রাকসু নির্বাচন : নবীনবরণ ঘিরে প্রার্থীদের প্রচারণা, এক প্রার্থী দিলেন শিউলি ফুল
Published: 13th, October 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ অনুষ্ঠান ঘিরে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের প্রচার চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। আজ সোমবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তন–সংলগ্ন এলাকায় নবীন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি প্রচার চালান তাঁরা।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের প্রতিবছর আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করে নেওয়া হয়। এবারও সেই রীতি মেনে প্রায় চার হাজার শিক্ষার্থীকে বরণ নিচ্ছে প্রশাসন। আজ সকাল ১০টায় শুরু হয় এই অনুষ্ঠান। নবীন শিক্ষার্থীদের দিকনির্দেশনামূলক আলোচনার পাশাপাশি নবীন শিক্ষার্থীদেরও বক্তব্য দেওয়ার কথা আছে। সেই সঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর্বও আছে। অনুষ্ঠানের শুরুতে শিক্ষার্থীদের ফুল ও শিক্ষা উপকরণ দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। এসব নবীন আসন্ন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার পাশাপাশি ভোট দিতে পারবেন।
এদিকে নবীনবরণ অনুষ্ঠানস্থলে প্রার্থীরা ঢুকতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম। তিনি জানান, প্রার্থীরা অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে থেকে প্রচার চালাতে পারবেন।
আরও পড়ুনভোটার ও প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত নবীন শিক্ষার্থীরা, তুলেছেন মনোনয়নপত্র০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫শিউলি ফুলের শুভেচ্ছানবীনবরণ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র প্রার্থীরা সকাল থেকেই ভিড় করেন কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনের সামনে। তাঁরা জানান, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে নতুন। তাঁদের সবার কাছে প্রার্থীরা পৌঁছাতে পারেননি। আজ তাঁদের একসঙ্গে পাওয়া গেছে। এই নির্বাচনে এসব শিক্ষার্থী বিশাল ভোটব্যাংক।
আজ সকালে নবীন শিক্ষার্থীদের শিউলি ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান রাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী ও অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী নোমান ইমতিয়াজ। তিনি সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনেও প্রার্থী হয়েছেন। ফুলের পাশাপাশি নিজের নির্বাচনী লিফলেটও বিলি করেন তিনি।
শিউলি ফুল হাতে পেয়ে মুগ্ধতার কথা জানান গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ইরিন জামান খান। তিনি বলেন, ‘অসাধারণ! ফুল হাতে পেয়ে ভালো লাগছে।’
ভোটারদের হাতে প্রচারপত্র তুলে দিচ্ছেন ৫১ বছর বয়সী প্রার্থী শাহরিয়ার মোরশেদ.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নব ন শ ক ষ র থ দ র বর ষ র শ ক ষ র থ অন ষ ঠ ন
এছাড়াও পড়ুন:
গণ-অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশ ও বেহাত বিপ্লব
বাংলাদেশের ইতিহাস মূলত গণমানুষের জাগরণের ইতিহাস। ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান—প্রতিটি অধ্যায়ে তৃণমূল মানুষের আত্মত্যাগ, রক্ত ও স্বাধীনভাবে বাঁচার আকাঙ্ক্ষা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। কিন্তু প্রতিটি বিজয়ের পর ইতিহাস যেন এক অপ্রিয় বাস্তবতার পুনরাবৃত্তি ঘটায়। বিপ্লব হয়, পরিবর্তনের সুর বাজে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্ষমতা ফিরে যায় ভিন্ন মুখোশধারী একই গোষ্ঠীর হাতে। যেন—যে যায় লঙ্কায়, সে-ই হয় রাবণ।
তাহলে প্রশ্ন জাগে—আমাদের গণ-অভ্যুত্থানগুলো কি সত্যিই জনগণের জন্য, নাকি সাধারণ মানুষের রক্তের ওপর দিয়ে রাজনীতিবিদদের ক্ষমতার পালাবদলের হাতিয়ার?
