শেখ হাসিনার মামলার বিচারপ্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা দেখেননি রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী
Published: 13th, November 2025 GMT
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলার বিচারপ্রক্রিয়ায় কোনো অস্বচ্ছতা দেখেননি বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। তিনি বলেন, বিচারপ্রক্রিয়ায় কোনো অস্বচ্ছতা দেখেননি তিনি। কারণ, তাঁকে কেউ কোনো রকমের ইন্টারাপ্ট করেনি (বাধা দেয়নি)। এর বাইরে কোনো অস্বচ্ছতা আছে কি না, তা তাঁর জানা নেই।
শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা এ মামলার রায় আগামী সোমবার (১৭ নভেম্বর) নির্ধারণ করার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে আমির হোসেন এ কথা বলেন।
এ মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন আসামি। এর মধ্যে সাবেক আইজিপি মামুন নিজের দোষ স্বীকার করে ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী নামে পরিচিত) হয়েছেন।
আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক। তাঁদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন।
সাক্ষ্য গ্রহণসহ সবকিছু সমাপ্ত করে রায়ের দিন ধার্য করায় ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি ও বিচারকদের ধন্যবাদ দেন আইনজীবী আমির হোসেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের উপস্থাপন করা সাক্ষীদের কাছ থেকে বিভিন্ন রকম গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আনতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের উপস্থাপন করা দালিলিক সাক্ষ্যে বিতর্ক (কন্ট্রোভার্সি) তৈরি করার চেষ্টা করেছেন এবং বিভিন্ন সময় দালিলিক সাক্ষীর ওপর বিতর্ক তৈরি হয়েছে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। তিনি বিশ্বাস করেন, তাঁর মক্কেলদ্বয় (শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান) খালাস পাবেন।
রাষ্ট্রপক্ষ থেকে যেসব কাগজপত্র ও দলিলাদি পাওয়া গেছে, তার আলোকে এই মামলা পরিচালনা করেছেন জানিয়ে আমির হোসেন বলেন, সে জায়গায় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তাঁকে কোনো বাধা দেওয়া হয়নি। কাগজপত্র যা যা দরকার, যা যা রাষ্ট্রপক্ষের কাছে ছিল, আইন অনুযায়ী যেসব নথিপত্র তাঁর পাওয়া উচিত, সেসবই তাঁকে দেওয়া হয়েছে।
শুধু রাষ্ট্রপক্ষের নথিপত্র দিয়ে মামলা যথাযথভাবে পরিচালনা করতে পেরেছেন, এ–সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে আইনজীবী আমির বলেন, তাঁর সীমাবদ্ধতা থেকে তিনি চেষ্টা করেছেন, যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন। তাঁর তরফ থেকে চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না এবং তাঁর চেষ্টায় কেউ কোনো বাধাও দেয়নি।
আমির হোসেন বলেন, আসামিরা উপস্থিত থাকলে যেসব সুবিধা পাওয়া যায়, যেসব ডকুমেন্টারি এভিডেন্স (প্রামাণ্য নথিপত্র) হয়তো তাঁকে তাঁরা (আসামিরা) দিতে পারতেন, সেসব নিয়ে তিনি লড়াই করতে পারতেন। সেসব তিনি পাচ্ছেন না। রাষ্ট্রপক্ষ এক জায়গায় কোনো একটা ঘটনার যেভাবে বর্ণনা দিয়েছে, সেই বর্ণনার বাইরেও হয়তো কোনো বর্ণনা থাকতে পারে। সেসব তিনি পাননি। এই জায়গায় তাঁর কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। সেই সীমাবদ্ধতা তাঁর মক্কেলরা অনুপস্থিত থাকার কারণে।
এ মামলার আসামি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন নিজে বাঁচার জন্য অ্যাপ্রুভার বা রাজসাক্ষী হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন আমির হোসেন। তিনি বলেন, তাঁর মক্কেলদের (শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান) ওপর ভর করে সাবেক আইজিপি এটি করেছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ষ ট রপক ষ র আস দ জ জ ম ন আম র হ স ন আইনজ ব আস ম র ন আস ম কর ছ ন আইজ প
এছাড়াও পড়ুন:
বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন পুনর্বহালের নির্দেশ
বাগেরহাটে সংসদীয় আসন চারটি থেকে কমিয়ে তিন আসন করা সংক্রান্ত নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিদ্ধান্তকে আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। আগের মতো বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন পুনর্বহাল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকার ও বিচারপতি ফয়সাল হাসান আরিফের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার এ রায় দেন।
রায়ের বিষয়টি জানিয়ে পরে রিট আবেদনকারীদের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আগের মতো বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন পুনর্বহাল করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বাগেরহাটে চারটি আসন ছিল, একটি কমিয়ে গাজীপুরে একটি আসন বাড়ানো হয়েছিল। বাগেরহাট-৪ আসন কেটে গাজীপুর-৬ আসন করা হয়েছিল। এখন বাগেরহাট-৪ আসন পুনর্বহাল হবে এবং গাজীপুর-৬ আসন বাদ পড়বে।
নির্বাচন কমিশন গত ৪ সেপ্টেম্বর এ-সংক্রান্ত চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করে। এতে চারটি আসন থেকে একটি কমিয়ে বাগেরহাটকে তিন আসনে ভাগ করা হয়। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ১৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও নির্বাচন কমিশনের সচিবসহ বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল যথাযথ (অ্যাবসোলিউট) ঘোষণা করে আজ রায় দেওয়া হয়।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী কাজী সামান্তা এনাম ও রাজিয়া সুলতানা। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী কামাল হোসেন মিয়াজী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মেহেদী হাসান।
রায়ের পর নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী কামাল হোসেন মিয়াজী প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্টের রায়ের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের অভিপ্রায় ও সিদ্ধান্ত অনুসারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এর আগে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত ৩০ জুলাই নির্বাচন কমিশন প্রাথমিকভাবে বাগেরহাটের চারটি আসন থেকে একটি কমিয়ে তিনটি করার প্রস্তাব দেয়। ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনে নামে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। তারা গড়ে তোলে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি, হরতাল-অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। চারটি আসন বহাল রাখার দাবিতে কমিশনের শুনানিতেও তারা অংশ নেয়।
‘বাগেরহাটে ৪টি সংসদীয় আসন বহালের দাবিতে হরতাল চলছে’ শিরোনামে ১০ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোতে প্রতিবেদন ছাপা হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন যুক্ত করে বাগেরহাট প্রেসক্লাব, বাগেরহাট জেলা বিএনপি, জেলা জামায়াতে ইসলামী, বাগেরহাট জেলা আইনজীবী সমিতি, সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশন, বাগেরহাট জেলা ট্রাক ট্যাংকলরি কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে বাগেরহাট-১ আসন থেকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মো. শেখ মাসুদ রানা ওই রিট করেন।
রিট আবেদনকারীদের আইনজীবীর ভাষ্য, ১৯৭২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন ছিল। নির্বাচন কমিশন ৪ সেপ্টেম্বর গেজেটের মাধ্যমে একটি কমিয়ে তিনটি সংসদীয় আসন করে। এটি সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ এবং জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইনের ৬(২) ধারার পরিপন্থী।