তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করে আনা ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে ১৪ বছর আগে আপিল বিভাগ রায় দিয়েছিলেন।

এই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত আপিল ও এ–সংক্রান্ত আবেদনের ওপর ২০ নভেম্বর রায়ের জন্য দিন রেখেছেন সর্বোচ্চ আদালত।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার দশম দিনে শুনানি শেষে রায়ের এ দিন ধার্য করেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করে আনা ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে ১৪ বছর আগে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে (৪: ৩) রায় দিয়েছিলেন। তখন আওয়ামী লীগ ছিল ক্ষমতায়, আদালতের রায়ের পর তারা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধন এনে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী এই সরকারব্যবস্থা বাদ দেয় শাসনতন্ত্র থেকে।

গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি আপিল বিভাগে আবেদন করেন। এরপর গত বছরের অক্টোবরে আবেদন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তারপর ওই মাসে আরেকটি আবেদন করেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো.

মোফাজ্জল হোসেন আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত বছর আরেকটি আবেদন করেন। এ ছাড়া হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি নামের একটি সংগঠন রিভিউ আবেদন করে। সেন্টার ফর ল গভর্ন্যান্স অ্যান্ড পলিসি নামের অপর একটি সংগঠন এ মামলায় ইন্টারভেনার (পক্ষ) হিসেবে যুক্ত হয়।

রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে গত ২৭ আগস্ট লিভ মঞ্জুর (আপিলের অনুমতি) করে আদেশ দেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ। বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তির এবং বিএনপির মহাসচিবের করা রিভিউ আবেদন থেকে উদ্ভূত আপিলের সঙ্গে রিভিউ আবেদনগুলো শুনানির জন্য যুক্ত হবে বলে উল্লেখ করা হয়। একই সঙ্গে আপিল শুনানির জন্য ২১ অক্টোবর দিন ধার্য করেন আদালত। এ অনুসারে ২১ অক্টোবর শুনানি শুরু হয়। দশম দিনে আজ শুনানি শেষে আপিল বিভাগ রায়ের জন্য ২০ নভেম্বর দিন ধার্য করলেন।

আদালতে পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তির পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী কারিশমা জাহান। বিএনপির মহাসচিবের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও মো. রুহুল কুদ্দুস শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক।

এ মামলায় আপিলে ইন্টারভেনার (পক্ষ) হিসেবে যুক্ত সংগঠনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক। জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলের পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির শুনানি করেন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেনের (রিভিউ আবেদনকারী) পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম বদরুদ্দোজা বাদল এবং এ এস এম শাহরিয়ার কবির শুনানি করেন। হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (রিভিউ আবেদনকারী) পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইমরান এ সিদ্দিক শুনানি করেন।

মামলার পূর্বাপর

১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম সলিমউল্লাহসহ অন্যরা ১৯৯৮ সালে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছিলেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট রায় দেন। সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীকে বৈধ ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছিল সেই রায়।

রায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালে আপিল করে রিট আবেদনকারী পক্ষ। এ আপিল মঞ্জুর করে ২০১১ সালের ১০ মে আপিল বিভাগ রায় ঘোষণা করেন। রায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে আনা পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয়। ২০১১ সালের ৩ জুলাই এ-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়।

এদিকে পঞ্চদশ সংশোধনী আইন চ্যালেঞ্জ করে গত বছরের ১৮ আগস্ট বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি রিট আবেদন করেন। তার প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ১৬টি ধারার বৈধতা নিয়ে নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার মোফাজ্জল হোসেন গত বছরের অক্টোবরে একটি রিট করেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে রুল হয়। রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেন। রায়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তি-সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের বিধান পুনর্বহাল এবং পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের আরও চারটি ধারা বাতিল ঘোষণা করা হয়।

চলতি বছরের ৮ জুলাই ১৩৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে সুজন সম্পাদকসহ চার বিশিষ্ট ব্যক্তি চলতি মাসে লিভ টু আপিল করেন। পঞ্চদশ সংশোধনী সম্পূর্ণ বাতিল চেয়ে লিভ টু আপিলটি (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করা হয়। এ ছাড়া হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে মোফাজ্জল হোসেনও একটি লিভ টু আপিল করেছেন। পৃথক লিভ টু আপিল শুনানির অপেক্ষায়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ য ষ ঠ আইনজ ব ম ফ জ জল হ স ন আপ ল ব ভ গ র গত বছর র র জন য ন কর ন আপ ল র

