সফল নারী উদ্যোক্তা নীলিমা চৌধুরী তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্বে গড়া প্রতিষ্ঠানের একের পর এক ব্যবসায়িক মাইলফলক ছুঁয়ে চলেছেন। ব্যবসার সম্প্রসারণের ধারাবাহিকতায় এখন তাঁর সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ, প্রতিষ্ঠানের জন্য এমন একটি স্থায়ী অফিস স্পেস খুঁজে বের করা, যা ভবিষ্যতের ব্যবসায়িক কার্যক্রম বিস্তৃত করতে ভূমিকা রাখবে।

নতুন বাণিজ্যিক স্পেসের জন্য নারী উদ্যোক্তা নীলিমার কিছু নির্দিষ্ট মানদণ্ড রয়েছে। সেগুলো হলো—

লোকেশন ও যাতায়াতসুবিধা: অফিস এমন স্থানে চাই, যেখানে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও গ্রাহক উভয়েই সহজে পৌঁছাতে পারেন।

আধুনিক নকশা ও পরিবেশ: আধুনিক ও নান্দনিক স্থাপত্যশৈলী, যা কর্মচঞ্চল আবহ তৈরি করে কর্মকর্তাদের সৃজনশীলতা বাড়াবে।

উন্নত ভবন অবকাঠামো: দ্রুতগতির লিফট, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা, সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও টেকসই নির্মাণ।

কর্মকর্তা ও গ্রাহকের সুবিধা: প্রয়োজনীয় পার্কিং ব্যবস্থা ও ভবনের পেশাদার ব্যবস্থাপনা।

আইনি বৈধতা ও বিশ্বস্ততা: সব প্রয়োজনীয় আইনি অনুমোদন ও বিশ্বস্ত নির্মাণ।

এসব বিষয়ের সমন্বয়ে নীলিমা এমন এক ঠিকানা খুঁজছেন, যা তাঁর প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড ভ্যালুকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিতে পারে এবং ব্যবসা সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখবে। নির্মাণমান ও আধুনিকতার জন্য সুখ্যাত শেল্‌টেকের প্রকল্পগুলো তাই তাঁর কাছে নির্ভরযোগ্য বলে মনে হলো। ঢাকার বিভিন্ন প্রাইম লোকেশনে শেল্‌টেক্ তাদের ‘স্যাফায়ার সিরিজ’-এর আওতায় যেসব প্রিমিয়াম বাণিজ্যিক ভবন তৈরি করছে, তার সবই নীলিমার চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। লোকেশন, নকশা, অবকাঠামো, ব্র্যান্ড ভ্যালু বা সুযোগ-সুবিধা—প্রতিটি দিকেই এসব প্রকল্প উদাহরণ সৃষ্টি করছে।

ভিঞ্চিয়া শেল্‌টেক্‌ টাওয়ার, তেজগাঁও

তেজগাঁওয়ের করপোরেট হাবে নির্মিত হচ্ছে শেল্‌টেকের আধুনিক ১৪ তলা কমার্শিয়াল ভবন ‘ভিঞ্চিয়া শেল্‌টেক্ টাওয়ার’। শীর্ষস্থানীয় আর্কিটেকচার ফার্ম ‘বিন্যাস’-এর ডিজাইন করা এই ভবনের ফ্লোর–প্ল্যানে থাকছে ৭৭১ থেকে ৭২১৭ বর্গফুটের অফিস স্পেস। এ ভবনের সামনের দিকে থাকবে খোলা ডাবল হাইট এন্ট্রি লবি, যেটি সবাইকে একটি খোলামেলা আবহ তৈরি করে দেবে। ভবনটি তেজগাঁওয়ের প্রধান সড়কের পাশে, তাই যাতায়াতের ক্ষেত্রে সুবিধাভোগ করবে প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ কর্মকর্তারা।

ভিঞ্চিয়া শেল্‌টেক্ টাওয়ার.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

উৎপত্তিস্থল মাধবদীতে এপাশ-ওপাশ দুলছিল উঁচু ভবনগুলো, মাটিতে ফাটল

ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর মাধবদীর সবচেয়ে বড় ভবন জে অ্যান্ড জে টাওয়ার। ১৪ তলা টাওয়ারটির দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থতলাজুড়ে একটি বেসরকারি হাসপাতাল। পঞ্চম থেকে ১৪ তলা পর্যন্ত ৪৮টি ফ্ল্যাটে লোকজনের বসবাস।

