আগামী নির্বাচন হবে ‘জেন্ডার ফ্রেন্ডলি’: সিইসি
Published: 7th, October 2025 GMT
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেছেন, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের পাশাপাশি আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে ‘জেন্ডার ফ্রেন্ডলি (লিঙ্গ সংবেদনশীল)’।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীতে নির্বাচন কমিশন ভবনে নারীনেত্রীদের সঙ্গে আয়োজিত সংলাপে সিইসি এ কথাগুলো বলেন। কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজের সঞ্চালনায় এতে চার নির্বাচন কমিশনার, নারী প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
সংলাপে শুভেচ্ছা বক্তব্যে সিইসি নাসির উদ্দীন সমাজে নারী প্রতিনিধিদের ভূমিকা নিয়ে প্রশংসা করেন। এ সময় বিগত সময়ে মানুষ নির্বাচনপদ্ধতির ওপর আস্থা হারিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিশেষত নারী ভোটারদের সংখ্যা কম ছিল। আমরা এবার যেটা করতে পেরেছি, নারী ভোটারদের সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়েছে।’
সিইসি বলেন, নারী ভোটারদের সংখ্যা পুরুষ ভোটারের চেয়ে ৩০ লাখ কম ছিল। এটি এখন ১৮ লাখে নেমে এসেছে। তিনি দাবি করেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর মানুষ ভোটার হওয়ার বিষয়ে সচেতন হয়েছে।
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে আয়োজনের বিষয়ে নাসির উদ্দীন বলেন, ‘ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল (অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য) যেমন, এর সঙ্গে আমি আরেকটা অ্যাড (যোগ) করব, জেন্ডার ফ্রেন্ডলি ইলেকশন (লিঙ্গ সংবেদনশীল নির্বাচন)। এটা আমি আমার তরফ থেকে অ্যাড করলাম আজকে।’
নারী আসনে সরাসরি ভোটসহ বিভিন্ন প্রস্তাবসংলাপে নারী প্রতিনিধিরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারী প্রার্থীদের সরাসরি ভোট, ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে চাপ প্রয়োগ, নারী ভোটার ও প্রার্থীর নিরাপত্তা, নির্বাচনে কালোটাকার ব্যবহার রোধ, নির্বাচনী আচরণবিধি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ, দুর্গম এলাকার ভোটারদের জন্য পোস্টাল ব্যালটে ভোট গ্রহণসহ বিভিন্ন প্রস্তাব দেন।
যৌক্তিক প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে সিইসি বলেন, ‘যেসব প্রস্তাব বাস্তবায়নে কারও কাছে যাওয়া লাগবে না, সেগুলো আমরাই দেখব। তবে আজকেই শেষ নয়। আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী আমরা যাতে সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেতে পারি, তার জন্য আপনাদের আমাদের পাশে চাই।’
এ সময় নির্বাচনে নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতে রাজনৈতিক দলগুলো থেকে আশানুরূপ সাড়া মেলেনি বলে অভিযোগ করেন ‘নিজেরা করি’র সমন্বয়ক খুশী কবির। তিনি বলেন, ‘নারীদের জন্য আমরা সরাসরি নির্বাচন এবং সংরক্ষিত আসন চাচ্ছি। ডাইরেক্টলি ইলেক্টেড (সরাসরি নির্বাচিত) হলে তাঁরা কিন্তু সংসদে একটা ভূমিকা রাখতে পারবে। কারণ, তাঁরা সরাসরি ভোটে নির্বাচিত। নির্বাচন কমিশন বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেবে, এটা আমরা মনে করি।’
নারীদের জন্য আমরা সরাসরি নির্বাচন এবং সংরক্ষিত আসন চাচ্ছি। ডাইরেক্টলি ইলেক্টেড (সরাসরি নির্বাচিত) হলে তাঁরা কিন্তু সংসদে একটা ভূমিকা রাখতে পারবেখুশী কবির, সমন্বয়ক, নিজেরা করিবাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভানেত্রী ফওজিয়া মোসলেম নারীবিদ্বেষী, সাম্প্রদায়িক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধিতাকারীদের প্রার্থিতার সুযোগ না দেওয়ার দাবি জানান। পাশাপাশি নারীদের প্রতীক বরাদ্দের ক্ষেত্রেও সচেতনতা অবলম্বনের আহ্বান জানান তিনি।
জাতীয় সংসদের আসনসংখ্যা বাড়িয়ে ৬০০ করার প্রস্তাব দিয়ে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হক বলেন, প্রতিটি আসনে একটি সাধারণ আসন থাকবে, সেখানে নারী বা পুরুষ যে কেউ প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে। আর একটি আসন থাকবে, যেটা শুধু নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।
নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে নারীদের ওপর সহিংসতার হার বেড়ে যায় বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। আগামী নির্বাচনের আগে যাতে নারীদের ওপর সহিংসতার পুনরাবৃত্তি না হয়, সেই দাবি জানান তিনি।
