রাশিয়ায় যুদ্ধে নিহত রাজবাড়ীর নজরুল, পরিবার জানল ৭ মাস পর
Published: 9th, October 2025 GMT
রাশিয়ায় গিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের নজরুল ইসলাম (৪৭)। দীর্ঘ সাত মাস ধরে নিখোঁজ থাকার পর বুধবার (৮ অক্টোবর) বিকেলে তার মৃত্যুর খবর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয় পরিবারকে। এ খবরে শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে পরিবারটি।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মারিয়া হক বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আরো পড়ুন:
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলায় নিহত ৫
কিয়েভে আবারো ব্যাপক হামলা চালিয়েছে রাশিয়া: মেয়র
পরিবারের সদস্যরা জানান, নজরুল ২০২০ সালে চাকরি থেকে অবসরে যান। এরপর থেকে তিনি বাড়িতে থাকতেন। কিছু দিন পর রাজবাড়ীর শ্রীপুর বাজারে মুদি ব্যবসা শুরু করেন। একসময় ব্যবসায় বড় লোকসান হওয়ায় আর্থিক সংকটে পড়েন। স্থানীয় দালাল ফরিদ হোসেন তাকে রাশিয়ায় শপিং মলে নিরাপত্তাকর্মীর চাকরির লোভ দেখান। এ বিষয়টি জানার পর নানা উপায়ে নজরুলকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন তার স্ত্রী আইরিন আক্তার। নজরুল তাকে বলেন, “রাশিয়ায় ভালো বেতন দেবে, সংসারের অবস্থা ভালো হবে।”
২০২৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নজরুল রাশিয়ার উদ্দেশে রওনা দেন। সেখানে পৌঁছানোর পর এক মাসের সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে বাধ্য করা হয় তাকে। প্রশিক্ষণ শেষে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হয়। তখন নিয়মিত পরিবারের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলতেন তিনি। স্ত্রীকে নজরুল বলতেন, “এখান থেকে ফিরে আসার আমার কোনো উপায় নেই। আমার ফোন বন্ধ পেলে ভাববা, মারা গেছি।”
পরিবারের সঙ্গে নজরুলের সর্বশেষ কথা হয় ৩০ এপ্রিল। সেইদিন নজরুল তার স্ত্রীকে জানান, তিনি ব্যাংকে যাচ্ছেন টাকা পাঠাতে। কিছুক্ষণ পর ফের ফোন করে বলেন, “টাকা পাঠানো হলো না, দ্রুত যেতে হচ্ছে। যদি ফোন বন্ধ পাও, ধরে নিয়ো আমি আর বেঁচে নেই।” সেটিই ছিল তার শেষ কথা। এরপর থেকে নজরুলের কোনো খোঁজ মিলছিল না।
সাত মাস ধরে পরিবারের সদস্যরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করলেও কোনো তথ্য পাননি। বুধবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ফোনে জানানো হয়, নজরুল মারা গেছেন।
নিহতের স্ত্রী আইরিন আক্তার বলেন, “আমার স্বামী চাকরি থেকে অবসর নিয়ে বাড়িতে থাকতে। ব্যবসায় লোকসান হওয়ায় ফরিদ দালালের মাধ্যমে রাশিয়ায় যায়। আমি বারবার নিষেধ করেছিলাম। বলেছিলাম, সন্তানদের নিয়ে আমরা একসঙ্গে থাকব। সে বলল, রাশিয়ায় ভালো চাকরি আছে, নিরাপত্তা প্রহরীর কাজ। আমি চার মেয়েকে নিয়ে কীভাবে বাঁচব? আমার এখন একটাই চাওয়া, আমার স্বামীকে অন্তত আমার কাছে এনে দিক সরকার। শেষবার আমি একটু আমার স্বামীকে দেখতে চাই।”
নজরুল ইসলামের বড় ভাই রহিম বলেন, “ফরিদ নামের দালাল আমার ভাইকে প্রলুব্ধ করে রাশিয়ায় পাঠিয়েছে। আমরা বহু জায়গায় খোঁজ নিয়েছি। ফরিদ সব সময় বলত, ও বেঁচে আছে, নেটওয়ার্ক না থাকায় যোগাযোগ করতে পারছে না। এখন শুনলাম, আমার ভাই আর বেঁচে নেই। সরকার যেন তার লাশটা দেশে আনার ব্যবস্থা করে।”
অভিযুক্ত দালাল ফরিদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন সাংবাদিকরা। তিনি বলেন, “আমি রাশিয়ায় পাঠাইনি নজরুলকে। তিনি গেছেন বিকন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস এজেন্সির মাধ্যমে। আমি শুধু যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছি। তিনি সব জেনে-শুনেই যান রাশিয়ান সেনাবাহিনীর লজিস্টিক হ্যান্ড হিসেবে। নো অবজেকশন সার্টিফিকেটে স্বাক্ষরও করে গেছেন। আমি গত রাতে শুনেছি, মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, নজরুল মারা গেছেন। এখানে আমার দোষ দিয়ে লাভ কী?”
