রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভবন নির্মাণের জন্য চলছে পাহাড় কাটা
Published: 25th, November 2025 GMT
রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবিপ্রবি) ভবন নির্মাণের জন্য চলছে পাহাড় কাটা। একাডেমিক, প্রশাসনিক ও শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল করার জন্য পাহাড় কাটছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন (ইআইএ) প্রতিবেদন অনুমোদনের আগেই পাহাড় কাটা শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়। আবার সম্ভাব্য যে পরিমাণ পাহাড় কাটার কথা বলা হয়েছিল, তার চেয়ে বেশি কাটা হয়েছে।
অনুমোদনের আগে এবং অতিরিক্ত পাহাড় কাটার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা পরিবেশ অধিদপ্তরকে জবাব দেবে। এভাবে পাহাড় কাটার কারণে পাহাড়ধসসহ নানা ধরনের বিপদ তৈরি হওয়ার শঙ্কার কথা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবারই প্রথম নয়, এর আগে ২০১৮-১৯ সালে ভবন নির্মাণের জন্য অনুমোদন ছাড়া পাহাড় কেটেছিল। তখন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
‘রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন (দ্বিতীয় সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি একাডেমিক ভবন, একটি প্রশাসনিক ভবন, ছাত্রদের জন্য একটি হল এবং ছাত্রীদের জন্য একটি হল নির্মাণ করা হচ্ছে। সব কটি ভবন তিনতলাবিশিষ্ট।আরও পড়ুনপাহাড়ের জায়গা যখন ‘নাল জমি’, ধ্বংসের ঝুঁকিতে চট্টগ্রামের দেড় শর বেশি পাহাড় ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫রাঙামাটির আসামবস্তি সংযোগ সড়কের ঝগড়া বিল এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস। এখানেই চলছে পাহাড় কেটে চারটি ভবনের নির্মাণকাজ।
‘রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন (দ্বিতীয় সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি একাডেমিক ভবন, একটি প্রশাসনিক ভবন, ছাত্রদের জন্য একটি হল এবং ছাত্রীদের জন্য একটি হল নির্মাণ করা হচ্ছে। সব কটি ভবন তিনতলাবিশিষ্ট। গত ফেব্রুয়ারিতে ভবনগুলোর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ১৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন উপাচার্য মো.
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, বর্তমান প্রশাসনিক ভবনের পাশেই চলছে একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনের নির্মাণকাজ। আরেক পাশে নির্মাণ করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের জন্য ভবন। এসব ভবন নির্মাণের জন্য খননযন্ত্র দিয়ে পাহাড় কাটা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ছাত্র হল ছাড়া অন্য তিনটি ভবনের বেজমেন্টের কাজ শেষ হয়েছে। ছাত্র হলের বেজমেন্টের কাজও প্রায় শেষের পথে।
২০১৭ সালে পাহাড় ধসে রাঙামাটিতে ১২০ জনের মৃত্যু হয়। জেলার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রধান সড়ক রাঙামাটি-চট্টগ্রাম, রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি-কাপ্তাই ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
