নারী–পুরুষের সমতা: আসিয়ান থেকে যা শিখতে পারেন আমাদের তরুণেরা
Published: 13th, November 2025 GMT
এক বছর আগের কথা। আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষে ঢাকার বিশ্বব্যাংক দপ্তরে একটি সংলাপ সভা পরিচালনা করেছিলাম। সেখানে অংশ নিয়েছিলেন মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, পাহাড়ি ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর তরুণ, নানান ধর্ম ও লিঙ্গ–পরিচয়ের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। সবাই আলাপ করেছিলেন এমন সব বিষয়ে, যা নীতিনির্ধারকেরাও প্রায়ই এড়িয়ে যান।
এ বছরও আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবসে আয়োজন করেছিলাম তেমন আরও একটা সংলাপ সভার। তবে ভিন্ন দেশে, ভিন্ন সংস্কৃতির তরুণদের নিয়ে। ১১ অক্টোবর থাইল্যান্ডের চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই সভায় অংশগ্রহণকারীরা ছিলেন মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরের তরুণ প্রতিনিধিরা।
দুটো আয়োজনের উপলক্ষ ছিল জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস। দুই ক্ষেত্রেই বক্তা ছিলেন তরুণেরা, কিন্তু আলোচনার ধরন ও পরিসর ছিল ভিন্ন। দক্ষিণ এশিয়ার তুলনায় আসিয়ানের তরুণেরা লিঙ্গবৈচিত্র্য সম্পর্কে বেশি সচেতন এবং লিঙ্গ-সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন কনরে। তাঁরা আত্মতুষ্ট নন; লিঙ্গ ও সামাজিক সূচকে অগ্রগতি সত্ত্বেও তাঁরা আরও ন্যায্য সুযোগের প্রত্যাশী। সেই লক্ষ্যেই তাঁরা নিয়মিত অংশ নেন লিঙ্গ-অন্তর্ভুক্ত আসিয়ান গঠনের সামাজিক সংলাপে।
সেখানে তাঁদের আলাপ শুনে বুঝলাম, দক্ষিণ এশিয়ার তুলনায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তরুণেরা লিঙ্গবৈচিত্র্য সম্পর্কে কেবল সচেতনই নয়, সংগঠিতও। আসিয়ান নামের আঞ্চলিক কাঠামো তাঁদের মধ্যে তৈরি করেছে একটি যৌথ পরিচয়বোধ। লিঙ্গসমতার প্রশ্নেও তা সহযোগিতা ও শিক্ষার নতুন দরজা খুলে দিয়েছে। এর বিপরীতে, দক্ষিণ এশিয়ায় সার্কের স্থবিরতা তরুণদের এমন আঞ্চলিক সংলাপ থেকে এক প্রকার বঞ্চিতই করেছে।
বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের দৃষ্টি তাই শুধু পশ্চিমে নয়, পূর্বেও থাকা দরকার। অনুকরণের জন্য নয়, শেখার ও সহযোগিতার জন্য। বাংলাদেশ এখন আসিয়ানের ডায়ালগ পার্টনার হওয়ার পথে অগ্রসর হচ্ছে।নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ যদি সত্যিই নারী-পুরুষের সমতা ও অন্তর্ভুক্তি এগিয়ে নিতে চায়, তবে আসিয়ানের অভিজ্ঞতা হতে পারে কে দৃষ্টান্ত। বিশেষ করে নজর দেওয়া যেতে পারে আসিয়ানের তরুণদের সক্রিয় অংশীদার করার কৌশলের দিকে।
আসিয়ান দেশগুলো সামাজিক ও লিঙ্গ সূচকে এশিয়ার উন্নয়নশীল বেশির ভাগ দেশকে ছাড়িয়ে গেছে। সেখানে মেয়েরা আগের তুলনায় বেশি স্কুলে যাচ্ছে, বাল্যবিবাহ কমেছে, মাতৃস্বাস্থ্যসেবা সহজে পৌঁছাচ্ছে। তবু সেখানে রয়ে গেছে কিছু অমীমাংসিত বৈষম্যের বাস্তবতা।
