সুস্বাস্থ্য ফিরে পেতে নবীজিকে ফেরেশতা জিবরাইলের দোয়া ও উপদেশ
Published: 17th, October 2025 GMT
মানবজীবনে সুস্বাস্থ্য কেবল দেহের নয়, আত্মা ও মন—সবকিছুর ভারসাম্য নিশ্চিত করারও গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কুরআন ও হাদিসে বারবার দেহ ও আত্মার স্বাস্থ্যকে আল্লাহর অমূল্য নিয়ামত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মহানবী (স.)-এর জীবন ও শিক্ষার মধ্যে সুস্থতা ও রোগমুক্তি সংক্রান্ত অসাধারণ নির্দেশনা পাওয়া যায়।
নবীজির শারীরিক দুর্বলতা ও জিবরাইলের আগমনঐতিহাসিক গ্রন্থগুলিতে বর্ণিত আছে, একবার নবীজি (স.
১. আরোগ্যের দোয়া (রুকইয়াহ)
২. প্রাকৃতিক ও শক্তিবর্ধক খাদ্য গ্রহণ
সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (স.) যখন অসুস্থ হতেন, তখন ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) এসে তাঁকে আরোগ্যের দোয়া শিখিয়ে দিতেন এবং আল্লাহর অনুমতিতে শিফার দোয়া পাঠ করতেন।
উচ্চারণ: “বিসমিল্লাহি উবরিক, মিন কুল্লি দা’ইন ইউশফিক, ও মিন শার্রি হাসিদিন ইযা হাসাদ, ও শার্রি কুল্লি যি আইনিন।”
অর্থ: “আল্লাহর নামে তোমাকে আরোগ্য দিচ্ছি; তিনি যেন সব রোগ থেকে তোমাকে সুস্থ করেন; হিংসুকের হিংসা থেকে এবং বদনজর দেওয়া সবার অনিষ্ট থেকে তোমাকে রক্ষা করেন।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২১৮৫; সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৭৩৮)
আরও পড়ুনমহানবী (সা.)-এর সুস্থতার চর্চা থেকে শিক্ষা০৮ আগস্ট ২০২৫নবীজির বিনয় ও অনুযোগরাসুলুল্লাহ (স.) অত্যন্ত বিনয়ীভাবে জিবরাইল (আ.)-এর কাছে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করতেন। হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন, “হে জিবরাইল, আমি কষ্টে আছি।” (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৪৬৯১)
এরপর জিবরাইল (আ.) নবীজির মাথা ও শরীরে হাত বুলিয়ে এই দোয়াটি পাঠ করতেন। এই ঘটনা মুসলমানদের জন্য শিক্ষণীয়—রোগ বা দুর্বলতা প্রকাশ করা লজ্জার বিষয় নয়, বরং সমাধান ও সাহায্যের পথে ধৈর্য ও বিনয় প্রদর্শনের সুযোগ।
প্রাকৃতিক খাদ্য ও শক্তি পুনরুদ্ধারজিবরাইল (আ.) নবীজিকে পরামর্শ দেন মধু, দুধ এবং যব (বার্লি) দিয়ে তৈরি একটি পানীয় গ্রহণের। এটি আরব অঞ্চলে ঐতিহাসিকভাবে “ফালুদা” বা “মিশ্র মিষ্ট পানীয়” নামে পরিচিত ছিল। এই পানীয় শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি, হজমশক্তি উন্নয়ন ও স্নায়ু শক্তি জাগ্রত করতে সাহায্য করতো।
ইবনে কাইয়িম জাওযি লিখেছেন, “জিবরাইল (আ.) নবী (স.)-কে যে পানীয়ের পরামর্শ দিয়েছিলেন, তা ছিল যবের রস, দুধ ও মধুর মিশ্রণ। এটি শরীরের উত্তাপ প্রশমিত করে, শক্তি পুনরুদ্ধার করে ও পেট পরিষ্কার রাখে।” (যাদুল মাআদ, ৪/৩৬, দার আল-কুতুব আল-ইলমিয়্যা, বৈরুত, ১৯৯৮)
এই উপদেশ ইসলামি চিকিৎসাশাস্ত্রে নববী খাদ্যতত্ত্ব (Prophetic Nutrition) হিসেবে প্রমাণিত। নবীজির (স.) জীবন এই শিক্ষা দেয়—শরীর ও মন উভয়ই আল্লাহর নিয়ামত, সুতরাং সঠিক যত্ন অপরিহার্য।
