নির্বাচনের সময় ‘মব ভায়োলেন্স’ (দলবদ্ধ সহিংসতা) হলে তা নারী ভোটারদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন নারীনেত্রীরা। এ ছাড়া নারীবিদ্বেষী ব্যক্তিরা যাতে নির্বাচনে প্রার্থী হতে না পারেন, সে বিষয়েও নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। অন্যদিকে কালোটাকা ও পেশিশক্তি ব্যবহার করে কেউ যাতে নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে না পারেন, সে ব্যাপারে ইসিকে সতর্ক থাকতে বলেছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অংশীজনদের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে মঙ্গলবার সকালে নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এবং বিকেলে নারীনেত্রীদের সঙ্গে সংলাপ করে ইসি। সংলাপের দুই পর্বেই সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য করাকে জীবনের শেষ সুযোগ হিসেবে নিয়েছেন—এমনটি উল্লেখ করে সিইসি বলেন, একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে একটা বিশেষ ধরনের সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে হচ্ছে। এটাকে তিনি দেশের জন্য কিছু করতে পারার শেষ সুযোগ হিসেবে নিয়েছেন এবং তাঁর প্রতিশ্রুতি একটি সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার। তিনি বলেন, গত তিন নির্বাচনে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁরা যেন ধারেকাছে না আসতে পারেন, এমন কথা অনেকে বলছেন। এখন ১০ লাখ লোকের (ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা) মধ্যে বাদ দিতে গেলে লোম বাছতে গিয়ে কম্বল উজাড় হবে।

তবে নির্বাচনী কার্যক্রমে যুক্ত কর্মকর্তারা কোনো দলের পক্ষে কাজ করলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, ‘এখনকার মেসেজ (বার্তা) আর আগের মেসেজ ভিন্ন। আগের মেসেজ ছিল যে আমার পক্ষে কাজ না করলে আপনার বিরুদ্ধে অ্যাকশন হবে। আর এখন হলো যে কারও পক্ষে কাজ করলে অ্যাকশন হবে। কারণ, এখন মেসেজ ইজ টু ভেরি ক্লিয়ার (বার্তা অত্যন্ত পরিষ্কার)। এই মেসেজ আমরা একাধিকবার দিয়েছি, আরও দিতে থাকব।’

‘জেন্ডার ফ্রেন্ডলি’ নির্বাচন করার আশাবাদ ব্যক্ত করে সিইসি বলেন, নারীরা যাতে নিরাপদে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করতে কাজ করবে ইসি।

সংলাপে সিইসির সঙ্গে চার নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাসউদ, বেগম তাহমিদা আহমদ, আনোয়ারুল ইসলাম সরকার ও আবুল ফজল মো.

সানাউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন। সংলাপ সঞ্চালনা করেন ইসির অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ।

আগের মেসেজ ছিল যে আমার পক্ষে কাজ না করলে আপনার বিরুদ্ধে অ্যাকশন হবে। আর এখন হলো যে কারও পক্ষে কাজ করলে অ্যাকশন হবে।এ এম এম নাসির উদ্দীন,প্রধান নির্বাচন কমিশনার

নারীবিদ্বেষীরা যাতে প্রার্থী হতে না পারেন

নারীবিদ্বেষী, সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন ব্যক্তি এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীরা যাতে নির্বাচনে প্রার্থী হতে না পারেন, সে বিষয়ে ইসির যথাযথ ভূমিকা চান বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম। এর পাশাপাশি নারী প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দের ক্ষেত্রেও ইসির সচেতনতা দরকার বলে মনে করেন তিনি। একই সঙ্গে শুধু নির্বাচনের আগে নয়, পরেও কোন কোন এলাকায় ‘মব ভায়োলেন্স’ হতে পারে, তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি পরামর্শ দেন।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সমন্বয় করে সংসদীয় আসন বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি সংলাপে তুলে ধরেন নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হক। তিনি বলেন, সংসদীয় আসন ৬০০টি করতে হবে। যেখানে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় একটি সাধারণ আসন এবং নারীদের জন্য একটি সরাসরি নির্বাচিত সংরক্ষিত আসন থাকবে। সাধারণ আসনের মতো সংরক্ষিত আসনেও সরাসরি নির্বাচন হতে হবে।

নির্বাচনী ব্যয়ের বিষয়ে ইসিকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শিরীন পারভীন হক বলেন, প্রার্থীরা অতিরিক্ত ব্যয় করলেও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

ভয় দূর করা প্রয়োজন

বেসরকারি সংস্থা ‘নিজেরা করি’র সমন্বয়কারী খুশী কবির বলেন, নির্বাচনে নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতে রাজনৈতিক দলগুলো থেকে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি। ভোটকেন্দ্রে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে নারী ভোটাররা ভোট দিতে আসবেন। পাশাপাশি নির্বাচন কর্মকর্তা নিয়োগে নারীদের সংখ্যা বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।

নির্বাচনের সময় নারী প্রার্থীদের নিয়ে বিদ্বেষী প্রচার-প্রচারণা চলে এবং নারীরা অনেক বেশি হুমকিতে থাকেন বলে সংলাপে উল্লেখ করেন মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু।

সন্ধ্যার পর নারীরা বাইরে যেতে ভয় পাচ্ছেন, এই পরিস্থিতি ঠিক করে আনার জন্য দ্রুত নির্বাচন হওয়া দরকার বলে সংলাপে উল্লেখ করেন উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিউরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডব্লিউইএবি) সভাপতি নাসরিন ফাতেমা আউয়াল।

