‘আমাকে পাঠিয়ো না’, ৯ বছরের শিশু কেন স্কুল ভবন থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করল
Published: 8th, November 2025 GMT
ভারতের রাজস্থান রাজ্যের জয়পুরের এক শান্ত বাড়িতে আজও ৯ বছরের আমাইরার কণ্ঠস্বর শোনা যায়। তার মা এক বছর আগে হোয়াটসঅ্যাপে তার কথা রেকর্ড করে রেখেছিলেন। সেই ক্লিপে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীটিকে কাঁদতে কাঁদতে বলতে শোনা যায়, ‘আমি স্কুলে যেতে চাই না...আমাকে পাঠিয়ো না।’
আমাইরার মা শিবানী মীনা অডিওটি রেকর্ড করে মেয়ের শ্রেণিশিক্ষকের কাছে পাঠিয়েছিলেন। তিনি আশা করেছিলেন, এর মাধ্যমে স্কুল কর্তৃপক্ষ হয়তো তাঁর সন্তানের কষ্টের কারণ সম্পর্কে সতর্ক হবে।
মা শিবানী অভিযোগ করেন, ‘আমি শ্রেণিশিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেছি, ক্লাসের সমন্বয়কের সঙ্গেও গত এক বছরে একাধিকবার কথা বলেছি। কিন্তু তাঁরা হয় আমাকে এড়িয়ে গেছেন, না হয় অগ্রাহ্য করেছেন।’
এক বছর পর গত বছরের ১ নভেম্বর জয়পুরের নামকরা নীরজা মোদি স্কুলের ৯ বছরের এই ছাত্রী স্কুল ভবনের চতুর্থ তলা থেকে লাফ দেয়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
আমাইরার মা–বাবার অভিযোগ, তাঁদের শিশুটির প্রতি যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ বুলিং, টিজিং ও মৌখিক নির্যাতনের বিষয়ে বারবার অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
আমাইরার বাবা বিজয় মীনা অভিভাবক ও শিক্ষকদের একটি বৈঠকের (পিটিএম) কথা স্মরণ করেন। তাঁর ভাষ্য, সেই সময় একদল শিশু আমাইরা ও অন্য একটি ছেলেশিশুকে ইশারা করে দেখাচ্ছিল। আমাইরা লজ্জায় বাবার পেছনে লুকিয়ে পড়েছিল। তিনি পিটিএমে বিষয়টি তুলেছিলেন।
বিজয় মীনা বলেন, ‘শিক্ষক আমাকে বললেন, এটি একটি সহশিক্ষা স্কুল, তাই আমাইরার উচিত সব শিশুর, এমনকি ছেলেদের সঙ্গেও কথা বলা শেখা। আমি শিক্ষককে বলেছিলাম, “আমার মেয়ে যদি ছেলেদের সঙ্গে কথা বলতে না চায়, তবে সেটা তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।”’
তদন্তকারী কর্মকর্তারা শ্রেণিকক্ষের যে সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখেছেন, তাতে দেখা যায়, আমাইরা রেলিং টপকে লাফ দেওয়ার কয়েক মিনিট আগে দুবার তার শিক্ষকের কাছে হেঁটে গিয়েছিল। সে কী বলেছিল, তা জানা যায়নি। কারণ, এই ফুটেজে কোনো শব্দ নেই। তবে সিবিএসই নির্দেশিকা অনুযায়ী, শ্রেণিকক্ষের নজরদারিতে অডিও রেকর্ডিং বাধ্যতামূলক।
আমাইরার কাকা সাহিল বলেন, ‘আমরা উত্তর চাই। আমরা স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাই, পাঁচ হাজারের বেশি শিশু এবং ছয়তলা এই ভবনে নিরাপত্তার জন্য গ্রিল বা জাল (নেট) না রেখে তারা বাড়তি ফ্লোর তৈরির অনুমতি পেল কী করে? এটা একদম প্রাথমিক একটা বিষয়। এতগুলো শিশু যেখানে রয়েছে, সেখানে কীভাবে খোলা ফ্লোর থাকতে পারে? সিবিএসই নির্দেশিকা অনুযায়ী সিসিটিভিতে অডিও নেই কেন? এমনকি ১৫ দিনের সিসিটিভি ফুটেজও পাওয়া উচিত। এটি জয়পুরের একটি নামকরা স্কুল। তারা প্রচুর ফি নেয়, কিন্তু জবাবদিহি কোথায়?’
