যুবদল নেতাকে থাপ্পড় মারার ঘটনায় ক্লোজড হওয়া এসআই রাসেল মিয়ার এবার ৬৫ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এসআই রাসেল এক সিএনজি চালককে ভয় দেখিয়ে দুই দফায় ৬৫ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন। 

পুলিশের এই কর্মকর্তা বর্তমানে যমুনা সেতু পূর্ব থানায় এসআই হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এর আগে গত ২৬ আগস্ট গোপালপুর থানায় আলমনগর ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য সচিব আমিনুল ইসলামকে থাপ্পড় দেওয়ার ঘটনায় উপপরিদর্শক (এসআই) রাসেল মিয়াকে ক্লোজড করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, গত ৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় কালিহাতীর দেউপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামের হাফেজ জোনায়েদ আল হাবিব টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কের ৭নং সেতু থেকে নিজ বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। সেসময় মীরহামজানি গ্রামের সেলিম নামে এক সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালককে গাড়ি থামাতে ইশারা দেন। অটোরিকশাটি একটু দূরে গিয়ে থামে। 

ততক্ষণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি ট্রাক মহাসড়কের পাশে পড়ে যায়। ট্রাক চাপায় হাফেজ জোনায়েদ নামে এক ব্যক্তি গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেলারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এ বিষয়ে নিহতের পরিবার থানায় কোন অভিযোগ করেনি। ট্রাক মালিকের পক্ষ থেকে জোনায়েদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করতে চাইলে তারা কোন সহযোগিতা নেয়নি। 

এদিকে ১২ সেপ্টেম্বর যমুনা সেতুর এসআই মো.

রাসেল মিয়াসহ দুই পুলিশ সদস্য সিএনজি চালক সেলিমের বাড়িতে গিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে ২৫ হাজার টাকাসহ সিএনজিটি থানায় নিয়ে যান। পরে দিন রাতে তৎকালীন ওসিকে টাকা দিতে হবে বলে আরো ৪৫ হাজার টাকা নিয়ে সিএনজি ছেড়ে দেন। এসময় সেলিমের বাবা আব্দুল হাই, আত্মীয় হাফেজ আলী, স্থানীয় তানভীর আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

তারা জানান, মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করা পুলিশ সদস্য কীভাবে গ্রামে প্রবেশ করে ঘুষ নিলো এটা নিয়ে সম্প্রতি সময়ে জানাজানি হলে এলাকায় তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে।

হাফেজ জোনায়েদের ভাই ইলিয়াস বলেন, “জোনায়েদের জানাযায় ট্রাক মালিক এসে ক্ষতিপূরণ দিতে চেয়েছিলেন। আমরা নেইনি। এছাড়া থানায়ও কোন অভিযোগ করা হয়নি। তবে ট্রাক মালিক আমাকে ফোন করে জানিয়েছেন, পুলিশ তাদের কাছে মোটা অংকের টাকা চাচ্ছে।”

ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয় তানভীর আহমেদ জানান, “আইন অমান্য করে এসআই রাসেল সেলিমের বাড়িতে প্রবেশ করেছে। রাসেল তো সেতু থানার পুলিশ। সে তো কোনভাবে বাড়িতে প্রবেশ করতে পারে না। সাথে কালিহাতী থানা পুলিশ থাকলে ভাল হতো। রাসেল বাড়ির নারী সদস্যসহ অনেককেই অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। অভ্যুত্থানের পর ভেবেছিলাম পুলিশ মানুষকে ভয় দেখি ঘুষ নেওয়া বন্ধ করবে। ফ্যাসিস্ট সরকারের পুলিশের মতো কাজ করেছে এসআই রাসেল।”

স্থানীয় ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামান ফরিদ বলেন, “রাত ১১টার পর এসআই রাসেল সেলিমের বাড়ি যান। সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মরছে সেই ভয় দেখিয়ে এসআই রাসেল দুই দফায় ৭০ হাজার টাকা নিয়েছে। গরিব মানুষকে এভাবে অত্যাচার করা ঠিক না।”

