৫ দিন ধরে অবস্থান কর্মসূচিতে জাবির চাকরিচ্যুত ৩ কর্মচারী
Published: 7th, October 2025 GMT
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ফজিলতুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষের বাসায় কাজ না করায় চাকরিচ্যুত তিন কর্মচারী চাকরি ফিরে পেতে পাঁচদিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত পঞ্চমদিনের মত ওই হলের সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা।
আরো পড়ুন:
বাসের ধাক্কায় জাবি শিক্ষার্থী আহত, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা
ছুটি শেষে জাবি শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্নে ফেরা নিশ্চিতে কন্ট্রোল রুম চালু
অভিযুক্ত ফজিলতুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষক এবং প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি।
ভুক্তভোগী তিন কর্মচারী হলেন, ফজিলতুন্নেসা হলের ডায়নিং অ্যাটেন্ডেন্ট (মহিলা) মিরা রানী রায়, চম্পা এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মী (মহিলা) মোছা.
জানা যায়, তারা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে গত দেড় বছর ধরে হলটিতে কর্মরত ছিলেন। গত ২৮ আগস্ট তাদের চাকরিচ্যুত করে এসব পদে নতুন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এবিএম আজিজুর রহমান। তিনি জানান, “হল প্রাধ্যক্ষের (নজরুল ইসলাম) আবেদনের প্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
ভুক্তভোগী তিন কর্মচারী অভিযোগ করে বলেন, ২০২৩ সালে ওয়ার্ল্ড সিকিউরিটি সল্যুশন নামক আউটসোর্সিং কোম্পানির আওতায় তারা ফজিলতুন্নেসা হলে নিয়োগ পান। নিয়োগের পর থেকে তারা স্বাভাবিকভাবে কাজ করে আসছিলেন। তবে গণ-অভ্যুত্থানের পর হলটিতে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই হলের কাজের পাশাপাশি তার বাসায় গিয়েও আনুষঙ্গিক কাজ করার জন্য বলা হয়।
তবে কর্মচারীদের অনেকেই প্রাধ্যক্ষের বাসায় কাজ করতে গেলেও ওই তিনজন অস্বীকৃতি জানান। গত এপ্রিল মাসে প্রাধ্যক্ষের বাসায় কাজ করতে না গেলে চাকরিচ্যুত করা হবে বলেও তাদের হল প্রশাসন থেকে হুমকি দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে বিষয়টি ক্যাম্পাসের সাংবাদিকদের মধ্যে জানাজানি হলে হলের এক ওয়ার্ডেনের মাধ্যমে সমাধান হয়।
নতুন করে তাদের গত ২৮ আগস্ট চাকরিচ্যুত করা হয়। এরপর চাকরি ফিরে পেতে গত ১ অক্টোবর থেকে তারা হলের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। তবে গত শুক্রবার ও শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় সাপ্তাহিক বন্ধ থাকা তাদের অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি।
ভুক্তভোগী ওই তিন কর্মচারী বলেন, আমাদের যে পদে নিয়োগ হয়েছে আমরা সে পদেই কাজ করব। হলের সব কাজ আমরা করতে আগ্রহী। কিন্তু হলের প্রাক্ষের বাসায় কেন কাজ করতে যাব। হলের প্রাধ্যক্ষের বাসায় আমরা কাজ করতে যেতে রাজি না হওয়ার পর থেকেই আমাদের হুমকি দিয়ে রাখছিল। পরে হঠাৎ শুনি আমাদের চাকরি নেই।
তারা বলেন, এই চাকরির ওপর আমাদের সংসার চলে। এভাবে হঠাৎ করে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে আমরা এখন খাব কি? বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যারের অফিসে আমরা এটার সঠিক বিচারের দাবি জানিয়ে অভিযোগ দিয়েছি।
তাদের অভিযোগ, ওই তিনজনকে বাদ দিয়ে অধ্যাপক নজরুল ইসলামের বাসায় আগে থেকে যারা কাজ করতেন, তাদের হল কর্মচারী হিসেবে নতুন করে ঢোকানো হয়েছে।
মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, ফজিলতুন্নেসা হলের সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে আছে ওই তিন কর্মচারী। একজনের প্ল্যাকার্ডে লেখা- ‘বিনা কারণে চাকরিচ্যুত হওয়া মানি না’, ‘আমরা হারানো চাকরি ফেরত চাই’, ‘আমরা হলে কাজ করতে এসেছি, প্রাধ্যক্ষ নজরুল স্যারের বাসায় কাজ করতে নয়।’
এ বিষয়ে ওয়ার্ল্ড সিকিউরিটি সল্যুশন নামক আউটসোর্সিং কোম্পানির ডিরেক্টর (অপারেশন) মিনারুল ইসলাম বলেন, “হলে তাদের কাজ করতে দেওয়া হয়েছে। তবে তারা কাজ না করে রাজনীতি, আন্দোলন করে। সেজন্য তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।”
