ব্যবসায়ীদের আপত্তিতে সংশোধন হচ্ছে বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা
Published: 13th, October 2025 GMT
দেশের প্রভাবশালী বাণিজ্য সংগঠনের আপত্তির মুখে নতুন বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা প্রজ্ঞাপন জারির পাঁচ মাসের মধ্যে আবার সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যে এই বিধিমালার ১০টি বিধির সংশোধন চূড়ান্ত করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নতুন বিধিমালায় ফেডারেশনসহ বাণিজ্য সংগঠনে টানা দুবার পদে থাকার পর একবার বিরতির বিধান বাতিল, ফেডারেশন ছাড়া অন্য সংগঠনে পরিচালকদের ভোটে সভাপতি ও সহসভাপতি নির্বাচনের বিধান করা, পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ শিথিল, বাণিজ্য সংগঠনে সদস্য হওয়ার ও সদস্যপদ নবায়ন ফি কমানোসহ কিছু বিধানে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। গত মাসে বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালার সম্ভাব্য সংশোধন নিয়ে ব্যবসায়ী নেতাদের মতামত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
প্রায় তিন দশক পর গত মে মাসে নতুন বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালার প্রজ্ঞাপন জারি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আগের বিধিমালাটি ছিল ১৯৯৪ সালের। এটি করা হয় ১৯৮৫ সালের বিধিমালা বাতিল করে।
বিধিমালা জারির পর ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই) দেশের বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠন বেশ কিছু বিধি সংশোধনের দাবি জানায়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
ব্যবসায়ী নেতারা জানান, নতুন বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালার কিছু বিধানের কারণে এফবিসিসিআই, ঢাকা চেম্বারের মতো কিছু সংগঠনের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন বিলম্বিত হচ্ছে।
জানতে চাইলে বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান গত মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালার সংশোধনের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়ে মোটামুটি একমত হওয়া গেছে। শিগগিরই এটি চূড়ান্ত হয়ে যাবে।
আমরা ঢাকা চেম্বার থেকে কোম্পানি আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিধিগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সংশোধনের অনুরোধ করেছি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তাতে রাজি হয়েছেতাসকীন আহমেদ, সভাপতি, ঢাকা চেম্বারযেসব পরিবর্তন আসছে
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, টানা দুবার বাণিজ্য সংগঠনের নির্বাহী কমিটি বা পর্ষদে থাকলে একবার বিরতি দিয়ে আবার নির্বাচন করা যাবে। নিয়মটি ভবিষ্যতের পাশাপাশি বিগত সময়ের জন্যও প্রযোজ্য হবে বলে নতুন বিধিমালায় বলা হয়। কিন্তু এই বিধানের কারণে এফবিসিসিআইসহ বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠনের অনেক সাবেক ও বর্তমান নেতার পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ কারণে বিধানটি নিয়ে ব্যবসায়ীদের একটি পক্ষ ক্ষুব্ধ। ব্যবসায়ীদের এই ক্ষোভের কারণে বিধানটি বাতিলের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এ ছাড়া বর্তমান বিধি অনুযায়ী, ফেডারেশনসহ সব বাণিজ্য সংগঠনের নির্বাহী কমিটি বা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি, সহসভাপতি ও পরিচালকেরা সদস্যদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হওয়ার হওয়ার কথা। তবে সংশোধনী প্রস্তাব অনুযায়ী, ফেডারেশন ছাড়া দেশের অন্য বাণিজ্য সংগঠনের সভাপতি, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও সহসভাপতি সরাসরি সদস্যদের ভোটে কিংবা পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের মধ্য থেকে নির্বাচিত করার বিধান সংযোজন করা হচ্ছে। নতুন বিধিমালা জারির আগে এই পদ্ধতিতেই বাণিজ্য সংগঠনগুলোর পর্ষদের শীর্ষ পদের নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়ে আসছিল।
এবারের বিধিমালায় ফেডারেশন ও অন্যান্য বাণিজ্য সংগঠনের নির্বাহী কমিটি বা পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ ২৪ মাস বেঁধে দেওয়া হয়। তবে পাঁচ যুগ ধরে এমসিসিআইয়ে তিন বছর মেয়াদি পরিচালনা পর্ষদ রয়েছে, সেখানে প্রতিবছর এক-তৃতীয়াংশ পরিচালক অবসরে যান। সংশোধনী প্রস্তাবে, ফেডারেশন ও অন্যান্য বাণিজ্য সংগঠনের পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ ২৪ অথবা ৩৬ মাস করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