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল এক মহান সামাজিক বিপ্লবের সামগ্রিক ফসল। কিন্তু যুদ্ধ-পরবর্তী সময়েই সেই বিপ্লবের নেতৃত্ব চলে যায় রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত এক এলিট শ্রেণির হাতে। যাদের ওপর আস্থা রেখে জনগণ শাসনক্ষমতা অর্পণ করেছিলেন, কালের পরিক্রমায় তারাই শাসক থেকে শোষকে রূপান্তরিত হলেন। হয়ে উঠলেন রক্ষক থেকে ভক্ষক। অথচ জনতার স্বপ্ন ছিল একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ও জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা। কিন্তু বাস্তবে তার সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র পরিলক্ষিত হলো—যেখানে আদর্শ হার মানল লোভের কাছে, আর রাজনীতি পরিণত হলো স্বার্থ চরিতার্থ করার যন্ত্রে। ফলস্বরূপ, জনমনে জন্ম নিল নতুন অসন্তোষ।
এরপর এল ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থান। ছাত্রসমাজ ও সাধারণ জনগণ একত্র হয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে রচনা করল এক নতুন ইতিহাস। সবাই ভেবেছিল, এবার হয়তো সত্যিকারের গণতন্ত্রের সূর্যোদয় হবে। কিন্তু না—ইতিহাস আবারও নিজেকে পুনরাবৃত্ত করল। আন্দোলনের সুফল ভোগ করল রাজনীতির পুরোনো খেলোয়াড়েরা, আর যারা রাস্তায় রক্ত দিল, যাদের পরিবারের সদস্যরা জীবন বিপন্ন করল, তারাই রইল মঞ্চের বাইরে। শাসক বদলাল, কিন্তু চরিত্র বদলাল না। আবারও বিপ্লব বেহাত হলো।
সর্বশেষ ২০২৪ সালের স্বৈরাচারবিরোধী গণ-অভ্যুত্থানেও দৃশ্যপট প্রায় অভিন্ন। হাজারো শহীদের আত্মত্যাগ আর অসংখ্য মানুষের পঙ্গুত্বের বিনিময়ে উদিত হয়েছিল এক নতুন সূর্য। কিন্তু বছর না ঘুরতেই দেখা গেল সেই পুরোনো পরিচিত চিত্র—চাঁদাবাজি, বদলি বাণিজ্য, রাজনৈতিক কোন্দল এবং অভ্যন্তরীণ বিভাজনে বিপ্লবের চেতনা ক্ষয় হতে শুরু করল। সংস্কার নিয়ে ঐকমত্যে বিরোধ, ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে তর্ক—সব মিলিয়ে গণ-অভ্যুত্থানের মূল চেতনা আজ প্রায় বিপর্যস্ত। যাদের আত্মত্যাগে এই আন্দোলন সফল হয়েছিল, তাদের প্রতি দেখা যাচ্ছে অবহেলা। অন্যদিকে পরাজিত শক্তিও আবার মাথা তুলছে—নাশকতা, ককটেল বিস্ফোরণ, রাজনৈতিক সহিংসতা—সবকিছু যেন ফিরে এসেছে পুরোনো চিত্রে।
সব মিলিয়ে আজকের বাংলাদেশ যেন তাসের ঘরের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা এক বেহাত বিপ্লবের নাম। দুই দিন পর হয়তো নির্বাচন হবে, সরকার গঠিত হবে, কিন্তু তারপর? হয়তো দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নেই ব্যস্ত থাকবে রাজনৈতিক দলগুলো। জনগণকে তখন মনে পড়বে কেবল ভোটের দিনে, আর বাকিটা সময় তারা হয়ে থাকবে নিছক এক ‘সংখ্যা’।
ইতিহাস সাক্ষী—প্রয়োজনে যতবারই ক্রান্তিকাল এসেছে, কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র ও সাধারণ জনতা রক্ত দিয়েছে। অথচ ক্ষমতার স্বাদ নিয়েছেন রাজনীতিবিদেরা ও মুষ্টিমেয় এলিট শ্রেণি। বিপ্লবের চেতনা রাস্তায় জন্ম নেয়, কিন্তু ফল ভোগ করে চৌহদ্দিতে বন্দী কিছু সুযোগসন্ধানী। এই চক্র ভাঙতেই হবে—এবং ভাঙতেই হবে। তবে এর জন্য কেবল বিপ্লব বা সরকার পরিবর্তনই যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন মানুষের মানসিকতার গভীর পরিবর্তন। বিপ্লবীদেরও বুঝতে হবে—অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতা হস্তান্তরই চূড়ান্ত দায়িত্ব নয়; নিজেদের হাতে নিয়ে দায়িত্বশীলভাবে রাষ্ট্রকে পুনর্গঠন করাও তাদের কর্তব্য। জনগণকে নিজেদের ক্ষমতা, অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ সচেতন হতে হবে। রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিককে রাজনীতি-সচেতন, নেতৃত্ব নির্বাচনে সজাগ ও দায়িত্বশীল হতে হবে।
তবেই হয়তো এই হতভাগ্য রাষ্ট্রের ভাগ্য আকাশে সুবাতাস বইবে; নয়তো এই অন্ধকার চক্র চলবে শেষনিশ্বাস পর্যন্ত।
সাব্বির রহমান
শিক্ষার্থী, রাজনীতিবিজ্ঞান, ঢাকা কলেজ।