সেনাবাহিনীর মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত সদস্যদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। তাঁদের অতিসত্বর গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে, কথাগুলো বলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৪০ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে নাহিদ ইসলাম এ কথা বলেন। এর আগে বুধবার প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক পাঁচজন মহাপরিচালকসহ বেশ কয়েকজন সেনাসদস্যের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

নাহিদ ইসলাম তাঁর পোস্টে লিখেছেন, ‘সেনাবাহিনীর মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত সদস্যদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।

তাঁদের অতিসত্বর গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। সেনাবাহিনী বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। ফ্যাসিবাদী বন্দোবস্তের বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টের স্বতঃস্ফূর্ত গণ-অভ্যুত্থানে সেনাবাহিনীর সাহসী সদস্যরা, বিশেষত তরুণ অফিসার ও সৈনিকেরা জনগণের পাশে থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। নতুন দেশ গঠন, সংস্কার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী এখনো নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু এই পথচলায় সংস্কার ও ন্যায়বিচারের প্রক্রিয়া সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হতে হবে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তার বাইরে নয়।’

বিগত ফ্যাসিবাদী শাসনামলে রাষ্ট্রের প্রায় সব প্রতিষ্ঠানকেই দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছিল উল্লেখ করে নাহিদ লেখেন, ‘এর প্রভাব সেনাবাহিনীতেও পড়েছিল।

সেনাবাহিনীর কিছু কর্মকর্তা, বিশেষত যাঁরা র‍্যাব বা ডিজিএফআইয়ে দায়িত্বে ছিলেন, তাঁরা গুম, খুন, ক্রসফায়ারসহ নানা মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছেন। এমনকি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় নিরস্ত্র জনগণের ওপর গুলি চালানোর ঘটনাও ঘটেছে। এই ভয়াবহ বাস্তবতার পেছনে রয়েছে গণতন্ত্রের দীর্ঘ ব্যর্থতা এবং রাজনৈতিক দলীয়করণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণের সংস্কৃতি। গণ-অভ্যুত্থানের পর আমাদের সামনে এক ঐতিহাসিক সুযোগ এসেছে প্রতিষ্ঠানগুলোকে কলঙ্কমুক্ত করা, পুনর্গঠন করা এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ সম্পূর্ণ বন্ধ করা। তাহলেই প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি স্থাপন সম্ভব হবে।’

সেনাবাহিনীকে ‘কলঙ্কমুক্ত’ করতে হলে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত’ কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় আনতেই হবে বলে মন্তব্য করেন নাহিদ ইসলাম। পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘আমরা আশা করি, সেনানেতৃত্ব এ বিষয়ে সরকার ও ট্রাইব্যুনালকে পূর্ণ সহযোগিতা করবে। এটি কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ইগো বা মর্যাদার প্রশ্ন নয়। এটি রাষ্ট্র, গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের প্রশ্ন। আমরা চাই না বিচারব্যবস্থা ও সেনাবাহিনী কোনোভাবেই মুখোমুখি অবস্থানে থাকুক। দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠীগুলো চায় সংঘাত ঘটুক, যাতে দেশ অস্থিতিশীল হয়ে তাদের স্বার্থ রক্ষা হয়। আমরা রাজনীতিতে সামরিক হস্তক্ষেপ যেমন চাই না, তেমনি সেনাবাহিনীসহ অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রভাব বা হস্তক্ষেপও সম্পূর্ণরূপে বন্ধ দেখতে চাই। দেশপ্রেম, সততা ও যোগ্যতার ভিত্তিতেই প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হওয়া উচিত।’

নাহিদ ইসলাম পোস্টের শেষাংশে লিখেছেন, ‘আমরা ৫ আগস্ট থেকে দেশের স্থিতিশীলতা ও ঐক্য রক্ষার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। স্থিতিশীলতা বজায় রেখেই আমরা সংস্কার, বিচার ও নির্বাচনের পথে এগোচ্ছি। আমাদের সব প্রত্যাশা এখনো পূরণ হয়নি, কিন্তু গণতান্ত্রিক সংস্কারের ক্ষেত্রে অগ্রগতি ঘটেছে। এখন আমাদের লক্ষ্য ন্যায়বিচার অর্জন করা এবং দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও অর্থনৈতিক সংস্কার সাধন করা।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন হ দ ইসল ম ম নবত ব র ধ র জন ত পর য় ন সদস য অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রাম বন্দরমুখী সড়কে স্কপের অবরোধ শুরু

চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল বিদেশিদের ইজারা দেওয়ার বিষয়কে সামনে রেখে বন্দরমুখী সড়কের তিনটি অংশে প্রতীকী অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)। এ বিষয়ে সমর্থন জানিয়েছে পরিবহনশ্রমিকদের কয়েকটি সংগঠন ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতা-কর্মীরা।

আজ বুধবার সকাল ১০টা থেকে নগরের মাইলের মাথা, বড়পোল ও বন্দরের টোল প্লাজা গেট এলাকায় প্রতীকী অবরোধ শুরু হয়। এর আগে সকাল থেকেই সেখানে স্কপের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত হন। কর্মসূচির শুরুতে সমাবেশ করেন তাঁরা। সেখানে কর্মসূচির সমর্থনে বক্তব্য দেন শ্রমিক নেতারা।