হাসপাতালটির চেয়ারম্যান সনেট মো. নোমান ভূমিকম্পের সময় হাসপাতালেই ছিলেন। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘পুরো ভবনটি এপাশ-ওপাশ দুলছিল। হাসপাতালের রোগীসহ সবাই হুড়োহুড়ি শুরু করেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাতে স্যালাইনসহ কয়েকজন রোগীকে নিচে নেমে যেতে দেখা যায়। ভবনটির চারটি এক্সিট পয়েন্ট থাকায় ভালোভাবে সবাই নেমে যেতে পারেন।’

ভবনটির তত্ত্বাবধায়ক ইয়াসির আরাফাত ও নিরাপত্তা প্রহরী মো. ফালু মিয়া জানান, এমন ভূমিকম্প তিনি আগে কখনো দেখেননি। কম্পন শেষ হলে সবাই আবার বাসাবাড়ি ও হাসপাতালে ফিরে যান।

মারাত্মক ভয় পেয়েছিলাম, দোকানে লোকজনের সঙ্গে আমি নিজেও সব রেখে সড়কের মাঝখানে বের হয়ে পড়ছিলাম।পৌরসভাসংলগ্ন চা–দোকানি বজলু মিয়া

নরসিংদী সদর হাসপাতাল, ১০০ শয্যাবিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে ভূমিকম্পে আহত এ পর্যন্ত ৮০ জন ব্যক্তি চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ভূমিকম্পের সময় নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি সাবস্টেশনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে সাবস্টেশনটির যন্ত্রাংশ পুড়ে গেলে পলাশ ও ঘোড়াশালের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।

পলাশ ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. আবদুল শহিদ জানান, তাঁদের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো. এনামুল হক জানান, ভূমিকম্পে এ আগুনের সূত্রপাত। বেলা দুইটার পর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়।

ঘোড়াশাল ঈদগাহ রোডের মারকাসুল সুন্নাহ তাহফিজুল কোরআন মাদ্রাসার পরিচালক মুফতি সালাউদ্দিন আনসারী বলেন, ‘আমাদের মাদ্রাসার ছয়তলা ভবনের চার-পাঁচটি জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা সবাই আতঙ্কিত।’

ফজলুল হক বলেন, ভূমিকম্পের সময় বাড়ির বাসিন্দাদের অন্তত ৮০ জন অবস্থান করছিলেন। হঠাৎ পুরো বাড়ি কেঁপে উঠলে অধিকাংশই হুড়োহুড়ি করে নিচে নেমে আসেন। সবাই এতটাই আতঙ্কিত ছিলেন যে তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে কেউ কেউ হাত–পায়ে আঘাত পেয়েছেন। কপাল ভালো, বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি।‘এত ভয় কখনো পাইনি’

ছোট মাধবদী এলাকার একটি পাঁচতলা ভবনের তৃতীয় তলার বাসিন্দা জসিম মিয়া স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে বের হয়ে রাস্তায় চলে আসেন। তিনি বলছিলেন, ‘ভূমিকম্পের এমন ঝাঁকুনি আমার জীবনে আর কখনো দেখি নাই। সব বাড়িঘরের ভেতর থেকে লোকজন রাস্তায় চলে আসছিলেন। আতঙ্কে শুধু আল্লাহকে ডাকছিলাম।’

পৌরসভাসংলগ্ন চা–দোকানি বজলু মিয়া বলেন, ‘মারাত্মক ভয় পেয়েছিলাম, দোকানে লোকজনের সঙ্গে আমি নিজেও সব রেখে সড়কের মাঝখানে বের হয়ে পড়ছিলাম।’

গৃহবধূ সালমা আক্তার (৩৫) গরুরহাট এলাকার একটি সাততলা ভবনের পাঁচতলায় চার বছর বয়সী শিশুসন্তান নিয়ে থাকেন। ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে ভবনের অন্য বাসিন্দাদের সঙ্গে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে পায়ে ব্যথা পান। তিনি বলেন, ‘এত ভয় কখনো পাইনি।’

বিরামপুর এলাকার ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন (৫২) বলেন, জীবনে তিনি এমন ভয়ংকর ভূমিকম্প আগে কখনো দেখেননি।

মাধবদীর নওয়াপাড়া এলাকার ছয়তলা ভবনের মালিক ফজলুল হক। তাঁর বাড়ির ২০টি ফ্ল্যাটে শতাধিক মানুষের বসবাস। ফজলুল হক বলেন, ভূমিকম্পের সময় বাড়ির বাসিন্দাদের অন্তত ৮০ জন অবস্থান করছিলেন। হঠাৎ পুরো বাড়ি কেঁপে উঠলে অধিকাংশই হুড়োহুড়ি করে নিচে নেমে আসেন। সবাই এতটাই আতঙ্কিত ছিলেন যে তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে কেউ কেউ হাত–পায়ে আঘাত পেয়েছেন। কপাল ভালো, বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি।