২০২৪ সালের আসিয়ান জেন্ডার আউটলুক অনুসারে, সংসদে নারীর আসন এখনো ২০ শতাংশের মতো। কর্মজীবী নারীদের প্রায় অর্ধেক কাজ করছেন অনানুষ্ঠানিক খাতে। যেখানে আয় কম এবং নেই কোনো সুরক্ষা। একই সঙ্গে নারীরা পুরুষদের তুলনায় দ্বিগুণ সময় পার করছেন বিনা মজুরিতে, ঘর সামলানোর কাজে। অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ভালো হলেও এই চিত্র নিশ্চয়ই আসিয়ানে সমতার বার্তা বয়ে আনে না।
এই চিত্র বাংলাদেশের কাছেও অচেনা নয়। গত তিন দশকে নারীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক নেতৃত্বে প্রতিনিধিত্ব, বেতনবৈষম্য ও কর্মস্থলে নিরাপত্তার মতো সূচকে আমরা এখনো পিছিয়ে আছি। নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোও দেশের এই দ্বৈত বাস্তবতাকে সামনে এনেছিল। কিন্তু তাদের প্রস্তাব ঘিরে যে বিভাজন ও বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তাতে বোঝা যায়, গঠনমূলক পরিবর্তনে এখনো সর্বসম্মতি নেই।
এই অচলাবস্থা কাটাতে তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণই সবচেয়ে বড় শক্তি। থাইল্যান্ডে আসিয়ান যুব সংলাপে অংশ নেওয়া তরুণেরা চারটি দিক বিশেষভাবে তুলে ধরেছেন, যা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথমত, সহযোগিতা ও আঞ্চলিক শেখা (শেখাটাকে বোঝাপড়া করা যায় কি না!)। ইন্দোনেশিয়ার ‘শি লিডস’, ভিয়েতনামের ‘ব্রাইটার পাথ গার্লস ক্লাব’ কিংবা সিঙ্গাপুরের ‘গার্লস টু পাইওনিয়ার’ উদ্যোগগুলো দেখায় যে নারীরা যখন কোনো প্রকল্পের পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, তখন ফলাফল হয় টেকসই।
দ্বিতীয়ত, উচ্চশিক্ষায় লিঙ্গমূলধারা (লিঙ্গমূলধারার ইংরেজিটা জানা দরকার) সংযোজন। আসিয়ানের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এখন পাঠক্রম ও গবেষণায় লিঙ্গ বিশ্লেষণকে যুক্ত করছে, যা তাদের শিখিয়েছে দৈনন্দিন জীবনের অদৃশ্য বৈষম্যগুলো চিনতে।
তৃতীয়ত, উপেক্ষিত ও দুর্বলদের স্বীকৃতি। মিয়ানমারের তরুণেরা বলেছেন, সংঘাত ও বাস্তুচ্যুতির পরিস্থিতিতে মেয়েরা একসঙ্গে হয়ে ওঠেন শিক্ষার্থী, সেবাদাতা ও জীবনযোদ্ধা। চতুর্থত, শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে মানসিকতার পরিবর্তন। লিঙ্গসমতা শুধু আইন বা বাজেট দিয়ে আসে না। আসে চর্চা ও পরিচর্যা থেকে। আসিয়ানের তরুণেরা তাই বলছেন, শিশুদের পাঠ্যপুস্তকে নারীকে শুধু মা বা সেবাদাতা নয়; বিজ্ঞানী, কূটনীতিক ও নেত্রী হিসেবেও তুলে ধরতে হবে।
আসিয়ানের মূলমন্ত্র ‘এক দৃষ্টি, এক পরিচয়, এক সম্প্রদায়’। এই মূলমন্ত্র শুধু অর্থনৈতিক সংহতির নয়, সামাজিক অগ্রগতিরও প্রতীক। দক্ষিণ এশিয়ার তরুণদেরও এমন এক সমন্বিত মঞ্চ দরকার। কারণ, সবার অংশগ্রহণ ছাড়া অগ্রগতি টেকসই হয় না, আর আঞ্চলিক সংযোগ ছাড়া অংশগ্রহণ হয়ে পড়ে একাকী।