জয়পুরের ডেপুটি কমিশনার অব পুলিশ রাজর্ষি রাজ বর্মা এনডিটিভিকে বলেন, শিশুটির মা–বাবার জবানবন্দি নিয়েছে পুলিশ। পুরো বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রাজর্ষি রাজ বলেন, ‘আমরা সবকিছু রেকর্ড ও যাচাই–বাছাই করছি। মা–বাবা প্রথমে শোকে পাথর হয়ে কথা বলতে পারছিলেন না। কিন্তু এখন তাঁদের যা যা অভিযোগ আছে, আমরা তা রেকর্ড করে যাচাই–বাছাই ও তদন্ত করব।’
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (প্রাথমিক) রামনিবাস শর্মা নিশ্চিত করেছেন, তাঁর বিভাগ আগামী দু–তিন দিনের মধ্যে পুলিশের উপস্থিতিতে মা–বাবার বক্তব্য রেকর্ড করবে।
‘খারাপ’ শব্দের ব্যবহার প্রসঙ্গে এই কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি তাঁর নজরে আসেনি। তবে কিছু শিশু উল্লেখ করেছে, সেদিন সে স্কুলে যেতে চায়নি। অন্য কিছু শিক্ষার্থী ‘খারাপ’ শব্দ ব্যবহারের অভিযোগ করেছিল।
স্কুল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পাঠকের ভালোবাসাই পুরস্কার
প্রথম আলো ১৯৯৮ সালের ৪ নভেম্বর প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল, সেদিন যে শিশু জন্মগ্রহণ করেছিল, এখন তার বয়স ২৭ বছর। ভাবা যায়! আর ধরা যাক, প্রথম আলো প্রকাশের প্রথম সপ্তাহে ৭ বছরের যে শিশু গোল্লাছুটের ছবির ধাঁধা মিলিয়েছিল, এখন তার ৭ বছরের একটা সন্তান আছে। মজার কথা হলো, এমন পাঠক আমরা পাই, যিনি বলেন, ‘আমি প্রথম আলো পড়ে আসছি সেই প্রথম দিন থেকে, আমার মা–ও পড়তেন। তিনি আজ আর বেঁচে নেই। এখন আমার সন্তানেরা বড় হয়েছে, তারাও এই প্রথম আলো পড়ে। প্রথম আলো তো আমাদের পরিবারেরই একজন। এমনকি আমার নাতিও অনলাইনে প্রথম আলো পড়ছে।’
দেশে কিংবা বিদেশে, ঢাকায় কিংবা চট্টগ্রামে, রাজশাহী কিংবা যশোরে, যেখানেই যাই, কেউ না কেউ এগিয়ে আসেন, হয়তো কেউ ম্যাজিস্ট্রেট, কেউ করপোরেট অফিসার, কেউ এনজিও নেতা, কেউ অধ্যাপনা করছেন; এসে বলেন, ‘আমি তো প্রথম আলো পড়ি, শুধু তা-ই নয়, আমি বন্ধুসভার সদস্য ছিলাম।’ কেউ বলেন, ‘আমি তো আপনাদের জিপিএ–৫ সংবর্ধনায় গিয়েছিলাম।’ বিদেশ থেকে আসেন এমআইটি থেকে পাস করা উদ্যোক্তা বা বিজ্ঞানী, এসে বলেন, ‘আমি তো গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিতাম, সে কারণেই আজ আমি এই জায়গায়।’
মজার কথা হলো, এমন পাঠক আমরা পাই, যিনি বলেন, ‘আমি প্রথম আলো পড়ে আসছি সেই প্রথম দিন থেকে, আমার মা–ও পড়তেন। তিনি আজ আর বেঁচে নেই। এখন আমার সন্তানেরা বড় হয়েছে, তারাও এই প্রথম আলো পড়ে। প্রথম আলো তো আমাদের পরিবারেরই একজন। এমনকি আমার নাতিও অনলাইনে প্রথম আলো পড়ছে।’আনন্দ-বেদনার ঘটনাও ঘটে। বুয়েটের এক শিক্ষার্থী মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিলেন, লেখাপড়া তো অনিশ্চিত হলোই, জীবনই হয়ে গেল এলোমেলো। তাঁকে নিয়ে তাঁর মা আসতেন প্রথম আলো ট্রাস্টের মাদকবিরোধী পরামর্শসভায়। শিক্ষার্থী মাদকমুক্ত হলেন। পাস করে ভালো ক্যারিয়ার গড়তে পারলেন। তাঁর মা এসে আমাদের বলেছিলেন, ‘প্রথম আলোর জন্য দোয়া করি, প্রথম আলো যেন বেহেশতে যায়।’ আবার প্রথম আলো ট্রাস্টের অদম্য মেধাবী বৃত্তি পেয়ে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের মেধাবী সন্তানেরা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা হয়েছেন। অদ্বিতীয়া শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে দরিদ্রতম পরিবারের প্রথম স্নাতক হিসেবে মেয়েরা চট্টগ্রামে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন। তাঁদের কেউ কেউ পড়াশোনা শেষ করে আবার প্যারিস কিংবা মন্ট্রিয়লে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন, চাকরিও করছেন।
কিন্তু সবার আগে প্রথম আলো করতে চেয়েছে সাংবাদিকতা। দলনিরপেক্ষ থাকব, স্বাধীন থাকব, জনগণের পক্ষে থাকব, সত্য কথা সাহসের সঙ্গে বলে যাব—২৭ বছর আগে থেকেই এই ছিল আমাদের নীতি। প্রথম আলো প্রকাশের আগেও গল্প আছে। আমরা আরেকটা সংবাদপত্রে ছিলাম অনেকেই। সেই পত্রিকার উদ্যোক্তা তখনকার সরকারের এমপি নির্বাচিত হলেন। আমরা ভাবলাম, আমরা তো দলনিরপেক্ষ কাগজ করতে চাই। তখনই ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের সঙ্গে দেখা হয়, কথা হয় ডেইলি স্টার–এর সম্পাদক মাহ্ফুজ আনামের মধ্যস্থতায়। আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানকে সব সময় স্মরণ করি। তিনি প্রথম আলোর সম্পাদকীয় বিষয়ে কোনো দিন হস্তক্ষেপ করেননি, কোনো দিনও জানতে চাননি কী ছাপা হবে বা এটা কেন ছাপা হলো। শুধু উৎসাহ দিয়ে গেছেন।
মতিউর রহমান, সম্পাদক, প্রথম আলো