ক্লোজড হওয়া এসআই রাসেলের ঘুষের টাকা নিয়ে তোলপাড়
Published: 17th, October 2025 GMT
যুবদল নেতাকে থাপ্পড় মারার ঘটনায় ক্লোজড হওয়া এসআই রাসেল মিয়ার এবার ৬৫ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এসআই রাসেল এক সিএনজি চালককে ভয় দেখিয়ে দুই দফায় ৬৫ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বর্তমানে যমুনা সেতু পূর্ব থানায় এসআই হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এর আগে গত ২৬ আগস্ট গোপালপুর থানায় আলমনগর ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য সচিব আমিনুল ইসলামকে থাপ্পড় দেওয়ার ঘটনায় উপপরিদর্শক (এসআই) রাসেল মিয়াকে ক্লোজড করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, গত ৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় কালিহাতীর দেউপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামের হাফেজ জোনায়েদ আল হাবিব টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কের ৭নং সেতু থেকে নিজ বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। সেসময় মীরহামজানি গ্রামের সেলিম নামে এক সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালককে গাড়ি থামাতে ইশারা দেন। অটোরিকশাটি একটু দূরে গিয়ে থামে।
ততক্ষণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি ট্রাক মহাসড়কের পাশে পড়ে যায়। ট্রাক চাপায় হাফেজ জোনায়েদ নামে এক ব্যক্তি গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেলারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে নিহতের পরিবার থানায় কোন অভিযোগ করেনি। ট্রাক মালিকের পক্ষ থেকে জোনায়েদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করতে চাইলে তারা কোন সহযোগিতা নেয়নি।
এদিকে ১২ সেপ্টেম্বর যমুনা সেতুর এসআই মো.
তারা জানান, মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করা পুলিশ সদস্য কীভাবে গ্রামে প্রবেশ করে ঘুষ নিলো এটা নিয়ে সম্প্রতি সময়ে জানাজানি হলে এলাকায় তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে।
হাফেজ জোনায়েদের ভাই ইলিয়াস বলেন, “জোনায়েদের জানাযায় ট্রাক মালিক এসে ক্ষতিপূরণ দিতে চেয়েছিলেন। আমরা নেইনি। এছাড়া থানায়ও কোন অভিযোগ করা হয়নি। তবে ট্রাক মালিক আমাকে ফোন করে জানিয়েছেন, পুলিশ তাদের কাছে মোটা অংকের টাকা চাচ্ছে।”
ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয় তানভীর আহমেদ জানান, “আইন অমান্য করে এসআই রাসেল সেলিমের বাড়িতে প্রবেশ করেছে। রাসেল তো সেতু থানার পুলিশ। সে তো কোনভাবে বাড়িতে প্রবেশ করতে পারে না। সাথে কালিহাতী থানা পুলিশ থাকলে ভাল হতো। রাসেল বাড়ির নারী সদস্যসহ অনেককেই অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। অভ্যুত্থানের পর ভেবেছিলাম পুলিশ মানুষকে ভয় দেখি ঘুষ নেওয়া বন্ধ করবে। ফ্যাসিস্ট সরকারের পুলিশের মতো কাজ করেছে এসআই রাসেল।”
স্থানীয় ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামান ফরিদ বলেন, “রাত ১১টার পর এসআই রাসেল সেলিমের বাড়ি যান। সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মরছে সেই ভয় দেখিয়ে এসআই রাসেল দুই দফায় ৭০ হাজার টাকা নিয়েছে। গরিব মানুষকে এভাবে অত্যাচার করা ঠিক না।”
সেলিমের বাবা আব্দুল হাই বলেন, “পুলিশ বাড়িতে গিয়ে অনেক ভয় দেখিয়ে দুই লাখ টাকা দাবি করে। ভয় বা হুমকি ধামকি থেকে বাঁচতে সর্বশেষ ৭০ লাখ টাকায় দফারফা হয়। ঋণ করে প্রথম দিন ২৫ হাজার পরের দিন ৪৫ হাজার টাকা দিলে পাঁচ হাজার টাকা ফেরত দেয়। সেসময় থানার ওসি অসুস্থ থাকায় তার জন্য দোয়া করতে বলেন এসআই রাসেল মিয়া। টাকা ফেরতসহ রাসেলের বিচার চাই।”
সিএনজি চালক মো. সেলিম মিয়া বলেন, “আমরা গরিব মানুষ। আমাদের অনেক ভয় দেখিয়েছে। এই পুলিশের বিচার হওয়া জরুরি।”
এ প্রসঙ্গে এসআই রাসেল মিয়া বলেন, “বিষয়টি সমাধানের জন্য স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”
যমুনা সেতু পূর্ব থানার তৎকালীন ওসি ফয়েজ আহম্মেদ জানান, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।
যমুনার সেতু পূর্ব থানার ওসি মো. শবজেল বলেন, “আমি নতুন যোগদান করেছি। এ বিষয়ে কিছুই বলতে পারব না।”
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. রবিউল ইসলাম বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। কেউ অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
ঢাকা/কাওছার/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এসআই র স ল ভয় দ খ য় স এনজ সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
৬ জনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন, স্বজনদের ডিএনএ নমুনা নেবে সিআইডি
রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে আগুনে পুড়ে নিহত ১৬ জনের মধ্যে ৬ জনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। আজ বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে এসব মরদেহের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্ত করা হয়।
তবে পরিচয় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সব মরদেহই ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে থাকবে।
রূপনগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, আজ সন্ধ্যায় ৬ জনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ফরেনসিক চিকিৎসকেরা ওই সব মরদেহ থেকে ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের জন্য নমুনা সংগ্রহ করেছেন।
মৃত ব্যক্তিদের পরিচয় নিশ্চিত হতে সব দাবিদারের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করবে সিআইডির ফরেনসিক ল্যাব। পোশাক কারখানার নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনদের আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে মালিবাগে সিআইডির ল্যাবে যেতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ল্যাবের পরীক্ষক মাসুদ রাব্বি।
রূপনগর থানার এসআই মোখলেছুর বলেন, বাকি মরদেহগুলোর ময়নাতদন্ত পর্যায়ক্রমে করা হবে। তিনি আরও বলেন, ডিএনের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত হয়ে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।
শিয়ালবাড়ির একটি টিনশেড দোতলা রাসায়নিক গুদামে গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আগুন লাগে। গুদামে আগুন ধরে বিস্ফোরিত হয়ে পাশের চারতলা ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। পরে চারতলা ভবনের দোতলা ও তিনতলার বিভিন্ন স্থান থেকে ১৬টি লাশ উদ্ধার করা হয়। সেদিনও সন্ধ্যার পর মরদেহগুলো ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়।
হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান আজ দুপুরের দিকে তাঁর দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেন, ৯ জন পুরুষ ও ৭ জন নারীর লাশ এখানে এসেছে। স্বজনেরা চাইলে, আর পুলিশ বা জেলা প্রশাসন অনুমতি দিলে শনাক্ত হওয়া লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়া হস্তান্তর করা যাবে।
আরও পড়ুনমিরপুরে আগুন: ১০ জনের লাশ শনাক্তের দাবি স্বজনদের৮ ঘণ্টা আগে