নারীবিদ্বেষীরা যাতে প্রার্থী হতে না পারেন
Published: 7th, October 2025 GMT
নির্বাচনের সময় ‘মব ভায়োলেন্স’ (দলবদ্ধ সহিংসতা) হলে তা নারী ভোটারদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন নারীনেত্রীরা। এ ছাড়া নারীবিদ্বেষী ব্যক্তিরা যাতে নির্বাচনে প্রার্থী হতে না পারেন, সে বিষয়েও নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। অন্যদিকে কালোটাকা ও পেশিশক্তি ব্যবহার করে কেউ যাতে নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে না পারেন, সে ব্যাপারে ইসিকে সতর্ক থাকতে বলেছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অংশীজনদের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে মঙ্গলবার সকালে নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এবং বিকেলে নারীনেত্রীদের সঙ্গে সংলাপ করে ইসি। সংলাপের দুই পর্বেই সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য করাকে জীবনের শেষ সুযোগ হিসেবে নিয়েছেন—এমনটি উল্লেখ করে সিইসি বলেন, একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে একটা বিশেষ ধরনের সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে হচ্ছে। এটাকে তিনি দেশের জন্য কিছু করতে পারার শেষ সুযোগ হিসেবে নিয়েছেন এবং তাঁর প্রতিশ্রুতি একটি সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার। তিনি বলেন, গত তিন নির্বাচনে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁরা যেন ধারেকাছে না আসতে পারেন, এমন কথা অনেকে বলছেন। এখন ১০ লাখ লোকের (ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা) মধ্যে বাদ দিতে গেলে লোম বাছতে গিয়ে কম্বল উজাড় হবে।
তবে নির্বাচনী কার্যক্রমে যুক্ত কর্মকর্তারা কোনো দলের পক্ষে কাজ করলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, ‘এখনকার মেসেজ (বার্তা) আর আগের মেসেজ ভিন্ন। আগের মেসেজ ছিল যে আমার পক্ষে কাজ না করলে আপনার বিরুদ্ধে অ্যাকশন হবে। আর এখন হলো যে কারও পক্ষে কাজ করলে অ্যাকশন হবে। কারণ, এখন মেসেজ ইজ টু ভেরি ক্লিয়ার (বার্তা অত্যন্ত পরিষ্কার)। এই মেসেজ আমরা একাধিকবার দিয়েছি, আরও দিতে থাকব।’
‘জেন্ডার ফ্রেন্ডলি’ নির্বাচন করার আশাবাদ ব্যক্ত করে সিইসি বলেন, নারীরা যাতে নিরাপদে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করতে কাজ করবে ইসি।
সংলাপে সিইসির সঙ্গে চার নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাসউদ, বেগম তাহমিদা আহমদ, আনোয়ারুল ইসলাম সরকার ও আবুল ফজল মো.
নারীবিদ্বেষীরা যাতে প্রার্থী হতে না পারেন
নারীবিদ্বেষী, সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন ব্যক্তি এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীরা যাতে নির্বাচনে প্রার্থী হতে না পারেন, সে বিষয়ে ইসির যথাযথ ভূমিকা চান বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম। এর পাশাপাশি নারী প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দের ক্ষেত্রেও ইসির সচেতনতা দরকার বলে মনে করেন তিনি। একই সঙ্গে শুধু নির্বাচনের আগে নয়, পরেও কোন কোন এলাকায় ‘মব ভায়োলেন্স’ হতে পারে, তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি পরামর্শ দেন।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সমন্বয় করে সংসদীয় আসন বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি সংলাপে তুলে ধরেন নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হক। তিনি বলেন, সংসদীয় আসন ৬০০টি করতে হবে। যেখানে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় একটি সাধারণ আসন এবং নারীদের জন্য একটি সরাসরি নির্বাচিত সংরক্ষিত আসন থাকবে। সাধারণ আসনের মতো সংরক্ষিত আসনেও সরাসরি নির্বাচন হতে হবে।
নির্বাচনী ব্যয়ের বিষয়ে ইসিকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শিরীন পারভীন হক বলেন, প্রার্থীরা অতিরিক্ত ব্যয় করলেও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
ভয় দূর করা প্রয়োজন
বেসরকারি সংস্থা ‘নিজেরা করি’র সমন্বয়কারী খুশী কবির বলেন, নির্বাচনে নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতে রাজনৈতিক দলগুলো থেকে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি। ভোটকেন্দ্রে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে নারী ভোটাররা ভোট দিতে আসবেন। পাশাপাশি নির্বাচন কর্মকর্তা নিয়োগে নারীদের সংখ্যা বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
নির্বাচনের সময় নারী প্রার্থীদের নিয়ে বিদ্বেষী প্রচার-প্রচারণা চলে এবং নারীরা অনেক বেশি হুমকিতে থাকেন বলে সংলাপে উল্লেখ করেন মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু।