নির্বিচার পাহাড় কাটার কারণে ওই সময় পাহাড়ি ঢাল ভেঙে পড়েছিল বলে রাঙামাটি পৌরসভার জন্য প্রণয়ন করা মহাপরিকল্পনায় বলা হয়। এতে বলা হয়, আসামবস্তি থেকে বিলাইছড়ি, রাজবাড়ি ও কাটাছড়ি এলাকায় ঐতিহ্য ও স্থানীয় সংস্কৃতি বজায় রেখে অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে। কিন্তু ভবন নির্মাণের জন্য লোকজন পাহাড়ের ঢাল কেটে সমতল বানায়। এটি পাহাড়ের গঠনকে ভারসাম্যহীন করে তোলে। ভারী বৃষ্টির সময় পাহাড়ের মাটি আলগা হয়ে ঢালে নির্মিত ভবনগুলোসহ ভেঙে পড়ে। এর ফলে জীবন ও সম্পত্তি নষ্ট হয়। নতুন এলাকার উন্নয়নে সব ফাঁকা কৃষিজমি অধিগ্রহণ করা, পাহাড় কাটা এবং জলাধার ভরাট করা অপ্রয়োজনীয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান পাহাড়ের ওপর। পাহাড়ের মাটি না কেটে কিংবা গর্ত না করে ভবন করা সম্ভব নয়। ভবনের নকশা অনুযায়ী যেটুকু মাটি কাটার কথা, হয়তো তার চেয়ে বেশি মাটি কাটা হয়েছে। কেন বেশি কাটা হলো, সে বিষয়ে ভালো জানবেন প্রকল্প পরিচালক, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।মো. আতিয়ার রহমান, উপাচার্য, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়আরও পড়ুনচট্টগ্রামে পাহাড় কেটে প্লট–বাণিজ্য ১৩ নভেম্বর ২০২৪অনুমোদনের আগে পাহাড় কাটা
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখন যে চারটি ভবন নির্মাণ করছে, এর প্রতিটি তিনতলাবিশিষ্ট। এসব ভবনের আয়তন ৮১ হাজার বর্গফুট। এ জন্য পাহাড় কাটতে হবে ১৪ হাজার ৪২৯ ঘনমিটার।
এসব ভবন নির্মাণের জন্য গত ২০ মে অবস্থানগত ছাড়পত্র দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। এরপর গত ২১ আগস্ট ‘রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন (দ্বিতীয় সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন (ইআইএ) প্রতিবেদন অনুমোদনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরে আবেদন করা হয়। এখনো এর অনুমোদন দেওয়া হয়নি। এর আগেই পাহাড় কেটে অবকাঠামোগত উন্নয়নকাজ শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এর আগে গত ২০ মে পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন প্রতিবেদনের টার্মস অব রেফারেন্স বা কার্যপরিধি (টিওআর) অনুমোদনের সময় কিছু শর্ত বেঁধে দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন বা ইআইএ প্রতিবেদন অনুমোদিত না হওয়া পর্যন্ত প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের ভূমি ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যক্রম করতে পারবে না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের এক নথিতে দেখা গেছে, ইআইএ প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি ভবন নির্মাণের জন্য ১৪ হাজার ৪২৯ ঘনমিটার বা ৫ লাখ ৯ হাজার ঘনফুট পাহাড় কাটার কথা বলা হয়েছে। আর পাহাড়গুলো কাটতে হবে ৪৫ ডিগ্রি স্লোপ রেখে। পাহাড় কাটার কথা ধাপে ধাপে। কিন্তু এসবের কিছুই করেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাহাড়ের ঢাল কেটে সম্পূর্ণ বিলীন করে পাইলিং করা হয়েছে। আর পাহাড় কাটা হয়েছে ৭ লাখ ১৯ হাজার ঘনফুট। অর্থাৎ সম্ভাব্য পরিমাণের চেয়ে ২ লাখ ১০ হাজার ঘনফুট বেশি, যা আড়াইটি ফুটবল মাঠের সমান।
ইআইএ প্রতিবেদন অনুমোদন দেওয়ার আগে কোনোভাবে পাহাড় কাটার সুযোগ নেই। এরপরও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাহাড় কেটে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। আবার যে পরিমাণ পাহাড় কাটার কথা ধরা হয়েছিল, তার চেয়ে বেশি পাহাড় কেটেছে। এভাবে পাহাড় কাটায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।জমির উদ্দিন, পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালকআরও পড়ুনপাহাড়খেকোদের থামাতেই হবে২১ আগস্ট ২০২৪পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক জমির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ইআইএ প্রতিবেদন অনুমোদন দেওয়ার আগে কোনোভাবে পাহাড় কাটার সুযোগ নেই। এরপরও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাহাড় কেটে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। আবার যে পরিমাণ পাহাড় কাটার কথা ধরা হয়েছিল, তার চেয়ে বেশি পাহাড় কেটেছে। এভাবে পাহাড় কাটায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের পরিচালক আবদুল গফুর বলেন, পাহাড় কাটা বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরকে জবাব দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান। এ বিষয়ে উপাচার্য বিস্তারিত জানাতে পারবেন।
রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আতিয়ার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান পাহাড়ের ওপর। পাহাড়ের মাটি না কেটে কিংবা গর্ত না করে ভবন করা সম্ভব নয়। ভবনের নকশা অনুযায়ী যেটুকু মাটি কাটার কথা, হয়তো তার চেয়ে বেশি মাটি কাটা হয়েছে। কেন বেশি কাটা হলো, সে বিষয়ে ভালো জানবেন প্রকল্প পরিচালক, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। যেভাবে দেখভাল করার কথা ছিল, সেখানে নিশ্চয় কোনো ঘাটতি ছিল। সামনের দিকে এ বিষয়ে আরও অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
রাঙামাটিতে যে ধরনের স্থাপনাই হোক, অবশ্যই পাহাড়কে বিবেচনা নিয়ে করতে হবে। এখন পাঁচ লাখ ঘনফুটের কথা বলে সাত লাখ ঘনফুট পাহাড় কাটা হয়েছে। কিন্তু এর প্রভাব আরও বেশি হবে। কেননা রাঙামাটির পাহাড়গুলো বালুর পাহাড়। একবার পাহাড় কাটা হলে পরবর্তী বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির সময় আরও বেশি মাটি ধসে পড়বে। তাই পাহাড় যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেভাবে ভবনগুলো করা দরকার।মোহাম্মদ আল-আমীন, অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বনবিদ্যা ও পরিবেশবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট আরও পড়ুনচট্টগ্রামে আবার পাহাড় কাটা চলছে ১৭ আগস্ট ২০২৪ভবন নির্মাণে আগেও কাটা হয়েছিল পাহাড়
২০০১ সালে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আইন পাস হয়। শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে। ক্লাস শুরু হয় ২০১৫ সালের নভেম্বরে। এরপর ২০২০ সালে বর্তমান ক্যাম্পাসে কার্যক্রম শুরু হয়। তবলছড়ির ভাড়া ক্যাম্পাস থেকে শিক্ষা কার্যক্রম আসামবস্তি সংযোগ সড়কের স্থায়ী ক্যাম্পাসে সরিয়ে নিতে সেখানে ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ছিল দুটি একাডেমিক ভবন, দুটি প্রশাসনিক ভবন, একটি গ্রন্থাগার, একটি গ্যারেজ ও একটি ক্যানটিন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের নথি অনুযায়ী, এসব ভবন নির্মাণ করতেও ২০১৮ সালে পাহাড় কেটেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ওই সময় ৬০ হাজার ঘনফুট পাহাড় কাটা হয়। কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই তখন পাহাড় কাটা হয়। ওই সময় পরিবেশ অধিদপ্তরের রাঙামাটিতে কোনো কার্যালয় বা কার্যক্রম ছিল না। ফলে তখন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বনবিদ্যা ও পরিবেশবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ আল-আমীন প্রথম আলোকে বলেন, রাঙামাটিতে যে ধরনের স্থাপনাই হোক, অবশ্যই পাহাড়কে বিবেচনা নিয়ে করতে হবে। এখন পাঁচ লাখ ঘনফুটের কথা বলে সাত লাখ ঘনফুট পাহাড় কাটা হয়েছে। কিন্তু এর প্রভাব আরও বেশি হবে। কেননা রাঙামাটির পাহাড়গুলো বালুর পাহাড়। একবার পাহাড় কাটা হলে পরবর্তী বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির সময় আরও বেশি মাটি ধসে পড়বে। তাই পাহাড় যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেভাবে ভবনগুলো করা দরকার।
আরও পড়ুনথামছে না দুই নেতার পাহাড় কাটা২০ এপ্রিল ২০২৪উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ভবন ন র ম ণ র জন য ঘনফ ট প হ ড় ক ট দ র জন য একট হ জ র ঘনফ ট ন র ম ণ কর প রকল প র ল খ ঘনফ ট এসব ভবন উপ চ র য এক ড ম ক ভবন র ন আরও ব শ ব যবস থ ভবনগ ল জন য প পর ম ণ হয় ছ ল প রথম র সময় ধরন র