দোয়া ও চিকিৎসা: যুগল সুরক্ষানবীজির (স.) জীবন থেকে স্পষ্ট হয়, রোগ বা দুর্বলতার সময়ে শুধু দোয়া যথেষ্ট নয়; প্রাকৃতিক খাদ্য ও চিকিৎসা গ্রহণও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি শিখিয়েছেন—
দোয়া (রুকইয়াহ) দ্বারা আত্মিক আরোগ্য অর্জন করা যায়
প্রাকৃতিক ও শক্তিবর্ধক খাদ্য দেহকে সুস্থ রাখে
ধৈর্য ও তাওয়াক্কুল বজায় রাখা আবশ্যক
আরও পড়ুনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ঘুমের আগে নবীজির (সা.) ৭ নির্দেশনা১৪ অক্টোবর ২০২৫সহিহ হাদিসে নবীজির (স.) খাদ্যাভ্যাস ও সুস্থতা রক্ষার নিয়ম উল্লেখিত, “আল্লাহ এমন কোনো রোগ দেননি, যার আরোগ্য পাঠাননি।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৬৭৮)
এটি নির্দেশ করে যে, দোয়া ও প্রাকৃতিক উপাদান একসঙ্গে চলার মধ্য দিয়ে প্রকৃত আরোগ্য আসে।
নববী জীবনধারার আধুনিক প্রাসঙ্গিকতাআজকের যুগে অতিমাত্রায় প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, অনিয়মিত জীবনধারা ও মানসিক চাপ বৃদ্ধির কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়েছে। নবীজির (স.) জীবনধারা মুসলিম সমাজকে শিক্ষা দেয়—
১. দোয়া ও আত্মিক নিরাময়: প্রতিদিন আল্লাহর কাছে রোগমুক্তির জন্য দোয়া করা।
২. প্রাকৃতিক খাদ্য গ্রহণ: দুধ, মধু, যব, খেজুর ইত্যাদি।
৩. পরিমিত আহার ও বিশ্রাম: অতিভোজন, অনিয়মিত ঘুম বা অস্বাস্থ্যকর খাদ্য থেকে বিরত থাকা।
৪. নিয়মিত শরীরচর্চা: হাঁটাচলা, ফ্লেক্সিবিলিটি ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা।
শিক্ষা ও প্রেরণারোগ বা দুর্বলতা প্রকাশ করা লজ্জার বিষয় নয়; এটি সমাধানের পথ খোলে।
প্রাকৃতিক খাদ্য ও শক্তিবর্ধক পানীয় শুধু নবীজির (স.) জন্য নয়, বর্তমান যুগের জন্যও উপযোগী।
দোয়া, প্রাকৃতিক খাদ্য ও আল্লাহর ওপর ভরসা—এই তিনের সংমিশ্রণেই নিহিত প্রকৃত আরোগ্য।
নববী জীবনধারা আমাদের শেখায়, সুস্থ দেহ ও মন ছাড়া কার্যকর ইবাদত ও সঠিক জীবনযাপন সম্ভব নয়।
ফেরেশতা জিবরাইল (আ.)-এর শেখানো দোয়া ও খাদ্যসংক্রান্ত উপদেশ শুধু নবীজির (স.) জন্য নয়, বরং প্রতিটি মুসলমানের জন্য দিকনির্দেশ। প্রকৃত আরোগ্য আসে দোয়া, প্রাকৃতিক খাদ্য ও আল্লাহর ওপর ভরসা মিলিয়ে।
এই শিক্ষার আলোকে মুসলমানরা শারীরিক ও আত্মিকভাবে সুস্থ থাকতে পারে, যাতে ইবাদত, পরিবার ও সমাজের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা যায়।
আরও পড়ুনবিরে শিফা: একটি অলৌকিক কুয়ার গল্প০৫ মে ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র বলত জ বনধ র ফ র শত র জন য নব জ র আর গ য আল ল হ
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শুরু
জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান মঞ্চে এসেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
উপস্থিত হয়েছেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা। যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা।
বিস্তারিত আসছে..
ঢাকা/আসাদ/নঈমুদ্দীন/সাইফ