নরসিংদীতে যাঁদের মৃত্যু

ভূমিকম্পের প্রভাবে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নরসিংদী সদর উপজেলায় পার্শ্ববর্তী বহুতল ভবনের নির্মাণসামগ্রী ধসে বাবা-ছেলে দুজন, পলাশ উপজেলায় মাটির ঘরের দেয়াল ধসে একজন ও স্ট্রোক করে একজন এবং শিবপুর উপজেলায় গাছ থেকে পড়ে একজন নিহত হয়েছেন।

সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের গাবতলী এলাকায় ভূমিকম্পের সময় পার্শ্ববর্তী এক বহুতল ভবনের নির্মাণসামগ্রী ছিটকে একতলা ভবনের ছাদ ধসে বাবা-ছেলে নিহত হয়েছেন। দুপুরে ঢাকায় নেওয়ার পথে ছেলের ও বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাবার মৃত্যু হয়। নিহত বাবা-ছেলে হলেন, মো. দেলোয়ার হোসেন (৩৭) ও মো. ওমর ফারুক (৯)। দেলোয়ার হোসেন গাবতলী এলাকার মৃত আবদুল আজিজের ছেলে। বাবা-ছেলের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেন নিহত দেলোয়ারের ভাই জাকির হোসেন।

পলাশ উপজেলার চরসিন্দুর ইউনিয়নের মালিতা গ্রামের পশ্চিমপাড়া এলাকার মাটির ঘরের দেয়াল ধসে নিহত ব্যক্তির নাম কাজম আলী ভূঁইয়া (৭৫)। তিনি ওই এলাকার মৃত বশর উদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে। দুর্ঘটনার সময় দুই নাতি-নাতনিকে নিয়ে ওই মাটির ঘরটিতে অবস্থান করছিলেন তিনি।

পলাশ উপজেলার অন্তত দুটি স্থানে ভূমিকম্পের প্রভাবে মাটিতে ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে একটি পৌর এলাকার দড়িহাওলাপাড়ার বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন পলাশ রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের কাঁচা রাস্তায় ফাটল দেখা দিয়েছে।

পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের কাজীরচর গ্রামের নয়াপাড়ায় ভূমিকম্পের সময় স্ট্রোক করে মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম নাসির উদ্দীন (৬৫)। ওই সময় ঘরের ভেতরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি।

এ ছাড়া শিবপুর উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের আজকিতলা গ্রামে ভূমিকম্পের সময় গাছ থেকে পড়ে গিয়ে ফোরকান মিয়া (৩৫) নামের একজনের মৃত্যু হয়। সন্ধ্যায় নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

ভূমিকম্পে তাঁর মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করে শিবপুর থানার ওসি আফজাল হোসেন জানান, ভূমিকম্পের সময় ফোরকান মিয়া গাছের ওপরে ছিলেন। তীব্র ঝাঁকুনিতে তিনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিচে পড়ে যান। পরিবারের সদস্য ও স্বজনেরা তাঁকে হাসপাতালে নেন। সন্ধ্যায় নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

ভূমিকম্পে মাটিতে ফাটল

পলাশ উপজেলার অন্তত দুটি স্থানে ভূমিকম্পের প্রভাবে মাটিতে ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে একটি পৌর এলাকার দড়িহাওলাপাড়ার বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন পলাশ রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের কাঁচা রাস্তায় ফাটল দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ওই স্কুল অ্যান্ড কলেজটির পরিচালক আরিফ পাঠান জানান, তাঁদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়ার রাস্তা হিসেবে সড়কটি ব্যবহৃত হয়। গতকাল সকালে ভূমিকম্পের সময় তীব্র ঝাঁকুনিতে কাঁচা সড়কটিতে ফাটল দেখা দেয়।

এ ছাড়া পৌর এলাকার লেবুপাড়ার ঘোড়াশাল ডেইরি ফার্ম নামের একটি গরুর খামারে দীর্ঘ ফাটল দেখা দিয়েছে। খামারের আঙিনার মাঝবরাবর এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত একাধিক ফাটল দেখা দেয়। ভূমিকম্পের সময় এসব ফাটল দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মরত শ্রমিকেরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