মানিকগঞ্জে পালাকার গ্রেপ্তার ও তাঁর অনুসারীদের ওপর হামলার প্রেক্ষাপটে ধর্ম অবমাননার কথিত অভিযোগ তুলে দেশজুড়ে হামলা, মামলা, গ্রেপ্তার ও মব-সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন ২৫৮ জন নাগরিক। মানিকগঞ্জের পালাকার আবুল সরকারের মুক্তিও দাবি করেছেন তাঁরা।

মানিকগঞ্জের ঘটনা নিয় ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে অধ্যাপক খালিকুজ্জামান ইলিয়াসের স্বাক্ষরে আজ সোমবার নাগরিকদের এ বিবৃতি আসে। বিবৃতিদাতাদের মধ্যে আরও রয়েছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান, অধ্যাপক আজফার হোসেন, অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন, লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ, আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, লেখক ও অধ্যাপক মানস চৌধুরী, লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান, অভিনেতা ও নাট্যকার আজাদ আবুল কালাম, লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ, শিল্পী সংগঠক অমল আকাশ, চলচ্চিত্রকার নূরুল আলম আতিক, অমিতাভ রেজা চৌধুরী প্রমুখ।

ঘিওরের এক ইমামের করা ধর্ম অবমাননার মামলায় আবুল সরকারকে গত বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এরপর গতকাল রোববার তাঁর অনুসারীরা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের সময় ‘মানিকগঞ্জ জেলার সর্বস্তরের আলেম-ওলামা ও তৌহিদী জনতা’ ব্যানারে একদল ব্যক্তি তাঁদের ওপর হামলা চালান।

২৫৮ নাগরিকের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে ধর্মীয় উগ্রবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। একটি বিশেষ গোষ্ঠী যেন ইসলাম ধর্মের ‘সোল-এজেন্ট’ হিসেবে আবির্ভূত হয়ে দেশব্যাপী শুদ্ধি অভিযানে নেমেছে। দুই শতাধিক মাজার ভাঙা, অসংখ্য ব্যক্তিকে মুরতাদ-কাফের-শাতিম ঘোষণা, কবর থেকে তুলে লাশ পোড়ানো, রাস্তার জটাধারী বাউল-ফকিরদের ধরে ধরে চুল কেটে দেওয়া, নারীদের চলাচল ও পোশাক নিয়ে হেনস্তা করা, নাচগান-নাটকের অনুষ্ঠান, এমনকি খেলাধুলা ও মেলার মতো আয়োজন পণ্ড করার মধ্য দিয়ে ভিন্নমত ও ভিন্ন-আচারের মানুষদের নির্মূল করাই যেন তাদের লক্ষ্য।’

এসব ক্ষেত্রে বারবার ‘ধর্ম অবমাননা’র অভিযোগই প্রধান অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে উল্লেখ করে তা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনাও করেন বিবৃতিদাতারা।

বিবৃতিদাতারা বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরা ‘মব সন্ত্রাস’ বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। বরং তাঁরা শুরু থেকেই নীরবতা অবলম্বন করে এ ধরনের ঘটনার প্রশ্রয় দিচ্ছেন। কখনো ‘প্রেশারগ্রুপ’ ইত্যাদি নাম দিয়ে এসব ঘটনা হালকা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, দেড় বছর পরও সরকারের আচরণে মনে হচ্ছে, নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে ধর্মীয় ফ্যাসিবাদকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। এতে গণতন্ত্রমনা মানুষের হতাশা বাড়ছে এবং পরাজিত ফ্যাসিবাদী শক্তির প্রত্যাবর্তনের পথ তৈরি হচ্ছে। বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে সম্ভাব্য ধর্মীয় উগ্রবাদী রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরার সুযোগও তৈরি হচ্ছে।

বিবৃতিদাতারা আবুল সরকারেক গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তাঁর মুক্তি দাবি করেন।

শিক্ষক, লেখক, গবেষক, শিল্পী, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও সংস্কৃতিকর্মীদের সঙ্গে বেশ কয়েকজন বাউলও বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন। তাঁরা হলেন অন্ধ আলামিন সরকার পিপাসী (কিশোরগঞ্জ), শাহ আলম দেওয়ান (ঢাকা), বাউল অন্তর সরকার (মানিকগঞ্জ), বাউল আনিস মুন্সি (মাদারীপুর), বাউল শিলা মল্লিক আবুল হাসেম (পাবনা), বাউল ফতেহ কামাল (ঝিনাইদহ), বাউল রবিউল ইসলাম ফারুক নূরী (পঞ্চগড়), বাউল আবু নঈম (রংপুর), ফকির আবুল হাসেম (পাবনা)।

আরও পড়ুনমানিকগঞ্জে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে বাউলশিল্পী আবুল সরকার কারাগারে২১ নভেম্বর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ন কগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

ছাত্রদল নেতা হত্যা মামলায় সাবেক এমপি ফজলে করিমের রিমান্ড মঞ্জুর

চট্টগ্রামে ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম হত্যা মামলায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

আজ সোমবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইব্রাহিম খলিল শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। কারাগার থেকে রিমান্ড শুনানিতে ভার্চ্যুয়ালি অংশগ্রহণ করেন এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী। এর আগে ২৩ নভেম্বর নগরের চকবাজার থানার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি চট্টগ্রামের পরিদর্শক নাছির উদ্দীন ফজলে করিমের পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিলেন।

সরকারি কৌঁসুলি রিয়াদ উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রদল নেতা নুরুল আলম হত্যা মামলায় এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

মামলার এজাহারে বলা হয়, রাউজানের নোয়াপাড়া ইউনিয়নের সাদারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের তৎকালীন সহসাধারণ সম্পাদক নুরুল আলমকে ২০১৭ সালের ২৯ মার্চ রাতে নগরের চন্দনপুরার বাসা থেকে সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিমের নির্দেশে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। রাউজান থানার এসআই শেখ মুহাম্মদ জাবেদ এ ঘটনায় নেতৃত্ব দেন। এরপর নুরুলকে মাইক্রোবাসে করে নিয়ে যাওয়া হয় নোয়াপাড়া ডিগ্রি কলেজের মাঠে। সেখানে চোখ ও মুখ-হাত বেঁধে সারা রাত চালানো হয় নির্যাতন। পরে তাঁকে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়। হত্যার পর ঘটনাস্থলের ৬ কিলোমিটার দূরের বাগোয়ান ইউনিয়নের খেলারঘাট কর্ণফুলী নদীর তীর রক্ষা বাঁধের ওপর লাশ ফেলে রাখা হয়। পরদিন ৩০ মার্চ হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। ২০২৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর চকবাজার থানায় নিহতের স্ত্রী সুমি আক্তার বাদী হয়ে মামলা করেছিলেন। মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীকে প্রধান করে ১৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৩০ থেকে ৪০ জনকে আসামি করা হয়েছিল।

গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্তের আবদুল্লাহ পুর থেকে ফজলে করিমকে গ্রেপ্তার করে বিজিবি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