এছাড়াও পড়ুন:
রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভবন নির্মাণের জন্য চলছে পাহাড় কাটা
রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবিপ্রবি) ভবন নির্মাণের জন্য চলছে পাহাড় কাটা। একাডেমিক, প্রশাসনিক ও শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল করার জন্য পাহাড় কাটছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন (ইআইএ) প্রতিবেদন অনুমোদনের আগেই পাহাড় কাটা শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়। আবার সম্ভাব্য যে পরিমাণ পাহাড় কাটার কথা বলা হয়েছিল, তার চেয়ে বেশি কাটা হয়েছে।
অনুমোদনের আগে এবং অতিরিক্ত পাহাড় কাটার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা পরিবেশ অধিদপ্তরকে জবাব দেবে। এভাবে পাহাড় কাটার কারণে পাহাড়ধসসহ নানা ধরনের বিপদ তৈরি হওয়ার শঙ্কার কথা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবারই প্রথম নয়, এর আগে ২০১৮-১৯ সালে ভবন নির্মাণের জন্য অনুমোদন ছাড়া পাহাড় কেটেছিল। তখন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
‘রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন (দ্বিতীয় সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি একাডেমিক ভবন, একটি প্রশাসনিক ভবন, ছাত্রদের জন্য একটি হল এবং ছাত্রীদের জন্য একটি হল নির্মাণ করা হচ্ছে। সব কটি ভবন তিনতলাবিশিষ্ট।আরও পড়ুনপাহাড়ের জায়গা যখন ‘নাল জমি’, ধ্বংসের ঝুঁকিতে চট্টগ্রামের দেড় শর বেশি পাহাড় ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫রাঙামাটির আসামবস্তি সংযোগ সড়কের ঝগড়া বিল এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস। এখানেই চলছে পাহাড় কেটে চারটি ভবনের নির্মাণকাজ।
‘রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন (দ্বিতীয় সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি একাডেমিক ভবন, একটি প্রশাসনিক ভবন, ছাত্রদের জন্য একটি হল এবং ছাত্রীদের জন্য একটি হল নির্মাণ করা হচ্ছে। সব কটি ভবন তিনতলাবিশিষ্ট। গত ফেব্রুয়ারিতে ভবনগুলোর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ১৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন উপাচার্য মো. আতিয়ার রহমান।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, বর্তমান প্রশাসনিক ভবনের পাশেই চলছে একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনের নির্মাণকাজ। আরেক পাশে নির্মাণ করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের জন্য ভবন। এসব ভবন নির্মাণের জন্য খননযন্ত্র দিয়ে পাহাড় কাটা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ছাত্র হল ছাড়া অন্য তিনটি ভবনের বেজমেন্টের কাজ শেষ হয়েছে। ছাত্র হলের বেজমেন্টের কাজও প্রায় শেষের পথে।
২০১৭ সালে পাহাড় ধসে রাঙামাটিতে ১২০ জনের মৃত্যু হয়। জেলার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রধান সড়ক রাঙামাটি-চট্টগ্রাম, রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি-কাপ্তাই ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
