে কেউ মাছ ধরলে তাঁকে দণ্ড দেওয়া হবে।
এ তথ্য নিশ্চিত করে হিজলা উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম জানান, এই অভিযান কেবল নদীতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, হাটবাজার, লঞ্চ ও বাস টার্মিনালগুলোতেও তল্লাশি ও নজরদারি চলবে।
মোহাম্মদ আলম বলেন, অভিযান পরিচালনার জন্য মাঠে থাকবেন ৩০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। যৌথ বাহিনীতে কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ ও র্যাব সদস্যরা থাকবেন। এ ছাড়া সার্বক্ষণিক স্পিডবোট নিয়ে টহলও চলবে।
মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ওমর সানি বলেন, ‘মা ইলিশ রক্ষায় আমরা বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম করেছি। এবার সর্বশক্তি দিয়ে অভিযান পরিচালিত হবে।’
মা ইলিশ সংরক্ষণে ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম বাস্তবায়ন উপলক্ষে কীর্তনখোলা নদীতে নৌ শোভাযাত্রার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন ও জেলা মৎস্য দপ্তর। শনিবার সকালে বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বর শ ল র নদ নদ মৎস য
এছাড়াও পড়ুন:
পাশ্ববর্তী দেশের জেলেদের আগ্রাসন বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি
মৌসুমের শুরুতে প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারনে কাঙ্খিত ইলিশের দেখা পাচ্ছিলেন না পটুয়াখালীর জেলেরা। গত কয়েকদিন ধরে জেলেদের জালে মিলতে শুরু করেছে রূপালী ইলিশ। এরই মধ্যে প্রজনন মৌসুম শুরু হওয়ায় আজ মধ্যরাত থেকে নদী ও সাগরে শুরু হচ্ছে মাছ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। ফলে জেলেদের মুখের হাসি ম্লান হয়েছে।
জেলেদের দাবি, নিষেধাজ্ঞা চলাকালে পাশ্ববর্তী দেশের জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে মাছ ধরতে শুরু করে। তাদের এই আগ্রাসন ঠেকাতে সমুদ্রে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে হবে প্রশাসনকে। পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন প্রণোদনা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
আরো পড়ুন:
পদ্মা-মেঘনায় মাছ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা
মৌসুম শেষে খালি ট্রলার নিয়ে কূলে ফিরছেন জেলেরা
মা ইলিশের বাঁধাহীন প্রজননের জন্য ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন বঙ্গোপসাগরসহ সব নদ-নদীতে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মৎস্য বিভাগ। এসময় নদী ও সামুদ্রিক মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুত ও বাজারজাতকরণসহ ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
এদিকে, অবরোধের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জেলাজুড়ে মাইকিং করা হয়েছে। শুক্রবার (৩ অক্টোবর) সকাল থেকে বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ট্রলার তীরে ফিরতে শুরু করেছে। মৎস্য বন্দর পটুয়াখালীর মহিপুর ও আলীপুরের শিববাড়িয়া নদীতে নোঙ্গর করে রাখা হয়েয়েছে হাজারো মাছ ধরার ট্রলার। এসব ট্রলারের জেলেরা বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
অবরোধের কারণে আগামী ২২ দিন বেকার থাকবেন জেলেসহ ও এ পেশার সঙ্গে সম্পৃক্তরা। বিগত বছরগুলোর মতো এ বছরও জেলার ৬৫ হাজার জেলেকে দেওয়া হবে ২৯ কেজি করে চাল। সরকারি এ প্রণোদনা চাহিদার তুলনায় খুবই কম বলে দাবি জেলেদের।
জেলে আবুল হোসেন ফরাজী বলেন, “২২ দিনে মাত্র ২৯ কেজি চাল পাব, এতে কোনভাবে সংসার চলবে না। যদি সরকার চাল একটু বাড়িয়ে দিত, তাহলে পরিবার নিয়ে ভালো থাকতে পারতাম।”
আলী হোসেন নামের অপর জেলে জানান, “সাগরে প্রশাসন টহল না বাড়ালে ভারতের জেলেরা আমাদের দেশে ঢুকে মাছ শিকার করে নিয়ে যাবে। বিগত বছরগুলোতে এ ধরনের ঘটনা অসংখ্যবার ঘটেছে। অবরোধের পর সাগরে গিয়ে আমরা মাছ পাইনি। তাই এবছর আমরা সাগরে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি অনুরোধ জানাচ্ছি।”
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, “এক সপ্তাহের মধ্যে জেলেদের প্রণোদনা পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি তাদের দাবি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব। সমুদ্র ও নদীতে অবরোধ শতভাগ সফল করতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
ঢাকা/ইমরান/মাসুদ