জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ফজিলতুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষের বাসায় কাজ না করায় চাকরিচ্যুত তিন কর্মচারী চাকরি ফিরে পেতে পাঁচদিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।

মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত পঞ্চমদিনের মত ওই হলের সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা।

আরো পড়ুন:

বাসের ধাক্কায় জাবি শিক্ষার্থী আহত, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

ছুটি শেষে জাবি শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্নে ফেরা নিশ্চিতে কন্ট্রোল রুম চালু

অভিযুক্ত ফজিলতুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষক এবং প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি।

ভুক্তভোগী তিন কর্মচারী হলেন, ফজিলতুন্নেসা হলের ডায়নিং অ্যাটেন্ডেন্ট (মহিলা) মিরা রানী রায়, চম্পা এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মী (মহিলা) মোছা.

সোমা।

জানা যায়, তারা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে গত দেড় বছর ধরে হলটিতে কর্মরত ছিলেন। গত ২৮ আগস্ট তাদের চাকরিচ্যুত করে এসব পদে নতুন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এবিএম আজিজুর রহমান। তিনি জানান, “হল প্রাধ্যক্ষের (নজরুল ইসলাম) আবেদনের প্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

ভুক্তভোগী তিন কর্মচারী অভিযোগ করে বলেন, ২০২৩ সালে ওয়ার্ল্ড সিকিউরিটি সল্যুশন নামক আউটসোর্সিং কোম্পানির আওতায় তারা ফজিলতুন্নেসা হলে নিয়োগ পান। নিয়োগের পর থেকে তারা স্বাভাবিকভাবে কাজ করে আসছিলেন। তবে গণ-অভ্যুত্থানের পর হলটিতে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই হলের কাজের পাশাপাশি তার বাসায় গিয়েও আনুষঙ্গিক কাজ করার জন্য বলা হয়।

তবে কর্মচারীদের অনেকেই প্রাধ্যক্ষের বাসায় কাজ করতে গেলেও ওই তিনজন অস্বীকৃতি জানান। গত এপ্রিল মাসে প্রাধ্যক্ষের বাসায় কাজ করতে না গেলে চাকরিচ্যুত করা হবে বলেও তাদের হল প্রশাসন থেকে হুমকি দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে বিষয়টি ক্যাম্পাসের সাংবাদিকদের মধ্যে জানাজানি হলে হলের এক ওয়ার্ডেনের মাধ্যমে সমাধান হয়।

নতুন করে তাদের গত ২৮ আগস্ট চাকরিচ্যুত করা হয়। এরপর চাকরি ফিরে পেতে গত ১ অক্টোবর থেকে তারা হলের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। তবে গত শুক্রবার ও শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় সাপ্তাহিক বন্ধ থাকা তাদের অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি।

ভুক্তভোগী ওই তিন কর্মচারী বলেন, আমাদের যে পদে নিয়োগ হয়েছে আমরা সে পদেই কাজ করব। হলের সব কাজ আমরা করতে আগ্রহী। কিন্তু হলের প্রাক্ষের বাসায় কেন কাজ করতে যাব। হলের প্রাধ্যক্ষের বাসায় আমরা কাজ করতে যেতে রাজি না হওয়ার পর থেকেই আমাদের হুমকি দিয়ে রাখছিল। পরে হঠাৎ শুনি আমাদের চাকরি নেই।

তারা বলেন, এই চাকরির ওপর আমাদের সংসার চলে। এভাবে হঠাৎ করে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে আমরা এখন খাব কি? বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যারের অফিসে আমরা এটার সঠিক বিচারের দাবি জানিয়ে অভিযোগ দিয়েছি।

তাদের অভিযোগ, ওই তিনজনকে বাদ দিয়ে অধ্যাপক নজরুল ইসলামের বাসায় আগে থেকে যারা কাজ করতেন, তাদের হল কর্মচারী হিসেবে নতুন করে ঢোকানো হয়েছে।

মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, ফজিলতুন্নেসা হলের সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে আছে ওই তিন কর্মচারী। একজনের প্ল্যাকার্ডে লেখা- ‘বিনা কারণে চাকরিচ্যুত হওয়া মানি না’, ‘আমরা হারানো চাকরি ফেরত চাই’, ‘আমরা হলে কাজ করতে এসেছি, প্রাধ্যক্ষ নজরুল স্যারের বাসায় কাজ করতে নয়।’

এ বিষয়ে ওয়ার্ল্ড সিকিউরিটি সল্যুশন নামক আউটসোর্সিং কোম্পানির ডিরেক্টর (অপারেশন) মিনারুল ইসলাম বলেন, “হলে তাদের কাজ করতে দেওয়া হয়েছে। তবে তারা কাজ না করে রাজনীতি, আন্দোলন করে। সেজন্য তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।”

তারা কোন ধরনের কাজ করেননি জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মূলত ওই কর্মচারীরা হলের প্রাধ্যক্ষের বাসায় কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। সেজন্য তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটাই আসলে প্রধান কারণ। হলের কর্মচারীরা প্রাধ্যক্ষের বাসায় কেন কাজ করবে সেটা আসলে আমারও প্রশ্ন।”

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে ফজিলতুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নজরুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

ঢাকা/আহসান/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চ কর র ব স য় ক জ করত চ কর চ য ত কর র ল ইসল ম আম দ র র চ কর হল র স ওই ত ন

এছাড়াও পড়ুন:

