জুলাইসহ সব গণহত্যার বিচার ও জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার দাবি এবং (কার্যক্রম) নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নাশকতা সৃষ্টির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগর। আজ বৃহস্পতিবার সকালে মিছিলটি ঢাকা কলেজ থেকে শুরু হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রশিবিরের সভাপতি রেজাউল করিম শাকিল এবং ঢাকা মহানগর পূর্ব ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও ডাকসুর ছাত্র পরিবহন সম্পাদক আসিফ আবদুল্লাহ সমাবেশ সঞ্চালনা করেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম।

সমাবেশে জাহিদুল ইসলাম বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশ এক নতুন সূর্যোদয়ের স্বপ্ন দেখছে। বাংলাদেশ আজ ফ্যাসিবাদমুক্ত; সমৃদ্ধ নতুন দেশ গড়ার জন্য প্রজন্মের এক জাগরণ তৈরি করেছে। তিনি বলেন, ‘শহীদ পরিবারের কান্না, আহত ও পঙ্গুদের রক্ত এখনো কথা বলছে; অথচ জুলাই গণহত্যার বিচার নিয়ে টালবাহানা চলছে। দেড় বছর পার হলেও অসংখ্য চাক্ষুষ প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত একটি রায়ও দিতে পারেনি সরকার।’

ছাত্রশিবিরের সভাপতি বলেন, ‘যারা জুলাইকে ধারণ করতে পারবেন না, তাঁরা দেশের দায়িত্ব নেওয়ার যোগ্য নন। কেউ কেউ এরই মধ্যে আওয়ামী পুনর্বাসনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁরা ক্ষমতায় আসার আগেই আওয়ামী লীগের সব মামলা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এই অধিকার জনগণ আপনাদের দেয়নি। এ রকম চলতে থাকলে যে প্রজন্ম হাসিনাকে “লাল কার্ড” দেখিয়েছে, তারা আপনাদের “ডাবল লাল কার্ড” দেখাবে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ৪০ হাজার নেতা-কর্মীকে আটক করা হলেও ৩৫ হাজারকে জামিন দেওয়া হয়েছে। জেলখানায় তাদের জামাই আদর করা হচ্ছে। বিএনপি আওয়ামী লীগের মামলা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে। আমাদের আশঙ্কা, তারা ক্ষমতায় গেলে জুলাই সনদ কার্যকর করবে কি না, গণভোটের রায় মানবে কি না?’

সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি (ভিপি) আবু সাদিক কায়েম বলেন, ‘খুনি হাসিনা ও তাঁর দোসররা দেশকে নরকে পরিণত করেছিল। জুলাই আন্দোলনে ২ হাজার মানুষকে হত্যা করেছে, ৪০ হাজার মানুষকে আহত করেছে। তারা আবারও কীভাবে আস্ফালন দেখায়, তার জবাব সরকারকে দিতে হবে।’

ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এস এম ফরহাদ বলেন, ‘যে দলের নেত্রী পালিয়ে যায়, তারা কীভাবে হুংকার দেয়, তা আমরা দেখতে চাই। আমরা শুধু পুলিশের ওপর নির্ভর থাকতে চাই না, ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা খুনিদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকবে।’

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ, প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান আজাদ, আন্তর্জাতিক সম্পাদক মু’তাসিম বিল্লাহ শাহেদী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পূর্বের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হেলাল উদ্দিন, মহানগর পশ্চিম সভাপতি হাফেজ আবু তাহের এবং মেডিকেল জোন সভাপতি যায়েদ আহমেদ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল ইসল ম আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

‘সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত’

১৩ নভেম্বর কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন আওয়ামী লীগের ‘লক ডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণার প্রেক্ষিতে প্রতিবাদমূলক সম্মিলিত বিবৃতি দিয়েছে চার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ।

বিবৃতিতে সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে দাবি করে ডাকসু, জাকসু, রাকসু ও চাকসুর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করতে পতিত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ ও তার দোসরদের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জাতীয় প্রতিরোধ এবং তাদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

আরো পড়ুন:

