শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে
Published: 7th, October 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাঁর লাইফ সাপোর্ট সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তিনি এখনো করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন।
রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। তাঁর ‘ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক’ হয়েছিল। তাঁর চিকিৎসক মাহবুবুর রহমানের বরাত দিয়ে অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম আজ প্রথম আলোকে জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের লাইফ সাপোর্ট সরিয়ে নেওয়া হয়। তাঁর ফুসফুসের সংক্রমণ কমে এসেছে। তবে এখনো শঙ্কামুক্ত নন তিনি।
অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম গত শুক্রবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশে যাওয়ার পথে গাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে গাড়িচালক একজনের সহায়তায় তাঁকে পার্শ্ববর্তী একটি হাসপাতালে নেন। খবর পেয়ে মাজহারুল ইসলামসহ অন্যরা সেখানে যান। সেখান থেকে তাঁকে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর ‘ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক’ হয়। তাঁর হার্টে রিং পরানো হয়।
গত শনিবার থেকে অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। অক্সিজেন লেভেল কমতে থাকে, ফুসফুসে পানি জমার কারণে পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে রোববার সন্ধ্যায় লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। প্রায় ৪৮ ঘণ্টা লাইফসাপোর্টে ছিলেন তিনি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
৪৯তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন মিতা, এ পর্যন্ত আসতে কত কাঠখড়ই না পোড়াতে হয়েছে তাঁকে
মিতা তখন খুবই ছোট। একদিন শুনলেন, তাঁর বাবা মাহাবুল ইসলাম হারিয়ে গেছেন। বাড়ির সবাই পাগলপ্রায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর জানা গেল মিতার বাবা ঢাকায় আছেন। রিকশা চালাচ্ছেন। বার্তাবাহকের মাধ্যমে মিতাদের চিন্তা করতে নিষেধ করে বলেছেন, ঢাকায় গিয়ে কী করবেন, কোথায় উঠবেন, কিছুই ঠিক ছিল না। তাই কাউকে না জানিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। প্রথম কাপড়চোপড়ের ব্যাগটা মাথার নিচে দিয়ে এখানে-সেখানে ঘুমিয়েছেন। তারপর রিকশা চালানোর সুযোগ পেয়েছেন।
মিতা ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় তাঁর বাবা একবারে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে ফিরে আসেন। তাঁদের বাড়ি বাঘা উপজেলার চকনারায়ণপুর গ্রামে। এই গ্রামের বাজারেই পরে চায়ের দোকান দেন। সঙ্গে বিস্কুট-কলাও রাখেন। সেটি এখনো তাঁদের আয়ের একমাত্র উৎস। তাতে কিছুতেই সংসার চলে না। বাবা তাই বিভিন্ন এনজিওতে ঋণ করেন। মাসে মাসে সেই ঋণের কিস্তি টানেন।
না পাওয়ার আঘাত নিয়ে বড় হওয়াপ্রতিটি ক্লাসেই কিছু সহযোগী বই কিনতে হয়। কোনো দিনই সেই বই একসঙ্গে কেনা হয়নি মিতার। সময় নিয়ে একটার পর একটা করে কিনতেন। এ জন্য ক্লাসের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল ভালো হতো না। শিক্ষকেরা নবম শ্রেণিতে ওঠার পর তাঁর এই সংকটের বিষয়টা বুঝতে পারেন। তখন থেকে তাঁদের সৌজন্য সংখ্যাগুলো সব দিয়ে দিতেন। ওই দুই বছর আর বই নিয়ে সমস্যা হয়নি। মিতার ভাষায়, ‘জীবনে প্রথম সবচেয়ে বড় আঘাত পেয়েছিলাম নবম শ্রেণিতে ওঠার পর।
আমি ফার্স্ট হয়েছি। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই জানে, আমি বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হব। বাড়িতে গিয়ে দেখি বাবার মুখ ভারী। বিজ্ঞান বিভাগে পড়তে অনেক খরচ। আমাদের অত সামর্থ্য নেই।’
এ কথা শুনে মিতার মতো তাঁর শিক্ষকদের মনেও বিষাদের ছায়া নেমে এল। তাঁকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি আশাবাদী ছিলেন বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক সাজিদুল ইসলাম। মানবিক বিভাগের বই নিতে গেলে মিতাকে পরপর তিন দিন তিনি ফিরিয়ে দিলেন, যেন বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়। শেষে মানবিকেই পড়তে হলো মিতাকে।
২০১৭ সালে বাঘার রহমতুল্লাহ বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করলেন মিতা। নম্বর পেলেন ১১৯৪, মানবিক বিভাগ থেকে উপজেলার মধ্যে সর্বোচ্চ। দেশের যেকোনো কলেজে ভর্তি হতে পারতেন কিন্তু এবারও আর্থিক কারণে তাঁকে ভর্তি করে দেওয়া হলো স্থানীয় মোজাহার হোসেন মহিলা ডিগ্রি কলেজে। ২০১৯ সালে জিপিএ-৫ (১১৪১ নম্বর) পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। এবারও উপজেলার মধ্যে মানবিকে সর্বোচ্চ নম্বর মিতার।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময়ও বাধার মুখে পড়লেন মিতা। বললেন, ‘আমার মা (সেলিনা বেগম) অত্যন্ত বুদ্ধিমতী। আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছাটা তিনি জানতেন। তাই আমার এসএসসির স্কলারশিপের ১৬ হাজার টাকা দিয়ে দুটি ছাগল কিনে রেখেছিলেন। আমি জীবনে অনেক ‘‘না’’ শুনেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় যেন আমাকে আরেকটা না শুনতে না হয়, সেই জন্য মা এই ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন।’
এইচএসসির ফল প্রকাশের পর মিতার বাবা রাজশাহীতেই মেয়েকে ভর্তি হতে বললেন। কিন্তু শিক্ষকদের চাপাচাপি আর পরামর্শে মেয়েকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। মিতার শিক্ষকেরা চাঁদা তুলে তাঁর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য সহযোগিতা করলেন।
মিতা বলেন, ‘আমাকে না জানিয়েই তাঁরা এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তখনকার ইউএনও শাহীন রেজাও সহযোগিতা করেছিলেন।’
শিক্ষকের শাড়ি পরে ভাইভা দিয়েছেন মিতা খাতুন