হাত নেই, পা দিয়ে লিখেই স্নাতকোত্তর পাস, করেন ফ্রিল্যান্সিং

জন্ম থেকেই দুই হাত নেই তাঁর। দুই পায়ের সাহায্যে লেখেন। আর এভাবেই স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন তিনি। এখন ঘরে বসেই অনলাইনে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে আয় করছেন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা উদ্যমী এই তরুণের নাম মো. আলী (২৬)। তাঁর বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়া ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চল হরিদার ঘোনা গ্রামে।

আলীর বাবা আমিন শরীফ একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং মা শামসুন্নাহার গৃহিণী। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে আলী সবার ছোট। এ বছর তিনি চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে এমবিএ পাস করেছেন।

মো. আলীর শিক্ষাজীবনের হাতেখড়ি হয় স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ২০১৫ সালে বড়হাতিয়ার বি জি সেনেরহাট উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন তিনি। ২০১৭ সালে উপজেলার মোস্তাফিজুর রহমান ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর সাতকানিয়া সরকারি কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগে (স্নাতক) ভর্তি হন। ২০২৪ সালে স্নাতক শেষ করেন। এরপর স্নাতকোত্তর করতে চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগে ভর্তি হন তিনি।

সম্প্রতি সরেজমিন বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, আধা পাকা একটি মাঝারি আকারের ঘরে মা–বাবার সঙ্গে বসবাস করছেন আলী। তাঁর একমাত্র ভাই প্রবাসে রয়েছেন, আর দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। বাড়ির ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, আলী দুই পায়ের সাহায্যে লেখাপড়া, খাওয়াদাওয়াসহ সব কাজ করছেন। এসব কাজে কারও সাহায্যের তেমন প্রয়োজন হয় না।

২০১৫ সালে বড়হাতিয়ার বি জি সেনেরহাট উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন তিনি। ২০১৭ সালে উপজেলার মোস্তাফিজুর রহমান ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর সাতকানিয়া সরকারি কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগে (স্নাতক) ভর্তি হন। ২০২৪ সালে স্নাতক শেষ করেন। এরপর স্নাতকোত্তর করতে চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগে ভর্তি হন তিনি।

পরিবারের সদস্যরা জানান, কলেজে পড়ার সময় ২০১৭ সালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলীকে একটি কম্পিউটার উপহার দেন। করোনাভাইরাসের মহামারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে উপহার হিসেবে পাওয়া কম্পিউটারটি কাজে লাগান আলী। অনলাইনে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন তিনি। ২০২১ সালে অনলাইনে প্রথমবারের মতো ৯ হাজার টাকা আয় করেন আলী। এতে এ কাজে আলীর আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। উঠেপড়ে লাগেন ফ্রিল্যান্সিংয়ে। পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়মিত এই কাজ চালিয়ে গেছেন আলী। তিনি জানান, ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ছয় হাজার মার্কিন ডলার আয় করেছেন তিনি।

আলী সব সময় নিজের কাজ নিজেই সামলে নেওয়ার চেষ্টা করে। সুযোগ পেলে আমার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ও আমাকে সাহায্য করে আসছে। তার ইচ্ছা, একটি সরকারি চাকরি করার। সরকার যেন তার সেই ইচ্ছা পূরণ করে।আমিন শরীফ, আলীর বাবা

আলীর প্রতিবেশীরা জানান, শারীরিক অক্ষমতা থাকলেও আলীর অদম্য ইচ্ছা ও দৃঢ় মনোবল তাঁকে এত দূর নিয়ে এসেছে। শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য আলী অনুপ্রেরণা। জানতে চাইলে মো. আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার জীবনে মা–বাবা ও শিক্ষকদের অবদান বলে শেষ করা যাবে না। তাঁরা কখনো আমার প্রতি বিরক্ত হননি। আমাকে বোঝা মনে করেননি। সব সময় স্নেহ–মমতা দিয়ে আমার পাশে থেকেছেন। আমাকে সাহস দিয়েছেন, অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। আমার বন্ধুরাও আমাকে সব ধরনের সহযোগিতা করেছে।’

উচ্চশিক্ষার মূল্যায়ন হিসেবে নিজের জন্য একটি সরকারি চাকরির দাবি জানিয়ে মো. আলী আরও বলেন, ‘আমার সমাজ ও দেশের প্রতি আমার দায় অনেক। যোগ্যতা অনুযায়ী একটি সরকারি চাকরি পেলে মানুষকে সেবা দিয়ে সেই দায় কিছুটা শোধ করতে পারব। দেশে আমার মতো যাঁরা আছেন, তাঁরাও অনুপ্রাণিত হবেন।’

আলীর বাবা আমিন শরীফ জানান, ‘আলী সব সময় নিজের কাজ নিজেই সামলে নেওয়ার চেষ্টা করে। সুযোগ পেলে আমার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ও আমাকে সাহায্য করে আসছে। তার ইচ্ছা, একটি সরকারি চাকরি করার। সরকার যেন তার সেই ইচ্ছা পূরণ করে।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য মামুনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আলী খুবই ভালো ছেলে। এলাকার সবার সঙ্গে তার সুসম্পর্ক রয়েছে। যেকোনো কাজ সে দক্ষতার সঙ্গে করতে পারে। তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করছি।’

লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই হাত ছাড়াও আলী যে প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে চলছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তাঁর কৃতিত্ব একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তাঁর সরকারি চাকরির জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হাত নেই, পা দিয়ে লিখেই স্নাতকোত্তর পাস, করেন ফ্রিল্যান্সিং