বিএনপি গণতন্ত্রের চ্যাম্পিয়ন একটি রাজনৈতিক দল: রিজভী

ডাকসু-জাকসুর ভিপি-জিএস-এজিএসরা পূর্বে ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন: নাছির

মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম, জাকসু ভিপি আব্দুর রশিদ জিতু, রাকসু ভিপি মোস্তাকুর রহমান ও চাকসু ভিপি ইব্রাহিম হোসেন রনির যৌথ স্বাক্ষরে এই বিবৃতি প্রদান করা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা-শ্রমিকসহ মুক্তিকামী জনগণ ঐতিহাসিক জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে দীর্ঘ ১৮ বছরের দুঃসহ ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে জাতিকে মুক্ত করেছে। সহস্র শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই নতুন বাংলাদেশ যখন ফ্যাসিবাদ ও ফ্যাসিবাদী কাঠামোর চিরস্থায়ী বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ঠিক তখনই বিতাড়িত ফ্যাসিস্ট, গণহত্যাকারী ও সন্ত্রাসী সংগঠন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ এবং নিষিদ্ধ ছাত্রলীগসহ তাদের দোসররা দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে এক গভীর চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ইতোপূর্বে লগী-বৈঠার তাণ্ডব থেকে শুরু করে দেড় দশক ধরে গুম-খুন, গণহত্যা ও রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা দেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। প্রায় দুই হাজার শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত জুলাই বিপ্লবের সুরক্ষা নিশ্চিত করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ফ্যাসিস্ট ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কর্তৃক দেশজুড়ে নাশকতা, চোরাগোপ্তা হামলা, অগ্নিকাণ্ড, ককটেল বিস্ফোরণ এবং বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলার ষড়যন্ত্র দৃশ্যমান হলেও সন্ত্রাসীদের মূলোৎপাটনে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা সন্তোষজনক নয়। চলমান পরিস্থিতিতে আওয়ামী দুর্বৃত্তপনার বিরুদ্ধে সরকারকে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান, গণভোট এবং জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির অপতৎপরতা ইতিমধ্যেই শুরু করেছে পতিত স্বৈরাচার ও তাদের দোসররা। জনগণের জান-মালের হেফাজত এবং রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের শেকড় সমূলে উৎপাটনে সরকারকে আরো সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।

দেশের বিভিন্ন স্থানে জুলাই গণহত্যায় জড়িত সন্ত্রাসীরা এখনো নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে এসকল আওয়ামী ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোসরদের অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

ছাত্র সংসদ নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি, অবিলম্বে এই দেশদ্রোহী গণহত্যাকারীদেরকে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়মিত টহল জোরদার করতে হবে এবং দেশব্যাপী চিরুনী অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে জাতিকে নিরাপদ করতে হবে। পাশাপাশি জুলাইয়ে সংঘটিত গণহত্যার বিচারের দৃশ্যমান উন্নতি জাতির সামনে তুলে ধরতে হবে। 

জনগণের উদ্দেশ্যে তারা বলেন, সম্মিলিত ছাত্র সংসদ ডাকসু, জাকসু, রাকসু ও চাকসুর পক্ষ থেকে আমরা দলমত নির্বিশেষে বাংলাদেশের সব দেশপ্রেমিক নাগরিক, ছাত্র-জনতা-শ্রমিকসহ সর্বস্তরের জনগণের প্রতি গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ শক্তিশালী গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি। দেশের যে প্রান্তেই এই নিষিদ্ধ সংগঠনের সন্ত্রাসীদের পাওয়া যাবে সেখানেই প্রতিরোধ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিতে হবে।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গণহত্যার রায় নিয়ে শঙ্কা নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • আওয়ামী লীগের ‘লকডাউন’ চলছে অনলাইনে: ইনকিলাব মঞ্চ
  • ‘আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রুখতে’ চিরুনি অভিযান চায় ডাকসুসহ ৪ ছাত্র সংসদ
  • ‘সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত’
  • প্রকাশ হবে শেখ হাসিনার আরো ‘ইমেইল সাক্ষাৎকার’: প্রেস সচিব
  • ভারতীয় পুঁজি যেভাবে ইসরায়েলি দখলদারি ও গণহত্যাকে মদদ দিচ্ছে