বিদ্যমান বিধিমালায় বাণিজ্য সংগঠনের সদস্য হওয়ার ফি বা মাশুল এক লাফে ৪৩ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে বাড়ানো হয় সদস্যদের বার্ষিক চাঁদার পরিমাণও। এর ফলে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের সংগঠন করার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ে। ফলে সদস্য হওয়া ও সদস্যদের বার্ষিক চাঁদা বৃদ্ধির বিধানটি নিয়ে সারা দেশে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ফলে এ-সংক্রান্ত বিধানও সংশোধন করা হচ্ছে।
বিধিমালায় কী কী সংশোধন হচ্ছে, সেসব বিষয়ে গত মাসে এক বৈঠকে আমাদের জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে শেষ পর্যন্ত কী পরিবর্তন আসে, সেটি দেখার অপেক্ষায় আছি আমরামীর নিজাম উদ্দিন, সাবেক সহসভাপতি, এফবিসিসিআইবাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বিধিমালার সংশোধনী প্রস্তাবে সদস্য হওয়ার ফি ও বার্ষিক চাঁদা কমানোর বিষয়টি আছে। যেমন—ক শ্রেণির বাণিজ্য সংগঠনে সাধারণ সদস্য হওয়ার ফি ১৫ হাজার থেকে কমিয়ে ৫ হাজার টাকা এবং বার্ষিক চাঁদা ৫ হাজার টাকার পরিবর্তে ২ হাজার টাকা করা হতে পারে। খ শ্রেণির বাণিজ্যে সংগঠনে সদস্য হওয়ার ফি ও বার্ষিক চাঁদা একই থাকবে। সহযোগী সদস্যের জন্যও সদস্য ফি ও বার্ষিক চাঁদার হার একই হবে।
বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা প্রজ্ঞাপন সংশোধন করার দাবি নিয়ে শুরু থেকেই সোচ্চার ছিল ফেডারেশনের সদস্যদের একাংশের জোট—এফবিসিসিআই স্বার্থ সংরক্ষণ পরিষদ। এই পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি মীর নিজাম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বিধিমালার সংশোধন প্রক্রিয়া দ্রুত শেষে হলে এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন নির্বিঘ্ন হবে।
মীর নিজাম উদ্দিন আরও বলেন, ‘আমরা শুরু থেকে বাণিজ্য সংগঠন আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এমন বিধি বাদ দিতে অনুরোধ করি। বিধিমালায় কী কী সংশোধন হচ্ছে, সেসব বিষয়ে গত মাসে এক বৈঠকে আমাদের জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে শেষ পর্যন্ত কী পরিবর্তন আসে, সেটি দেখার অপেক্ষায় আছি আমরা।’
জানতে চাইলে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ঢাকা চেম্বার থেকে কোম্পানি আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিধিগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সংশোধনের অনুরোধ করেছি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তাতে রাজি হয়েছে। তবে মন্ত্রণালয় অন্য সবার কথাও শুনছে। শেষ পর্যন্ত কী পরিবর্তন আসবে, সেটি হয়তো মন্ত্রণালয় জানাবে। আমরা ফলোআপ করছি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ণ জ য স গঠন ব ধ ম ল র ন ব ণ জ য স গঠন ব ব ণ জ য স গঠন র সদস য হওয় র ফ ব যবস য় দ র স স আইয় নত ন ব
এছাড়াও পড়ুন:
সিদ্ধিরগঞ্জে তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কর্তৃক ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সিদ্ধিরগঞ্জের ৬নং ওয়ার্ড এলাকার জনসাধারণের মাঝে লিফলেট বিতরণ এবং ধানের শীষের ভোট চেয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সালাম পৌছে দিয়েছেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) রাতে সিদ্ধিরগঞ্জের নাসিক ৬ নং ওয়াডের চর সুমিলপাড়া এলাকায় ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেনের নেতৃত্বে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন বলেন, স্বৈরাচারী হাসিনা দেশের মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করেছিল। দিনের ভোট রাতে হয়েছে। আমি-ডামির নির্বাচন হয়েছে। মানুষ ভোট দিতে পারে নাই।
মানুষের বাক স্বাধীনতা হরণ করেছে। মানুষ যদি কথা বলতে চাইত তাহলে হামলা-মালা চলত। আল্লাহর রহমতে এ দেশ থেকে স্বৈরাচার বিদায় হযেছে। আমরা চাই সবাইকে নিয়ে আগামী দিনে একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার। যে বাংলাদেশে থাকবে না কোন সন্ত্রাস, কোন ভুমিদস্যু, এমন একটি সমাজ গড়তে চাই।
তিনি বলেন, দল যাকে বিএনপির মনোনয়ন দিবেন আমরা তার পক্ষেই ৬নং ওয়ার্ড বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন ধানের শীষকে বিজয়ী করতে কাজ করব।
এ-সময় উপস্থিত ছিলেন, মুনির হোসেন, সিনিয়র সহসভাপতি কামাল হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, থানা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো: জাকির হোসেন, ওয়ার্ড বিএনপির দপ্তর সম্পাদক আলী আক্কাস, ওয়ার্ড যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল আমিন মিন্টু, সহসভাপতি এরশাদ গাজী, সহসাধারণ রুবেল হোসেন মিন্টু, ওয়ার্ড সেচ্ছাসেবকদলের সহসভাপতি হুমায়ুন, ওয়ার্ড শ্রমিকদলের সহসভাপতি জাবেদ, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক জরিনা বেগম, হাজেরা বেগম, জাবেদ, যুবদল নেতাওমর শরীফ, বাবু, ওসমান,রুবেন, সাজ্জাদ, রুহুল আমিন।