থাইল্যান্ড নারীশিক্ষায় লিঙ্গসমতার ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য মাইলফলক অর্জন করেছে। গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০২৫ অনুযায়ী। দেশটি এ বছর নারীশিক্ষায় সমতার দিক থেকে শীর্ষস্থানে রয়েছে। চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ও শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষার্থী ভর্তিতে এ ধারাবাহিকতাকে শক্তিশালী করেছে। তব একই চিত্র দেখা যায় না বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার অগ্রদূত প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষার্থী ভর্তিতে লিঙ্গসমতার সেই মান অর্জিত হয়নি। যা চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে।
বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের দৃষ্টি তাই শুধু পশ্চিমে নয়, পূর্বেও থাকা দরকার। অনুকরণের জন্য নয়, শেখার ও সহযোগিতার জন্য। বাংলাদেশ এখন আসিয়ানের ডায়ালগ পার্টনার হওয়ার পথে অগ্রসর হচ্ছে। আমাদের তরুণ প্রজন্মেরও উচিত নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রস্তুতিকে নতুন এই আঞ্চলিক সংযোগের দিকের ঘোরানো। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তরুণদের যৌথ কণ্ঠই হতে পারে সেই নৈতিক শক্তি, যা প্রশাসনিক প্রতিবেদনের সীমা ভেঙে সমাজে সত্যিকার পরিবর্তন আনতে পারবে।
অধ্যাপক নিয়াজ আসাদুল্লাহ ভিজিটিং প্রফেসর, চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়, থাইল্যান্ড
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র তর ণ প র তর ণ র আস য় ন র সহয গ ত র জন য দরক র সমত র গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
নারী–পুরুষের সমতা: আসিয়ান থেকে যা শিখতে পারেন আমাদের তরুণেরা
এক বছর আগের কথা। আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষে ঢাকার বিশ্বব্যাংক দপ্তরে একটি সংলাপ সভা পরিচালনা করেছিলাম। সেখানে অংশ নিয়েছিলেন মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, পাহাড়ি ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর তরুণ, নানান ধর্ম ও লিঙ্গ–পরিচয়ের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। সবাই আলাপ করেছিলেন এমন সব বিষয়ে, যা নীতিনির্ধারকেরাও প্রায়ই এড়িয়ে যান।
এ বছরও আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবসে আয়োজন করেছিলাম তেমন আরও একটা সংলাপ সভার। তবে ভিন্ন দেশে, ভিন্ন সংস্কৃতির তরুণদের নিয়ে। ১১ অক্টোবর থাইল্যান্ডের চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই সভায় অংশগ্রহণকারীরা ছিলেন মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরের তরুণ প্রতিনিধিরা।
দুটো আয়োজনের উপলক্ষ ছিল জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস। দুই ক্ষেত্রেই বক্তা ছিলেন তরুণেরা, কিন্তু আলোচনার ধরন ও পরিসর ছিল ভিন্ন। দক্ষিণ এশিয়ার তুলনায় আসিয়ানের তরুণেরা লিঙ্গবৈচিত্র্য সম্পর্কে বেশি সচেতন এবং লিঙ্গ-সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন কনরে। তাঁরা আত্মতুষ্ট নন; লিঙ্গ ও সামাজিক সূচকে অগ্রগতি সত্ত্বেও তাঁরা আরও ন্যায্য সুযোগের প্রত্যাশী। সেই লক্ষ্যেই তাঁরা নিয়মিত অংশ নেন লিঙ্গ-অন্তর্ভুক্ত আসিয়ান গঠনের সামাজিক সংলাপে।
সেখানে তাঁদের আলাপ শুনে বুঝলাম, দক্ষিণ এশিয়ার তুলনায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তরুণেরা লিঙ্গবৈচিত্র্য সম্পর্কে কেবল সচেতনই নয়, সংগঠিতও। আসিয়ান নামের আঞ্চলিক কাঠামো তাঁদের মধ্যে তৈরি করেছে একটি যৌথ পরিচয়বোধ। লিঙ্গসমতার প্রশ্নেও তা সহযোগিতা ও শিক্ষার নতুন দরজা খুলে দিয়েছে। এর বিপরীতে, দক্ষিণ এশিয়ায় সার্কের স্থবিরতা তরুণদের এমন আঞ্চলিক সংলাপ থেকে এক প্রকার বঞ্চিতই করেছে।
বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের দৃষ্টি তাই শুধু পশ্চিমে নয়, পূর্বেও থাকা দরকার। অনুকরণের জন্য নয়, শেখার ও সহযোগিতার জন্য। বাংলাদেশ এখন আসিয়ানের ডায়ালগ পার্টনার হওয়ার পথে অগ্রসর হচ্ছে।নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ যদি সত্যিই নারী-পুরুষের সমতা ও অন্তর্ভুক্তি এগিয়ে নিতে চায়, তবে আসিয়ানের অভিজ্ঞতা হতে পারে কে দৃষ্টান্ত। বিশেষ করে নজর দেওয়া যেতে পারে আসিয়ানের তরুণদের সক্রিয় অংশীদার করার কৌশলের দিকে।
আসিয়ান দেশগুলো সামাজিক ও লিঙ্গ সূচকে এশিয়ার উন্নয়নশীল বেশির ভাগ দেশকে ছাড়িয়ে গেছে। সেখানে মেয়েরা আগের তুলনায় বেশি স্কুলে যাচ্ছে, বাল্যবিবাহ কমেছে, মাতৃস্বাস্থ্যসেবা সহজে পৌঁছাচ্ছে। তবু সেখানে রয়ে গেছে কিছু অমীমাংসিত বৈষম্যের বাস্তবতা।
২০২৪ সালের আসিয়ান জেন্ডার আউটলুক অনুসারে, সংসদে নারীর আসন এখনো ২০ শতাংশের মতো। কর্মজীবী নারীদের প্রায় অর্ধেক কাজ করছেন অনানুষ্ঠানিক খাতে। যেখানে আয় কম এবং নেই কোনো সুরক্ষা। একই সঙ্গে নারীরা পুরুষদের তুলনায় দ্বিগুণ সময় পার করছেন বিনা মজুরিতে, ঘর সামলানোর কাজে। অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ভালো হলেও এই চিত্র নিশ্চয়ই আসিয়ানে সমতার বার্তা বয়ে আনে না।
এই চিত্র বাংলাদেশের কাছেও অচেনা নয়। গত তিন দশকে নারীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক নেতৃত্বে প্রতিনিধিত্ব, বেতনবৈষম্য ও কর্মস্থলে নিরাপত্তার মতো সূচকে আমরা এখনো পিছিয়ে আছি। নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোও দেশের এই দ্বৈত বাস্তবতাকে সামনে এনেছিল। কিন্তু তাদের প্রস্তাব ঘিরে যে বিভাজন ও বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তাতে বোঝা যায়, গঠনমূলক পরিবর্তনে এখনো সর্বসম্মতি নেই।
এই অচলাবস্থা কাটাতে তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণই সবচেয়ে বড় শক্তি। থাইল্যান্ডে আসিয়ান যুব সংলাপে অংশ নেওয়া তরুণেরা চারটি দিক বিশেষভাবে তুলে ধরেছেন, যা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথমত, সহযোগিতা ও আঞ্চলিক শেখা (শেখাটাকে বোঝাপড়া করা যায় কি না!)। ইন্দোনেশিয়ার ‘শি লিডস’, ভিয়েতনামের ‘ব্রাইটার পাথ গার্লস ক্লাব’ কিংবা সিঙ্গাপুরের ‘গার্লস টু পাইওনিয়ার’ উদ্যোগগুলো দেখায় যে নারীরা যখন কোনো প্রকল্পের পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, তখন ফলাফল হয় টেকসই।
দ্বিতীয়ত, উচ্চশিক্ষায় লিঙ্গমূলধারা (লিঙ্গমূলধারার ইংরেজিটা জানা দরকার) সংযোজন। আসিয়ানের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এখন পাঠক্রম ও গবেষণায় লিঙ্গ বিশ্লেষণকে যুক্ত করছে, যা তাদের শিখিয়েছে দৈনন্দিন জীবনের অদৃশ্য বৈষম্যগুলো চিনতে।
তৃতীয়ত, উপেক্ষিত ও দুর্বলদের স্বীকৃতি। মিয়ানমারের তরুণেরা বলেছেন, সংঘাত ও বাস্তুচ্যুতির পরিস্থিতিতে মেয়েরা একসঙ্গে হয়ে ওঠেন শিক্ষার্থী, সেবাদাতা ও জীবনযোদ্ধা। চতুর্থত, শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে মানসিকতার পরিবর্তন। লিঙ্গসমতা শুধু আইন বা বাজেট দিয়ে আসে না। আসে চর্চা ও পরিচর্যা থেকে। আসিয়ানের তরুণেরা তাই বলছেন, শিশুদের পাঠ্যপুস্তকে নারীকে শুধু মা বা সেবাদাতা নয়; বিজ্ঞানী, কূটনীতিক ও নেত্রী হিসেবেও তুলে ধরতে হবে।
আসিয়ানের মূলমন্ত্র ‘এক দৃষ্টি, এক পরিচয়, এক সম্প্রদায়’। এই মূলমন্ত্র শুধু অর্থনৈতিক সংহতির নয়, সামাজিক অগ্রগতিরও প্রতীক। দক্ষিণ এশিয়ার তরুণদেরও এমন এক সমন্বিত মঞ্চ দরকার। কারণ, সবার অংশগ্রহণ ছাড়া অগ্রগতি টেকসই হয় না, আর আঞ্চলিক সংযোগ ছাড়া অংশগ্রহণ হয়ে পড়ে একাকী।
থাইল্যান্ড নারীশিক্ষায় লিঙ্গসমতার ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য মাইলফলক অর্জন করেছে। গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০২৫ অনুযায়ী। দেশটি এ বছর নারীশিক্ষায় সমতার দিক থেকে শীর্ষস্থানে রয়েছে। চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ও শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষার্থী ভর্তিতে এ ধারাবাহিকতাকে শক্তিশালী করেছে। তব একই চিত্র দেখা যায় না বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার অগ্রদূত প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষার্থী ভর্তিতে লিঙ্গসমতার সেই মান অর্জিত হয়নি। যা চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে।
বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের দৃষ্টি তাই শুধু পশ্চিমে নয়, পূর্বেও থাকা দরকার। অনুকরণের জন্য নয়, শেখার ও সহযোগিতার জন্য। বাংলাদেশ এখন আসিয়ানের ডায়ালগ পার্টনার হওয়ার পথে অগ্রসর হচ্ছে। আমাদের তরুণ প্রজন্মেরও উচিত নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রস্তুতিকে নতুন এই আঞ্চলিক সংযোগের দিকের ঘোরানো। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তরুণদের যৌথ কণ্ঠই হতে পারে সেই নৈতিক শক্তি, যা প্রশাসনিক প্রতিবেদনের সীমা ভেঙে সমাজে সত্যিকার পরিবর্তন আনতে পারবে।
অধ্যাপক নিয়াজ আসাদুল্লাহ ভিজিটিং প্রফেসর, চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়, থাইল্যান্ড