ইউক্রেন যুদ্ধে নিহত রাজবাড়ীর নজরুল, স্ত্রীকে বলেছিলেন, ‘মনে হয় জীবিত ফিরতে পারব না’
Published: 10th, October 2025 GMT
রাশিয়ায় গিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিয়ে নিহত হয়েছেন রাজবাড়ীর সদর উপজেলার সাবেক সেনাসদস্য নজরুল ইসলাম (৪৮)। পাঁচ মাস নিখোঁজ থাকার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাঁর মৃত্যুর খবর জানতে পেরেছে পরিবার।
নজরুল ইসলাম রাজবাড়ী সদর উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের চর রামকান্তপুর গ্রামের মৃত হাতেম আলী ফকিরের ছেলে। তাঁর স্ত্রী ও চার মেয়ে আছে। ২০২০ সালে তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন। পরিবারের সদস্যরা জানান, নজরুল ইসলাম শপিং মলের নিরাপত্তা প্রহরীর চাকরি নিয়ে ২০২৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ায় যান। সর্বশেষ গত ৩০ এপ্রিল মুঠোফোনে তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছিল। গত বুধবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাঁর মৃত্যুর খবর জানানো হয়।
নজরুল ইসলামের স্ত্রী আইরিন আক্তার বলেন, বাড়ির জমি বিক্রি ও ঋণ নিয়ে মোট ১৩ লাখ টাকা দিয়ে তাঁর স্বামী রাশিয়ায় যান। রাশিয়ায় পৌঁছে কিছুদিন বসে থেকে স্থানীয় খাবার হোটেলে কাজ করেন। কথা অনুযায়ী কাজ না হওয়ায় দালালের সঙ্গে মনোমালিন্য দেখা দেয়। নজরুলসহ কয়েকজনকে ইউক্রেন যুদ্ধে যেতে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীতে প্রশিক্ষণ নিতে বাধ্য করা হয়। কথা না শুনলে নানাভাবে কষ্ট দেওয়া হতো। তিনি লুকিয়ে দেশে ফেরার পরিকল্পনা করেন। গত ২৮ এপ্রিল ফোনে জানান, এক-দুই দিনের মধ্যে তাঁকে ইউক্রেন যুদ্ধে পাঠানো হচ্ছে।
সর্বশেষ গত ৩০ এপ্রিল বিকেলে আইরিন আক্তারের সঙ্গে তাঁর স্বামীর কথা হয়। আইরিন আক্তার বলেন, ‘ওই দিন তিনি (নজরুল) বলেন, “ব্যাংকে আট লাখ টাকা পাঠাতে যাচ্ছি। দেনা পরিশোধ করে জমি ছাড়ানোসহ অন্যান্য কাজ কর।” কিছুক্ষণ পর আবার বলেন, “টাকা পাঠানো হচ্ছে না। আমাদের এখনই ইউক্রেন যুদ্ধে যেতে হচ্ছে। মনে হয় জীবিত ফিরতে পারব না। আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো। আমার চার মেয়েকে দেখে রেখ। তোমাদের জন্য কিছুই করতে পারলাম না।”এর পর থেকে তাঁর সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।’
আইরিন আক্তার জানান, গত মে মাসে স্বামীর বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, রাজবাড়ী সেনা ক্যাম্পসহ যশোর সেনানিবাসে জানান। জুন মাসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে স্বামীর অবস্থান জানতে এবং ফিরিয়ে আনার আবেদন করেন। গত বুধবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ফোনে জানানো হয়, তাঁর স্বামী ইউক্রেন যুদ্ধে মারা গেছেন। আগামী রোববার তাঁদের ঢাকায় যেতে বলা হয়েছে।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মারিয়া হক বলেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে বিষয়টি জেনেছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পেলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন য দ ধ নজর ল ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
পাবনায় জামায়াতের প্রার্থীর প্রচারে হামলা, গাড়ি ভাঙচুর
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় পাবনা-৪ আসনের জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ও জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক আবু তালেব মন্ডলের প্রচারে হামলা করা হয়েছে। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিবের সমর্থকদের হামলা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
হামলায় আবু তালেব মন্ডলের গাড়ি, বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে। কয়েকজন আহত হয়েছে।
আরো পড়ুন:
কুড়িগ্রাম-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ
কুড়িগ্রামে বিএনপির প্রার্থী বদলের দাবিতে বিক্ষোভ
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের চর গড়াগড়ি এলাকায় হামলা করা হয়। আহতদের তাৎক্ষণিকভাবে পরিচয় পাওয়া যায়নি। তাদের ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ. স. ম আব্দুন নুর বলেন, ‘‘আপনারা (সাংবাদিক) স্পটে আসেন, আমরা স্পটে আছি। স্পটে ছাড়া কিছুই বলা যাবে না। বক্তব্য নিতে হলে আরো দুই ঘণ্টা পর নিতে হবে।’’
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ঈশ্বরদী উপজেলার চড় গড়গড়ি এলাকায় দুই দিন আগে স্থানীয় জামায়াতের কর্মীদের মারধর করে স্থানীয় বিএনপির কর্মী মক্কেল মৃধা ও তার লোকজন। সেই ঘটনার পর আজ বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) ওই এলাকায় প্রচার চালাতে যান পাবনা-৪ আসনের জামায়াতের প্রার্থী অধ্যাপক আবু তালেব মন্ডল ও তার সমর্থকরা। তারা চর গড়গড়ি আলহাজ্ব মোড়ে পৌঁছালে মক্কেল মৃধার ছেলের নেতৃত্বে তাদের ওপর হামলা করা হয়। পরে জামায়াতের নেতাকর্মীরা ফেরার পথে মৃধাপাড়ায় আবারো হামলা চালায় মক্কেল মৃধার লোকজন। আবু তালেব মন্ডলের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। তাকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। তিনি সামান্য আহত হন। জামায়াতের অনেক নেতাকর্মী আহত হন। তাদের বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।
অধ্যাপক আবু তালেব মন্ডল বলেন, ‘‘আমাদের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচির আওতায় আজকে সেখানে গিয়েছিলাম কিন্তু হাবিবুর রহমান হাবিবের সমর্থক বিএনপির সন্ত্রাসীরা আমাদের ওপর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। আমার গাড়িসহ আমাদের শতাধিক মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। অন্তত ৬০-৭০ জন আহত হয়েছেন।’’
এ বিষয়ে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও পাবনা-৪ আসনের বিএনপির প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিবের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
ঢাকা/শাহীন/বকুল