তারা কোন ধরনের কাজ করেননি জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মূলত ওই কর্মচারীরা হলের প্রাধ্যক্ষের বাসায় কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। সেজন্য তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটাই আসলে প্রধান কারণ। হলের কর্মচারীরা প্রাধ্যক্ষের বাসায় কেন কাজ করবে সেটা আসলে আমারও প্রশ্ন।”
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে ফজিলতুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নজরুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
ঢাকা/আহসান/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চ কর র ব স য় ক জ করত চ কর চ য ত কর র ল ইসল ম আম দ র র চ কর হল র স ওই ত ন
এছাড়াও পড়ুন:
সর্বজনীন পেনশনের সুরক্ষা স্কিমে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দেওয়া যাবে
সরকারের সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির (স্কিম) সুরক্ষা স্কিমে সর্বোচ্চ চাঁদার হার ৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। এই স্কিম মূলত রিকশাচালক, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে ও তাঁতির মতো স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য। তাঁদের মধ্যে নিম্ন আয়ের পাশাপাশি উচ্চ আয়ের পেশাজীবীও রয়েছেন। তাই সুরক্ষা স্কিমের আওতার মধ্যে আছে, এমন উচ্চ আয়ের মানুষকে আকৃষ্ট করতে চাঁদার সীমা বাড়ানো হয়েছে। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
আজ সোমবার জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের পরিচালনা পর্ষদের তৃতীয় সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভাটি বাংলাদেশ সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টার সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। সভায় আলোচনার বিষয় উপস্থাপন করেন জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান জনাব মো. মহিউদ্দীন খান। সভায় উপস্থিত ছিলেন অর্থ বিভাগের সচিব ও পেনশন কর্তৃপক্ষের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা।
সভায় আরও যা সিদ্ধান্ত হয়
সভায় আউটসোর্সিং সেবাকর্মীদের পেনশন স্কিমে সম্পৃক্ত করার কথা জানানো হয়। আউটসোর্সিং সেবাকর্মী হলেন তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে যে কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। অর্থ বিভাগের আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় সেবা গ্রহণ নীতিমালার আওতায় আউটসোর্সিং সেবাকর্মীদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হয়েছে। এখন থেকে আউটসোর্সিং সেবাকর্মীরা প্রগতি স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। প্রগতি স্কিমের সর্বনিম্ন মাসিক চাঁদার হার এক হাজার টাকা। তবে আউটসোর্সিং সেবাকর্মীদের জন্য পেনশন সেবা সহজ করতে সর্বনিম্ন মাসিক চাঁদার হার পাঁচ শ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সামর্থ্য অনুযায়ী তাঁরা চাইলে উচ্চতর স্তরেও অংশ নিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে পুরো চাঁদার অর্থ কর্মীর পক্ষ থেকেই জমা দিতে হবে। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কোনো অবদান থাকবে না।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সভায় সর্বজনীন পেনশন স্কিমের ইসলামিক সংস্করণ চালুর বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এ–সংক্রান্ত সর্বোত্তম চর্চা (বেস্ট প্র্যাকটিস) পর্যালোচনা করে ধারণাপত্র প্রস্তুতের পর এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ ছাড়া সর্বজনীন পেনশন স্কিমে বিমা–সুবিধা চালুর বিষয়েও ধারণাপত্র তৈরির কথা বলা হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সভায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মুনাফা ঘোষণা করা হয়। ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ৩ লাখ ৭৩ হাজার চাঁদাদাতার জমা করা অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৮৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মুনাফা হয়েছে ১৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ, গত অর্থবছরে সর্বোচ্চ মুনাফার হার হয়েছে ১১ দশমিক ৬১ শতাংশ।