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বিদেশিদের ইজারা দেওয়ার চুক্তির প্রতিবাদে এবং লালদিয়ার চর ও পানগাঁও টার্মিনালে বিদেশি অপারেটরদের ইজারার চুক্তি বাতিলের দাবিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করে স্কপ। গত শনিবার স্কপের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সম্মেলন থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

ঘোষণা অনুযায়ী, নগরের তিন মোড়ে অবরোধের পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ মিছিল হওয়ার কথা রয়েছে। শ্রমিক নেতারা বলছেন, বন্দরের এনসিটি একটি লাভজনক টার্মিনাল। এটি বিদেশিদের ইজারা দিতে তড়িঘড়ি করছে সরকার। অন্যদিকে লালদিয়া চুক্তির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হয়েছে। বন্দর জনগণের সম্পদ। জনগণের আড়াল করে চুক্তির বিষয়টি রাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী।

সরেজমিন দেখা যায়, সকালে বড়পোল মোড়ে অবস্থানরত শ্রমিক নেতা-কর্মীদের হাতে থাকা ব্যানারে লেখা-'চট্টগ্রাম বন্দরের লাভজনক এনসিটি ডিপি ওয়ার্ল্ডকে ইজারা দেওয়ার পাঁয়তারার প্রতিবাদে এবং লালদিয়ার চর ও পানগাঁও ইজারা চুক্তি বাতিলের দাবিতে বন্দর অবরোধ কর্মসূচি'।

সমাবেশে বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস কে খোদা তোতন বলেন, ‘আমরা চাইলেই বন্দর অচল করে দিতে পারি। কিন্তু আমরা সময় দিচ্ছি। বিদেশিদের টার্মিনাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসুন।’ শ্রম অধিকারকর্মী ফজলুল কবির বলেন, ‘বন্দর কোনোভাবেই বিদেশি হাতে দেওয়া যাবে না।’

আদালতের রায় ৪ ডিসেম্বর

এদিকে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি-সম্পর্কিত প্রক্রিয়া নিয়ে করা রিট আবেদনের রায় আগামী ৪ ডিসেম্বর দেবেন হাইকোর্ট। ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের এই চুক্তি-সম্পর্কিত প্রক্রিয়া প্রশ্নে রুলের ওপর শুনানি শেষে গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি ফাতেমা আনোয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায়ের এ দিন ধার্য করেন।

নিউমুরিং টার্মিনাল নির্মিত হয় ২০০৭ সালে, মোট ২ হাজার ৭১২ কোটি টাকা বিনিয়োগে। চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কনটেইনারের বেশির ভাগ এই টার্মিনাল দিয়ে পরিবহন করা হয়। এটি পরিচালনা করছিল সাইফ পাওয়ারটেক। তাদের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় গত ৬ জুলাই। এরপর নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান চিটাগং ড্রাইডক লিমিটেড এটি পরিচালনার দায়িত্ব পায়।

এই টার্মিনাল পরিচালনায় ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) কর্তৃপক্ষের সমঝোতা স্মারক হয়েছিল। এখন বিদেশি এই কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির প্রক্রিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষ এগিয়ে নিতে চাইলে তার বৈধতার প্রশ্নে বাংলাদেশ যুব অর্থনীতিবিদ ফোরামের সভাপতি মির্জা ওয়ালিদ হোসাইন হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।

অন্যদিকে লালদিয়া ও কেরানীগঞ্জের পানগাঁও নৌ টার্মিনাল পরিচালনার জন্য দুই বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই হয়েছে সম্প্রতি। লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ এবং ৩০ বছরের জন্য পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে ডেনমার্কের এপি মোলার মায়ের্সক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালস। এ ছাড়া ২২ বছরের জন্য পানগাঁও নৌ টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে সুইজারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান মেডলগ এসএ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জনগণের সম্পত্তির প্রতি শেখ হাসিনার ছিল লোভাতুর দৃষ্টি: আদালত
  • দুর্নীতি প্রতিরোধে ইসলামী শাসনের বিকল্প নেই : ইলিয়াস আহমদ
  • ‘নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ আগুন সন্ত্রাসে মেতে উঠেছে’
  • ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে জনগণের টাকা লুট হয়েছে: সাইদ আহমেদ
  • চার আসনই পুনরুদ্ধার চায় বিএনপি, নতুন মুখ নিয়ে মাঠে জামায়াত
  • চট্টগ্রাম বন্দরমুখী সড়কে স্কপের অবরোধ শুরু
  • স্টিমরোলার নির্যাতনেও জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হইনি: মির্জা ফখরুল
  • ‘প্রশাসন আমাদের কথায় উঠবে’: জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ
  • সংবাদমাধ্যম কখন নিজেকে প্রশ্ন করার সাহস রাখে
  • জামায়াত নেতার বক্তব্যের প্রতিবাদ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের