সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক ও রেলযোগাযোগের দুরবস্থায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আজকে দেখুকক্কা (দেখেন) সিলেট থাকি ঢাকা যাইতে কত সময় লাগে। সাইফুর রহমানে (সাবেক অর্থমন্ত্রী) করি দিছলা। ৩ ঘণ্টা, ৪ ঘণ্টায় সিলেট থাকি ঢাকা আইছি। ১৭ বছরে এমন উন্নয়ন হইছে, উন্নয়নের মহাসড়কে এখন ঢাকা থাকি সিলেট আইতে ১২ ঘণ্টা লাগে, ১৫ ঘণ্টাও লাগে। এই অবস্থা চলতে দেওয়া যায় না।’

আজ মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত সিলেট নগরের মেজরটিলা এলাকায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা সংবলিত লিফলেট বিতরণ কর্মসূচির পর আয়োজিত এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। দ্রুত সংস্কার কাজ শুরু না হলে সিলেটবাসীকে নিয়ে কঠোর আন্দোলনেরও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বলেন, ‘চিটাগাং সুন্দর করবা, উত্তরবঙ্গে ব্রিজ অইব আর সিলেটরে যা খুশি করবা, ইটা আর হতে দেওয়া যায় না। সিলেটের কথা আইলেই অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ, সিলেটের কথা আইলেই সরকারের কাছে টেকা নাই। তো হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ কইরা এইসব ব্রিজ, কালভার্ট অন্যান্য অঞ্চলে হয় কীভাবে? চিটাগাং স্বর্গ বানাউক্কা, আমার কোনো আপত্তি নাই, আরও অঞ্চলেও হোক, খুশি হইমু। কিন্তু আমরা সিলেটিরা বাদ যাব কেন?’

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দুরবস্থার প্রসঙ্গ টেনে আরিফুল হক বলেন, ‘আজকে একটা অসুস্থ রোগী নিয়া যাওয়া যায় না, রোগী রাস্তায় মারা যাইতাছে। ট্রেনের অবস্থা সেইম (একই)। সারা বাংলাদেশে নতুন নতুন ট্রেন, কম্পার্টমেন্ট (বগি)। সিলেটে টাডা (বজ্রপাত) পড়ছে। রেল কর্তৃপক্ষ এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয়রে কই, রাস্তা পুনর্নিমাণ হওয়ার আগপর্যন্ত স্পেশাল দুইটা ট্রেন বরাদ্দ করা হোক ঢাকা-সিলেটে এবং নতুন কম্পার্টমেন্ট দেওয়া হোক। এখানে (সিলেট রেলস্টেশন) যারা আছে, তারা কম্পিউটারে আগে টিকিট নেয়গি, পরে বেশি দামে বেচত চায়। এনতান (তাদের) পেছনে আমরা জনগণ থাকমু, ইনশা আল্লাহ। তানতানরেও ধরমু। পাবলিক ডিমান্ড না মানলে আন্দোলন হইব এবার।’

সিলেটের সাবেক মেয়র বলেন, ‘সড়ক পথ, রেলপথের দুরাবস্থার সুযোগ পাইয়া এখন বিমানে ৩ হাজার টাকার টিকিট ১২ হাজার টাকা করতাছে। এমন মোরগা পাইছে আমরার সিলেটি হকলরে, যা খুশি তা–ই করতাছে। বিমান কর্তৃপক্ষ যদি এইটার সমাধানে ব্যবস্থা না করে, তানতান বিরুদ্ধেও আমরা জনগণ ব্যবস্থা নিমু। আমরার রাস্তা দিতে হইব ঠিক করি, বিমানের ভাড়া কমাইতে হইব।’

আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, বিএনপি যাতে সংসদে যেতে না পারে, সরকার গঠন করতে না পারে, সে জন্য অনেক ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত চলছে। তিনি সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দখলদারদের থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের দূরে থাকতে বলেন এবং দলীয় স্বার্থে তাঁদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির উপদেষ্টা শুকুর আহমদ, যুগ্ম সম্পাদক ইশতিয়াক আহমদ সিদ্দিকী, মহানগর বিএনপির সহসভাপতি সাদিকুর রহমান, কৃষক দলের সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

৪৯তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন মিতা, এ পর্যন্ত আসতে কত কাঠখড়ই না পোড়াতে হয়েছে তাঁকে

