পরিবেশবান্ধব ভ্রমণ: প্রকৃতি ও ভবিষ্যতের প্রতি দায়বদ্ধতা
Published: 9th, October 2025 GMT
প্রাচীনকাল থেকেই দেখা গেছে, ভ্রমণের প্রতি মানুষের এক অদ্ভুত আকর্ষণ ও ভালোবাসা। ভ্রমণপ্রেমীরা সব সময় সন্ধানে থাকেন নতুন কোনো জায়গা খুঁজে বের করার। কারণ, ভ্রমণ আমাদের মন ও আত্মাকে সতেজ করে তোলে, নতুন অভিজ্ঞতা দেয় এবং জ্ঞানের পরিসীমাকে বৃদ্ধি করে।
কিন্তু গতানুগতিক ভ্রমণ অনেক ক্ষেত্রেই প্রকৃতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এই পটভূমিতে সম্প্রতি ‘পরিবেশবান্ধব ভ্রমণ’ বা ‘ইকো–ফ্রেন্ডলি ট্রাভেলিং’ নিয়ে বেশ চর্চা চলছে, যার মূল উদ্দেশ্য হলো প্রকৃতি, বন্য প্রাণী ও স্থানীয় সংস্কৃতিকে অক্ষুণ্ন রেখে ভ্রমণ নিশ্চিত করা। এটি ‘গ্রিন ট্রাভেল’ নামেও পরিচিত।
পরিবেশবান্ধব ভ্রমণ কী
‘পরিবেশবান্ধব ভ্রমণ’ এমন একটি দায়িত্বশীল পর্যটনব্যবস্থা, যা পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে যে স্থানে ভ্রমণ করা হচ্ছে, সেখানকার স্থানীয় জীববৈচিত্র্য ও মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। জাতিসংঘ ২০০২ সালকে ‘ইন্টারন্যাশনাল ইকোট্যুরিজম ইয়ার’ ঘোষণা করে, যা পরিবেশবান্ধব ভ্রমণের গুরুত্বকে আরও সুপ্রতিষ্ঠিত করে।
পরিবেশবান্ধব ভ্রমণের মূল লক্ষ্যগুলো হলো
পরিবেশগত সুরক্ষা: ভ্রমণের সময় প্রাকৃতিক সম্পদ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ নিশ্চিত করা এবং বর্জ্য, দূষণ ও কার্বন নিঃসরণ কমানো।
অর্থনৈতিক সুবিধা: স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলা এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা, যাতে তারা পরিবেশ সংরক্ষণে উৎসাহিত হয়।
সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ বৃদ্ধি: স্থানীয় মানুষের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও জীবনযাত্রার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং তাঁদের সঙ্গে আন্তরিকভাবে যুক্ত হওয়া।
শিক্ষা ও সচেতনতা: পর্যটকদের মধ্যে পরিবেশ ও সংস্কৃতির গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
পরিবেশবান্ধব ভ্রমণ কেন জরুরি
প্রাকৃতিক সম্পদ, যেমন সুন্দরবন, কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিন, রাতারগুল ইত্যাদি স্থানকে বাংলাদেশের ‘পর্যটন খাতের রত্ন’ বলা চলে। তবে পর্যটকদের চাপ, বর্জ্যের অব্যবস্থাপনা, অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা ও অযত্নের কারণে এসব স্থান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পরিবেশবান্ধব ভ্রমণ এসব হুমকি কমাতে সহায়তা করে এবং প্রাকৃতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক স্থায়িত্ব নিশ্চিত করে। বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব ভ্রমণে দরকার কিছু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম থেকে পাওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ট্রাভেল ও ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্সে বাংলাদেশের স্কোর সবচেয়ে কম।
উদ্ভিদ, প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক মোকারম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশের পর্যটনব্যবস্থা পরিবেশবান্ধব তো নয়ই, জনবান্ধবও নয়। পরিবেশগত দিক দিয়ে উচ্চ সংবেদনশীল স্থানগুলো নিয়ে সরকার ও সাধারণ জনগণ উভয়ের সচেতনতা এখন অত্যন্ত জরুরি। অপরিকল্পিত পর্যটনব্যবস্থার কারণে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ইকোসিস্টেমগুলো ধ্বংস হতে বসেছে। আসলে পরিবেশ ও প্রকৃতির বিষয়গুলো মাথায় রেখেই প্রতিটি পর্যটন স্থানের পর্যটনব্যবস্থা সাজানো উচিত।’
মোকারম হোসেন আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে ইকোট্যুরিজম বাস্তবায়নে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রথমত, পর্যটন ও পর্যটন ব্যবস্থাপনা নিয়ে জনবান্ধব ও পরিবেশবান্ধব যুগোপযোগী নীতিমালা না থাকা। দ্বিতীয়ত, সাধারণ মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকা স্থানগুলোকে চিহ্নিত করতে না পারা, অব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা সংকট। তৃতীয়ত, ইকোট্যুরিজমের প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ দিক স্কুলিং–ব্যবস্থায় জোর না দেওয়া।’
দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সংস্কৃতি রক্ষায় টেকসই ইকোট্যুরিজম উন্নয়ন এখন অপরিহার্য। এটি নিশ্চিত করতে প্রথমেই সুন্দরবন, কক্সবাজার বা বান্দরবানের মতো পর্যটন এলাকাগুলোর জন্য বাস্তুতন্ত্রভিত্তিক মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে পর্যটকদের ধারণক্ষমতা নির্ধারণ করতে হবে। অবকাঠামো নির্মাণে স্থানীয়ভাবে পাওয়া উপকরণ (যেমন বাঁশ) ও সবুজ প্রযুক্তি (যেমন সৌরশক্তি) ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব আবাসন তৈরি করা জরুরি। সেই সঙ্গে স্থানীয় জনগণের সক্রিয় সম্পৃক্ততা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পর্যটন থেকে পাওয়া আয়ের একটি অংশ সরাসরি স্থানীয় সংরক্ষণ তহবিলে জমা করে তাঁদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা যেতে পারে, যাতে স্থানীয় লোকজন নিজেরাই প্রকৃতির রক্ষক হিসেবে উৎসাহিত হন। পাশাপাশি সবাইকে নিজ উদ্যোগে পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল হতে হবে। সবার সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া পরিবেশের সুরক্ষা সম্ভব নয়।
পরিবেশবান্ধব পর্যটননীতি নিয়ে মোকারম হোসেন বলেন, ‘এটি অনেক বড় একটি বিষয়। তবে নিরাপত্তা, পরিবেশ, সংগতি, যাতায়াতব্যবস্থা, সচেতনতা, শিক্ষা, অবকাঠামো, প্রচার ইত্যাদি বিষয় সামনে রেখে কাজ করলে একটি পরিবেশবান্ধব পর্যটননীতি তৈরি করা সম্ভব। এ ছাড়া পর্যটক ও স্থানীয় জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় সরকারব্যবস্থায় পর্যটন ও পর্যটক বিষয়ে নিয়মিত আলোচনার ব্যবস্থা করা এখন সময়ের দাবি। সচেতনতামূলক তথ্যচিত্র তৈরি ও প্রদর্শনের পাশাপাশি তাঁদের আইনগত দিকগুলো বোঝানোও জরুরি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন শ চ ত কর ব যবস থ ভ রমণ র পর ব শ প রক ত স রক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
তারেক রহমানের সাক্ষাৎকার প্রজেক্টরে প্রদর্শন করলেন মহানগর যুবদল
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিবিসি বাংলায় দেওয়া বহুল আলোচিত সাক্ষাৎকার সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদল। এ উপলক্ষে বৃহৎ প্রজেক্টরের মাধ্যমে সাক্ষাৎকারটি সর্বসাধারণের সামনে প্রদর্শন করা হয়।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ৬টা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত শহরের হাজীগঞ্জ গুদারাঘাট এলাকায় অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। বিশাল পর্দায় প্রদর্শিত সাক্ষাৎকারটি দেখতে ও শুনতে হাজীগঞ্জ ও নবীগঞ্জ এলাকার হাজারো সাধারণ মানুষ ভিড় জমায়।
প্রজেক্টরে প্রদর্শিত ভিডিওতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, “দীর্ঘ সময় পর গণমাধ্যমে কথা বলার সুযোগ পেয়েছি এবং জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ গড়ে তুলতে চাই।”
তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন শুধুই ভোট নয়, এটি মানুষের অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়া।” একই সঙ্গে তিনি আদালত ও আইনশাসনের মাধ্যমে দেশে কথার স্বাধীনতা সীমিত হওয়ার বিষয়েও মন্তব্য করেন।
সাক্ষাৎকার প্রদর্শনের পুরো সময় জুড়ে সাধারণ মানুষ মনোযোগ দিয়ে বক্তব্যগুলো শোনেন ও দেখেন। অনেকেই তারেক রহমানের বক্তব্যে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রশংসা জানান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজল, সদস্য সচিব সাহেদ আহমেদ, আহ্বায়ক কমিটির সদস্যবৃন্দ ও বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা। তারা সাধারণ মানুষের সঙ্গে বসে সাক্ষাৎকারটি দেখেন এবং মতবিনিময় করেন।
মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজল বলেন,“বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘ ১৭ বছর পর প্রথমবারের মতো সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তাঁর প্রতিটি বক্তব্যই গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ।
মহানগর যুবদলের উদ্যোগে আমরা এই সাক্ষাৎকারটি জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছি, যাতে নারায়ণগঞ্জবাসী দেশের নেতৃত্ব ও বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে সরাসরি জানতে পারেন।”