সন্ধ্যার পর নারীরা বাইরে যেতে ভয় পাচ্ছেন, এই পরিস্থিতি ঠিক করে আনার জন্য দ্রুত নির্বাচন হওয়া দরকার বলে সংলাপে উল্লেখ করেন উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিউরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডব্লিউইএবি) সভাপতি নাসরিন ফাতেমা আউয়াল।
শিক্ষক-গবেষক মাহা মির্জা বলেন, সাভার, আশুলিয়া ও টঙ্গীর মতো শিল্পাঞ্চলে বসবাসরত শ্রমিকেরা অস্থায়ী ঠিকানার কারণে অনেক সময় ভোটার তালিকায় যুক্ত হতে পারেন না। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।
প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ইউপিএলের পরিচালক মাহরুখ মহিউদ্দিন বলেন, অনলাইন ও অফলাইন দুই মাধ্যমেই নারীদের প্রতি হয়রানিমূলক আচরণ বন্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
‘মব ভায়োলেন্স’-এর কারণে ভোটকেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে ভয় তৈরি হচ্ছে, এই ভয় দূর করা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন ইন্টার নিউজের বাংলাদেশ প্রতিনিধি শামীম আরা শিউলী।
সংলাপে নির্বাচন কমিশনার বেগম তাহমিদা আহমদ সংলাপে বলেন, নারী ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে নারীনেত্রীদের ভূমি অনেক বেশি। কাজেই নারীনেত্রীদের সহযোগিতা দরকার।
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে ব্যবস্থা নিতে হবে
নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সংলাপে ইসি সচিবালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. জকরিয়া বলেন, সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে ব্যবস্থা নিতে হবে। সীমান্তপথে যেন অবৈধ অস্ত্র এবং অর্থ প্রবেশ করতে না পারে, সেই বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। নির্বাচনী কার্যক্রমে কমিশনের বাইরে যে জনবল নিয়োগ (নির্বাচনী দায়িত্বে) করা হবে, তাঁদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন ইসির সাবেক এই কর্মকর্তা। একই সঙ্গে তিনি বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, তাদের কর্মীদের এই নিয়োগের বাইরে রাখতে হবে।
কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার পরামর্শ দেন ইসি সচিবালয়ের সাবেক কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান তালুকদার।
ভোটের দিন কোনো অনিয়মের ঘটনায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার সুবিধার্থে নির্বাচন কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব দেন ইসি সচিবালয়ের আরেকজন সাবেক কর্মকর্তা মিহির সারোয়ার মোর্শেদ।
জনগণ এখনো নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা আনতে পারছে না বলে মনে করেন ইসির সাবেক কর্মকর্তা মেজবাহউদ্দিন আহমদ।
অন্যদিকে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ফেমার প্রেসিডেন্ট মুনিরা খান বলেন, সরকার এবং রাজনৈতিক দল সহযোগিতা না করলে ভালো নির্বাচন করা সম্ভব নয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ভ টক ন দ র কর মকর ত ব যবস থ ক জ কর র জন য উদ দ ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
একদিকে আলোচনা, অন্যদিকে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল
ফিলিস্তিনের গাজায় সংঘাত বন্ধের জন্য একদিকে পরোক্ষ আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন ইসরায়েলের প্রতিনিধিরা, অন্যদিকে উপত্যকাটিতে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজায় নির্বিচার হামলা শুরুর দ্বিতীয় বর্ষপূর্তির দিন গতকাল মঙ্গলবার অন্তত ১০ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল।
মিসরের পর্যটন শহর শারম আল–শেখে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় হামাস ও ইসরায়েলের প্রতিনিধিদের আলোচনা শুরু হয়। গতকাল মঙ্গলবারও ওই আলোচনা হওয়ার কথা। সোমবার আলোচনার শুরুটা ‘ইতিবাচক’ হয়েছে বলে জানিয়েছে হামাস। যদিও সংগঠনটির এক নেতা বলেছেন, এবারও আলোচনায় ‘বাধা দেওয়ার’ চেষ্টা করছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
গত দুই বছরে ইসরায়েলের হামলায় গাজায় ৬৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। উপত্যকাটিতে ৯২ শতাংশ আবাসিক ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। এ নৃশংসতার মধ্যে গাজায় সংঘাত বন্ধে ২৯ সেপ্টেম্বর ২০ দফা ‘শান্তি’ পরিকল্পনা ঘোষণা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওই পরিকল্পনাকে ইসরায়েলের প্রতি পক্ষপাতমূলক বলছেন অনেক বিশ্লেষক।
ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের ওই পরিকল্পনায় সম্মতি দিয়েছেন নেতানিয়াহু। তবে পরিকল্পনার কিছু শর্তের বিষয়ে আপত্তি রয়েছে হামাসের। এসব নিয়ে আলোচনার জন্য গত সোমবার থেকে শারম আল–শেখে পরোক্ষ আলোচনা শুরু হয়েছে। আজ বুধবার এ আলোচনায় যোগ দেওয়ার কথা কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান বিন জসিম আল থানির। হামলার মধ্যে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া চ্যালেঞ্জের প্রথম দিনের আলোচনা নিয়ে আল-জাজিরার সঙ্গে কথা বলেছে হামাস-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র। তাদের ভাষ্যমতে, সোমবার দুই পক্ষের আলোচনা ‘ইতিবাচক’ হয়েছে। এই আলোচনা কীভাবে এগিয়ে নেওয়া হবে, তার একটি রূপরেখাও তৈরি করা হয়েছে এদিন। এ ছাড়া ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া একটি চ্যালেঞ্জ বলে মধ্যস্থতাকারীদের জানিয়েছে হামাস।
মিসরের আলোচনার বিষয়ে গতকাল হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকেরা ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন— গাজা থেকে জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার পর ইসরায়েল আবার হামলা শুরু করবে না, এ নিশ্চয়তা তিনি কীভাবে দেবেন? জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমাদের হাতে অনেক ক্ষমতা রয়েছে। আর সবাই যেন চুক্তি মেনে চলে, তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্ভাব্য সবকিছু করব।’
তবে ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী সংঘাত শেষ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ় পদক্ষেপ ছাড়া বৃহৎ পরিসরে রাজনৈতিক সমাধান আসবে না বলে মনে করেন ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজ–এর কলাম লেখক গিদেয়ন লেভি। তিনি বলেন, সংঘাত বন্ধের আশা রয়েছে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট যথেষ্ট দৃঢ়তা না দেখালে এর বেশি কিছু পাওয়া যাবে না। আর তিনি আদৌ দৃঢ়তা দেখাবেন কি না, তা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। আমার মনে হয় না ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের বিষয়ে আগ্রহী ট্রাম্প।’
আলোচনা নস্যাৎ করার চেষ্টা নেতানিয়াহুরট্রাম্পের ২০ দফার মধ্যে রয়েছে গাজা থেকে বাকি জীবিত ও মৃত জিম্মিদের ইসরায়েলে ফেরত পাঠানো, উপত্যকাটি থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার, হামাসকে অস্ত্রমুক্ত করা এবং সংঘাত বন্ধের পর গাজায় একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের মতো নানা বিষয়। এর মধ্যে গাজায় সংঘাত বন্ধ এবং জিম্মিদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে রাজি হামাস। তবে অন্তর্বর্তী সরকার প্রক্রিয়া নিয়ে তাদের আপত্তি রয়েছে।
এরই মধ্যে গতকাল হামাসের মুখপাত্র ফাউজি বারহুম বলেছেন, তাঁরা এমন একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে চান, যা ফিলিস্তিনিদের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে মিলবে। এ লক্ষ্যে ‘সব বাধা’ দূর করার চেষ্টা করছেন আলোচনায় যোগ দেওয়া হামাসের প্রতিনিধিরা। একই সঙ্গে অভিযোগ করে বারহুম বলেন, আগের মতো এবারও আলোচনায় ‘বাধা দেওয়ার এবং নস্যাৎ করার’ চেষ্টা করছেন নেতানিয়াহু।
একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য নিজেদের মূল দাবিগুলোও তুলে ধরেন হামাস নেতা ফাউজি বারহুম। দাবিগুলো হলো গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, সব ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার, কোনো বাধা ছাড়া গাজায় ত্রাণ প্রবেশ করতে দেওয়া, বাস্তুচ্যুতদের নিজ নিজ ঘরে ফিরতে দেওয়া, ফিলিস্তিনিদের তত্ত্বাবধায়নে গাজা পুনর্গঠন শুরু করা এবং ন্যায্য বন্দিবিনিময় চুক্তি।
দুই বছর ধরে নির্বিচার হামলা২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। ওই দিন থেকেই গাজায় টানা নৃশংসতা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। গতকাল এ নৃশংসতার দুই বছর পূরণ হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত দুই বছরে ইসরায়েলের হামলায় গাজায় অন্তত ৬৭ হাজার ১৭৩ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২০ হাজার ১৭৯ জন শিশু। একই সময়ে আহত হয়েছেন ১ লাখ ৬৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি।
হত্যাযজ্ঞের পাশাপাশি গাজা অবরোধ করে সেখানে খাবার ও চিকিৎসা সরঞ্জামের মতো জরুরি পণ্য প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ইসরায়েল। এতে দুই বছরে অনাহারে উপত্যকাটিতে ৪৬০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১৫৪টিই শিশু। খাবার না পেয়ে তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে গাজার পাঁচ বছরের কম বয়সী ৫১ হাজার ১০০ জনের বেশি শিশু।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজার ৩৮টি হাসপাতালের ২৫টিই ধ্বংস করেছে ইসরায়েল। ৯২ শতাংশ আবাসিক ভবন ধ্বংস করা হয়েছে।
ইসরায়েল গাজায় জাতিগত নিধন চালাচ্ছে উল্লেখ করে গত মাসে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন। গত দুই বছরে দুর্বিষহ সময়ের কথা স্মরণ করে গাজার বাসিন্দা মোহাম্মদ দিব রয়টার্সকে বলেন, ‘দুই বছর ধরে আমরা ভয়, আতঙ্ক, ধ্বংসযজ্ঞ ও বাস্তুচ্যুত হওয়ার মধ্যে আছি।’