নির্বিচার পাহাড় কাটার কারণে ওই সময় পাহাড়ি ঢাল ভেঙে পড়েছিল বলে রাঙামাটি পৌরসভার জন্য প্রণয়ন করা মহাপরিকল্পনায় বলা হয়। এতে বলা হয়, আসামবস্তি থেকে বিলাইছড়ি, রাজবাড়ি ও কাটাছড়ি এলাকায় ঐতিহ্য ও স্থানীয় সংস্কৃতি বজায় রেখে অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে। কিন্তু ভবন নির্মাণের জন্য লোকজন পাহাড়ের ঢাল কেটে সমতল বানায়। এটি পাহাড়ের গঠনকে ভারসাম্যহীন করে তোলে। ভারী বৃষ্টির সময় পাহাড়ের মাটি আলগা হয়ে ঢালে নির্মিত ভবনগুলোসহ ভেঙে পড়ে। এর ফলে জীবন ও সম্পত্তি নষ্ট হয়। নতুন এলাকার উন্নয়নে সব ফাঁকা কৃষিজমি অধিগ্রহণ করা, পাহাড় কাটা এবং জলাধার ভরাট করা অপ্রয়োজনীয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান পাহাড়ের ওপর। পাহাড়ের মাটি না কেটে কিংবা গর্ত না করে ভবন করা সম্ভব নয়। ভবনের নকশা অনুযায়ী যেটুকু মাটি কাটার কথা, হয়তো তার চেয়ে বেশি মাটি কাটা হয়েছে। কেন বেশি কাটা হলো, সে বিষয়ে ভালো জানবেন প্রকল্প পরিচালক, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।মো. আতিয়ার রহমান, উপাচার্য, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়আরও পড়ুনচট্টগ্রামে পাহাড় কেটে প্লট–বাণিজ্য ১৩ নভেম্বর ২০২৪অনুমোদনের আগে পাহাড় কাটা
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখন যে চারটি ভবন নির্মাণ করছে, এর প্রতিটি তিনতলাবিশিষ্ট। এসব ভবনের আয়তন ৮১ হাজার বর্গফুট। এ জন্য পাহাড় কাটতে হবে ১৪ হাজার ৪২৯ ঘনমিটার।
এসব ভবন নির্মাণের জন্য গত ২০ মে অবস্থানগত ছাড়পত্র দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। এরপর গত ২১ আগস্ট ‘রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন (দ্বিতীয় সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন (ইআইএ) প্রতিবেদন অনুমোদনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরে আবেদন করা হয়। এখনো এর অনুমোদন দেওয়া হয়নি। এর আগেই পাহাড় কেটে অবকাঠামোগত উন্নয়নকাজ শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এর আগে গত ২০ মে পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন প্রতিবেদনের টার্মস অব রেফারেন্স বা কার্যপরিধি (টিওআর) অনুমোদনের সময় কিছু শর্ত বেঁধে দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন বা ইআইএ প্রতিবেদন অনুমোদিত না হওয়া পর্যন্ত প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের ভূমি ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যক্রম করতে পারবে না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের এক নথিতে দেখা গেছে, ইআইএ প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি ভবন নির্মাণের জন্য ১৪ হাজার ৪২৯ ঘনমিটার বা ৫ লাখ ৯ হাজার ঘনফুট পাহাড় কাটার কথা বলা হয়েছে। আর পাহাড়গুলো কাটতে হবে ৪৫ ডিগ্রি স্লোপ রেখে। পাহাড় কাটার কথা ধাপে ধাপে। কিন্তু এসবের কিছুই করেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাহাড়ের ঢাল কেটে সম্পূর্ণ বিলীন করে পাইলিং করা হয়েছে। আর পাহাড় কাটা হয়েছে ৭ লাখ ১৯ হাজার ঘনফুট। অর্থাৎ সম্ভাব্য পরিমাণের চেয়ে ২ লাখ ১০ হাজার ঘনফুট বেশি, যা আড়াইটি ফুটবল মাঠের সমান।
ইআইএ প্রতিবেদন অনুমোদন দেওয়ার আগে কোনোভাবে পাহাড় কাটার সুযোগ নেই। এরপরও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাহাড় কেটে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। আবার যে পরিমাণ পাহাড় কাটার কথা ধরা হয়েছিল, তার চেয়ে বেশি পাহাড় কেটেছে। এভাবে পাহাড় কাটায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।জমির উদ্দিন, পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালকআরও পড়ুনপাহাড়খেকোদের থামাতেই হবে২১ আগস্ট ২০২৪পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক জমির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ইআইএ প্রতিবেদন অনুমোদন দেওয়ার আগে কোনোভাবে পাহাড় কাটার সুযোগ নেই। এরপরও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাহাড় কেটে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। আবার যে পরিমাণ পাহাড় কাটার কথা ধরা হয়েছিল, তার চেয়ে বেশি পাহাড় কেটেছে। এভাবে পাহাড় কাটায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের পরিচালক আবদুল গফুর বলেন, পাহাড় কাটা বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরকে জবাব দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান। এ বিষয়ে উপাচার্য বিস্তারিত জানাতে পারবেন।
রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আতিয়ার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান পাহাড়ের ওপর। পাহাড়ের মাটি না কেটে কিংবা গর্ত না করে ভবন করা সম্ভব নয়। ভবনের নকশা অনুযায়ী যেটুকু মাটি কাটার কথা, হয়তো তার চেয়ে বেশি মাটি কাটা হয়েছে। কেন বেশি কাটা হলো, সে বিষয়ে ভালো জানবেন প্রকল্প পরিচালক, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। যেভাবে দেখভাল করার কথা ছিল, সেখানে নিশ্চয় কোনো ঘাটতি ছিল। সামনের দিকে এ বিষয়ে আরও অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
রাঙামাটিতে যে ধরনের স্থাপনাই হোক, অবশ্যই পাহাড়কে বিবেচনা নিয়ে করতে হবে। এখন পাঁচ লাখ ঘনফুটের কথা বলে সাত লাখ ঘনফুট পাহাড় কাটা হয়েছে। কিন্তু এর প্রভাব আরও বেশি হবে। কেননা রাঙামাটির পাহাড়গুলো বালুর পাহাড়। একবার পাহাড় কাটা হলে পরবর্তী বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির সময় আরও বেশি মাটি ধসে পড়বে। তাই পাহাড় যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেভাবে ভবনগুলো করা দরকার।মোহাম্মদ আল-আমীন, অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বনবিদ্যা ও পরিবেশবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট আরও পড়ুনচট্টগ্রামে আবার পাহাড় কাটা চলছে ১৭ আগস্ট ২০২৪ভবন নির্মাণে আগেও কাটা হয়েছিল পাহাড়
২০০১ সালে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আইন পাস হয়। শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে। ক্লাস শুরু হয় ২০১৫ সালের নভেম্বরে। এরপর ২০২০ সালে বর্তমান ক্যাম্পাসে কার্যক্রম শুরু হয়। তবলছড়ির ভাড়া ক্যাম্পাস থেকে শিক্ষা কার্যক্রম আসামবস্তি সংযোগ সড়কের স্থায়ী ক্যাম্পাসে সরিয়ে নিতে সেখানে ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ছিল দুটি একাডেমিক ভবন, দুটি প্রশাসনিক ভবন, একটি গ্রন্থাগার, একটি গ্যারেজ ও একটি ক্যানটিন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের নথি অনুযায়ী, এসব ভবন নির্মাণ করতেও ২০১৮ সালে পাহাড় কেটেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ওই সময় ৬০ হাজার ঘনফুট পাহাড় কাটা হয়। কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই তখন পাহাড় কাটা হয়। ওই সময় পরিবেশ অধিদপ্তরের রাঙামাটিতে কোনো কার্যালয় বা কার্যক্রম ছিল না। ফলে তখন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বনবিদ্যা ও পরিবেশবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ আল-আমীন প্রথম আলোকে বলেন, রাঙামাটিতে যে ধরনের স্থাপনাই হোক, অবশ্যই পাহাড়কে বিবেচনা নিয়ে করতে হবে। এখন পাঁচ লাখ ঘনফুটের কথা বলে সাত লাখ ঘনফুট পাহাড় কাটা হয়েছে। কিন্তু এর প্রভাব আরও বেশি হবে। কেননা রাঙামাটির পাহাড়গুলো বালুর পাহাড়। একবার পাহাড় কাটা হলে পরবর্তী বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির সময় আরও বেশি মাটি ধসে পড়বে। তাই পাহাড় যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেভাবে ভবনগুলো করা দরকার।
আরও পড়ুনথামছে না দুই নেতার পাহাড় কাটা২০ এপ্রিল ২০২৪