শিক্ষক-গবেষক মাহা মির্জা বলেন, সাভার, আশুলিয়া ও টঙ্গীর মতো শিল্পাঞ্চলে বসবাসরত শ্রমিকেরা অস্থায়ী ঠিকানার কারণে অনেক সময় ভোটার তালিকায় যুক্ত হতে পারেন না। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।

প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ইউপিএলের পরিচালক মাহরুখ মহিউদ্দিন বলেন, অনলাইন ও অফলাইন দুই মাধ্যমেই নারীদের প্রতি হয়রানিমূলক আচরণ বন্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

‘মব ভায়োলেন্স’-এর কারণে ভোটকেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে ভয় তৈরি হচ্ছে, এই ভয় দূর করা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন ইন্টার নিউজের বাংলাদেশ প্রতিনিধি শামীম আরা শিউলী।

সংলাপে নির্বাচন কমিশনার বেগম তাহমিদা আহমদ সংলাপে বলেন, নারী ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে নারীনেত্রীদের ভূমি অনেক বেশি। কাজেই নারীনেত্রীদের সহযোগিতা দরকার।

অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে ব্যবস্থা নিতে হবে

নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সংলাপে ইসি সচিবালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. জকরিয়া বলেন, সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে ব্যবস্থা নিতে হবে। সীমান্তপথে যেন অবৈধ অস্ত্র এবং অর্থ প্রবেশ করতে না পারে, সেই বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। নির্বাচনী কার্যক্রমে কমিশনের বাইরে যে জনবল নিয়োগ (নির্বাচনী দায়িত্বে) করা হবে, তাঁদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন ইসির সাবেক এই কর্মকর্তা। একই সঙ্গে তিনি বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, তাদের কর্মীদের এই নিয়োগের বাইরে রাখতে হবে।

কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার পরামর্শ দেন ইসি সচিবালয়ের সাবেক কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান তালুকদার।

ভোটের দিন কোনো অনিয়মের ঘটনায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার সুবিধার্থে নির্বাচন কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব দেন ইসি সচিবালয়ের আরেকজন সাবেক কর্মকর্তা মিহির সারোয়ার মোর্শেদ।

জনগণ এখনো নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা আনতে পারছে না বলে মনে করেন ইসির সাবেক কর্মকর্তা মেজবাহউদ্দিন আহমদ।

অন্যদিকে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ফেমার প্রেসিডেন্ট মুনিরা খান বলেন, সরকার এবং রাজনৈতিক দল সহযোগিতা না করলে ভালো নির্বাচন করা সম্ভব নয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ভ টক ন দ র কর মকর ত ব যবস থ ক জ কর র জন য উদ দ ন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

পশুপাখিরা কী ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পায়?

হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ বিশ্বাস করে আসছে , ‘‘পশুপাখি  প্রাকৃতিক বিপদের লক্ষণ বুঝতে পারে। এর মধ্যে ভূমিকম্পও অন্তর্ভুক্ত।’’ প্রাকৃতিক দুর্যোগের আভাস পেলে  পশুপাখিদের আচরণে অস্থিরতা প্রকাশ পায়। যেমন, কুকুর ঘেউ ঘেউ করে, পাখিরা উড়তে আরম্ভ করে, সাপেরা গর্ত থেকে বেরিয়ে আসে।

উল্লেখ করা প্রয়োজন, ২০০৪ সালের সুনামির আগে ইন্দোনেশিয়ার একটি দ্বীপে হাতিরা উঁচু জায়গায় উঠে গিয়েছিল। বিজ্ঞানীরা বলেন, ‘‘ভূমিকম্পে পৃথিবীর স্তর থেকে যে লো-ফ্রিকোয়েন্সি ইনফ্রাসাউন্ড এবং সিসমিক ওয়েভ উঠে আসে’’। এই ওয়েভের কিছু আভাস পশুপাখিরা বুঝলেও বুঝতে পারে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। 

আরো পড়ুন:

মৃত্যু বেড়ে ১০, বড় ভূমিকম্পের আগাম বার্তা বিশেষজ্ঞের

ভূমিকম্পে ফাটল: রাবি শেরে বাংলা হলের শিক্ষার্থীদের সরানো হচ্ছে

২০২৩ সালে তুরস্ক ও সিরিয়া সীমান্তে ভয়াবহ ভূমিকম্পটি হয়।  সেই ভূমিকম্পের প্রাক্কালে সংলগ্ন এলাকার পাখিদের আচরণ ছিল অস্বাভাবিক। সেই মুহূর্তের পাখিদের অস্বাভাবিক আচরণের একটি ভিডিও পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। যা দেখলে মনে হতে পারে পাখিরা বোধহয় সত্যিই এই ভয়াবহ বিপর্যয়ের আঁচ পেয়েছিল ।

অনেক লোককাহিনী ও ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণে দাবি করা হয় যে, পাখি, পশু, মাছ সরীসৃপ এমনকি পতঙ্গরাও ভূমিকম্প, সুনামি, ঝড় বা যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম পূর্বাভাস পায়।। যদিও বৈজ্ঞানিক প্রমাণগুলি এই ধারণাকে জোরালোভাবে সমর্থন করে না।

সূত্র: জি নিউজ 

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