এছাড়াও পড়ুন:

১৫ সেনা কর্মকর্তার আইনজীবী হিসেবে সরোয়ার হোসেনের নাম প্রত্যাহার

মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক তিনটি মামলায় গ্রেপ্তার ১৫ জন সেনা কর্মকর্তার পক্ষে আইনজীবী হিসেবে এম সরোয়ার হোসেনের নাম প্রত্যাহার করা হয়েছে।

আজ রোববার এই প্রত্যাহারের আবেদন মঞ্জুর করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

গত ২২ অক্টোবর এই ১৫ সেনা কর্মকর্তার পক্ষে সরোয়ার হোসেনসহ পাঁচজন আইনজীবী ওকালতনামা জমা দিয়েছিলেন। ট্রাইব্যুনালের কাছে আজকে তিনি সেই ওকালতনামা থেকে নিজের নাম প্রত্যাহারের আবেদন করেন। তাঁর সেই আবেদন মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল।

পরে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে আইনজীবী সরোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ১৫ সেনা কর্মকর্তার পক্ষে গত ২২ অক্টোবর তাঁরা পাঁচজন আইনজীবী ওকালতনামা জমা দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময় যখন ডকুমেন্টসে (নথিপত্র) দেখা গেছে, তিনি নিজে আগে সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ করেছিলেন। সেই অভিযোগে যে সেনা কর্মকর্তার নাম রয়েছে, তিনি এই ১৫ সেনা কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছেন। প্রফেশনাল এথিকস অ্যান্ড কডাক্ট অনুযায়ী, তিনি ডিফেন্স আইনজীবী হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আবার ট্রাইব্যুনালের অনুমতি ছাড়া ওকালতনামা প্রত্যাহার করারও সুযোগ নেই। সে কারণে আজকে আবেদনের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালে আইনজীবী হিসেবে তাঁর নাম প্রত্যাহার করার আবেদন করেছেন। ট্রাইব্যুনাল সেই আবেদন গ্রহণ করেছেন। অর্থাৎ সেই ওকালতনামা প্রত্যাহার হয়েছে।

আইনজীবী সরোয়ার হোসেন বলেন, এই ওকালতনামা প্রত্যাহার হয়ে যাবে। পাঁচজন আইনজীবীই প্রত্যাহার হলেন।

অন্যদিকে আইনজীবী এ বি এম হামিদুল মেজবাহ প্রথম আলোকে বলেন, ইতিমধ্যে এই ১৫ সেনা কর্মকর্তার পক্ষে লড়াই করার জন্য নতুন করে তাঁরা সাত আইনজীবী ওকালতনামা জমা দিয়েছেন।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলের গুম-নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দুটি মামলায় এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা একটি মামলায় মোট ২৫ জন সাবেক-বর্তমান সেনা কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে।

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১–এ এই তিন মামলার বিচার চলছে। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভাগনের চাঁদাবাজির মামলায় মামা গ্রেপ্তার
  • প্রাথমিকে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ বাদের বিধান কেন অবৈধ নয়: হাইকোর্ট
  • বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন পুনর্বহালের নির্দেশ
  • সিলেটে অটোচালকদের আন্দোলনে থাকা সিপিবি নেতার চার মামলায় জামিন
  • লতিফ সিদ্দিকী ও মঞ্জুরুল আলমের জামিন বহাল, মুক্তিতে বাধা নেই
  • ইসরায়েলের গোপন কারাগার ‘রাকেফেত’, যেখানে সূর্যের আলো পৌঁছায় না কখনো
  • এনসিটি পরিচালনায় ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে চুক্তি সম্পর্কিত প্রক্রিয়ায় স্থিতাবস্থা চেয়ে আবেদনের শুনানি ১৩ নভেম্বর
  • চট্টগ্রাম বন্দরের নতুন মাশুল আদায় এক মাসের জন্য স্থগিত
  • ১৫ সেনা কর্মকর্তার আইনজীবী হিসেবে সরোয়ার হোসেনের নাম প্রত্যাহার