মিতা তখন খুবই ছোট। একদিন শুনলেন, তাঁর বাবা মাহাবুল ইসলাম হারিয়ে গেছেন। বাড়ির সবাই পাগলপ্রায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর জানা গেল মিতার বাবা ঢাকায় আছেন। রিকশা চালাচ্ছেন। বার্তাবাহকের মাধ্যমে মিতাদের চিন্তা করতে নিষেধ করে বলেছেন, ঢাকায় গিয়ে কী করবেন, কোথায় উঠবেন, কিছুই ঠিক ছিল না। তাই কাউকে না জানিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। প্রথম কাপড়চোপড়ের ব্যাগটা মাথার নিচে দিয়ে এখানে-সেখানে ঘুমিয়েছেন। তারপর রিকশা চালানোর সুযোগ পেয়েছেন।

মিতা ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় তাঁর বাবা একবারে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে ফিরে আসেন। তাঁদের বাড়ি বাঘা উপজেলার চকনারায়ণপুর গ্রামে। এই গ্রামের বাজারেই পরে চায়ের দোকান দেন। সঙ্গে বিস্কুট-কলাও রাখেন। সেটি এখনো তাঁদের আয়ের একমাত্র উৎস। তাতে কিছুতেই সংসার চলে না। বাবা তাই বিভিন্ন এনজিওতে ঋণ করেন। মাসে মাসে সেই ঋণের কিস্তি টানেন।

না পাওয়ার আঘাত নিয়ে বড় হওয়া

প্রতিটি ক্লাসেই কিছু সহযোগী বই কিনতে হয়। কোনো দিনই সেই বই একসঙ্গে কেনা হয়নি মিতার। সময় নিয়ে একটার পর একটা করে কিনতেন। এ জন্য ক্লাসের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল ভালো হতো না। শিক্ষকেরা নবম শ্রেণিতে ওঠার পর তাঁর এই সংকটের বিষয়টা বুঝতে পারেন। তখন থেকে তাঁদের সৌজন্য সংখ্যাগুলো সব দিয়ে দিতেন। ওই দুই বছর আর বই নিয়ে সমস্যা হয়নি। মিতার ভাষায়, ‘জীবনে প্রথম সবচেয়ে বড় আঘাত পেয়েছিলাম নবম শ্রেণিতে ওঠার পর।

আমি ফার্স্ট হয়েছি। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই জানে, আমি বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হব। বাড়িতে গিয়ে দেখি বাবার মুখ ভারী। বিজ্ঞান বিভাগে পড়তে অনেক খরচ। আমাদের অত সামর্থ্য নেই।’

এ কথা শুনে মিতার মতো তাঁর শিক্ষকদের মনেও বিষাদের ছায়া নেমে এল। তাঁকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি আশাবাদী ছিলেন বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক সাজিদুল ইসলাম। মানবিক বিভাগের বই নিতে গেলে মিতাকে পরপর তিন দিন তিনি ফিরিয়ে দিলেন, যেন বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়। শেষে মানবিকেই পড়তে হলো মিতাকে।

২০১৭ সালে বাঘার রহমতুল্লাহ বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করলেন মিতা। নম্বর পেলেন ১১৯৪, মানবিক বিভাগ থেকে উপজেলার মধ্যে সর্বোচ্চ। দেশের যেকোনো কলেজে ভর্তি হতে পারতেন কিন্তু এবারও আর্থিক কারণে তাঁকে ভর্তি করে দেওয়া হলো স্থানীয় মোজাহার হোসেন মহিলা ডিগ্রি কলেজে। ২০১৯ সালে জিপিএ-৫ (১১৪১ নম্বর) পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। এবারও উপজেলার মধ্যে মানবিকে সর্বোচ্চ নম্বর মিতার।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময়ও বাধার মুখে পড়লেন মিতা। বললেন, ‘আমার মা (সেলিনা বেগম) অত্যন্ত বুদ্ধিমতী। আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছাটা তিনি জানতেন। তাই আমার এসএসসির স্কলারশিপের ১৬ হাজার টাকা দিয়ে দুটি ছাগল কিনে রেখেছিলেন। আমি জীবনে অনেক ‘‘না’’ শুনেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় যেন আমাকে আরেকটা না শুনতে না হয়, সেই জন্য মা এই ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন।’

এইচএসসির ফল প্রকাশের পর মিতার বাবা রাজশাহীতেই মেয়েকে ভর্তি হতে বললেন। কিন্তু শিক্ষকদের চাপাচাপি আর পরামর্শে মেয়েকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। মিতার শিক্ষকেরা চাঁদা তুলে তাঁর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য সহযোগিতা করলেন।

মিতা বলেন, ‘আমাকে না জানিয়েই তাঁরা এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তখনকার ইউএনও শাহীন রেজাও সহযোগিতা করেছিলেন।’

শিক্ষকের শাড়ি পরে ভাইভা দিয়েছেন মিতা খাতুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