সেলিমের বাবা আব্দুল হাই বলেন, “পুলিশ বাড়িতে গিয়ে অনেক ভয় দেখিয়ে দুই লাখ টাকা দাবি করে। ভয় বা হুমকি ধামকি থেকে বাঁচতে সর্বশেষ ৭০ লাখ টাকায় দফারফা হয়। ঋণ করে প্রথম দিন ২৫ হাজার পরের দিন ৪৫ হাজার টাকা দিলে পাঁচ হাজার টাকা ফেরত দেয়। সেসময় থানার ওসি অসুস্থ থাকায় তার জন্য দোয়া করতে বলেন এসআই রাসেল মিয়া। টাকা ফেরতসহ রাসেলের বিচার চাই।”

সিএনজি চালক মো. সেলিম মিয়া বলেন, “আমরা গরিব মানুষ। আমাদের অনেক ভয় দেখিয়েছে। এই পুলিশের বিচার হওয়া জরুরি।”

এ প্রসঙ্গে এসআই রাসেল মিয়া বলেন, “বিষয়টি সমাধানের জন্য স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”

যমুনা সেতু পূর্ব থানার তৎকালীন ওসি ফয়েজ আহম্মেদ জানান, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।

যমুনার সেতু পূর্ব থানার ওসি মো. শবজেল বলেন, “আমি নতুন যোগদান করেছি। এ বিষয়ে কিছুই বলতে পারব না।”

টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. রবিউল ইসলাম বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। কেউ অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

ঢাকা/কাওছার/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এসআই র স ল ভয় দ খ য় স এনজ সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

আলোচিত রায়হান হত্যার রায় ৭ জানুয়ারি

সিলেটের বহুল আলোচিত রায়হান উদ্দিন হত্যা মামলার রায় আগামী ৭ জানুয়ারি ঘোষণা করবেন আদালত। রবিবার (৩০ নভেম্বর) যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে সিলেট মহানগর দায়রা জজ মুন্সী আব্দুল মজিদ রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য করেন। 

২০২০ সালের ১০ অক্টোবর মধ্যরাতে রায়হানকে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নেয় পুলিশ। পরদিন সকালে তাকে সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয়। পরিবারের দাবি ছিল-পুলিশি নির্যাতনে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে।

আরো পড়ুন:

খলাপাড়ার গণহত্যা দিবস: স্বাধীনতার প্রান্তে শহীদ হন ১০৬ জন

মেহেরপুরে ১০ স্বর্ণের বার উদ্ধার, ভারতীয়সহ গ্রেপ্তার ২

আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) বদরুল ইসলাম বলেন, “আদালতে কারাবন্দি বহিষ্কৃত এএসআই আশেক এলাহির যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। এর আগে, ২৬ নভেম্বর মামলার পলাতক থাকা পাঁচ আসামির যুক্তিতর্ক সম্পন্ন হয়। আদালত আগামী ৭ জানুয়ারি রায়হান হত্যার রায় ঘোষণা করবেন বলে জানান।”

সূত্র জানায়, মামলার অন্য আসামিদের বেশির ভাগই জামিনে বের হওয়ার পর থেকে পলাতক। প্রধান আসামি বরখাস্তকৃত এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়া উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বের হলেও পরবর্তীতে তাঁর জামিন স্থগিত করা হয় এবং ১০ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়। তিনি আদালতে হাজির না হয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।

নিহতের স্ত্রীর করা মামলায় গঠিত তদন্ত কমিটি রায়হানকে নির্যাতনের সত্যতা পায়। এরপর এসআই আকবরসহ চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। পরে পিবিআই তদন্ত করে মামলায় ৬ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দেয় ২০২১ সালের ৫ মে।

অভিযুক্তরা হলেন- ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়া, এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল হারুন অর রশিদ, টিটু চন্দ্র দাস, এসআই হাসান উদ্দিন এবং সংবাদকর্মী আবদুল্লাহ আল নোমান।

এ মামলায় ৬৯ সাক্ষীর মধ্যে ৬৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। চার বছর পর এখন রায়ের অপেক্ষায় রয়েছেন রায়হানের পরিবার।

ঢাকা/রাহাত/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আলোচিত রায়হান হত্যার রায় ৭ জানুয়ারি
  • যশোরে বিপুল অস্ত্র-গুলি ও গাঁজাসহ গ্রেপ্তার ১