নিহত নজরুলের চার কন্যাসন্তান আছে। তার বড় মেয়ে রাজবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। দ্বিতীয় মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট দুই মেয়ের বয়স যথাক্রমে ৬ ও ৫ বছর।
ঢাকা/রবিউল/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র শ য় ইউক র ন য দ ধ ন হত য গ য গ কর নজর ল র পর ব র ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
গুগলে পাঁচ নোবেলজয়ী: সহকর্মীদের সাফল্যে গর্বিত সুন্দর পিচাই
গুগলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সুন্দর পিচাই সহকর্মীদের টানা দুই বছর নোবেল পুরস্কার অর্জন করায় গর্ব প্রকাশ করেছেন। এ বছর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পাওয়া মিশেল এইচ ডেভোরেট ও জন এম মার্টিনিসকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, গুগলের জন্য এটি এক অনন্য অর্জন এবং বিজ্ঞান ও গবেষণায় প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘদিনের বিনিয়োগের ফল।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে সুন্দর পিচাই জানান, আজ সকালে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। আমি এমন একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করি, যেখানে এখন পর্যন্ত পাঁচজন নোবেলজয়ী রয়েছেন। মাত্র দুই বছরে গুগলের গবেষকেরা তিনটি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। এটা সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক।’
পিচাই জানান, মিশেল ডেভোরে বর্তমানে গুগলের কোয়ান্টাম এআই ল্যাবের হার্ডওয়্যার বিভাগের প্রধান বিজ্ঞানী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আর জন মার্টিনিস বহু বছর ধরে ওই ল্যাবের হার্ডওয়্যার টিমের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯৮০–এর দশকে তাঁদের গবেষণার ফলাফলই আজকের কোয়ান্টাম প্রযুক্তির ভিত্তি স্থাপন করেছে। সেই গবেষণার ফলেই ভবিষ্যতের ত্রুটিমুক্ত (এরর-কারেকটেড) কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির পথ তৈরি হয়েছে।
সম্প্রতি সুন্দর পিচাই যুক্তরাষ্ট্রের সান্তা বারবারায় অবস্থিত গুগলের কোয়ান্টাম ল্যাব পরিদর্শন করেন। সেখানে চলমান গবেষণার অগ্রগতি দেখে তিনি একে ‘অবিশ্বাস্য’ বলে অভিহিত করেন। সুন্দর পিচাই বলেন, ‘বর্তমান ও সাবেক দুই মিলিয়ে গুগলের সঙ্গে এখন পর্যন্ত পাঁচজন নোবেলজয়ী যুক্ত ছিলেন। এটি আমাদের সবার জন্যই গর্বের বিষয়।’
গত দুই বছরে গুগলের সঙ্গে যুক্ত পাঁচজন বিজ্ঞানী নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। গুগল ডিপমাইন্ডের প্রধান নির্বাহী ডেমিস হাসাবিস এবং জন জাম্পার ২০২৪ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার পান প্রোটিনের গঠন পূর্বাভাস প্রযুক্তি (প্রোটিন স্ট্রাকচার প্রেডিকশন) উদ্ভাবনের জন্য। এ বছর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পান মিশেল এইচ ডেভোরেট ও জন এম মার্টিনিস। অন্যদিকে জিওফ্রে হিন্টন ২০২৪ সালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান। তবে এআই প্রযুক্তির অন্যতম পথিকৃৎ জিওফ্রে হিন্টন ২০২৩ সালে স্বেচ্ছায় গুগলের চাকরি ছেড়ে দেন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া