মালেকা বানু বলেন, ‘নারীদের বিরুদ্ধে এমন বিদ্বেষী প্রচার–প্রচারণা করা হয়, যেখানে নারীরা অনেক বেশি হুমকিতে থাকেন। এবারও এই পরিস্থিতির অবতারণা হবে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।’ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নির্বাচন কমিশনকে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক মাহা মির্জা বলেন, সাভার, আশুলিয়া ও টঙ্গীর মতো শিল্পাঞ্চলে বসবাসরত শ্রমিকেরা অস্থায়ী ঠিকানার কারণে অনেক সময় ভোটার তালিকায় যুক্ত হতে পারে না। এই শ্রমিকদের তালিকায় যুক্ত করার বিষয়ে জোর দেন তিনি।
পোস্টাল ভোটের আওতায় দুর্গম এলাকার মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেন স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সদস্য ইলিরা দেওয়ান। তিনি বলেন, পার্বত্য এলাকার অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট নেই। অনেকে জানে না কবে ভোট হবে। কাজেই নির্বাচন কমিশনকে তাদের প্রচারে শহরের পাশাপাশি দুর্গম এলাকাকেও গুরুত্ব দিতে হবে।
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নাগরিকদের ঘরে বসে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান বাংলাদেশ সোসাইটি ফর দ্য চেঞ্জ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি নেক্সাসের (বি-স্ক্যান) সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব। তিনি বলেন, ‘ইসি জেন্ডার অ্যান্ড ডিজঅ্যাবিলিটি ফ্রেন্ডলি (লিঙ্গ ও প্রতিবন্ধী সংবেদনশীল) নির্বাচন করবে, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
সংলাপে আরও বক্তব্য দেন ইন্টার নিউজের বাংলাদেশ প্রতিনিধি শামীম আরা শিউলী, নারীপক্ষের সভানেত্রী গীতা দাস, প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের (ইউপিএল) পরিচালক মাহরুখ মহিউদ্দিন, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের পরিচালক শাহনাজ সুমী, নারীনেত্রী নাসরিন বেগম, এএলআরডির উপপরিচালক রওশন জাহান মনি, আইনজীবী সীমা জহুর, উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিউর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি নাসরিন ফাতেমা আওয়াল, প্রতিবন্ধী অধিকারকর্মী মিষ্টি আশরাফুন নাহার প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রস ত ব দ র জন য উদ দ ন
এছাড়াও পড়ুন:
লিও তলস্তয়ের গ্রামে
আমি এখন যে গ্রামে এসেছি, সেই গ্রামে ১৮২৮ সালে লেখক লিও তলস্তয় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। রাশিয়ার ইয়াস্নায়া পলিয়ানা নাম গ্রামটির। এটি আসলে তাঁদের পারিবারিক জমিদারির একটি অংশ। এখানে তিনি জীবনের অনেকখানি সময় কাটিয়েছেন। এখানেই লিখেছেন অমর উপন্যাস ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’, ‘আনা কারেনিনা’ এবং অসংখ্য গল্প।
তলস্তয়কে আইন পড়তে কাজান শহরে পাঠানো হয়েছিল কিন্তু পড়তে তাঁর ভালো লাগেনি। জমিদারি ছিল, তাই রোজগারের চিন্তাও করতে হয়নি। মাঝখানে সন্তানদের পড়ালেখার জন্য আট বছর মস্কোতে একটি বাড়ি কিনে বসবাস করেছিলেন।
লিও তলস্তয় শেষ জীবনে আধ্যাত্মিকতার দিকে ঝুঁকেছিলেন এবং খুব সাধারণ জীবনযাপন করতেন। একসময় গৃহত্যাগ করেছিলেন। ১৯১০ সালে ৮২ বছর বয়সে আস্তাপোভো রেলস্টেশনে প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যে একাকী, আত্মীয়, বন্ধু থেকে দূরে, নীরবে তিনি দেহত্যাগ করেন। এরপর তাঁকে ইয়াস্নায়া পলিয়ানায় এনে সমাহিত করা হয়।
ইয়াস্নায়া পলিয়ানা গ্রামে আমি যখন পৌঁছালাম, তখন রোদ ঝলমল করছে। গত কয়েক দিন খুব বৃষ্টি পড়েছে মস্কো শহরে। মস্কো থেকে আমাকে পাড়ি দিতে হয়েছে ২২০ কিলোমিটার। সরাসরি মস্কো থেকে তলস্তয়ের গ্রামে আসার কোনো ট্রেন বা বাস নেই। আমাকে ট্রেনে করে আসতে হয়েছে প্রথমে তুলা শহরে৷
ট্রেনে করে আসার পথে রাশিয়ার সবুজ গ্রামের যে রূপ আমি দেখেছি, তার তুলনা হয় না। পথের পাশে ফুটে আছে হলুদ বুনো ফুল আর হঠাৎ হঠাৎ করে একটা বা দুটো দোচালা বাড়ি। মাঝে পড়ে গেল একটা নদী, আবার এসে গেল ঘন সবুজ জঙ্গল। এমন অসামান্য প্রকৃতি যে দেশের আছে, সে দেশের প্রতি এমনিতেই মায়া জন্মে যায়।
রাশিয়ার ইয়াস্নায়া পলিয়ানা গ্রামে ১৮২৮ সালে লেখক লিও তলস্তয় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এটি তাঁদের পারিবারিক জমিদারির একটি অংশ। এখানে তলস্তয় জীবনের অনেকখানি সময় কাটিয়েছেন। এখানেই লিখেছেন অমর উপন্যাস ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’, ‘আনা কারেনিনা’।মাঝখানে ধূসর লম্বা পথ আর দুপাশে ঘন বনানী